শৈবাল থেকেই তৈরি হবে পরিবেশবান্ধব পোশাক

(অনুবাদক: সম্প্রতি Scientific American এ প্রকাশিত এরিকা সেনিরো-এর ” The Environment’s New Clothes: Biodegradable Textiles Grown from Live Organisms ” লেখাটি পড়া হয়। আমাদের দেশের অর্থনীতির মূলচালিকা শক্তি টেক্সটাইল খাত হলেও বর্তমানে অনেকেরই এ টেক্সটাইল খাত সম্পর্কে তেমন কোনো ধারনা নেই আর না ধারনা আছে এ খাতের পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে।বর্তমান পৃথিবীর মূল উদ্বেগ হচ্ছে পরিবেশ ও এর সুরক্ষা। তাই পরিবেশ দূষণের অন্যতম বড় এই কারন অর্থাৎ টেক্সটাইল খাত থেকে পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্য চলেছে অনেক গবেষণা। এ লেখাটি সেরকমই একটি গবেষণার অনুবাদ। )

কোনো কাপড় যখন ছিড়ে যায় বা পুরনো হয়ে যায় তখন প্রায়ই সেটাকে ময়লার স্তুপে গড়াগড়ি খেতে দেখা যায় । এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সির মতে , ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফেলে দেয়া কাপড় ছিলো মিউনিসিপ্যাল সলিড আবর্জনার প্রায় ৯% । আমরা যা পরি তার প্রভাব কেবল ময়লার ভাগাড়েই আটকে থাকে না। পোশাক তৈরি ও বাজারজাত করার বেগ ও পরিমাণের কারণে এখনকার পোশাক কারখানাগুলো যে নীতি অনুসরণ করে চলে তা ‘ফাস্ট ফ্যাশন’ নামেই পরিচিত । আর ইউরোপিয়ান কমিশনের (pdf) মতে এ ফাস্ট ফ্যাশনের সাথে জড়িয়ে আছে প্রচুর পরিমানে শক্তি ও পানির ব্যবহার, উল্লেখযোগ্য মাত্রায় গ্রীন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণ ও ব্যাপক পানি দূষণ ।

এখন ছোট কিন্তু দ্রুতই বেড়ে উঠা উদ্ভাবকের একটি দল উদ্যোগ নিয়েছে প্রকৃতির গুণকে এমনভাবে কাজে লাগানোর যা পোশাক কারখানার অপচয় ও দূষণকে দূর করবে সরাসরি কাচামাল পরিবর্তনের মাধ্যমে । তারা পচনশীল কাপড় তৈরির জন্য লিভিং অর্গানিসম ব্যবহার করছে , ল্যাবরেটরিতে পরিবেশবান্ধব সামগ্রি এবং এমনকি ফ্যাক্টরির পরিবেশ ছাড়াই প্রায় সম্পূর্ণ কিছু পণ্য উৎপাদন করেছে ।

আজকাল অনেক পোশাক কারখানাতেই কাপড় বোনা , কাটা এবং সেলাই করতে প্লাস্টিকের তৈরি এক্রেলিক,নাইলন বা পলিয়েস্টার সুতা ব্যবহার করে থাকে । এসব উপাদানগুলো তৈরি হয় রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এবং এ উপাদানের কোনোটিই পচনশীল না অর্থাৎ মাটিতে মিশে যায় না। কিন্তু এ গবেষকরা মনে করেন বর্তমান সময়ের কিছু পোশাক জীবপ্রকৌশল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা সম্ভব যেগুলো তৈরি হবে জীবিত ব্যাকটেরিয়া , শৈবাল , ছত্রাক , ইস্ট বা উদ্ভিদকোষ থেকে আর কাপড়গুলো ফেলে দেয়ার পর অবশেষে কাপড়ের উপাদানগুলো নন-টক্সিক ছোট ছোট ভাগে ভাগ হয়ে যাবে এবং একসময় মাটিতে মিশে যাবে । “এ পদ্ধতিটি পরিবেশে বর্জ্য ও দূষণ অনেকটাই কমিয়ে আনবে “ বলে মন্তব্য করেন নিউ ইয়র্কের ফ্যাশন ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি ( F.I.T. ) এর গণিত ও বিজ্ঞান অনুষদের সহকারি অধ্যাপিকা থিয়ানা শিরোস ।তিনি বলেন ,

পচনশীল হওয়ার পাশাপাশি এর আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ সুফল হচ্ছে ব্যবহারযোগ্য বেশ কিছু অর্গানিসমকে এমনভাবে গড়ে নেওয়া যায় যা সহজেই ছাঁচে এঁটে যাবে যাতে করে ফেলে দেওয়ার মতো বাড়তি অংশ তৈরি ছাড়াই ক্লথিং আর্টিকেল তৈরির জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কাপড় উৎপাদন করা যাবে।”

তিনি আরো বলেন ,

“ ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সে আমর প্রকৃতিতে আরো অনেক অনুপ্রেরণা খুঁজে পাচ্ছি । প্রকৃতিতে এমন একটি অরগানিজম খোঁজা উচিত যা খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং প্রকৃতিতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।”

ব্যাকটেরিয়া দিয়ে রাঙ্গানো অর্গানিক সিল্ক শুকানো হচ্ছে Credit: Laura Luchtman & Ilfa
Siebenhaar

অধ্যাপিকা শিরোসের পছন্দের অর্গানিসমটি হচ্ছে শৈবাল । তিনি এবং FIT এর একদল ছাত্র ও তার অনুষদ মিলে তৈরি করেন এমন এক সুতার মতো ফাইবার ( আঁশ বা তন্তু ) যেটাকে খুব সহজেই প্রাকৃতিক কোনো রঞ্জক , হতে পারে সেটা কোনো কীটপতঙ্গের খোলস চূর্ণ , দিয়ে অনায়াসে রঙ করা যাবে আবার সে সুতা দিয়ে বোনা যাবে কাপড়ও । শিরোস বলেন ,

শৈবাল থেকে কাপড় তৈরিতে ৩ টি ধাপে কাজ করতে হয় । প্রথমে , ক্যাল্প নামক সামুদ্রিক শৈবাল থেকে অ্যালগিনেট নামক শর্করাকে আলাদা করে পাউডারের করে নেয়া হয়। পরবর্তিতে ওই অ্যালগিনেট পাউডার কে ওয়াটার বেসড জেল-এ রূপান্তর করা হয়। এরপর এটাতে প্ল্যান্ট বেসড রঞ্জক যেমন গাজরের রস যোগ করা হয়। সবশেষে ওই জেল থেকে আলাদা করা হয় লম্বা দৈর্ঘের ফাইবার যেটা দিয়ে কাপড় বোনা সম্ভব ।

শিরোসের মতে শৈবাল থেকে তৈরি কাপড়টি একই সাথে বেশ মজবুত ও নমনীয় । এই দুইটি বৈশিষ্ট্য নিত্যব্যবহার্য পোষাকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বিপণনযোগ্য জীবপ্রকৌশলকৃত বস্ত্র সামগ্রী হিসেবে বেশ আস্থাশীল বলে তার গবেষণায় উঠে এসেছে । চীনের ম্যাটেরিয়াল সায়েন্টিস্টরা এ গবেষণার প্রসংশা করে বলেন এই শৈবাল থেকে তৈরি ফাইবারটি প্রাকৃতিকভাবেই অগ্নি-প্রতিরোধক ( ফায়ার রেজিস্ট্যান্ট ) যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে পারে কাপড়ে ক্ষতিকর রাসায়নিক অগ্নি প্রতিরোধক উপাদান ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা । সুতি ফাইবার হচ্ছে বহুল প্রচলিত পোশাক তৈরির প্রাকৃতিক ফাইবার আর শৈবাল ফাইবার সুতির চেয়েও কম সময়ে মাটিতে মিশতে পারে এবং এ ফাইবার চাষের জন্য না দরকার পরে কোনো কীটনাশকের, না কোনো বিস্তৃত ভূমি । শিরোস তার এই শৈবাল থেকে তৈরি ফাইবার দিয়ে অনেক ধরনের পোশাকও তৈরি করেছেন তার মধ্যে রয়েছে একটি ট্যাঙ্ক টপ যেটি তিনি এ বছরই পরে এসেছিলেন যেদিন তিনি টেড টক ( TED Talk ) এ সাসটেইনেবল ফ্যাশন নিয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলেন । শৈবাল ভিত্তিক বস্ত্রশিল্প তৈরির মাধ্যমে ২০১৬ বায়োডিজাইন চ্যালেঞ্জ জেতার পর শিরোস তার FIT এর এক সহকর্মী,আস্তা স্ককিরকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন “অ্যালগিনেট” নামে একটি প্রতিষ্ঠান যেটি একদিন বাণিজ্যিকভাবে শৈবাল থেকে তৈরি পোশাক বাজারজাত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে ।

ক্লথিং ম্যাটেরিয়াল তৈরিতে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহারও শিরোসের আরেকটি আবিষ্কার , ২০১৭ সালে তারই কিছু শিক্ষার্থী একটি তরল ব্যাকটেরিয়া কালচার , ছত্রাক এবং পচনশীল বর্জ্য থেকে তৈরি করে বাচ্চাদের পায়ের মাপের একজোড়া মোকাসিন (এক ধরণের জুতো) । ব্যাকটেরিয়া কালচারটি “বায়োলেদার” এর একটি তন্তুময় ম্যাটে পরিণত হয় যেটা অবশেষে একটি ছাঁচে ফেলে আস্ত একটি জুতা তৈরি হয়ে যায় । সেটিকে ঐ শিক্ষার্থীরা এমন এক তন্তু দিয়ে সেলাই করে দেয় যেটা তারা সংগ্রহ করেছিলো রাস্তার পাশের স্মুদির দোকানে ফেলে দেওয়া আনারসের আগার অংশ থেকে । পরবর্তীতে তারা জুতাজোড়া রঙ্গিন করতে রঞ্জক পদার্থ তৈরি করেন অ্যাভোকাডো বীজ ও নীল গাছের পাতা থেকে আর শুকানোর আগে এতে গাজরের বীজ ছড়িয়ে দেন ।

শিরোস বলেন , “ এ পদ্ধতিটি উৎপাদন পর্যায়ের বর্জ্য নির্মূল করবে ।“ তিনি আরো বলেন এ পদ্ধতিটি টেক্সটাইল স্ক্র্যাপ ( অব্যবহারযোগ্য টুকরা কাপড় বিশেষ ) এর পরিমাণও কমিয়ে আনবে কারন জুতাগুলো পচনশীল আর এতে গাজরের বীজও রয়েছে।তিনি বলেন ,” জুতাগুলো আপনার বাচ্চাদের পায়ে ছোট হয়ে গেলে সেগুলোকে আপনি বাগানে রোপণ করতে পারবেন তাদের পরের জোড়া জুতা তৈরির জন্য ।“

তার শিক্ষার্থীরা ,যারা নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকে #GROWAPAIR নামে, তাদের এ সৃষ্টি সবার সামনে তুলে ধরেন গতবছর অনুষ্ঠিত বায়োডিজাইন সামিট , নিউইয়র্কে MoMa-The Museum of Modern Art এ আয়োজিত কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য অনুষ্ঠিত একটি জীবপ্রকৌশল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ।

Silk textile exposed to S. Coelicolor bacteria for 34 days. Credit: IMMATTERS Studio

শিরোস বলেন ফাস্ট ফ্যাশনের অন্যতম পরিবেশগত সমস্যা হল রঞ্জক পদার্থ, জীব-প্রকৌশল ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে । সুইডিশ ক্যামিকেল এজেন্সির (pdf) মতে ,

বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হওয়া পোশাকগুলোকে রঙ করতে আনুমানিক ৩৫০০ টি মানুষের তৈরি রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় । এর মধ্যে ২৪০০ টির মতো উপাদান ব্যবহৃত পোশাকে শনাক্ত করতে পেরেছে এজেন্সিটি ।তারা বলেন , তৈরি হয়ে যাওয়া পোশাকে শনাক্ত করা ২৪০০ টির মতো রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে ৫% পরিবেশের জন্য বেশ বিপজ্জনক আর ১০% মানবদেহে সরাসরি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। কাপড়ের সাথে দৃঢ়ভাবে আটকে থাকা এই কালারিং এজেন্টগুলো বানাতে ব্যবহার করা হয় বিপুল পরিমানে বিষাক্ত দ্রাবক , ফিক্সিং এজেন্ট , লবণ এবং প্রচুর পানি ।এরমধ্যে কিছু রঞ্জক ল্যাব এনিমেলের স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে যার মধ্যে এলার্জিক রিয়াকশনের পাশাপাশি দেখা গেছে প্রজনন ও বৃদ্ধিগত সমস্যাও (pdf)

কাপড় রং করতে সচরাচর ব্যবহার করা হয় বেনজিন ও এর জাতকসমূহকে আর এগুলোকে মানবদেহের ক্যান্সারকোষ সৃষ্টির জন্য দায়ী বলে ঘোষণা দিয়েছে EPA পরিবেশ রক্ষা সংস্থা , যুক্তরাষ্ট্র । যেসব রঞ্জকে বেনজিন এবং সেই সাথে চিরাচরিত অ্যাজো ডাই নামক রঞ্জককে রপ্তানি ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন । এর মধ্যে কিছু রাসায়নিক পদার্থ আবার পোশাক থেকে সরাসরি ত্বকে প্রবেশ করতে পারে আবার এগুলোকে কাপড় রঙ করার ফ্যাক্টরিগুলোর বর্জ্যপানিতেও পাওয়া যায় যা প্রায়ই কোনো রকম পরিশোধন ছাড়া সরাসরি প্রকৃতিতে ফেলে দেওয়া হয় ।

অনেক গবেষক মনে করেন ব্যাকটেরিয়া এই ডাই বা কাপড় রঙ করার সমস্যাকে প্রশমিত করতে পারে । Textilelab Amsterdam এর সহপ্রতিষ্ঠাতা সেসিলিয়া রাসপান্তি , টেক্সটাইল এন্ড ডিজাইন স্টুডিও Kukka এর স্বত্বাধিকারী লরা লুচম্যান এবং বায়োডিজাইন ল্যাব এন্ড ক্রিয়েটিভ রিসার্চ এজেন্সি Faber Futures এর প্রতিষ্ঠাতাসহ কিছু উদ্ভাবক প্রাকৃতিক ও জীবপ্রকৌশলকৃত পোশাক রঙ করতে ন্যাচারালি পিগমেন্টেড ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করছেন । লুচম্যান বলেন তার প্রক্রিয়ায় প্রথমে কাপড়কে অটোক্লেভিং এর মাধ্যমে দূষণ মুক্ত করা হয় । তারপর একটি কনটেইনারে কাপড়টি নিয়ে এতে ব্যাকটেরিয়া পুষ্টিগুনসমৃদ্ধ একটি তরল মিডিয়াম ঢেলে দেওয়া হয়। তারপর তিনি সে ভেজা কাপড়টিকে ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আনেন এবং একটি তাপ-চাপ নিয়ন্ত্রিত চেম্বারে ৩ দিনের জন্য রেখে দেন। সবশেষে তিনি সে কাপড়টিকে আবার জীবাণু মুক্ত করেন,ভালো কোনো লন্ড্রি ডিটার্জেন্ট দিয়ে কাপড়টি ধুয়ে ফেলেন যেন ব্যাকটেরিয়া মিডিয়ামের গন্ধও ধুয়ে যায় । তারপর তিনি কাপড়টিকে শুকানোর জন্য দেন । শিয়েজা বলেন ,

“ ব্যাকটেরিয়ার রঞ্জকটি বিভিন্ন ধরনের রঙ ও প্যাটার্নে প্রয়োগ করা যায় এবং এতে চিরাচরিত পদ্ধতির চেয়ে ২০% পানি কম খরচ হয় ।“

তবে এ কৌশলে মানবসৃষ্ট অপচনশীল ফাইবার থেকে বোনা কাপড় এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি রঞ্জক পদার্থকে একই সাথে পরিবর্তন করাটা অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ । জীবপ্রকৌশল থেকে পাওয়া সামগ্রীর সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে একে নিত্যব্যবহার্য জিনিসের মতো শক্তিশালী তথা মজবুত করে গড়ে তোলা । সহজাত/দেশজ সংরক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে তিনি এ সমস্যাটি অতিক্রম করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন , তার মতে তার বায়োলেদারের শক্তি ও পানিপ্রতিরোধ্যতা অনেকটাই বেড়ে গেছে রাসায়নিক পদার্থের বদলে ধোয়ার মাধ্যমে ট্যানিং করে ।

পেট্রিডিশে ব্যাকটেরিয়া দিয়ে রঙ করা ছোট সিল্কের নমুনা , Credit: Laura Luchtman & Ilfa Siebenhaar

এ পরিবেশবান্ধব কাপড় এখনো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে ল্যাবরেটরির রাজ্যে , বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রতিযোগিতা এবং হাই ফ্যাশন রানওয়ে গুলোতে । কিন্তু যেসব বিজ্ঞানীরা এটিকে প্রচার করছে তারা বলেন বিভিন্ন ঘরানার ভোক্তা বাজারে নতুনত্ব জারি করার আগ পর্যন্ত এটি শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার । শিয়েজা বলেন ,

প্রথমে যেটা সামাল দেওয়া দরকার সেটি হচ্ছে জীবপ্রকৌশলকৃত পোশাক-আশাকের দামের সাথে গতানুগতিক পোশাকের দামের সামঞ্জস্য আনা । উদাহরন হিসেবে বলা যেতে পারে , লুচম্যান তার একটি ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে রঙ করা সিল্কের স্কার্ফ বিক্রি করেন $১৩৯ এ যেখানে হুবহু একই রকম গতানুগতিকভাবে তৈরি সিল্কের স্কার্ফকে কেনা সম্ভব মাত্র ৳১০ এ । শিয়েজা আর বলেন – “ নবায়নযোগ্য শক্তিকে ঘিরে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে ঠিক তেমনি ব্যয়-সামঞ্জস্যতা কখনোই শুধু বিজ্ঞান এবং এমন প্রযুক্তি যা কাজে আসে তার উপর নির্ভর করে বসে থাকবেনা , এটিকে সক্ষম করতে হবে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়গের জন্য সরকারি ভর্তুকি ও মানসিক পরিবর্তন তৈরির মধ্য দিয়ে ।“

উন্নত ফাইবার প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণা কেন্দ্র ( CRAFT ) এর অধিষ্ঠাতা এবং প্যান্সেল্ভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রকৌশলবিষয়ক আধ্যাপক ম্যালিক ডেমিরেল এ ব্যাপারে এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে ভোক্তাবাজারে বায়োডিজাইনকৃত পোশাক আসতে এখনো বশ কিছু সময় লাগবে । কিন্তু , তিনি বলেন , উৎপাদন প্রক্রিয়া যদি সীমিত করা যায় তবে এর সুফলগুলো এর চ্যালেঞ্জগুলোকে ছাপিয়ে যাবে । তিনি মন্তব্য করেন ,

“প্রোটিন বা শর্করা বেসড ফাইবার বা তন্তুগুলো প্রাকৃতিকভাবেই পচনশীল এবং প্রকৃতি খুব ভালো করেই জানে কিভাবে সেগুলোকে আবার কাজে লাগানো যাবে ।“

এছাড়াও এ গবেষণাকে যেসব ডিজাইনাররা সমর্থন করছেন তারা বলছেন পচানোর জন্য কম্পোস্টিং ফ্যাসিলিটিতে পাঠানোর আগে এই কাপড়গুলোকে আবারো কাজে লাগানো যেতে পারে । ব্যবহৃত রঞ্জককে বার বার ব্যবহার করার মাধ্যমে একে বর্জ্যে পরিণত হতে দেরি করাটাই হলো জৈবিক এবং রাসায়নিক দ্রব্য বিহীন টেক্সটাইল রঞ্জক উপাদান তৈরির মূলনীতি।

সুজান লী – যিনি বার্ষিক বায়োডিজাইন সামিট বায়োফেব্রিকেট প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বায়োডিজাইন পরামর্শক সংস্থা বায়োকাউচার প্রতিষ্ঠা করেছেন – তিনি এ ম্যাটেরিয়ালগুলোর জন্য এ জাতীয় পুনর্ব্যবহারমূলক চিন্তার প্রয়োজনীয়তাকে জোর দিয়েছেন স্কেলেবিলিটি ও সফলতার পথ হিসেবে । লী বলেন ,

“ যদি ফাস্ট ফ্যাসন এ অবস্থা ধরে রাখে , তবে যে সামগ্রীগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো আবার পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে বস্ত্রশীল্পের এ স্রোতের কাচামাল হিসেবে ব্যবহার শুরু করতে হবে যা ফ্যাশনের ওই অংশকে কাচামালের যোগান দিয়ে সচল রাখবে । ডিজাইন প্রসেসের এ সময়ে এ ম্যাটেরিয়ালগুলোর গন্তব্য কখনোই ভাগার হতে পারেনা । এটা আমাদের কর্তব্য , বিশেষ করে ডিজাইনারদের, এ পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া ।“

ফিচার ইমেজ সোর্স:https://www.texintel.com/blog/2020/6/5/world-environment-day-precious-resources-and-textile-manufacturing

লেখাটি 393-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Responses

  1. Jannatul Fiza Avatar
    Jannatul Fiza

    জীবিত অনুজীব বললে দারুণ হতো

  2. Jannatul Fiza Avatar
    Jannatul Fiza

    শর্করা জাত তন্তু বলা যেতো। আপনি খুব ভালো লিখেছেন কিন্তু অর্গানিজম না লিখে অনুজীব লিখলে দারুণ হতো

  3. সুন্দর একটা লেখা। বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ। ফাস্ট ফ্যাশন সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার। তবে বিকল্পের দাম এখনো অনেক বেশি। ইনোভেশন হোক। বিজ্ঞান ব্লগে স্বাগতম!

Leave a Reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers