অণুজীব যখন আশীর্বাদঃ পর্ব-১

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

(আগের লেখায় অণুজীবের কিছু উপকারী দিক নিয়ে লিখেছিলাম। ঠিক করেছি ‘অণুজীব যখন আশীর্বাদ’ এই শিরোনামে কিছু লেখা লিখব যেখানে অণুজীবের উপকারী দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে।)

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে চলছে। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করার পাশাপাশি কিছু জটিল সমস্যারও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল নানা ভাবে সৃষ্ট আবর্জনা। গৃহস্থালির আবর্জনা থেকে শুরু করে শিল্প কারখানা ও বিভিন্ন খনি থেকে নিষ্কাশিত আবর্জনা মানুষ ও পরিবেশের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষাক্ত আবর্জনা যাতে পরিবেশের ক্ষতি করতে না পারে এজন্য কিছু পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে আসছে। এর মধ্যে একটি হল আবর্জনাগুলোকে অন্য কোন জায়গায় পুঁতে ফেলা, পুড়িয়ে ফেলা কিংবা রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করে বিষাক্ত আবর্জনাকে কম বিষাক্ত পদার্থে রূপান্তরিত করা। কিন্তু এতে পরিবেশ দূষণ থেমে নেই। আবর্জনার পরিবর্তিত রূপও ভয়াবহ ক্ষতির হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের একটি কার্যকরী উপায় হল ‘বায়োরিমেডিয়েশন’ (Bioremediation)। Remediate শব্দটির অর্থ সমস্যা সমাধান করা। আর Bioremediation, অণুজীব ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণ প্রতিকারের একটি পদ্ধতি।

অণুজীব ব্যবহার করে বিষাক্ত আবর্জনাকে ভেঙ্গে কম বিষাক্ত পদার্থে পরিনত করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অণুজীব পুরো আবর্জনাই খেয়ে ফেলে। আর পুরো ব্যাপারটি ঘটে অণুজীবের মেটাবলিজমের অংশ হয়ে। আর এ প্রক্রিয়ায় বহুল ব্যবহৃত অণুজীব হল ব্যাকটেরিয়া।

১৯৮৮ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম Bioremediation প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দূষণ প্রতিকারে অণুজীব ব্যবহার শুরু করেন। কিছু ব্যাকটেরিয়া আবর্জনাকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করে। আর বাকিরা এনজাইম তৈরি করে বিষাক্ত বস্তুকে কম ক্ষতিকারক বস্তুতে পরিণত করে। ক্ষুদ্র জীবের কি পরিমাণ দক্ষতা! আমাদের বাড়ির পাশের ড্রেইনগুলো মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায় না? অণুজীব কিন্তু সেই বদ্ধ অবস্থা দূর করতে পারে। Bioremediation –এ Pseudomonus এবং Bacillus গণের ব্যাকটেরিয়া সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। কাপড়ের ডিটারজেন্টেও Bacillus এনজাইম ব্যবহৃত হয়।

zesnelson – Environmental Microbiology

অণুজীব প্রাকৃতিক নিয়মেই আবর্জনাগুলোকে ভাঙ্গতে পারে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া ধীর গতির। দ্রুত গতিতে কাজ করার জন্য নাইট্রোজেন ও ফসফরাস সার সহ প্রয়োজনীয় পরিবেশ অণুজীবদের দিতে হবে, যাতে তারা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এতে Bioremediation প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে Bioremediation এর জন্য অণুজীব তৈরি করা যায়! এই পদ্ধতিতে Deinococcus radiodurans ব্যাকটেরিয়াকে টলুইন ও মারকারি আয়নকে গ্রাস করার জন্য পরিবর্তিত করা হয়েছে। এটি পারমাণবিক আবর্জনাতেও কাজ করতে পারে!

কিছু বিশেষ পদার্থ যেমন ক্যাডমিয়াম, লেড ইত্যাদির দূষণে অণুজীব ব্যবহারে ফল পাওয়া যাবে না। কারণ এদের অণুজীবরা ভাঙ্গতে পারে না।

এভাবে অণুজীব আমাদের উপকারে লেগে আছে সারাক্ষণ! পরের পর্বে কথা হবে অণুজীবের আরও কিছু উপকারী দিক নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন।

সুত্রঃ

*Microbiology an Introduction by Tortora, Funk, Case
*Google
*Wikipedia
*Bioremediation, An overview by M. Vidali (c) 2001 IUPAC

লেখাটি 212-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. অাশার কথা যে তুমি অারো লিখবে অণুজীববিজ্ঞান নিয়ে। এটা টর্টরার কোন চ্যাপ্টার থেকে নেয়া? বৈজ্ঞানিক নাম কিন্তু ইটালিক হবে।

    1. সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ Avatar
      সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ

      দ্বিতীয় চ্যাপ্টারেও এই সম্পর্কে আছে। আর প্রকাশিত হওয়ার পর মনে হয় লেখা সম্পাদনা করা যায় না। এর পর থেকে ব্যাপারটা মাথায় থাকবে!

  2. সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ Avatar
    সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ

    ধন্যবাদ ভাইয়া! এই লেখার বেশ কিছু অংশের তথ্য টর্টরার প্রথম চ্যাপ্টারের ‘Microbes and Human Welfare’ অনুচ্ছেদ থেকে নেয়া। বাকিটুকু নেট থেকে নিয়েছি।আর বৈজ্ঞানিক নাম ঠিক করে দিচ্ছি।

Leave a Reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers