কিভাবে আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজ করে? (পার্ট-২)

প্রথম অংশ: কিভাবে আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজ করে? (পার্ট-১)

গ.) তৃতীয়/সর্বশেষ স্তরের প্রতিরক্ষা: (Adaptive immune/অভিযোজিত অনাক্রম্যতা/ সুনির্দিষ্ট প্রতিরক্ষা)

প্রথম এবং দ্বিতীয় স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ হলে সর্বশেষ এই ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। আক্রমণকারী অণুজীব বা রোগ তৈরীকারী অণুজীবকে ‘অ্যান্টিজেন’ বলা হয়। এই অ্যান্টিজেন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার হুমকি হিসাবে বিবেচিত এবং এর বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উদ্দীপিত (সাড়া দেওয়া) করতে সক্ষম। অ্যান্টিজেন শব্দটি এসেছে অ্যান্টিবডি উৎপন্নকারী উপাদান হিসাবে। মূলত, অ্যান্টিজেনগুলি এমন প্রোটিন যা অণুজীবগুলির পৃষ্ঠের উপরে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, এই অ্যান্টিজেনগুলি অণুজীবের প্রতিনিধিত্ব করে৷ তবে, অণুজীব ভেদে অ্যান্টিজেনের ভিন্নতা রয়েছে। যেমন: হুপিং কাশির জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিজেন, যক্ষার ব্যাকটেরিয়া থেকে আলাদা। মূলত এধাপে টি-কোষ (T-cell) এবং বি-কোষ (B-cell) কার্যকারিতা প্রদর্শন করে৷ 

টি-কোষ (T-cell):

টি-কোষ অস্থিমজ্জা থেকে উৎপন্ন হয় এবং এর বিকাশ ঘটে থাইমাসে৷ টি-কোষ কয়েক ধরণের হতে পারে৷ এদের কার্যেও রয়েছে ভিন্নতা। যেমন: 

সাহায্যকারী টি-কোষ:– ইন্টারলিউকিন-২ (১/২) নিঃসরণ করে যা, বি-কোষ এবং টি-কোষ বিভক্তে উদ্দীপনা যোগায়। এছাড়া সাইটোকাইন নিঃসরণ করে৷ যা, প্রদাহ ও হেমাটোপসিসে (Hematopoiesis) অবদান রাখে। 

 সাইটোটক্সিক টি-কোষ:-  সাইটোটক্সিন নিঃসরণ করে যা, অনুজীবের DNA ধ্বংস কিংবা প্লাজমা-ঝিল্লী বিদীর্ণ করে৷  

মেমোরী টি-কোষ:- দেহে পুনরায় একই অ্যান্টিজেন অণুপ্রবেশ করলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করে৷ যেমন: সাইটোটক্সিক টি কোষে রূপান্তরিত হয়৷

নিয়ন্ত্রক টি-কোষ:- হুমকি দূরীভূত হবার পর স্বতঃঅনাক্রম্যতা (Autoimmune) বন্ধে ভূমিকা রাখে। এছাড়া, সুস্থ কোষের নিরাপত্তায় এর ভূমিকা রয়েছে৷ 

 বি-কোষ (B-cell): 

বি-কোষ (বা, বি-লিম্ফোসাইট) একইভাবে অস্থিমজ্জা হতে উৎপন্ন হয় এবং প্লীহা ও অন্যান্য সেকেন্ডারী লিম্ফোয়েড (লসিকা সংক্রান্ত) কোষে এর বিকাশ ঘটে৷ এটি বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিবডি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে৷  

এখন প্রশ্ন হলো, কিভাবে এই সুনির্দিষ্ট স্তরের প্রতিরক্ষা কাজ দেয়? 

১. যখন অ্যান্টিজেন, ম্যাক্রোফেজ (মনোসাইট কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এ কোষে পরিণত হয়) দ্বারা চিহ্নিত হয়, এটি টি-কোষ (T-cells) কে সক্রিয় করে। 

সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন দ্বারা টি-কোষ সক্রিয় হওয়াকে “কোষ-মাধ্যম প্রতিরক্ষা” (Cell-mediated immunity) বলা হয়৷ দেহে লক্ষ-লক্ষ বিভিন্ন ধরণের টি-কোষ রয়েছে, যার প্রতিটি সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের প্রতি সাড়া দেয়। 

২. টি-কোষ ইন্টারলিউকিন-২ নিঃসৃত করে৷ যা, সাইটোটক্সিক টি-কোষ (Cytotoxic T cells/ Killer T cells) এবং বি-কোষের (B cells) বিস্তার ঘটায়৷

৩. এরপর প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়াটি ২টি পথ অনুসরণ করে: একটি পথ সাইটোটক্সিক টি-কোষ এবং অন্যটি বি-কোষ ব্যবহার করে।

কখনো, আমাদের শ্বেত রক্তকণিকা অ্যান্টি-টক্সিন নামক রাসায়নিক উপাদান নিঃসৃত করে যা, ব্যাকটেরিয়া আমাদের আক্রান্ত করবার সময়ের নিঃসৃত টক্সিনকে (বিষ) ধ্বংস করে৷ যেমন: টিটেনাস (ধনুষ্টঙ্কার), ডিপথেরিয়া এবং স্কার্লেট জ্বরের দায়ী ব্যাকটেরিয়া গুলি টক্সিন উৎপন্ন করে থাকে৷ আর, আক্রমনকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হবার পর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উদ্দীপনাও প্রশমিত হয়ে যায়। 

সাইটোটক্সিক টি-কোষ প্রতিরক্ষা (Cytotoxic T Cell Pathway):

 i) এই কোষগুলি আক্রান্ত দেহ-কোষগুলির পৃষ্ঠের অ্যান্টিজেনগুলি সনাক্ত করতে সক্ষম।

ii) সাইটোটক্সিক টি-কোষগুলি দেহের আক্রান্ত কোষগুলিতে আবদ্ধ হয় এবং সাইটোটক্সিন (কোষ-বিষ) নিঃসরণ করে যা সংক্রামিত কোষের পতন বা অ্যাপোপটোসিস (কোষের আত্মহত্যা) ঘটায়। পাশাপাশি পারফোরিন (perforins) নামক প্রোটিনও উৎপন্ন করে যা আক্রান্ত কোষগুলিতে ছিদ্র সৃষ্টি করে।

iii) উপরোক্ত এদুটি প্রক্রিয়া আক্রান্ত দেহ কোষের রোগজীবাণু ধ্বংস করে।

মূলত, টি-কোষ সরাসরি কিংবা রাসায়নিক উপাদান নিঃসৃত করে অনুজীব ধ্বংস করে থাকে৷ 

বি-কোষ/বি-লিম্ফোসাইট প্রতিরক্ষা (B-cell immunity) :

i) টি-কোষ, বি-কোষকে বিভক্ত হতে উদ্দীপিত করে, যার ফলে প্লাজমা কোষ গঠন করে। যা অ্যান্টিবডি এবং মেমোরী বি-কোষ তৈরীতে সক্ষম। 

ii) যদি একই অ্যান্টিজেন পুনরায় দেহে প্রবেশ করে,  মেমোরী বি-কোষ পূর্বোক্ত ঘটনা স্মরণ রেখে আরো অনেক প্লাজমা কোষ তৈরী করে এবং এই ভাবে মেমোরী কোষগুলি ভবিষ্যতে একই অ্যান্টিজেনের আক্রমন থেকে প্রতিরক্ষা দেয়।

iii) টি-কোষের বি-কোষকে উদ্দীপিত করে প্লাজমা-কোষ তৈরীর এই প্রক্রিয়াকে “অ্যান্টিবডি-মাধ্যম প্রতিরক্ষা” (Antibody-mediated immunity/ Humoral immunity) বলে৷

মূলত, অ্যান্টিবডি এক ধরণের সুনির্দিষ্ট শ্বেত রক্তকনিকা দ্বারা তৈরী হয় যাকে বলে বি-লিম্ফোসাইট (বা, বি-কোষ)। যখন অ্যান্টিজেন বি-কোষের পৃষ্ঠের সাথে সংযুক্ত হয়, তখন এটি বি-কোষকে বিভক্ত হতে উদ্দীপনা যোগায়। অতঃপর, বি-কোষ এক ধরণের নির্দিষ্ট কোষে পরিণত হয় যে পদ্ধতিকে ক্লোন বলে৷ আর, পরিণত বি-কোষকে প্লাজমা কোষ বলে৷ যা লক্ষাধিক অ্যান্টিবডি তৈরী করে রক্ত এবং লসিকাতন্ত্রে ছড়িয়ে দেয়। 

  • অ্যান্টিবডি (Antibodies) কি?

অ্যান্টিবডি, ইমিউনোগ্লোবিউলিন বা Ig’s নামেও পরিচিত। এটি ইংরেজী ‘Y’ আকৃতির প্রোটিন।  যা আমাদের রক্ত প্রবাহের সাথে বিচরণ করে এবং নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের (আক্রমনকারী অণুজীব) সাথে আবদ্ধ হয়। অর্থাৎ, অ্যান্টিবডিগুলি রক্ত এবং লসিকা দ্বারা অণুজীব আক্রান্ত স্থানে গমন করে। আমাদের দেহে লক্ষাধিক আলাদা-আলাদা বি-কোষ বিদ্যমান।  যার প্রতিটি একটি নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের প্রতিই সাড়া দেয়। তবে, প্রধানত সচারচার ৫ ধরণের অ্যান্টিবডি দেখা যায়। এগুলি হলো: IgG, IgM, IgA, IgE, IgD। 

প্রতিটি অ্যান্টিবডি ৪ ধরণের পলিপেপটাইড (প্রোটিন) দ্বারা গঠিত। যেখানে, ২ টি ভারী চেইন (Heavy chains) এবং ২টি হালকা চেইন (Light chains) বিদ্যমান। দুটি ভারী চেইন একে অপরের সাথে অভিন্ন এবং উভয় হালকা চেইন একে অপরের সাথে অভিন্ন। প্রত্যেকটিতে একটি ধ্রুবক অঞ্চল (Constant region) ) এবং একটি পরিবর্তনশীল/বিশেষায়িত অঞ্চল (Variable region) থাকে। মূলত, ধ্রুবক অঞ্চলটি অণুর মূল অংশ গঠন করে এবং বিশেষায়িত অঞ্চলগুলি নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের সাথে সংযুক্ত হবার জায়গা তৈরী করে৷ বিশেষায়িত বলার কারণ হলো, ভিন্ন ভিন্ন অ্যান্টিজেনের জন্যে অ্যান্টিবডির সংযুক্ত হবার এ জায়গাটিও ভিন্ন। অনেকটা “তালা-চাবি নকশার” মত। 

চিত্র: একটি অ্যান্টিজেন নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডির সাথে সংযুক্ত হয়  

প্রতিটি অ্যান্টিবডিতে ২টি অ্যান্টিজেন-সংযুক্ত হবার স্থান (বিশেষায়িত অঞ্চল) রয়েছে। পাশাপাশি অ্যান্টিবডি কেবল তাদের ধ্রুবক অঞ্চলে নয় বরং কার্যকারিতায়ও পৃথক হয়। উদাহরণস্বরূপ, সর্বাধিক সাধারণ অ্যান্টিবডি IgG বেশিরভাগ রক্ত এবং কোষীয়-তরলের মধ্যে উপস্থিত থাকে। যেখানে, IgA শ্বাসযন্ত্র (Respiratory) এবং পাকস্থলীয় অন্ত্রের (Gastrointestinal tracts) আস্তরণের শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে (Mucous membranes) পাওয়া যায়।

  • অ্যান্টিবডি কিভাবে কাজ করে? 

i) অ্যান্টিজেন নিষ্ক্রিয়করণ: অ্যান্টিবডি, অ্যান্টিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি যৌগ তৈরী করে৷ এই গঠন অ্যান্টিজেনের চারপাশে বেষ্টনী তৈরী করে, যা অ্যান্টিজেনের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ ব্যাঘাত ঘটায়। এভাবেই ব্যাকটেরিয়ার বিষ (টক্সিন) নিষ্ক্রিয় কিংবা ভাইরাস-অ্যান্টিজেনকে দেহের সাথে সংযুক্ত হতে প্রতিহত করে রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।

ii) কমপ্লিমেন্ট সক্রিয়করণ (Activating Complement) : কমপ্লিমেন্ট হলো লিভার দ্বারা তৈরি প্লাজমা প্রোটিনগুলির একটি গ্রুপ যা সাধারণত শরীরে নিষ্ক্রিয় থাকে। অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি যৌগের বিভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়ায় এই প্রোটিন সক্রিয় হয়৷ কিছু সক্রিয় প্রোটিন একসাথে গুচ্ছ (cluster) হয়ে অণুজীবের প্লাজমা ঝিল্লিতে প্রবেশ করে এমন ছিদ্র বা চ্যানেল তৈরি করে যাতে কোষ ফেটে (বিদীর্ণ) যায়। আবার, কিছু কমপ্লিমেন্ট-প্রোটিন কেমোট্যাক্সিস (অনুজীবের নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থের উপর সাড়া দিয়ে স্থান পরিবর্তন) এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে যার ফলে আক্রান্ত স্থানে শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধি পায়।

iii) অ্যান্টিজেনের অধঃপাতন (Precipitating Antigens): কখনো অ্যান্টিবডিগুলো একই ধরনের মুক্ত অ্যান্টিজেনের সাথে আড়াআড়ি বন্ধন (Cross-link) তৈরী করে৷ যা দ্রবণ থেকে অ্যান্টিজেনের অধঃপতন ঘটায় এবং ফ্যাগোসাইটিক কোষের ভক্ষণে সহায়তা পূর্বক ফ্যাগোসাইটোসিসে (কোষভক্ষণ প্রক্রিয়া) অবদান রাখে। 

এছাড়াও, ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীরগুলির মধ্যে থাকা অ্যান্টিজেনগুলি আড়াআড়ি বন্ধন (Cross-link) তৈরি করতে পারে। ফলে ব্যাকটিরিয়াগুলি অ্যাগ্লুটিনেশন (Agglutination) প্রক্রিয়ায় একত্রিত হয়ে যায় এবং ফ্যাগোসাইটোসিস  আরও সহজ করে তোলে।

iv) কোষ ভক্ষণ/ফাগোসাইটোসিস সহজতর করা (Facilitating Phagocytosis): অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি যৌগ ফ্যাগোসাইটিক কোষকে আক্রমনের জন্যে উদ্দীপনা (ইঙ্গিত) যোগায়। কখনো এই যৌগ ম্যাক্রোফেজ কোষের সাথে সংযুক্ত হবার ফলে প্রক্রিয়া আরো সহজতর করে দেয়৷

অপ্রতিরোধী প্রতিরক্ষা বা অক্রিয় অনাক্রম্যতা (Passive Immunity):

এ ধরণের প্রতিরোধ মানে হলো অন্য কোন উৎস থেকে “ধার করা” প্রতিরক্ষা। যার স্থায়িত্ব কালও খুবই কম৷ উদাহরণস্বরূপ: একটি শিশু জন্মের আগে অমরাতে (placenta) থাকা অবস্থায় এবং জন্মের পরে মায়ের দুধের মাধ্যমে অ্যান্টিবডি গ্রহণ করে। এই ইমিউনিটি শিশুকে তাদের জীবনের প্রথম বছরগুলিতে কিছু সংক্রমণ (রোগ) থেকে রক্ষা করে। 

এছাড়া টিকার (Immunizations) মাধ্যমেও প্রতিরক্ষা পাওয়া যায়৷ এপদ্ধতিতে সাধারণত দুর্বল অণুজীব কিংবা অণুজীবের প্রতিনিধিত্বকারী কিছু দেহে অনুপ্রবেশ করানো হয়৷ এর ফলে ব্যক্তি অসুস্থ হয় না ঠিকই কিন্তু, অ্যান্টিবডি তৈরী করতে সক্ষম হয়। 

আর, রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ জড়িত৷ যার মধ্যে রয়েছে: গলরসগ্রন্থি, অস্থিমজ্জা, লসিকাগ্রন্থি, লসিকানালী, ক্ষুদ্রান্ত্র, প্লীহা, থাইমাস, টনসিল ইত্যাদি৷ তবে, আমাদের এই রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা কিংবা অস্বাভাবিকতাও কখনো কখনো দেখা যায়৷ এর নানাবিধ কারণ থাকতে পারে৷ 

রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থার ঘাটতি (Immunodeficiencies):

যখন প্রতিরোধ ব্যবস্থার এক বা একাধিক অংশ কাজ করে না তখন এসমস্যা দেখা দেয়। বয়স, স্থূলত্ব এবং মদ্যপান সহ বিভিন্ন উপায়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অপুষ্টি একটি সাধারণ কারণ। তবে, এইডস হ’ল অর্জিত ইমিউনোডেফিসিয়েন্সির একটি উদাহরণ।

কিছু ক্ষেত্রে, এটি বংশানুক্রমিক সূত্রেও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, দীর্ঘস্থায়ী গ্রানুলোম্যাটাস (Granulomatous) রোগ যেখানে ফ্যাগোসাইটগুলি সঠিকভাবে কাজ করে না।

  • স্বতঃঅনাক্রম্যতা (Autoimmunity):

এ পরিস্থিতিতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুলভাবে দেহের বহিরাগত অণুজীব কিংবা ত্রুটিযুক্ত কোষগুলির পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর কোষগুলিকে লক্ষ্য করে। তারা নিজস্ব কোষকে বহিঃকোষ থেকে আলাদা করতে পারে না। এ রোগের মধ্যে রয়েছে: সিলিয়াক (celiac) রোগ, টাইপ-১ ডায়াবেটিস, হিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (rheumatoid arthritis) এবং গ্রেভস (Graves) রোগ৷ 

  • অতিসংবেদনশীলতা (Hypersensitivity):

এই অত্যাধিক সংবেদনশীলতায়, প্রতিরোধ ব্যবস্থা এমনভাবে অতিপ্রতিক্রিয়া দেখায় যা স্বাস্থ্যকর কোষকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এর একটি উদাহরণ হলো অ্যানাফিল্যাক্টিক শক যেখানে দেহ  অ্যালার্জির প্রতি এত জোরালোভাবে সাড়া দেয় যে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।

রোগের ঝুঁকি কমানো (Risk Reduction):

হাত ধোয়া, গাউন পরা এবং মুখে মাস্ক পরা ইত্যাদি কৌশলগুলি সংক্রমণ রোধ করতে সহায়তা করতে পারে। ঘন ঘন হাত ধোয়ার অভ্যাস অবাঞ্ছিত অণুজীবের বিস্তারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা পালন করে। এছাড়া, ঝুঁকি কমাতে ভালো পুষ্টি গ্রহন, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি অবৈধ ওষুধ এড়ানো, কনডম ব্যবহার এবং নিয়মিত ব্যায়াম ঝুঁকি কমাতে বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি করতে পারে। খাবারগুলি প্রস্তাবিত তাপমাত্রায় রান্না করা উচিত। দীর্ঘদিন ধরে বাইরে থাকা খাবারগুলি এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। কাউকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় বা অপ্রয়োজনেঅ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা উচিত নয়৷ কেননা, অ্যান্টিবায়োটিকের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার রেসিসট্যান্সের দিকে যায় এবং Clostridium difficile colitis মতো সুবিধাবাদী অণুজীবের সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। পাশাপাশি, টিকা রোগ প্রতিরোধের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

কিছু সাধারণ ভুল এবং ভ্রান্ত ধারণা:

  • আমাদের ধারণা ব্যাকটেরিয়া মানেই রোগ তৈরীকারী৷ কিন্তু, সত্য হলো-বেশির ভাগই অক্ষতিকর এবং তাদের ব্যতিত আমরা বাঁচতেই পারতাম না। কেননা, খাদ্য পরিপাক, ভিটামিন তৈরী ও গাঁজন প্রণালীতে তাদের বহুল অবদান রয়েছে৷  
  • কিছু রোগ ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রায় নির্মূল করা গেছে। যেমন: পোলিও, তবে এর অর্থ এই নয় যে- আমাদের এই রোগগুলির বিরুদ্ধে টিকা নেয়া বন্ধ করা উচিত। এই রোগের অণুজীব এখনও মানব জনগোষ্ঠীতে বিদ্যমান এবং ভ্যাকসিনের অবিরাম ব্যবহার ব্যতীত রোগটি হবার এবং ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
  • কিছু লোক মনে করে যে- ভ্যাকসিনগুলি একটি রোগের স্থায়ী প্রতিরোধ ক্ষমতা সরবরাহ করে। কিছু রোগের জন্য হয়ত একটি একক ভ্যাকসিন যথেষ্ট, তবে অনেকগুলি রোগের সুরক্ষার জন্যে একাধিকবার ভ্যাকসিন দিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ: সময়ের সাথে সাথে ফ্লু ভ্যাকসিন কম কার্যকর হয় কারণ ফ্লু ভাইরাস দ্রুত পরিবর্তিত (Mutation) হয়। সুতরাং, প্রতিবছর ফ্লু ভ্যাক্সিনের পরিবর্তন হয় নির্দিষ্ট ভাইরাস থেকে রক্ষা পাবার জন্য।

তথ্যসূত্র:

১. entry-into-the-host 
২. entering-the-human-host 
৩. hs-the-immune-system-review 
৪. microbes-and-the-human-body 
৫. about-gut-microbiota-info 
৬. the-immune-response 
৭. How does the immune system work?
৮. what-are-cytokines 
৯. white-blood-cells 
১০. Fc_receptor 
১১.   Macrophage-Function 
১২.  Inflammatory response 
১৩. the-immune-system 
১৪. antibody 

লেখাটি 308-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. দুইটা পার্ট নিঃসন্দেহে ভাল একটা কাজ হয়েছে। উপকৃত হবে পাঠক। ধন্যবাদ লেখক।

    1. এফ, এম, আশিক মাহমুদ Avatar
      এফ, এম, আশিক মাহমুদ

      ধন্যবাদ এবং ধন্যবাদ কবি৷পুরাটা মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্যে ☺

Leave a Reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers