অণুলেখা ৫: ক্যান্সার কোষের সংক্রামক আচরণ

লেখাটি , , বিভাগে প্রকাশিত

বেশ কিছুদিন আগে একটা লেখা প্রকাশ করেছিলাম যেখানে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে ক্যান্সার সংক্রামক হতে পারে কিনা। কিছু প্রাণীতে এরকম সংক্রমণ সম্ভব। যেমন, তাসমানিয়ান ডেভিল নামের জন্তুটি ক্যান্সার আক্রান্ত হলে সে যদি অন্য তাসমানিয়ান ডেভিলকে কামড়ে দেয় তবে মুখ থেকে ক্ষতে ক্যান্সার কোষ ঝরে পড়ে কামড় খাওয়া জন্তুটিরও ক্যান্সার তৈরি হয়। মানুষে এমন উদাহরণ পাওয়া যায়নি। তবে খুব সম্প্রতি একটি পরীক্ষা বলছে কোষ নয়, বরং ক্যান্সার কোষ থেকে তৈরি হওয়া এক্সোজোম থেকে ক্যান্সার একটি কোষ থেকে আরেক কোষে ছড়াতে পারে।

হলুদ ক্যান্সার কোষ থেকে হলুদ এক্সোজম তৈরি হচ্ছে

স্বাভাবিক মনুষ্যকোষ কিছু থলির মত ঝিল্লীযুক্ত জিনিস তৈরি করে যেখানে প্রোটিন, ডিএনএ এবং আরএনএ পাওয়া যায় (উপরের ছবি দেখুন)। ধারণা করা হত এক্সোজমের মাধ্যমে বর্জ্য ঝেড়ে ফেলে কোষ। আবার কোষের সঙ্গে কোষের যোগাযোগের মাধ্যমও হতে পারে এরা। কোন কোন সময় দুইটি ভিন্নকোষ থেকে তৈরি এক্সোজম একসাথে মিশে গিয়ে সকল বর্জ্য একসাথে করে ফেলে। স্বাভাবিক কোষের মত ক্যান্সার কোষও এক্সোজম তৈরি করে, আসলে সাধারণ কোষের চেয়ে একটু বেশি মাত্রায়ই তৈরি করে।

গত ২৩ অক্টোবর তারিখে প্রকাশিত ক্যান্সার সেল পত্রিকায় একটি পরীক্ষা দেখাচ্ছে যে মানুষের স্তন ক্যান্সার কোষ থেকে তৈরি এক্সোজম যদি সুস্থ কোষের সঙ্গে মিশিয়ে কোন সুস্থ ইঁদুরের দেহে প্রবেশ করিয়ে দেই তবে ইঁদুরটিরও ক্যান্সার তৈরি হবে। সাধারণ কোষ থেকে এক্সোজম সংগ্রহ করে একই কাজ করলে ক্যান্সার হচ্ছেনা ইঁদুরের। এই পরীক্ষার ফলাফল আমাদেরকে ক্যান্সার রোগ তৈরি, ছড়ানো এমনকি চিকিৎসায়ও সাহায্য করবে। ভাবতেই অবাক লাগে যে এই এক্সোজম, যেগুলিকে কোষের বর্জ্য ফেলার জায়গা ভাব হত, তারাই ক্যান্সার সংক্রমণে বা বিস্তারে সাহায্য করছে।

কিভাবে এটা কাজ করে?

এক্সোজমে যেসব পদার্থ উপস্থিত থাকে তাদের মধ্যে আছে কিছু ছোট আরএনএ, যেগুলিকে মাইক্রো-আরএনএ বলে। এই মাইক্রো-আরএনএ গুলির খুব নির্দিষ্ট কিছু কাজ আছে। কোষবিদ্যা এবং জিনেটিক্স এর বহু পরীক্ষাতে এদেরকে ব্যবহার করা হয়। যেমন, এরা কোষের কিছু জিনের প্রকাশ বন্ধ করে দিতে পারে। যখন এক্সোজম সাধারণ কোষের সংস্পর্শে আসে তখন এই আরএনএ গুলি সাধারণ কোষের ভেতরে ঢুকে তার জিন প্রকাশকে পরিবর্তন করে দিতে পারে।

তবে এখনও জানা যায়নি কিভাবে এক্সোজমগুলি দেহের ভেতরে চলাচল করে। তবে স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত থেকে এসব এক্সোজম খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বিধায় ধারণা করা হয় এরা বেশ চলাচলক্ষম অঙ্গাণু।

এই ফলাফলগুলি দিয়ে হয়তো ভবিষ্যতে ক্যান্সার চিকিৎসাতে সাহায্য হবে, তেমনি ক্যান্সার ডায়াগনোসিস এও সুবিধা হবে। সেই আশাবাদই আমরা দেখতে পারি।

মূল সূত্র:

http://www.nature.com/news/cancer-cells-can-infect-normal-neighbours-1.16212

লেখাটি 254-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. এক্সোজম, miRNA আর সংক্রামক ক্যান্স্যার। বেশ ইন্টারেস্টিং। সাম্প্রতিক গবেষণার এরকম আপডেটেড খবর পড়তে ভালোই লাগে।

  2. খান ওসমান Avatar
    খান ওসমান

    🙂

Leave a Reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers