যা যা লাগবেঃ
১. একটি ডিভিডি ক্যাসেট
২. বড় সিডি বক্স অথবা মোটামুটি ২০সে.মি দৈর্ঘ্যের যেকোন বাক্স
৩.লেন্স খোলা যায় এমন ওয়েবক্যাম
৪.কম্পিউটার
৫.কাঁচি
৬.কিছু কালো কাগজ
৭.এন্টি কাটার
৮.আঠা
৯.স্কেল
১০. জ্যামিতির চাঁদা
১১.পেন্সিল
১২.কালো টেপ ইত্যাদি
বানানো শুরু করঃ
১. প্রথমে ওয়েবক্যামটা নিয়ে ওটার লেন্সটা খুলে ফেল। দেখ লেন্সের ভিতরের অংশে একটা রঙ্গিন ছোট্ট কাঁচের টুকরা লাগানো আছে। এটা হল ইনফ্রারেড ফিল্টার। এটাকে এন্টি কাটারের চোখা অংশটা দিয়ে খোচা মেরে খুলে ফেল। লেন্সটা আগে যেমন ছিল তেমনি করে লাগিয়ে দাও।
২. এবার ডিভিডি ক্যাসেটটা নাও। ওটার একটা অংশ কাঁচি দিয়ে কেটে ফেল। এবার ভালো করে দেখ ডিভিডিটা আসলে দুইটা অংশ একসাথে জোড়া দিয়ে বানানো হয়েছে। এন্টি কাটারের চোখা অংশটা দিয়ে একটু জোড়ে চাড় দাও। দেখবে ডিভিডির ওই দুইটা অংশ আলাদা হয়ে যাবে। একটু সাবধানে করবে কাজটা, যেন হাত কেটে না ফেল। এই দুইটা অংশের মাঝে একটা দেখ আয়নার মত আলো প্রতিফলিত করতে পারে (ডিভিডি টা আগে যেমন পারত তেমন), এই অংশটা ফেলে দাও। আমাদের শুধু যে অংশটা কাঁচের মত (এক দিক দিয়ে দেখলে আরেক দিক দেখা যায়) সেটাই লাগবে।
৩. এখন কাঁচের মত অংশটা থেকে একটা ছোট্ট অংশ কেঁটে নাও। আবার বেশি ছোট কেট না। এমনভাবে কাঁটবে যাতে সেটা ওয়েবক্যামের লেন্সের সামনে চমৎকারভাবে বসাতে পার। কাঁচটার কোনার অংশগুলোতে একটু করে আঠা লাগিয়ে ওয়েবক্যামের লেন্সের সামনে লাগিয়ে দাও।
৪. কালো কাগজটা নাও। সেটা থেকে ১০ সে.মি দৈর্ঘ্য ও ৬ সে.মি প্রস্থের একটা টুকরা কেটে নাও। দৈর্ঘ্য বরাবর সমান এক ভাঁজ আর প্রস্থ বরাবর সমান দুই ভাঁজ কর। উপরের দিকের মাঝখানের অংশে এন্টি কাটার দিয়ে লম্বালম্বি একটা অংশ কেটে ফেল। ছবিটা একটু ভালো করে দেখ। কাগজের আরেকটা ছোট্ট অংশ দিয়ে কাঁটা অংশটাকে এমন ভাবে ঢেকে ফেল যেন কাঁটা অংশটা ১ মি.মি প্রস্থের একটা চিকন ফালির মত হয়। এবার কাগজটা ছবির মত করে ভাঁজ করে ফেল।
৫. এবার বাক্সটাকে নাও। বাক্সের একদিকের কোনায় আগের কাগজ টা যেমন করে কেঁটেছ তেমন করে একটা ফালি এন্টি কাটার দিয়ে কেঁটে নাও। এবার এই অংশে তোমার সেই কাগজটাকে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দাও। দেখ জিনিসটা এমন দাঁড়িয়েছে যে বাইরে থেকে আলো ওই সরু ফালি দিয়ে বাক্সটার ভিতরে আসছে।
৬. এবার ওয়েবক্যামটাকে ছবির মত করে আঠা দিয়ে বসাও। ওয়েবক্যামের ইউ এস বি ক্যাবলটা বুদ্ধি করে বাক্সে একটা ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে বের করে আন। দেখো ক্যাবলটা যেন বাক্সের ডালা বন্ধ করতে সমস্যা না করে। লক্ষ্য কর ওয়েবক্যামের মুখটা এমন ভাবে বসানো হয়েছে যে তা ঐ সরু ফালির সাথে প্রায় ৪০ ডিগ্রি কোণ করে আছে। এই কোণটা চাঁদা দিয়ে ভালো করে মেপে বসাবে। একটু এদিক সেদিক হলে সমস্যা নেই। আরো দেখ আমরা আগে যেমন কালো কাগজটা দিয়ে একটা আকৃতি বানিয়েছিলাম তেমন আরেকটা আকৃতি ওয়েবক্যামটার মুখের সামনে লাগিয়ে দিয়েছি। এগুলো কেন লাগিয়েছি ভেবে বার কর।
৭. বাক্সের ডালাটা বন্ধ কর। ব্যাস বানানো শেষ! বাক্সের চারদিকে কালো টেপ দিয়ে ছোট ফুঁটো থাকলে বন্ধ করে দিতে ভুলো না। আর বাক্সে একটু রঙ করতে পার, দেখতে যাতে ভালো লাগে।
কিভাবে চালাবে?
ওয়েবক্যামটা কম্পিউটারের সাথে যুক্ত কর। ওয়েবক্যামের সফটওয়্যারটা ওপেন কর। প্রথমে অন্ধকার আসবে। একটা বাতি তোমার বর্ণালিবীক্ষণের ফালির সামনে ধর। কি কম্পিউটারের স্ক্রিনে ঐ বাতির বর্ণালি দেখতে পাচ্ছ? ছবি তুলে ফেল। বিভিন্ন বাতির বর্ণালি পরীক্ষা কর।
এটা নিয়ে আরো গবেষণা করতে চাও?
বর্ণালি দেখে একটা বাতির আলো কি উপাদানে তৈরি তা ব লে দেওয়া যায়। এটা নিয়ে ইন্টারনেটে অনেক কিছু আছে। শুধু গুগলে গিয়ে সার্চ দিয়ে দেখ! একটা সপ্তাহ এটা নিয়ে কাটাও।
এরপর তোমরা যদি বর্ণালি আরো ভাল করে এনালাইসিস করতে চাও। একটা সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পার। এটার নাম Visual Spec । এখান থেকে এটা ডাউনলোড করে নাও-
http://www.astrosurf.com/vdesnoux/
এটা চালাতে একটু অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। তুমি টিউটরিয়ালগুলো (ওয়েবসাইটটিতে আছে) ভালো করে পড়লে খুব তাড়াতাড়ি শিখে যাবে।
তোমার চমৎকার বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্রটির জন্য ধন্যবাদ। পোস্টের শুরুতে বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে কিছুটা ভূমিকা দিলে ভালো হতো।
প্রিয় ইমতিয়াজ ভাই, এই পোষ্টটির মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র প্রজেক্টটি কিভাবে বানানো যাবে সেটি নিয়ে আলোচনা করা। বর্ণালীবীক্ষণ একটা বিশাল জিনিস। এটা সম্পর্কে পরে আমি অন্য একটি পোষ্ট দিব। প্রথমেই বিশাল কঠিন থিউরি দিয়ে শুরু করতে চাইনি। আমি চাই ছেলেমেয়েরা এটা বানিয়ে আনন্দ পাক। যখন তারা এটাতে আনন্দ খুঁজে পাবে তখন তারা নিজের ইচ্ছাতেই এটা নিয়ে আরো পড়াশুনা করবে এবং জানবে। এই প্রজেক্টটা আমি শুধু আলো নিয়ে মজা পাবার জন্য দিয়েছি। এটা কি তারা এটা নিয়ে যদি আরো পাঁচ বছর পরেও জানে তাহলে আমি নিজেকে সার্থক মনে করব। আমার মনে পড়ে আমি ছোটবেলা অনেক মজার মজার জিনিস বানাতাম। কিন্তু কখনো থিউরি নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। যেকোন জিনিস বানাতে আমার ভালো লাগে তাই বানাতাম। তাই এই পোষ্টের উদ্দেশ্য এটা কি জিনিস এটা বলা না, শুধু প্রজেক্ট বানানোর আনন্দ পাওয়া ও দেওয়া।
আমি বিশাল থিওরী দিতে বলছি না। ছোট বাচ্চাদের কাছে বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র অপরিচিত মনে হতে পারে। তাই শুরুতে যদি দিয়ে দেয়া যায় যে বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে বিভিন্ন রংএর আলো আলাদা করা যায় তাহলেই তারা বুঝতে পারবে।
শান্ত, চমৎকার পোস্ট। এরকম আরো পোস্ট চাই। ধন্যবাদ।
অনেক দিন পরে তোমার লেখা পেলাম …। এখানে মূল জিনিস তো ওয়েব ক্যাম। ওয়েব ক্যাম সম্পর্কে একটা ধারণা দাও তো। তুমি কোন ধরনের ওয়েবক্যাম ব্যবহার করেছো? দাম কিরকম??
এখানে মূল জিনিস মোটেও ওয়েবক্যাম না। মূল জিনিস হল গ্রেটিং টা অর্থ্যাৎ সিডি থেকে যে জিনিসটা আমরা সংগ্রহ করেছি। ওয়েবক্যাম নিয়ে ধারণা দেবার কিছু নেই। ওয়েবক্যাম এখন সবাই চেনে। এখানে যেকোন ধরনের ওয়েবক্যাম ব্যবহার করা যাবে। বাজারে সবচেয়ে কম দামে যেটা পাওয়া যাবে সেটাও ব্যবহার করা যাবে আবার সবচেয়ে বেশি দামীটাও করা যাবে। ভালো ওয়েবক্যাম ব্যবহার করলে ছবির মান ভালো হবে এটাও মোটামুটি সবাই জানে এবং বুঝে।
ওয়েব সাইটটা চমৎকার! সেখানে সত্যিকারের কিছু পর্যবেক্ষনের পদ্ধতি দেয়া আছে। এখন কথা হলো, হাতে বানানো বর্ণালীবীক্ষণের স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের কি হবে?
আপনার চারপাশে যখন অনেক যন্ত্রপাতি থাকবে তখন আপনার মাথায় স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের চিন্তা সহজে খেলা করবে। এই দেশে তো এমন কিছু পাওয়া যায় না। সাধারন মানের একটা গ্রেটিংও যদি পাওয়া যেত তাহলেও একটা কথা ছিল। আপনি ভাবেন কিভাবে এটা আরো স্ট্যান্ডার্ড করা যায়। আমি শুধু এই টুকুই বলতে পারি যে একটা ভালো মানের গ্রেটিং এই পুরো যন্ত্রটার সংবেদনশীলতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। ভালো মানের গ্রেটিং এর দাম যে খুব বেশী তাও না, শুধু আমাদের দেশে কোথাও পাওয়া যায় না, এটাই দুঃখ।
হুম। আচ্ছা তোমার আগে যে একটা এক্সপেরিমেন্ট ছিলো, গ্লাসে কালি মেখে ব্লেড দিয়ে দাগ দিয়ে গ্রেটিং বানানো, ওইটার পাফরম্যান্স কেমন ছিলো??