গণিতের সৌন্দর্য্য: পর্ব-৪ (সবচেয়ে বড় সংখ্যাগুলো)

লেখাটি , বিভাগে প্রকাশিত

আজ কিছু বড় বড় সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করব।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে বড় যে সংখ্যাটি ব্যবহৃত হয় সেটা হল বিলিয়ন। টাকা গণনার জন্য এই সংখ্যাটি ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশের দু-চারজন মানুষ এই সংখ্যাটি ব্যবহার করেন। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির হিসাবের ক্ষেত্রে আরেকটু বড় সংখ্যা ব্যবহৃত হয়, ট্রিলিয়ন। এই ক্ষেত্রটির বাইরে আমাদের গণনা মিলিয়ন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।

১ মিলিয়ন(Million) = ১০০০ হাজার = ১০০০০০০ = ১০^৬
১ বিলিয়ন(Billion) = ১০০০ মিলিয়ন = ১০০০০০০০০০ = ১০^৯
১ ট্রিলিয়ন(Trillion) = ১০০০ বিলিয়ন = ১০০০০০০০০০০০০ = ১০^১২

ট্রিলিয়নের বেশী যদিও হিসেব করতে হয়না এবং অদূর ভবিষ্যতে সেই সম্ভবনা অতি ক্ষীণ, তথাপি, যেহেতু এটা একটা গণিত বিষয়ক লেখা এই ধারাটা আরেকটু লম্বা করা যাক।

কোয়াড্রিলিয়ন(Quadrillion) = ১ এর পর ১৫ টা শুন্য = ১০^১৫
কুইন্টিলিয়ন(Quintillion) = ১ এর পর ১৮ টা শুন্য = ১০^১৮
সেক্সটিলিয়ন(Sextillion) = ১ এর পর ২১ টা শুন্য = ১০^২১
সেপটিলিয়ন(Septillion) = ১০^২৪
অক্টিলিয়ন(Octillion) = ১০^২৭
ননিলিয়ন(Nonillion) = ১০^৩০
ডেসিলিয়ন(Decillion) = ১০^৩৩
আনডেনিলিয়ন(Undecillion) = ১০^৩৬
ডুওডেসিলিয়ন(Duodecillion) = ১০^৩৯
ট্রেডেসিলিয়ন(Tredecillion) = ১০^৪২
কোয়াটোওরডেসিলিয়ন(Quattuordecillion) = ১০^৪৫
কুইনডেসিলিয়ন(Quindecillion) = ১০^৪৮
সেক্সডেসিলিয়ন(Sexdecillion) = ১০^৫১
সেপ্টেনডেসিলিয়ন(Septendecillion) = ১০^৫৪
অক্টোডেসিলিয়ন(Octodecillion) = ১০^৫৭
নভেমডেসিলিয়ন(Novemdecillion) = ১০^৬০
ভিজিন্টিলিয়ন(Vigintillion) = ১০^৬৩

এবারে বিশেষ কিছু বড় সংখ্যা:
গুগোল(Googol): এই সংখ্যাটির মান ১০^১০০। এটি সাধারন বৈজ্ঞানিক ক্যালকুলেটরের (scientific calculator) গণনার সীমা। এটি এত বড় সংখ্যা যে, এই মহাবিশ্বের মোট পরমানুর সংখ্যা এর কাছে নস্যি! সংখ্যাটি প্রথম প্রবর্তন করেন আমেরিকান গণিতবিদ এডওয়ার্ড কাসনার ১৯৩৮ সালে। গুগোল নামটি দেয় কাসনারের ৯ বছর বয়সী ভাতিজা মিল্টন সিরোট্টা। যদিও গনিত শাস্ত্রে এই সংখ্যাটি বিশেষ কোনো গুরুত্ব বহন করে না তবে অন্যান্য বড় বড় পরিমানের সাথে তুলনা করার জন্য এই সংখ্যাটি ব্যবহার করা হয় (আমি যেমন একটু আগে মহাবিশ্বের মোট পরমানুর সংখ্যা এর সাথে তুলনা করেছি)। এই সংখ্যাটি ৭০!(Factorial 70) এর কাছাকাছি মানের ।

সেন্টিলিয়ন(Centillion) = ১০^৩০৩, এই সংখ্যাটি যে কত বড় তা কল্পনাতীত! একটু ধারনা দেয়ার চেষ্টা করি; এই মহাবিশ্বে যত সংখ্যক পরমানু আছে ততসংখ্যাক মহাবিশ্ব যদি কল্পনা করি তাহলে সেই সমস্ত মহাবিশ্বে সবমিলিয়ে যতসংখ্যক পরমানু থাকবে এই সংখ্যাটি তার চেয়েও বড়!(মাথা ঘোরাচ্ছে কি?)

গুগোলপ্লেক্স(googolplex): এই সংখ্যাটির মান ১০^googol। যদিও খুব সহজেই googol নাম ব্যবহার করে সংখ্যাটি লিখে ফেলা গেল। কিন্ত সংখ্যা লেখার প্রচলিত পদ্ধতিতে অর্থাৎ ১০০০০০০০……এভাবে যদি এই সংখ্যাটিকে লিখতে চাই তাহলে সেটা একটা অসম্ভব কাজ হবে। কারনটা এখন ব্যখ্যা করছি; এই সমগ্র মহাবিশ্বের মোট আয়তনের তুলনায় এর মধ্যস্থিত পরমানুগুলোর মোট আয়তন অতি অতি অতি নগন্য। এখন এই মহাবিশ্বের সম্পুর্ণ স্থানটিকে যদি পরমানু দিয়ে ঠেসে দেয়া হয় এবং প্রতিটি পরমানুতে এই সংখ্যাটির একটি করে অঙ্ক লেখা হয়, তারপরেও পুরো সংখ্যাটি লিখে শেষ করা যাবে না!

গ্রাহামের নাম্বার (Graham’s number): এই সংখ্যাটির অবতারনা করেন রোনাল্ড গ্রাহাম। রামজে থিওরী নামক একটি সমস্যার সমধান হিসেবে এই সংখ্যাটি বিবেচনা করা হয়। এই সংখ্যাটি জানার আগে একটা বড়সড় দম নিয়ে নিন। তবে ভালো হয় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিন কিংবা সবচেয়ে ভালো হয় এক বেলা ঘুমিয়ে আসলে। এই সংখ্যাটিকে প্রচলিত সূচক দিয়ে প্রকাশ করার কোনো ব্যবস্থা নাই। একারনে এই সংখ্যাটিকে প্রকাশ করার জন্য একটি নতুন চিহ্নের অবতারনা করা হয়েছে। সেটা হল: ‘↑’

এই চিহ্নটি ব্যবহার করে গ্রাহামের সংখ্যা লেখা হয় :

এখানে প্রত্যেকটি স্তরে ↑ এর সংখ্যা নির্ধারিত হয় তার আগের স্তরের ↑ এর সংখ্যা অনুযায়ী। গ্রাহামের সংখ্যাটিকে (G)সংজ্ঞায়িত করা যায় এভাবে,
G= g(64)
যেখানে, ১ম স্তরের জন্য g(1) = 3↑↑↑↑3, n তম স্তরের জন্য g(n)= 3↑^(g(n)-1) 3
অতএব গ্রাহামের সংখ্যা G কে লেখা যায়, G = g(64) = 3↑^(g(63))3
বুঝতে পারছেন, g(63) এর মান আসবে g(62) হতে। g(62) আসবে g(61) হতে। এভাবে g(2) এর মান আসবে g(1) হতে, আর g(1) হলো 3↑↑↑↑3।
এবার আসা যাক ↑ এর ব্যবহার সম্পর্কে।
3↑3 = 3^3 = 27
3↑↑3 = 3↑(3↑3) = 3↑27= 3^27=7625597484987
3↑↑↑3 = 3↑↑(3↑↑3)= 3↑↑(3↑3↑3) = 3↑ 3↑ 3……3↑ 3↑ 3…………3↑ 3↑ 3 (7625597484987 বার 3↑ আসবে)= বিশাল
3↑↑↑3 সংখ্যাটিই একটি যথেষ্ট বড় সংখ্যা। তাহলে গ্রাহামের নাম্বারের প্রথম g হবে,
g(1) = 3↑↑↑↑3=3↑↑↑…………….3↑↑↑3= সুবিশাল
যদি g(2) = 3↑↑…………↑3 (মাঝথানে g(1) এর সমান সংখ্যক ↑)
এভাবে যেতে যেতে g(64) এর মান হবে গ্রাহামের সংখ্যা। এটা যে কত বিশাল একটা সংখ্যা তা চিন্তা করতে গেলে শুধু মাথাই ঘুরায়। এর আগে যত সংখ্যা আলোচনার করেছি সেগুলো এর বিশালত্বের কাছে অসহায় রকমের ছোটো। সেটা চিন্তা করলেও মাথা ঘোরায়। আমার সত্যি সত্যি এখন মাথা ঘোরাচ্ছে।
আপনাদের মাথা ঘোরানো স্বাভাবিক হয়ে আসার আগে এখান থেকে বিদায় নেই। তা নাহলে আপনাদের মাথা ঘুরিয়ে দেয়ায় গালাগালি একটাও মাটিতে পড়বে না! :)

লেখাটি 2,183-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. কি বলবো … মাথা তো নষ্ট করে দিলেন। আচ্ছা গ্রাহাম সাহেব কোন সমস্যা সমাধানের জন্য এত বড় সংখ্যা তৈরি করেছিলেন??

    1. সমস্যাটি হলো:
      “Consider an n-dimensional hypercube, and connect each pair of vertices to obtain a complete graph on 2n vertices. Then colour each of the edges of this graph either red or blue.
      What is the smallest value of n for which every such colouring contains at least one single-coloured complete subgraph on 4 coplanar vertices?”

      এর সমাধানের সর্বোচ্চ মান হল গ্রাহামের নাম্বার। আর সর্বনিন্ম মান ৬!!!

      1. আর উপরের ছবিটা কি এই সমস্যার ভিজুয়ালাইজেশন??

        1. না। ওইটা আরেকটা সমস্যার গ্রাফ। 🙂

  2. এক কথায় অসাধারণ…

    1. ধন্যবাদ।

  3. আসলেই মাথা নষ্ট…।

Leave a Reply to bengalensisCancel reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers