বিবর্তনবাদ : Theory or Fact?

লিখেছেন

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম বড় বিতর্কের নাম বিবর্তনবাদ। বিবর্তনবাদ নিয়ে বিতর্কটা নতুন মনে হলেও এটা কিন্তু খুব নতুন কোন বিষয় নয়। খ্রিষ্টের ও জন্মের আগে গ্রীক দার্শনিক আনাক্সিম্যানডার (Anaximander) বিবর্তনবাদের ধারণা দিয়ে গেছেন। এরপর বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও দার্শনিক বিবর্তনবাদের স্বপক্ষে কথা বললেও, তেমন কোন জোরালো প্রমানের অভাবে এই তত্ত্ব জনসাধারণের মধ্যে তেমন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তবে ঊনবিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে চার্লস ডারউইন এবং আলফ্রেড  রাসেল ওয়ালেস এর মাধ্যমে বিবর্তনবাদ তত্ত্বটি নতুন করে পালে হাওয়া পায়। ১৯৫৯ সালে ডারউইন তাঁর “On the origin of species” নামক বইয়ে প্রাকৃতিক নির্বাচন বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেন। বলতে গেলে এর পর থেকেই বিবর্তনবাদ তত্ত্বটি কিছুটা হলেও গ্রহণযোগ্যতা পায় অল্প কিছু মানুষের কাছে।

তবে বিতর্ক কিন্তু সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। বরং মূল বিতর্ক শুরু হয়েছে তো এর পর থেকেই। এখনও তো অনেকেই এটাকে শুধু তত্ত্ব (theory) বলেই মনে করেন। কিন্তু এই তত্ত্বকে তারা এখনও প্রকৃত ঘটনা (fact) বলে মানতে রাজি নন। কেননা আমাদের চোখের সামনে তো আর মানবজাতির বিবর্তন ঘটেনি!

অন্যদিকে, অন্য বিজ্ঞানীরা আছেন, যারা বিবর্তনবাদকে একই সাথে তত্ত্ব (Theory) ও প্রকৃত ঘটনা (Fact) বলে মেনে নিয়েছেন। তাদের কথা হল বিবর্তনবাদ হল মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্বের মত। মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব মতে এই মহাবিশ্বের প্রত্যেক বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করে, আপাতদৃষ্টিতে এ আকর্ষণ হয়ত আমরা দেখতে পাই না, কিন্তু এর প্রভাব যে পুরো মহাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে তা নিয়ে কারোরই কিন্তু কোন মতভেদ নেই। তাই মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব কিন্তু এখন আর শুধু তত্ত্ব-ই(Theory) নয়, এটা কিন্তু প্রকৃত ঘটনা (Fact) ও বটে! 

 কিন্তু একই ভাবে বিবর্তনবাদকেও কি একসাথে ‘তত্ত্ব’ ও ‘ প্রকৃত ঘটনা’ বলা যায়? – সেটাই আমরা দেখার চেষ্টা করব এ লেখায়।

সাধারণ ভাষায় বিবর্তনবাদের মূল কথা হচ্ছে, এ মহাবিশ্বের প্রাণী প্রজাতির (যারা বেঁচে আছে এবং যারা বিলুপ্ত হয়েছে সবাই) উদ্ভব হয়েছে একটি মাত্র পূর্বপুরুষ (Ancestor) থেকে। সেই এক পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভব হলেও বংশানুক্রমিক ধারায় প্রাকৃতিক নির্বাচন (Natural selection) ও জেনেটিক ড্রিফট (Genetic Drift) এর কারণে জিনগত পরিবর্তন হয়ে পৃথিবীতে এক বিশাল প্রাণী-বৈচিত্র তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই তত্ত্বের কোন প্রমাণ আছে কি? নাকি এটি শুধুই কল্পনা। এই তত্ত্ব যারা সমর্থন করেন তাড়া নানাভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। এই তত্ত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল ফসিল (Fossil) প্রমাণ এবং হালের ডিএনএ (DNA) নির্ভর প্রমাণ।

আমরা সবাই হয়ত TV তে বা সরাসরি ডায়নাসর বা অন্য কোন প্রাণীর ফসিল দেখেছি, কিন্তু এই ফসিল জিনিসটা আসলে কি তা কি আমরা জানি? এটা কি অনেক দিন ধরে মাটির নিচে চাপা পরে থাকা হাড়? কিন্তু হাড়কেও তো অণুজীবরা পচিয়ে ফেলতে পারে! তাহলে ফসিল জিনিসটা কি?

আসলে ফসিল পুরপুরি হাড় নয়। নানা প্রাকৃতিক কারণে হাড়ের মধ্যকার পানি ও অন্যান্য জৈবপদার্থ বাইরের অজৈব খনিজ পদার্থ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। ফলে ঐ প্রাণীর হাড়ের আকার-আকৃতি পাথর-রূপে সংরক্ষিত হয়ে থাকে যুগের পর যুগ, মিলিয়ন-বিলিয়ন বছর। এছাড়া ঠাণ্ডায় জমে, শুকিয়ে গিয়ে অথবা মমি হয়েও জীবদেহ ফসিলে পরিণত হতে পারে। আর শুধু যে বড় বড় প্রাণীর-ই ফসিল পাওয়া যায় তা নয়। ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়ারও ফসিল পাওয়া গেছে বিভিন্ন জায়গায়। আর এসকল ফসিলের বয়স কত তা নির্ধারণ করা হয় কার্বন ডেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করে।

মানুষেরও ফসিল পাওয়া গেছে বিভিন্ন এলাকায়।মানুষের ক্ষেত্রে বিবর্তনের ধারায় সবচেয়ে পুরনো ফসিল পাওয়া গেছে পূর্ব আফ্রিকায়, যার বয়স ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ বছর। এর আগে প্রাপ্ত সব ফসিল পাওয়া যায় ‘এপ’দের (Ape) মধ্যে অর্থাৎ শিম্পাঞ্জি, গরিলাদের মধ্যে। ঠিক এপ নয় কিন্তু মানুষের মত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যে প্রাণী প্রথম উৎপন্ন হলো তার নাম দেওয়া হয়েছে আরডিপিথেকাস রামিডাস (Ardipithecus ramidus) । এরপর পাওয়া গেলো ‘লুসি’ নামক এক ফসিল যা অস্ট্রালপিথেকাস অ্যাফারেনসিস (Australopithecus afarensis) গ্রুপের সদস্য। হোমিনিডদের (Hominid)  মধ্যে এদেরই দু’পায়ে দাঁড়িয়ে স্বচ্ছন্দে হাঁটার ক্ষমতা ছিল।

এরপর শুরু হল হোমো সেপিয়েস এর হোমো জেনাস (homo genus)এর যাত্রা। প্রায় ২৫ লক্ষ বছর আগে এল হোমো হাবিলিস(Homo habilis) যাদের মস্তিষ্ক ছিল পূর্বের তুলনায় বেশ বড়। এরপর এলো হোমো ইরেকটাস(Homo erectus) । প্রায় ১৩ থেকে ১৮ লক্ষ বছর আগে এদের আবির্ভাব।

বিবর্তনধারায় হোমো ইরেকটাস (Homo erectus)রা-ই সমাজবদ্ধ জীবনযাপন শুরু করে। আর এটা বোঝা যায় ফসিলে প্রাপ্ত তাদের হাড়ের গঠন দেখে। বিশাল শরীরের ভারসাম্য রক্ষার্থে তাদের কোমরের হাড় হয়ে গেলো চওড়া ও বড়। ফলশ্রুতিতে সন্তান প্রসবের সময় সমস্যা সৃষ্টি হল। এই সমস্যা দূর করার জন্য বংশানুক্রমিক ধারায় নবজাতকের মস্তিষ্কের আকার ক্রমান্বয়ে হতে লাগলো ছোট। ফলে এই অসহায় অপরিণত মস্তিষ্কের অধিকারী নবজাতককে লালন-পালন করে বড় করে তোলার জন্য শুরু হল সমাজবদ্ধ জীবন-যাপন। আর এভাবেই বিভিন্ন ফসিল প্রমানের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মানব প্রজাতির ক্রমাগত বিবর্তনের ধারাকে নির্ধারন করার চেষ্টা করেছেন।

তবে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়নি। যথেষ্ট ফসিল প্রমাণের অভাব এর একটি বড় কারণ। আর সে সমস্ত না জানা প্রশ্নের উত্তর দিতে আজ ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক ডিএনএ (DNA) প্রযুক্তি।

আজ আমরা জানি যে বৃহৎ নীল তিমি থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া সবারই ডিএনএ আছে। এবং সে ডিএনএ তৈরির উপাদানও সর্বত্র এক – অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন, থাইমিন। তাছাড়া বিভিন্ন প্রাণীর ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করে দেখা গেছে যে তাদের মধ্যে আশ্চর্যজনকভাবে অনেক সাদৃশ্য বিদ্যমান। মানব প্রজাতির সকল সদস্যের ডিএনএ সিকোয়েন্সে পার্থক্য খুব কম-ই আছে। তাছাড়া মানুষ আর শিম্পাঞ্জির ডিএনএ সিকোয়েন্সে প্রায় ৯৮ শতাংশ জায়গায় মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। এখন দেখা যাক এর তাৎপর্য কি?

ফসিল প্রমান থেকে আমরা জেনেছি যে, এপ’ দের (Ape) ধারা থেকে আরডিপিথেকাস রামিডাস (Ardipithecus ramidus) এর ধারা পৃথক হয়ে গেছে প্রায় ৫০ লক্ষ বছর আগে। আরডিপিথেকাস রামিডাস থেকে কালের বিবর্তনে বর্তমান মানব প্রজাতির সৃষ্টি। মানুষ আর শিম্পাঞ্জির পূর্বপুরুষ কিন্তু একই। ৫০ লক্ষ বছর ধরে প্রাকৃতিক নির্বাচন (Genetic drift)), জেনেতিক ড্রিফটের (Genetic Drift) চাপে- মিউটেশন ও রেপ্লিকেশন এর কারনে শিম্পাঞ্জি ও মানুষের ডিএনএ-তে সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ পার্থক্য। আবার মানুষ আর ইঁদুরের ডিএনএ তে গড়ে ৮৫% মিল আছে। এভাবে ডিএনএ এর মিল-অমিলের মধ্যে তুলনা করে বলে দেওয়া যায় যে কোন প্রজাতি মানুষ প্রজাতির খুব কাছাকাছি। এভাবে সকল স্তন্যপায়ীর ডিএনএ সিকোয়েন্সে যতখানি মিল পাওয়া যায়, সরীসৃপদের সাথে স্তন্যপায়ীদের ডিএনএ তে ততখানি মিল কিন্তু পাওয়া যায় না! বিভিন্ন ফসিল প্রমাণে দেখা যায় যে পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যত পুরনো সরীসৃপ ফসিল পাওয়া গেছে, তত পুরনো স্তন্যপায়ী ফসিল কিন্তু পাওয়া যায় নাই। এ থেকে বোঝা যায় যে, এ পৃথিবীতে বিবর্তনের ধারায় স্তন্যপায়ীদের আগমন সরীসৃপদের পরে হয়েছে। ডিএনএ সিকোয়েন্সে সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ীদের পার্থক্য, এই তত্ত্বের যৌক্তিকতাকেই সমর্থন করে।

পৃথিবীর সব এলাকায় মানব প্রজাতির গঠন প্রায় একই রকম। কিন্তু পৃথিবীর সব এলাকায় একই সময়ে ‘এপ’ থেকে মানব প্রজাতি সৃষ্টি হল কিভাবে সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। সব জায়গায় তো আর একই সাথে বিবর্তন আসার কথা না। আর প্রতিকূল পরিবেশ পেলেই বিবর্তন ত্বরান্বিত হয়। কিন্তু সমগ্র পৃথিবীব্যাপী একসাথে প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, আর তার কারনে ‘এপ’ দের ধারা থেকে আমাদের ধারা সর্বত্র একই সাথে ভাগ হয়ে গেছে তা ভেবে নেওয়াটা একটু অবাস্তব বটে। প্রাকৃতিক নির্বাচনের কারনে পৃথিবীর কোন একটি স্থানে হইতো এই পরিবর্তনটি এসেছে, আর তারপর সেই স্থান থেকে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর অন্যত্র মানব বংশধরেরা বিস্তার লাভ করেছে। একারনেই পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় মানব প্রজাতির গঠন একই রকম। মাইটোকনড্রিয়াল (mitochondrial)  ডিএনএ গবেষণা আমাদের দেখিয়েছে যে, পৃথিবীতে মানব প্রজাতির উদ্ভব সর্বপ্রথম হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশে। একারনে ৪০ থেকে ৫০ বছর পুরনো ফসিলগুলোর সবই পাওয়া গেছে শুধু আফ্রিকা মহাদেশে।

এভাবে ডিএনএ ও ফসিলের যুগলবন্দী বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে আর শুধু তত্ত্বের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখেনি। আজ একে একই সাথে তত্ত্ব (theory)  ও প্রকৃত ঘটনাও (fact)  বলা যায়। তবে সর্বসম্মতভাবে এই তত্ত্ব যদি গৃহীত হতে হয় তবে আরও জোরাল যুক্তি দরকার। আর এ যুক্তি প্রমান জোগাড় করে দিতে পারে আধুনিক ডিএনএ প্রযুক্তি। ডিএনএ প্রযুক্তির যেভাবে উন্নতি হচ্ছে তাতে এই তত্ত্বের স্বপক্ষে আরও জোরাল যুক্তি অচিরেই চলে আসতে পারে। তাই এককথায় এই তত্ত্বকে উড়িয়ে না দিয়ে আমাদের উচিৎ খোলা মন নিয়ে এ বিষয়ে আরও জানার চেষ্টা করা।

লেখাটি 2,488-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. যখন ডিএনএ বিশ্লেষণ করে পিতৃত্ব নির্ণয় করা হয় তখন সবাই সেটাকে মেনে নেয়। কিন্তু যখন একই ডিএনএ বিশ্লেষণ বলে যে মানুষ ও শিম্পঞ্জী একই উৎস থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে তখন মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়।

    +++++

    বিবর্তন একটা ঘটনা। ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন একটা থিউরী। হাইপোথিসিস না।

  2. বিবর্তন নিয়ে লেখা হঠাৎ শুরু হঠাৎ শেষ। তবে লেখাটা আকৃষ্ট করলো। সোমেন কে বিজ্ঞান ব্লগে স্বাগতম।

  3. বিবর্তনকে উদ্দেশ্য করে সৃষ্টিবাদীদের করা সবচেয়ে প্রচারিত সন্দেহ, বিবর্তন শুধুই একটি তত্ত্ব, এর কোনও বাস্তবতা নেই। প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার আগে জেনে নেই তত্ত্ব আর বাস্তবতার সংজ্ঞা কী।

    প্রচলিত অর্থে থিওরি বা তত্ত্ব বলতে আমরা যা বুঝি তা থেকে তত্ত্বের বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা সম্পূর্ণ আলাদা। আমেরিকার জাতীয় বিজ্ঞান পরিষদের মতে, “বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হল প্রাকৃতিক কোনো একটি ঘটনা বা বাস্তবতার (phenomenon) প্রতিপাদিত ব্যাখ্যা। তত্ত্ব, বাস্তবতা কিংবা প্রকৃতিকে যৌক্তিকভাবে বর্ণনা করার একটি সমীকরণ ছাড়া কিছুই না”।

    বিজ্ঞানীরা বাস্তবে ঘটে না, এমন কোনো কিছু নিয়ে কখনও তত্ত্ব প্রদান করেন না। কোন পর্যবেক্ষণ যখন বারংবার বিভিন্নভাবে প্রমাণিত হয় তখন তাকে আমরা বাস্তবতা বা সত্য (fact) বলে ধরে নেই। আর তত্ত্ব হচ্ছে সেই বাস্তবতাটি কিভাবে ঘটছে তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা।

    গাছ থেকে আপেল পড়ার ব্যাপারটাই ধরি। গাছ থেকে যে আপেল মাটিতে পড়ছে তা বাস্তবতা। আর যে তত্ত্বের সাহায্যে এই বাস্তবতার ব্যাখ্যা দেয়া হয় তাকে আমরা বলি মহাকর্ষ তত্ত্ব। বিবর্তনের ক্ষেত্রেও একই কথাই প্রযোজ্য। এটি একটি বাস্তবতা যে জীবজগৎ স্থির নয়, তাদের বিবর্তন ঘটছে, এই বাস্তবতাটি বিগত দেড়শ বছর ধরে হাজারো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বহু রকমভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আর যে তত্ত্বের মাধ্যমে এই বাস্তবতাটি ব্যাখ্যা করা হয় তাকে আমরা সাধারণভাবে বলি বিবর্তন তত্ত্ব।

    একটি অনুকল্প যখন গ্রহণ করা হয় তখন এর সত্যতা পরীক্ষার জন্য তাকে বর্তমান পর্যন্ত সকল আহরিত জ্ঞানের কষ্টিপাথরে যাচাই করা হয়। যদি এই অনুকল্পটি বিভিন্ন পরীক্ষায় সঠিক ফলাফল দেয়, এবং সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়, তাহলেই একে তত্ত্বের মর্যাদা প্রদান করা হয়। আমরা দেখেছি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত গাছ থেকে আপেল পড়া বাস্তবতাটির ব্যাখ্যায় নিউটনের তত্ত্বই সঠিক ফলাফল দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে আবিষ্কৃত বিশেষ কিছু পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেল, নিউটনের তত্ত্ব সঠিক ফলাফল দিতে পারছে না, যা পারছে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। সুতরাং এখন আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বই সার্বিকভাবে মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব হিসেবে গ্রহণযোগ্য। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা বিশেষ প্রয়োজন, গাছ থেকে আপেল পড়ার ব্যাখ্যা যা দিয়েই দেওয়া হোকনা কেন, আপেল পড়া কিন্তু থেমে যায়নি। বিবর্তনও তাই। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা থেকে গত দেড়শ বছর ধরে পাওয়া হাজারো প্রমাণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা শতভাগ নিশ্চিত যে, পৃথিবীর সকল প্রজাতির উদ্ভব বিবর্তনের মাধ্যমেই হয়েছে। এটি সূর্য পৃথিবী চারদিকে ঘোরার বা গাছ থেকে আপেল পড়ার মতোই বাস্তবতা। এই বাস্তবতাটি ডারউইনের তত্ত্ব দিয়ে এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে, ভবিষ্যতের কোনও পরিস্থিতিতে ডারউইনের তত্ত্ব যদি সঠিক ফলাফল দিতে অপারগ হয় তাহলে আমরা আরও সঠিক কোনও ব্যাখ্যার সন্ধান পাবো। কিন্তু গাছ থেকে আপেল পড়ছিল, পড়ছে এবং পড়তে থাকবে, বিবর্তনও হয়েছিল, হচ্ছে, হতেই থাকবে।

    1. আমার মনে হয় এই ব্যাপারে উইকিপিডিয়া কি বলে সেটা দেখা যেতে পারে। অনেক জীববিজ্ঞানীই মনে করেন Evolution as fact not theory।

  4. H.M.Kawsar hossain Avatar
    H.M.Kawsar hossain

    লেখক কে ধন্যবাদ যুক্তিযুক্ত লেখার জন্য

Leave a Reply to nitol1991Cancel reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers