নতুন প্রজন্মের এন্টেনা

ভিডিও লিঙ্ক

One antenna serves twenty or more

১৯২০ সালে জাপানের ইয়াগি ও উদা আবিষ্কার করেন ইয়াগি অ্যান্টেনা। রেডিও রিসিভার ও ট্রান্সমিটারে এটা খুব ব্যবহৃত হয়। এরপর ৯০ বছর চলে গেলেও এর মৌলিক উন্নয়ন হয়নি। বাংলাদেশের আজহারুল হক সেলিম সম্প্রতি নতুন ধরনের একটি অ্যান্টেনা তৈরি করেছেন। এটি ইয়াগি অ্যান্টেনার চেয়ে বেশি রেঞ্জে কাজ করতে পারে।

গ্লোবাল ইনোভেশন থ্রু সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মকাণ্ড দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। সংস্থাটি প্রতিবছর আয়োজন করে আন্তর্জাতিক উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতার। গত বছর নভেম্বরে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল থেকে ভিডিও ভোটের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে নির্বাচিত হন বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিৎসু চক্রের সভাপতি আজহারুল হক সেলিম। পেশায় একজন প্রযুক্তিবিদ। ‘ওয়ান অ্যান্টেনা সার্ভস অ্যাজ টোয়েন্টি অর মোর’ শিরোনামের অ্যান্টেনা প্রকল্প জমা দিয়েছিলেন প্রতিযোগিতায়। চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে তুরস্কে গিয়েছিলেন তিনি।

শুরুটা যেভাবে
২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যবহারের জন্য কিছু অ্যান্টেনা তৈরি করার প্রস্তাব আসে সেলিমের কাছে। এদের কম্পাঙ্ক হতে হবে ৬৬ থেকে ৭৮ মেগাহার্জ। রেডিও সংকেত ধরার ক্ষমতাও (গেইন) বেশি হতে হবে অ্যান্টেনাগুলোর। প্রচলিত অ্যান্টেনাগুলো নির্দিষ্ট সীমার মধ্যবর্তী স্থানেই ভালো সংকেত ধরতে পারে, উভয় দিকে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাই দেখা যায়, বিভিন্ন কম্পাঙ্কের সংকেত ধরার জন্য শক্তিশালী অনেক অ্যান্টেনা বানাতে হয়।
সেলিম বলেন, ‘সে সময় আমি দেশের বাইরের এফএম রেডিও ধরার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছিলাম। বিভিন্ন রেডিও স্টেশনের জন্য প্রয়োজন হবে অনেক অ্যান্টেনা। এটা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। তখন মাথায় বুদ্ধি এলো_একটা অ্যান্টেনাকে ছোটবড় করলে কেমন হয়?

অ্যান্টেনার কাজ আছে
কেবল টিভি আসার পর থেকে এখন আর বাড়ির ছাদে অ্যান্টেনা দেখা যায় না; তাই বলে প্রয়োজন কিন্তু কমেনি। যেমন_রেডিও সিগন্যাল প্রেরণ ও গ্রহণ করতে অ্যান্টেনা লাগে। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা, বিমান চলাচল, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জিএসএম, ওয়াই-ফাইসহ বিভিন্ন ওয়্যারলেস প্রযুক্তিতে অ্যান্টেনা প্রয়োজন। এসবে ইয়াগি অ্যান্টেনারই প্রচলন বেশি। কিন্তু এর গেইন কম। তাই সেলিম ভাবতে থাকেন, ভালো হয় যদি একটি অ্যান্টেনাতেই ইচ্ছামতো ফ্রিকোয়েন্সি টিউন করা যায় সর্বোচ্চ গেইনসহ।

যেভাবে সম্ভব হলো
কোনো অ্যান্টেনার ফ্রিকোয়েন্সি নির্ভর করে তার দৈর্ঘ্যের ওপর। এই দৈর্ঘ্য ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে একটি গাণিতিক অনুপাত মেনে চলে। অ্যান্টেনার দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করতে পারলে তার ফ্রিকোয়েন্সিও পরিবর্তিত হবে। এই ফ্রিকোয়েন্সি গ্রাহক বা প্রেরকযন্ত্রের ইলেকট্রনিক সার্কিটের সঙ্গে যুক্ত।
আবার ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে সঙ্গে গাণিতিক অনুপাত অনুযায়ী অ্যান্টেনার দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করা একটি যান্ত্রিক কৌশল। এই ইলেকট্রনিক, গাণিতিক ও যান্ত্রিক (মেকানিক্যাল) প্রক্রিয়ার সমন্বয় সহজ কর্ম নয়। সেলিম সার্ভোমোটর দিয়ে অ্যান্টেনার দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করলেন। অ্যান্টেনাটি হলো ডাবল-ফোল্ড অর্থাৎ একটি পাইপের ভেতর অন্য একটি পাইপ ঢোকানো থাকে। সার্ভোমোটরের কাজ প্রয়োজনীয় ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে আনুপাতিক হারে অ্যান্টেনার দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করা। অ্যান্টেনাটি সঠিক দৈর্ঘ্যে চলে গেলেই তা নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে রেডিও সংকেত গ্রহণ বা প্রেরণ করতে পারে। এটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে ব্যাভাল গিয়ার, থ্রেডেড রড, চ্যানেল, সংযোগ রড, সার্ভোমোটর ও সার্কিট।

সুবিধা
জায়গা সাশ্রয় করে। টাওয়ার বেশি উঁচু করতে হয় না। খরচ কম হয়। কম শক্তিতে বেশি গেইন পাওয়া সম্ভব, তাই বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য সুবিধাজনক।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সেলিম জানান, এটির বাণিজ্যিক উৎপাদন লাভজনক হতে পারে। তাই এর পেটেন্ট করার প্রক্রিয়া চলছে। পেটেন্টের পর এর গবেষণাপত্র জার্নালে প্রকাশ করা হবে। বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য আরো প্রয়োজন সিস্টেমটিকে ডিজিটালাইজ করা, যাতে কম্পিউটার দিয়েই এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

পূর্বে কালের কন্ঠ সন্ধানীতে প্রকাশিত। লিখেছেন আরাফাত রহমান।