থাকে শুধু অন্ধকার

লিখেছেন

লেখাটি , , বিভাগে প্রকাশিত

সায়েন্স ফিকশন উপন্যাসগুলোতে প্রায়ই দেখা যায় মহাকাশযানে চেপে মানুষকে দূর নক্ষত্রে পারি দিতে। কিন্তু উপন্যাসিকের কল্পনায় আঁকা মহাকাশযানের ভেতরের সত্যিকার বাস্তবতা কেমন তা মনে হয় এ বিষয়ে আগ্রহীদের না জানলেই নয়। তারই কিছুটা আভাষ পাওয়া যেতে যাবে “থাকে শুধু অন্ধকার” নামের বইটিতে।
মহাকাশযানে চেপে দূর নক্ষত্রে পাড়ি দিতে কত যে জটিলতার মুখোমুখি হতে হবে, কত যে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠতে হবে তা নিয়ে তাক লাগানো কিছু আলোচনা করা হয়েছে এই বইটিতে।

শক্তি ব্যবহারে আমাদের আজকের যে প্রযুক্তি সে প্রযুক্তিতে অতি কাছের নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টারিতে যাত্রা করতে হলেও আরও দুইশো অপেক্ষা করতে হবে। সবচে কাছের একটা নক্ষত্রের দিকে মাত্র একটা যাত্রা করতেও যে পরিমাণ ‘এটা-ওটা ’র দরকার হবে তা স্বাভাবিক হিসেবে মানুষের পক্ষে দুইশো বছরের আগে যোগান দেয়া সম্ভব নয়। অবশ্য যদি প্রযুক্তিতে নাটকীয় কিছু হয়ে যায় তাহলে তা আলাদা হিসাব।

নক্ষত্রযাত্রার প্রস্তুতি ছাড়াও আলোচিত হয়েছে মহাকাশযানের মহাকাশচারীর শারীরবৃত্ত, সমাজ ব্যবস্থা, শক্তি সমস্যা, যাত্রার লক্ষবস্তু ইত্যাদি।
শারীরবৃত্তের এই তথ্য যখন পেলাম তখন অবাক হয়ে গেলাম- পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে আমাদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া হুমকির মধ্যে। মহাজাগতিক রশ্মি ও তার বিকিরণের ফলে সেখানকায় পৃথিবীর তুলনায় মানুষের আয়ু যাবে কমে। পৃথিবীতে যে মাধ্যাকর্ষণ, বায়ুর চাপ, নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনের শতাংশিক মিশ্রণ থাকে তা পাওয়া যাবেনা সেখানে। ফলে সেটা নবজাতকের জন্য দারুণ সমস্যার সৃষ্টি করবে।

পর্যাপ্ত নাইট্রোজেন না হলে নবজাতকের হাড় গঠনে সমস্যা হয়। তাহলে কি মহাকাশযানের নবজাতকেরা মেরুদণ্ডহীন? সম্পূর্ণ মহাকাশযানে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মত সকল গ্যাস সঠিক অনুপাতে বজায় রাখতে কোন জায়গায় সমস্যা বাধে এমন সব তথ্য জানা যাবে এখানে। সাথে সাথে এই মারাত্মক সমস্যা থেকে কীভাবে উৎরানো যেতে পারে তা নিয়েও রয়েছে আলোচনা।

ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে স্টারশিপে চড়ে নিকটবর্তী নক্ষত্রে পাড়ি দিতে হলে একটিমাত্র প্রজন্মের দ্বারা সম্ভব নয়, একাধিক প্রজন্ম কিংবা বহু প্রজন্ম লাগবেই। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে মহাকাশে পাড়ি দেয়াই শ্রেয়। পৃথিবীর সমস্ত প্রাণকে অল্প সময়ের ভেতর শেষ করে ফেলতে পারে এমন অনেক দুর্ঘটনাই ঘটতে পারে।

থাকে শুধু অন্ধকার” নামের বইটির মূল আলোচ্য বিষয় মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ, মহাবিশ্বের পরিণতি। মহাবিশ্ব যদি শেষমেশ মরে যায় তাহলে মানুষের কী হবে? মানুষ কি এমন শঙ্কায় হাল ছেড়ে দিবে? সেই প্রতিকূল সময়টাতে মানুষের অস্তিত্ব কীভাবে টিকিয়ে রাখা যেতে পারে তার কৌশল নিয়ে চমকপ্রদ আলোচনা সকলকে ভাবিত করার ক্ষমতা রাখে।

সূর্য যখন মারা যাবে তখন মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে এই মায়াময় ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিতেই হবে। ধরে নেয়া হল মানুষ এমন সবকিছু পারছে, অনায়াসেই এই নক্ষত্র হতে ঐ নক্ষত্রে ছুটে চলছে। কিন্তু একসময় না একসময় তো সকল নক্ষত্রই মরে শেষ হয়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবে নতুন কোনো নক্ষত্রও সৃষ্টি হবে না। তখন উপায়?
যখন কোনো নক্ষত্র বেঁচে থাকবে না, চারিদিকে শুধু অন্ধকার আর থাকবে শক্তির অভাব তখনও কতগুলো প্রক্রিয়ায় মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। সেই প্রক্রিয়াগুলো কী কী কেমন তাদের মেকানিজম তাই আলোচনা করা হয়েছে এই বইটিতে।
দূর ভবিষ্যতের যে সময়টাতে নক্ষত্র সৃষ্টির সকল প্রক্রিয়া সে সময়টাতেও তাপীয় বিক্ষোভ নামের ক্লেভার ফিজিক্সের প্যাঁচে নতুন করে খুব কদাচিৎ জন্ম নিতে পারে নক্ষত্র। চমকপ্রদ এই ব্যাপারটা নিয়ে রয়েছে বিস্তারিত আলোচনা।
মহাবিশ্বের ভবিষ্যতের পাশাপাশি এটি মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা করেছে। মানুষের দূর ভবিষ্যৎ এবং পাশাপাশি নিকট ভবিষ্যৎ বা টেকনো ভবিষ্যৎ নিয়েও কিছুটা আলোচনা করে হয়েছে।
আজকেই এখানে বসে ঠিক কীভাবে মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ বলে দেয়া সম্ভব? মানুষ কি তাহলে তেলেসমতি কিছু জানে নাকি?! না ব্ল্যাক ম্যাজিকের ফলে জেনে নিয়েছে!
মহাবিশ্ব তার শুরুর মাহেন্দ্রক্ষণে কীভাবে শুরু হয়েছিল তা জানা থাকলে মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ বলে দেয়া সম্ভব। আজকে মহাবিশ্ব কেমন অবস্থায় আছে তা জানা থাকলে ভবিষ্যৎ বলা সম্ভব। কেন সম্ভব, কীভাবে সম্ভব এমনসব জিনিসই পাওয়া যাবে সেখানে।

সর্বোপরি বইটা পেপারব্যাক হওয়াতে তুলনামূলকভাবে দামেও কম পড়েছে। যদিও দাম আরেকটু কম রাখা যেত। এই লেখকেরই অন্য বই “সলিড স্টেট সিরিজ” তো গলাকাটা অবস্থা! বইয়ের প্রচ্ছদটা সত্যিই মনে ধরার মত। প্রচ্ছদ দেখলে রুচিশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়।

বইটা আঁকারে ছোট, হাফ সাইজ। ছোট সাইজের এমন বইতে এতগুলো চমকপ্রদ বিষয়াদি নিয়ে এসেছেন লেখক। তার মানে অল্পতেই বোঝা যাচ্ছে বইটিতে বাহুল্য বলতে কিছু নেই। যা আছে তার সব সলিড!! আমার মনে হয় এখানে একটা বাক্যও বাহুল্য নেই। (শুধুমাত্র কবিতাটা মাথার উপ্রে দিয়া গেল, 😀 বাকিসব ঠিক রাস্তা দিয়াই গ্যাছে!)

বাংলা ভাষায় এরকম পেপারব্যাক বইয়ের জন্য শুভকামনা। আর লেখকের কাছে আমাদের চাহিদা এমন- চমকপ্রদ বিষয়ের উপর লেখা এমন চমৎকার বই যেন আমাদের আরও অন্তত বিশটি উপহার দেয়া হয়।

লেখক অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী  র জন্য শুভকামনা।

এই বইটি লেখার পেছনের কারণ কী ছিল লেখকের কলম থেকে তা জানতে ক্লিক করুণ এখানে,  অথবা এখানে

 

লেখাটি 425-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. সংক্ষিপ্ত, সুলিখিত বই পরিচিতি। আর হ্যাঁ, পেপারব্যাক বই বাড়ুক।

    1. আপনার বইটাও, (বইগুলো) পেপারব্যাক বের করবেন আশাকরি। আমাদের জন্য এবং ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য ভাল হবে তাতে। 😀

Leave a Reply to আরাফাত রহমানCancel reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers