jellyfish clip art

সিলিকন ভিত্তিক জীবনঃ বাস্তবতা আর সম্ভাবনা

লিখেছেন

লেখাটি , বিভাগে প্রকাশিত

সিলিকন ভিত্তিক কাল্পনিক  প্রাণ

প্রাণ! এক অদ্ভুত বিস্ময় আমাদের পৃথিবীর জন্য। এই প্রাণ থাকাতেই আমরা মানুষ আমরা যর বস্তুর থেকে আলাদা। আমাদের হাসি-কান্না আনন্দ বিস্ময় সব কিছুই নিরধারন করে যেন এই প্রাণ আর সেটার স্পন্দন। এমনিতে প্রাণ বলতে আমরা মূলত বুঝি বাম হাতি অ্যামিনো এসিড আর প্রোটিন এর সমন্বয়ে গঠিত এক অজানা কুহেলিকা কে। যদিওবা এই প্রাণ এর রহস্য দিয়ে ঘেরা ডিএনএ আমরা বহন করে নিয়ে চলেছি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
চার ধরন এর ক্ষার আর এক ধরনের চিনি নিয়ে গঠিত এই ডিএনএ এর সবথেকে বড় অভিব্যাক্তি হচ্ছে বা এর সবথেকে বড় সত্য হচ্ছে এর মধ্যেকার কার্বন যৌগ।

আমাদের দেহ এর ক্ষেত্রে যতগুলো MVP বা প্রধান উপাদান সমুহ আছে সব গুলোই গঠিত হয় কার্বন এর মাধ্যমে। যদিওবা আমাদের দেহে ৭০% পানি এর পরেও বাকি যা আছে তার মধ্যে কার্বন এর হার খুব কম না প্রায় ১৮% আর এই ১৮% কার্বন আমাদের দেহ আর প্রাণ কে তৈরি করে দিচ্ছে টিকে থাকা থেকে বংশবৃদ্ধি করার মত সকল রসদ।

তবে এই বিশাল মহাবিশ্বে কি শুধুই কার্বন এর দ্বারা প্রাণ এর উৎপত্তি ঘটতে পারে ?
এর বাইরে কি আর কোন ধরণ এর উপাদান দ্বারা প্রাণ এর উৎপত্তি ঘটতে পারে না ?

এর প্রশ্নের উত্তর সর্বপ্রথম আমাদের কে দেন একজন জার্মান অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট Julius Scheiner তিনি তার গবেষণা তে বলেন যে প্রাণ উৎপন্ন হবার জন্য কার্বন অত্যাবশকিয় না এর বদলে ক্যাটেনেশান এর মাধ্যমে অন্য বেশ কিছু মৌল যেমন সালফার, বোরন এবং আর্সেনিক প্রাণ সৃষ্টি করতে পারে।

তবে প্রাণ এর বিকল্প উৎস এর ক্ষেত্রে সবথেকে প্রথমে যে মৌলের নাম আসে সেটা হচ্ছে সিলিকন।

এক্ষেত্রেও সবথেকে প্রথমে আসে Julius Scheiner এরই নাম তিনিই সবথেকে প্রথমে এটা বলেন যে প্রান সিলিকন থেকেও তৈরি হতে পারে। তার এই আইডিয়া টা গ্রহণ করেন ব্রিটিশ রসায়নবিদ James Emerson Reynolds তিনি ১৮৯৩ সনে তিনি ব্রিটিশ সোসাইটি ফর আডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স এ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন যে সিলিকন এর উত্তাপসহ্য করার গুন এর কারণে পৃথিবী থেকে অনেক বেশি উত্তপ্ত গ্রহেও  প্রাণ এর উৎপত্তি ঘটতে পারে। পৃথিবীতে অবস্থিত thermophiles দের মত এক রকম এর অণুজীব এর উৎপত্তি ঘটতে পারে সিলিকন এর মাধ্যমে।

তাঁর এবং রবার্ট বেল এর আইডিয়া কে বিশ্লেষণ করার পরে ১৮৯৪ সনে এইচ ,জি ,ওয়েলস লিখেন

One is startled towards fantastic imaginings by such a suggestion: visions of silicon-aluminium organisms – why not silicon-aluminium men at once? – wandering through an atmosphere of gaseous sulphur, let us say, by the shores of a sea of liquid iron some thousand degrees or so above the temperature of a blast furnace.

এর সাথে তাল মিলিয়ে ৩০ বছর আগে J. B. S. Haldane  বলেছিলেন যে কোন গ্রহের কেন্দ্রে হয়ত সিলিকন দ্বারা গঠিত প্রান পাওয়া গেলেও যেতে পারে। কেননা এরুপ প্রান আয়রন বা লোহা এর অক্সিডাইজেশান এর মাধ্যমে টিকে থাকবে সামান্য গলিত সিলিকন এর দ্বারা গঠিত অবস্থায়।

আসলে  কার্বন আর সিলিকন দুইটাই অনেকটা একই ধরন এর বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, এরা দুইজনই চার নাম্বার শ্রেণী বা গ্রুপ এর অংশ পর্যায় সারণীতেএরা দুইজনেই বিভিন্ন পলিমার গঠন করতে পারে । যেমন কার্বন চারটা হাইড্রোজেন এর সাথে একত্রিত হয়ে তৈরি করে মিথেন(CH4)  ।

সে ভাবেই সিলিকন এর সাথে চার কার্বন সম্মিলিত হয়ে তৈরি করে সাইলেন । এছারাও সিলিকন এর মাধ্যমে সিলিকেট (কার্বনেট এর ন্যায়) এর পরে ক্লোরোফর্ম (সিলিকেট ক্লোরোফর্ম) তৈরি করে এবং সীমিত আকারে কিছু ক্যাটেনেশান এর ধর্মও তারা প্রদর্শন করে । এইজন্য অনেকে বলে থাকেন যে সিলিকনও একটা উৎস  হতে পারে প্রান তৈরি করার।

এটা হতে পারত তবে আসলে এটা হবার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষুদ্র কেননা  কিছু প্রান যদিওবা সিলিকন থেকে তৈরি হতেও পারত তবে এদের মধ্যেকার যে কেন্দ্রীয় বিক্রিয়া সেটা কিভাবে সংঘটিত হতে পারে সেটা একটা আসলেই বড় জট। কেননা অক্সিডাইজেশান এর ফলে যে কার্বন ভিত্তিক জীবন সমূহ তৈরি হয় তাদের প্রধান বিক্রিয়ার ফসল হচ্ছে কার্বন ডাই অক্সাইড কিন্ত সিলিকন এর শ্বসন এর ক্ষেত্রে যেটা হতে পারে সেটা হচ্ছে Sio4 বা সিলিকেট । কেননা তৈরি হওয়া মাত্রই সিলিকা নিজেকে চারটা অক্সিজেন এর সাথে পলিমার বন্ধনে জড়িয়ে ফেলে আর এর ফলে অনেক বড় একটা পলিমার উৎপন্ন হয়। আর এই পলিমার এর যে নিঃসরণ সেটা একেবারেই কঠিন কাজ বা প্রায় অসম্ভব একটা বিষয় সিলিকন ভিত্তিক জীবন এর জন্য।

এর পরেও আরেকটা বিষয় এখানে থেকেই যায় আর সেটা হচ্ছে খাদ্যপরিপাক বা পরিপাকক্রিয়া ।

কেননা এই ক্ষেত্রে কার্বন এর যে ফর্ম টা আছে সেটা খুব দ্রুত ভাবে চারটা হাত কে অধিকার করে নেয় একটি করে অক্সিজেন এর মাধ্যমে । এছাড়াও কার্বন যখন প্রোটিন ফর্ম করে তখন সে রাইট আর লেফট হ্যান্ড এর বিভিন্ন রকম এক বন্ধন যুক্ত অক্সিজেন এর মাধ্যমে অতি বৃহৎ পলিমার এর উৎপত্তি ঘটায়।

এবং এই এনানশিওমার দের প্লেইন পোলারাইজড লাইট কে ডান দিকে ঘোরানর প্রবণতা এর জন্যই কার্বন অন্যন্য।কেননা সিলিকন এর সেই ধরন এর কোন রকম এর এনানশিওমার এর গঠন এর এবিলিটি নাই বললেই চলে।

এর পরেও বিভিন্ন গ্রহ আর উপগ্রহ নীহারিকা আর তারকাপুঞ্জ এর ক্ষেত্রে অক্সিডাইজড সিলিকন এর মাত্রা তুলনা মুলক ভাবে অনেক অনেক কম , বা প্রায় নেই বললেই চলে কিন্ত এর পরেও একটা আশা কিন্ত থেকেই যায় যে হয়ত কোন প্রান এমন থাকতেও পারে যে প্রান সিলিকন দ্বারা গঠিত ।

এই জন্যই বলতে হয় যে জীবনের চলার পথে মানুষ আশা নিয়েই পথ চলে। তবে এই আশা অবশ্যই সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে যে একদিন আমরা ও সিলিকন দিয়ে তৈরি আমাদের মহাজাগতিক ভাইদের সাথে সাক্ষাত করতে পারব।

লেখাটি 612-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Response

  1. আমরা আজ জানি বিষাক্ত আর্সেনিক দিয়ে মনোলেকের অণুজীবদের ডিএনএ ফসফেটগুলো প্রতিস্থাপিত হয়েছে … সুতরাং সিলিকন দিয়ে মহাবিশ্বের অন্যত্র প্রাণের সম্ভাবনার কথা ভাবাটা মোটেই কল্পকাহিনী নয় …

Leave a Reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 905 other subscribers