চারদিকে বইমেলার আবহাওয়া! সময়টাও বই পড়ার। আর, এই সময়টাতেই সুযোগ হয়ে গেলো ‘বিজ্ঞানের বিচিত্র জগৎ’ বইটা পড়ার। একটু সময় নিয়ে বইটা পড়ে ফেললাম। নতুন দুই বিজ্ঞান লেখকের চিন্তাভাবনার প্রতিফলন এই বইটি। আধুনিক বিজ্ঞানের বেশ কিছু জটিল বিষয় বইটাতে সহজ ও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন লেখকরা। বইটার শুরু হয়েছে টাইম ট্রাভেলের বেসিক কনসেপ্ট দিয়ে। এখানে আলোচনা করা হয়েছে ‘বৃত্তাকার পথের ত্বরণ’ নিয়ে। বিস্তারিত আলোচনার পাশাপাশি গাণিতিক কিছু ব্যাপার নিয়েও ব্যাখ্যা রয়েছে এখানে। বেশ কিছু টাইম ট্রাভেল প্যারাডক্স সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘হিগস-বোসন’ কণা অধ্যায়টাও বেসিক লেভেল থেকে আলোচনা করা হয়েছে। একইভাবে মৌলিক বল, আপেক্ষিক তত্ত্ব, আলো-সহ অন্যান্য চ্যাপ্টারের আলোচনা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি। বিপিএল খেলায় বোলার কীভাবে ক্রিকেট বলের বেগ বৃদ্ধি করে, স্প্রিং তুলা নিক্তির সাহায্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বলের এক্সপেরিমেন্ট, পানিতে মানিপ্লান্ট বেঁচে থাকে কীভাবে –এরকম অনেক নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। বিজ্ঞানের বেশ কিছু জটিল ব্যাপারগুলোও বইটিতে আলোচনায় রেখেছে লেখকরা। আপেক্ষিকতা, ব্ল্যাকহোল, কোয়ান্টাম মেকানিক্স রিলেটেড বিস্তারিত আলোচনাও অনেক ভালো লেগেছে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশ কিছু দরকারি বিষয়ও বইটাতে তুলে ধরেছেন লেখকরা। এই দিকটা আমার অনেক ভালো লেগেছে।

বইটিতে যে অধ্যায় গুলো বেশি ভালো লেগেছে:
বস্তুর মধ্যে ভরের সৃষ্টি হয় যেভাবে, বেগ, আদর্শ কৃষ্ণবস্তুর খোঁজে, বিভব ও বিভব পার্থক্য, তাপ ও তাপমাত্রা, রহস্যময়ী সোডিয়াম, কোয়ান্টাম টানেলিং, পানির পৃষ্ঠটান ও পৃষ্ঠশক্তি এবং সান্দ্রতা।
সমালোচনা:
বেশ কয়েকটা চ্যাপ্টারের শেষের দিকের অংশ অনেক সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। বইটাতে ‘টাইম ট্রাভেল’ নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা আশা করেছিলাম। এছাড়া, ‘দুর্বল নিউক্লীয় বল’ অংশটা আরও বিস্তারিত হতে পারত। সেখানে বিটা ক্ষয়ের বিক্রিয়া উল্লেখ করলে পাঠকদের বুঝতে সুবিধা হত। বইটির বেশ কিছু সমস্যা চোখে পড়ার মতো। বইয়ের অধিকাংশ ছবি ইংরেজিতে। ইমেজগুলো এডিট করে বাংলা করে দিলে ভালো হত। আর তাছাড়া ইমেজগুলোর ক্যাপশনও দেয়া নেই! রসায়ন বিষয়ক চ্যাপ্টারগুলোর ক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে, কিছু কিছু বিক্রিয়া জোড় করে চ্যাপ্টারগুলোতে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে!
আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে; বইটার অধিকাংশ বিষয় সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা ছিল। ফলে জানা বিষয়গুলোর প্রতি অতটা আগ্রহ ধরে রাখতে পারিনি! বইটার শেষের দিকের চ্যাপ্টারগুলোর শেষের অংশ অনেকটা পাঠ্যবইয়ের মতো হয়ে গেছে। সময় নিয়ে লিখলে, লেখকেরা আরও ভালো লেখা আমাদের উপহার দিতে পারতো।
রিভিউয়ের শেষ পর্যায়ে:
বইটি মূলত ইন্টারমিডিয়েট ও এস.এস.সি. লেভেলের শিক্ষার্থীদের জন্য। তবে অনার্স লেভেলের শিক্ষার্থীদের জন্যও অজানা বিষয়গুলো জানা হয়ে যাবে অনেকটা। তবে, বইটা পড়তে পড়তে বেশ কিছু কনসেপ্ট ক্লিয়ার হয়ে যাবে। যেমন- বৃত্তাকার পথের ত্বরণ, জড়তার সাথে ভরের সম্পর্ক, প্রোটন ও নিউট্রনের ভর নির্ণয়ে হিগস ফিল্ড ও কোয়ার্কের গতিশক্তির সম্পর্ক, কোয়ান্টাম সুপার পজিশন, পরমাণুতে ইলেকট্রন আসলেই ঘুরে কি-না?, বিভব পার্থক্য, Na ধাতুকে প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না কেন?, Finite and Infinite ভ্যালু, কোয়ান্টাম টানেলিং, সান্দ্রতা-সহ বিজ্ঞানের আরও অনেক ইন্টারেস্টিং ব্যাপার।
দুই বিজ্ঞান লেখকের আইডিয়া যেহেতু এক হয়েছে সেক্ষেত্রে বইটা কলেবরে একটু বড় হবেই। এক্ষেত্রে সবসময় আমার প্রত্যাশা থাকবে টপিকভিত্তিক বিস্তারিত লেখা। আশা করি, পরবর্তীতে দুই-লেখক বিজ্ঞানের আরও নতুন নতুন বিষয়গুলো আমাদের সামনে তুলে ধরবে। আর হ্যাঁ, নতুন দুই লেখকের জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা। তো, বিজ্ঞানপ্রিয় পাঠকদের ‘বিজ্ঞানের বিচিত্র জগৎ’ বইটি পড়ার জন্য বিশেষভাবে নিমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সবাই অনেক অনেক ভালো থাকবেন।
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৩২টি।
প্রথম প্রকাশ: বইমেলা ২০২৩
লিখিত মূল্য: ৪০০ টাকা
রকমারিতে বইটি পেয়ে যাবেন ২৫% ছাড়ে ৩০০ টাকায়।
উত্তর জানান