shallow focus photography of yellow star lanterns

তারাদের জন্ম মৃত্যু

লিখেছেন

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

রাতের আকাশে মিটমিট করে জ্বলছে হাজার কোটি তারা (নক্ষত্র)।অকল্পনীয় দুরত্বে থাকা সত্বেও তারাদের আলো আমরা দেখতে পাই। স্বাভাবিক ভাবেই মনে প্রশ্ন আসতে পারে,কিভাবে একটি তারার সৃস্টি হয়? আর এই যে মিটমিট করে জ্বলছে কিভাবে? তারাদের অভ্যন্তরে তাপের রহস্য 1938 সালে বিজ্ঞানী হানস্ বেথে (Bethe) ও ফন উইসজেইকার উদঘাটন করেন।বস্তু গটিত হয় পরমানু দিয়ে,আর পরমানু গঠিত হয় গোটাকতক ভিন্ন ভিন্ন মৌলিক কনিকা দিয়ে। তারার প্রধান উপাদান হলো হাইড্রোজেন ও কিছু হিলিয়াম গ্যাস।এই গ্যাস যখন এক জায়গায় জড়ো হতে হতে একটি পিন্ডের আকার নেয় তখন শুরু হয় অভিকর্ষের খেলা। এই অভিকর্ষের টানে প্রকান্ড গ্যাসীয় পিন্ড সংকুচিত হতে থাকে।যতই সংকুচিত হয় সংকোচনের মাত্রাও বাড়তে থাকে। এই পর্যায়ে সৃস্টি হয় প্রোটোস্টার (Protostar)। এই অবস্হা এমন একটি পর্যায়ে চলে আসে, তখন পরমানুর ভিতরকার কণিকাগুলো কাছাকাছি এসে পরস্পরের সাথে ধাক্কা-ধাক্কি শুরু করে দেয়।এর ফলে তৈরী হয় তাপ এবং এভাবে চলতে চলতে অভ্যন্তরের তাপমাত্রা যখন 15 মিলিয়ন ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড ছাড়িয়ে যায় তখনই তৈরী হয় একটি দীপ্তিশালী তারার। এই পদ্ধতিকে বলা হয় নিউক্লিয়ার ফিউসন (Nuclear Fusion) বা পারমানবিক একীভবন। তারাদের কেন্দ্রে এই বিক্রিয়া ঘটার ফলেই আলো বিকরিত হয়।এই প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রতি সেকেন্ডে একটি তারার কেন্দ্রে 4 টি হাইড্রোজেন পরমানু মিলে একটি হিলিয়াম পরমানুর সৃস্টি হচ্ছে এই রুপান্তরের পরেও কিছু পরিমান ভর বাকী থেকে যায়,বাড়তি এই ভর (Mass) শক্তিতে পরিনত হয় ।  অন্য সব তারাদের মতই আমাদের সূর্য ও এভাবেই সৃস্টি হয়েছিল। সূর্যের দেহ থেকে প্রতি সেকেন্ডে 40,00,000 টনের মতো হাইড্রোজেন শক্তি বা বিকিরনের আকারে শেষ হচ্ছে। আর এর জন্যই সূর্যের আলো এবং তাপের এত প্রচন্ডতা। মহাকাশে সূর্যের চেয়ে হাজার গুন বড় নক্ষত্র আছে, যেমন বানরাজ (Rigel) এর ব্যাস সূর্যের ব্যাসের 33 গুন। মহাকাশে এই রকম অগুনিত তারার জম্ন হচ্ছে আবার অগুনিত তারার মৃত্যু হচ্ছে।


একটি তারা জ্বলতে জ্বলতে এক সময় তার অভ্যন্তরের সমস্ত হাইড্রোজেন যখন নিঃশেষ যায় তখন সেই তারাটির মৃত্যু ঘন্টা বেজে ওঠে,এবং এটি কয়েকটি পর্যায়ে শেষ হয়।


তারার জীবনের প্রথম পর্ব: একে বলা হয় মেইন সিকোয়েন্স (Main sequence) বা প্রধান পর্যায়। একটি তারা যখন জ্বলে ওঠে তখন সেই তারাটির মাঝে দুটি বল কাজ করে, একটি বল হলো মহাকর্ষ বল (Gravitational Force) এই বল বাইরের সব বস্তুকে কেন্দ্রের দিকে সংকুচিত করার চেস্টা করে। অন্যটি বিকিরন জনিত চাপ (Radiation Pressure) যা তারাটির কেন্দ্র থেকে বাইরে এসে এই একমুখি টানকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এই বল দুটি যখন সমান হয় তখন তারাটি একটি স্হিতিশীল অবস্হায় পৌছে,একে বলে তারাটির প্রধান পর্যায়।আমাদের সূর্য বর্তমানে এই পর্যায়ে আছে এবং বিজ্ঞানীদের ধারনা সূর্য আরো প্রায় 10 বিলিয়ন বছর এইভাবে থাকবে।


লোহিত দানব (Red Giant): তারার জীবনের দ্বিতীয় পর্যায়। একটি তারা যখন তার মোট হাইড্রোজেনের এক দশমাংশ খরচ করে ফেলবে সাথে সাথে তারাটি অস্হির হয়ে উঠবে।এই অবস্হায় তারাটির কেন্দ্র মহাকর্ষ বলের প্রভাবে অসম্ভব সংকুচিত হতে থাকবে,কেন্দ্রের তাপ বহুগুন বেড়ে যাবে। এই তাপের ফলে তারাটির বাইরের অংশ তপ্ত হয়ে সম্প্রসারিত হবে, এই লাল দানবের পৃষ্ঠের তাপ হবে প্রায় 3,500 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। সূর্য যখন লোহিত দানব পর্যায়ে পৌছাবে তখন সৃর্যের বাইরের অংশ সম্প্রসারিত হয়ে বৃহস্পতির কক্ষপথ পর্যন্ত পৌছে যাবে। আকশে এই রকম অনেক লাল দানব তারা আছে,যেমন কালপুরুষ (Orion) মন্ডলের আদ্রা (Betelgeuse), বৃশ্চিক (Scorpius) মন্ডলের জ্যেষ্ঠা (Antares) এই তারাদের খালি চোখেই লাল রংয়ের দেখতে পাবেন।


শ্বেত বামন (White dwarf): এই পর্যায়ে তারাটির বাকী হাইড্রোজেনটুকু হিলিয়ামে পরিবর্তিত হয়ে তাপ আকারে বিকরিত হতে থাকে,এবং বাইরের অংশটি কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন হয়ে যায়। (তখন একে বলে প্লানেটরী নীহারিকা (Planetary nebula)। এই রকম একটি গ্রহ নীহারিকা হল হেলিক্স (Helix nebula) নীহারিকা। এই সময়ে তারাটি পূর্বের তুলনায় বহুগুন ছোট হয়ে যায়। তখন এর ব্যাস হয় প্রায় 13,000 কিঃমিঃ। কিন্ত ছোট হলেও তারাটির ভর থাকবে অপরিবর্তীত। তখন এই তারার এক টেবিল চামচ পদার্থের ওজন হবে প্রায় 5 টন।


কাল বামন (Black dwarf): শ্বেত বামন পর্যায়ে তারাটির দেহের তাপ ও এক সময় নিঃশেষ হয়ে যাবে,এবং এমন একটি পর্যায়ে উপনিত হবে যখন তারাটি আর সংকুচিত হতে পারবে না, এবং সেই সাথে আর তাপের ও বৃদ্ধি ঘটবে না। এবার ধীরে ধীরে তারাটির কাল বামন রুপে পরিণত হয়ে মহাকাশের কোন একখানে পড়ে থাকবে তারাটির মৃতদেহ। আমাদের সূর্য সহ এই ধরনের অন্যান্য তারার শেষ পরিনতি এই রকম হবে। এখানে উল্লেখ্য কোন তারার পরিনতি কি হবে তা নির্ভর করবে তারাটির আদি ভরের উপর এবং একটি শ্বেত বামনের ভর কোন ভাবেই সূর্যের ভরের দেড় গুনের বেশী হতে পারবে না। এই সীমারেখাকে চন্দ্রশেখর সীমা বলে। কোন তারর ভর যদি শ্বেত বামনের চেয়ে বেশী হয় তাহলে সেই তারাটির শেষ পর্যায়ে আরো কিছু পরিবর্তন ঘটবে।


নিউট্রন স্টার (Neutron star): বেশী ভর সম্পন তারাটি শ্বেত বামন পর্যায় অতিক্রম করবে,এবং মাধ্যাকর্ষন চাপে তারাটি আরো সংকুচিত হতে থাকবে। এবং ভিতরের তাপ বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে আসবে যে এই তাপে তারাটিতে একটি প্রচন্ড বিস্ফোরন ঘটবে এবং তারাটির বাইরের অংশ ছিটকে মহাকাশের বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পরবে। একে বলে সুপার নোভা (Super nova) বিস্ফোরন। এই বিস্ফোরনের আলো এতই উজ্জল হয় যে একটি গ্যালাস্কীর উজ্জলতাও এর কাছে কিছুই না। যদি ও এই উজ্জলতা বেশী সময় স্হায়ী হয় না। এই রকম নব তারা হলো বৃষ (Taurus) মন্ডলের কাঁকড়া (Crab nebula) নীহারিকা, ট্যারানটুলা (Tarantula nebula) নীহারিকা যাকে সুপার নোভা 1987 বলে। (বিজ্ঞানীদের ধারনা মহাকাশে ছিটকে পড়া এই গ্যাস পরবর্তীতে আবার এক জায়গায় সংকুচিত হয়ে আবার নতুন তারার সৃস্টি করে)।এই পর্যায়ে এসে ইলেকট্রন প্রোটন একসাথে হয়ে নিউট্রনে পরিনত হয়।তখন একে বলে নিউট্রন স্টার। মহাকাশে রেডিও তরন্গ বিকিরনকারী এই ধরনের তারাকে পালসার (Pulsar= Pulsating radio sources) বলে।এই তারার ব্যাস মাএ 10 কিঃমিঃ কিন্ত এর ঘনত্ব এত বেশী যা প্রায় তিন সৌর ভরের সমান।এই তারার এক টেবিল চামচ পদার্থের ওজন প্রায় 100 বিলিয়ন টন। কাঁকড়া নীহারিকার মধ্যে যে তারাটি আছে,সেটি একটি নিউট্রন স্টার।


ব্লাক হোল (Black Hole): এই পর্যায়ে অবিরাম সংকোচন চলতে থাকে,মধ্যাকর্ষনের টানে সমস্ত পদার্থ কেন্দ্রের দিকে জড় হতে থাকে এবং এই শক্তি এমন এক পর্যায়ে পৌছায় যখন কোন কিছুই আর সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে না। এর মধ্যাকর্ষন টান উপেক্ষা করে আলো পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারে না। আর আলো না আসতে পারায় এই বস্তুটিকে চোখেও দেখা যায় না। মহাকাশের এই বস্তুটিকে বলা হয় কৃ্ষ্ণ গহ্ববর। এর ঘনত্ব এত বেশী যে এর এক গামলা পদার্থ যদি পৃথিবীতে আনা যায় তার ওজনের জন্য পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। একে চোখে দেখা না গেলেও এর অবস্হান বের করা সম্ভব। একটি ব্ল্যক হোলের আকর্ষন বলয় বিশাল এলাকা জুড়ে একে ঘিরে রাখে এবং এই আকর্ষন বলয়ের মধ্যে যদি কোন তারা এসে পড়ে, তখন সেই তারার শরীর থেকে পদার্থ একটি সর্পিল গতিতে কৃন্ষ গহ্ববরের দিকে আসতে থাকে এবং পদার্থ গহ্ববরের ভিতরে ঢোকার সময় প্রচন্ড গতিতে ঘুরতে থাকে,এবং এর এক পর্যায়ে X রশ্নির সৃস্টি হয়,বিজ্ঞানীরা এই রশ্নির ঝলক দেখে এর অস্তিত আবিস্কার বা অনুভব করেন। এই রকম একটি গহ্ববর আছে সিগনাস (বক) মন্ডলে যাকে সিগানাস X1 বলে। Black hole হলো একটি তারার চরমতম অবস্হা,তবে সব তারা এই অবস্হায় পৌছাবে না। শুধু মাত্র চন্দ্র শেখরের সীমার চেয়ে অত্যাধিক বেশি ভর সম্পন তারার এই পরিনতি হবে।এই হলো একটি তারার সংক্ষিপ্ত জীবন মৃত্যুর বর্ননা।

লেখাটি 782-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Response

  1. আপনার বিচিত্র বিষয়ে লেখালেখিতে আগ্রহ আছে। তবে অজস্র বানান ভুল। এগুলো চোখে লাগে খুব। যেমন সৃস্টি, সত্বেও, কনিকা, গটিত, পরমানুর, গুন।

Leave a Reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 905 other subscribers