পৃথিবীর সবচেয়ে গোলাকার বস্তু এবং ভরের নতুন আদর্শ
উপরের ছবিতে যেই গোলকটি দেখা যাচ্ছে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুঁত গোলাকার বস্তু। সম্প্রতি প্রায় ১…
১৪ মার্চ – একই সাথে পাই দিবস এবং আইন্সটাইনের জন্মবার্ষিকী। তাই এতদিন বিজ্ঞানপ্রেমী যে কারো কাছে এটা ছিল একটা উৎসবমুখর দিন। কিন্তু এ বছর এই একই দিনে না-ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন আমাদের সময়ের অন্যতম তাত্ত্বিক পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং। নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কম্পিউটার যুক্ত হুইলচেয়ারে বসা বাক-চলনশক্তিহীন সেই অতিপরিচিত প্রখর চিন্তশীল মানুষটি। তিনি শুধু জনপ্রিয় বিজ্ঞানী নন, যেকোন ব্যাক্তির জন্যই অনুপ্রেরণার অপর নাম তিনি – চূড়ান্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও যাঁর প্রতিভা এবং সফলতাকে বিন্দুমাত্র দমিয়ে রাখতে পারেনি।
যে যন্ত্র-প্রযুক্তির সাহায্যে কালের এই মহানায়ক তাঁর কঠিন বাস্তবতাকে মোকাবিলা করে গেছেন, চলুন আজ সেই সম্পর্কে শুনে আসি তাঁর নিজের জবানিতে :-
সেই ১৯৯৭ সাল থেকে আমার কম্পিউটার ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক দায়িত্ব আছে ইন্টেল কর্পোরেশন। একটা ট্যাবলেট কম্পিউটারকে আমার হুইল-চেয়ারের হাতলে স্থাপন করানো আছে। কম্পিউটারের শক্তির যোগান দেয় হুইল-চেয়ারের ব্যাটারিগুলো। তাছাড়া দরকার পড়লে ট্যাবলেটের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ যে ব্যাটারি আছে, সেটাও কম্পিউটারকে সচল রাখতে পারে।
কম্পিউটারের সাথে আমার ইন্টারফেসের কাজটা হয় প্রধানত ইন্টেলের তৈরি একটা ওপেন সোর্স প্রোগ্রামের সাহায্যে, এটার নাম হল ACAT(Assistive Context-Aware Toolkit)। স্ক্রিনে একটা সফটওয়্যার কিবোর্ড আসে, একটা কার্সার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিবোর্ডের সারি, কলাম বরাবর স্ক্যান করা শুরু করে। আমি গাল নাড়িয়ে মুহূর্তের মধ্যে কার্সার থামাতে পারি এবং কিবোর্ডের নিদির্ষ্ট একটা ক্যারেক্টার সিলেক্ট করতে পারি। চশমাতে লাগানো একটা অবলাল সুইচের দ্বারা আমার গালের নড়াচড়া শনাক্ত হয়। আর এই সুইচটাই কম্পিউটারের সাথে আমার একমাত্র ইন্টারফেস। ACAT তে ‘সুইফটকি’ এর দেওয়া একটা অ্যালগরিদম যুক্ত করে আছে, এটা আমার বই ও লেকচারগুলো ব্যবহার করে শব্দ অনুমান করতে সক্ষম। তাই আমার সাধারণত পুরো শব্দ টাইপ করার দরকার হয় না, প্রথম কয়েকটা অক্ষর লিখলেই কাঙ্খিত শব্দটি চলে আসে। এভাবে পুরো একটা বাক্য লিখে আমি সেটা পাঠাই আমার স্পিচ সিন্থেসাইজারে। আমি স্পিচ প্লাসের বানিয়ে দেওয়া একটা পৃথক হার্ডওয়্যার সিন্থেসাইজার ব্যবহার করি। এখন পর্যন্ত আমার শোনা এটাই সর্বোত্তম। যদিও এটা কণ্ঠে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান, আমেরিকান ও স্কটিশদের মত ভিন্ন ভিন্ন আঞ্চলিকতা দেয়।
এছাড়া ACAT দিয়ে আমি উইন্ডোসের মাউস নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এটা আমাকে সম্পূর্ণ কম্পিউটারটি চালাতে সাহায্য করে। মাইক্রোসফট আউটলুক দিয়ে আমি ইমেইল চেক করি, ফায়ারফক্স দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজ করি, লেকচার নোট করি মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে। ইন্টেলের দেওয়া আমার এই বর্তমান কম্পিউটারে একটা ওয়েবক্যাম আছে, ফলে এটা ব্যবহার করে স্কাইপ দিয়ে আমি বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগ রাখি। যারা আমাকে খুব ভালমত চিনে, তাদের কাছে তো শুধু চেহারার অভিব্যক্তি দিয়েও অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারি।
তাছাড়া আমি লেকচারও দিতে পারি। আগেই লেকচারটা লিখে রাখি এবং ডিস্কে সংরক্ষণ করি। তারপর ACAT সফটওয়্যারের ‘লেকচার ম্যানেজার’ টুল ব্যবহার করি, এটা আমার লেখা লেকচারের একটা পুরো প্যারাগ্রাফকে একসাথে স্পিচ সিন্থেসাইজারে পাঠায়। এটা বেশ ভালো মত কাজ করে। এতে করে আমি অনুশীলন করে নিতে পারি, ভুল থাকলে লেকচার দেওয়ার আগেই ঠিক করে নিতে পারি।
ছবি কৃতিত্বঃ ইন্টেল
আমি নিত্যনতুন উপযোগী প্রযুক্তির দিকে চেয়ে আছি। ইতোমধ্যে কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত এবং মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রিত ইন্টারফেস ব্যবহারের অভিজ্ঞতা হয়েছে। যাইহোক, সেগুলো অনেকের জন্য বেশ ভাল কাজ করলেও আমার জন্য তত যুতসই হয়নি। গাল নিয়ন্ত্রিত সুইচই আমার কাছে কম-কষ্টের মনে হয় এবং এখনো এটাতেই আমি বেশি স্বচ্ছন্দ।
– স্বলিখিত
স্টিফেন হকিং
তাঁর সর্বশেষ ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম:
লেখক – জোনাথন উড; স্টিফেন হকিং এর প্রযুক্তি সহকারী (২০১২-১৮)
তাঁর দুইটা সম্পূর্ণ হুইল চেয়ার সিস্টেম ছিল, যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য সংযোজিত ছিল বিশেষভাবে বানানো আনুষঙ্গিক হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার :-
প্রস্তুতকারক – ‘স্পিচ প্লাস’ ( ইনকর্পোরেটেড ১৯৮৮, মাউন্টেন ভিউ, সিএ)
মডেল – কলটেক্সট 5010 (x3) [এছাড়া একই কণ্ঠ দেওয়া কলটেক্সট 5000 (x2), কিন্তু এদের একটা অকেজো ছিল]
মডেলঃ লেনোভো ইয়োগা 260, ইন্টেল® কোর i7-6600U সিপিইউ, 512GB সলিড-স্টেট ড্রাইভ, উইন্ডোজ 10
মডেল – পারমোডিল এফ থ্রি
তথ্যসূত্রঃ
http://www.hawking.org.uk/the-computer.html
(লেখাটি অরবিটাল এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত )
কোথায় পড়েছি, এই হুইলচেয়ারের আগে হকিঙের বন্ধুরা তার সামনে কোন বই খোলা রেখে যেতেন, হকিং সে বইয়ের একই পৃষ্ঠাই পড়তেন। সে পড়াটা গভীর হতো খুব। ধন্যবাদ ফুয়াদ এ লেখাটার জন্য।