পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ইঞ্জিন

তাত্ত্বিক পদার্থবিদেরা তৈরি করেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট্ট ইঞ্জিন! এটা আসলে একটা ক্যালসিয়াম আয়ন, যা কি না আকারে একটি গাড়ির ইঞ্জিনের প্রায় ১০০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ মাত্র!

আয়ারল্যান্ড এবং জামার্নীর পদাথবিজ্ঞানীদের দুটি গ্রুপ এই গবেষণার নেপথ্যে কাজ করেছেন। যুগান্তকারী এই এক্সপেরিমেন্ট সম্পন্ন করছেন অধ্যাপক ফার্ডিনান্ড স্মিডট-কালের এবং উলরিখ পশিংগারের রিসার্চগ্রুপ, জার্মানির মাইনসে অবস্থিত ইয়োহানেস গুটেনবের্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে অবস্থিত ট্রিনিটি কলেজের স্কুল অফ ফিজিক্সের অধ্যাপক জন গোল্ডের QuSys গ্রুপ ব্যাখা করেছেন এই ক্ষুদ্র মোটরের লুকায়িত বিজ্ঞান।

“Spin Heat Engine Coupled to a Harmonic-Oscillator Flywheel” শিরোনামে গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে পদার্থবিদ্যার বনিয়াদি জার্নাল ফিজিকাল রিভিউ লেটারসে। সেখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে সামান্য বিক্ষেপ মাইক্রোস্কোপিক মেশিনের প্রভাব ফেলতে পারে। ভবিষ্যতে এই ক্ষুদ্র যন্ত্রগুলোকে অন্যান্য প্রযুক্তির সাথে সমন্বয় করা হবে। আমূল পরিবর্তন আসবে ব্যয়িত তাপ পুনর্ব্যবহারে আর যান্ত্রিক কর্মদক্ষতায় দেখা দেবে নতুন দিগন্ত।

ছবি কৃতিত্বঃ ট্রিনিটি নিউজ অ্যান্ড ইভেন্টস

যেহেতু ইঞ্জিনটি একটা একক ক্যালসিয়াম আয়ন, তাই এটা নিজেই ইলেক্ট্রিকালি চার্জিত।  ইলেক্ট্রিক ক্ষেত্র দিয়ে এটাকে আটকে ধরে রাখা সহজ। এই ছোট্ট ইঞ্জিনের চালিকাশক্তি বা জ্বালানী হল আয়নটির কৌণিক-ভরবেগ বা স্পিন (intrinsic spin)। এই স্পিন ব্যবহৃত হয় তাপ রূপান্তরের কাজে, লেজার রশ্মি থেকে পাওয়া শক্তি আয়নের স্পন্দনে আনে পরিবর্তন।

এই স্পন্দনগুলো ফ্লাইহুইলের মত কাজ করে, যা ইঞ্জিনে উৎপন্ন শক্তিকে ধরে রাখে। আর কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নীতি মেনে এই শক্তি জমা হয় গুচ্ছ গুচ্ছ প্যাকেট আকারে, যাকে বলা হয় কোয়ান্টা।

“ফ্লাইহুইলের সাহায্যে এই প্রথমবার  আমরা পারমাণবিক মোটরের পাওয়ার আউটপুট হিসাব করতে সফল হয়েছি,” বলেছেন  QuSys গ্রুপের ড. মার্ক মিটচিশান। তিনি নিজেও গবেষণাপত্রটির নয়জন কো-অথর।

ফ্লাইহুইলকে স্থির অবস্থা (কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভাষার নিম্নশক্তি স্তর) থেকে চালু করার সময় গবেষকদল দেখেছেন ইঞ্জিন বল প্রয়োগ করে সেটাকে দ্রুত থেকে দ্রুততর করতে থাকে। আর পরীক্ষণে আয়নের নির্ধারিত শক্তিকে সহজে অর্জন করা যায়। ফলে পর্দাথবিদেরা নিখুঁতভাবে শক্তি সংরক্ষণ প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

ট্রিনিটির সহকারী অধ্যাপক জন গোল্ড বলেন, “এই এক্সপেরিমেন্ট আর থিওরি কোয়ান্টাম প্রযুক্তির এনার্জেটিক্স অনুসন্ধানে নতুন যুগের সূচনে করছে, আর এটাই আমাদের গ্রুপের গবেষণার মূল বিষয়। ন্যানোস্কেলের তাপ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা দ্রুততর কম্পিউটিংয়ের অন্যতম মৌলিক বাধা। কিভাবে তাপগতিবিদ্যাকে এই ধরণের ক্ষুদ্র মাইক্রোস্কোপিক সেটিংসে প্রয়োগ করা যেতে পারে, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটার উপর নির্ভর করবে আমাদের ভবিষ্যত প্রযুক্তি।”

তথ্যসূত্রঃ

ইংরেজিতে কন্টেন্ট রাইটার হয়ে গড়ে তুলতে পারেন নিজের ফ্রিল্যান্স-ক্যারিয়ার।

কীভাবে? দেখুন ফ্রি-মাস্টারক্লাস ভিডিও

মুবতাসিম ফুয়াদ
পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত। 🔗