মাঝেমধ্যেই হয়তো ভাবেন কি করে দারুন সব রেজোলুশন এর প্রোটিনের গঠনের অসাধারণ সব ছবি তৈরি করেন বিজ্ঞান লেখকেরা। এমন সব ছবি যেগুলির মান এতই উচ্চ যে অনায়াসে বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ বা বিজ্ঞান ম্যাগজিনের প্রচ্ছদে ছাপিয়ে দেয়া যায়। আবার অনেকে বই লেখার সময় ছবি তৈরি করতে চান বা প্রেজেন্টেশানের জন্য নিজের মত করে প্রোটিন বা ডিএনএ’র ছবি বানাতে চান। আমাকে প্রায়ই মানুষ জিজ্ঞেস করেন কিভাবে এমন ছবি তৈরি করা যায়। আসলে এমন জিনিস শিখতে হয়েছে নিজের গবেষণা কাজের জন্য। তবে যখন শিখেছি তখন কোন ভিডিও ছিলনা কোথাও, ল্যাবের মানুষজনকে জিজ্ঞেস করে এবং ম্যানুয়াল দেখে শিখেছি। এখন কিছু ইংরেজী ভিডিও পাওয়া যায় ইউটিউবে। আজকে ছবি তৈরিটা শিখিয়ে দিচ্ছি একটা ভিডিও দিয়ে, বাংলায়।
ভিডিওতে আমরা দেখবো পাইমোল নামক একটি প্রোগ্রাম নিয়ে। এটা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জৈব অণুকে নিজের মত করে সাজিয়ে দেখতে পারেন, ছবি তৈরি করতে পারেন, মুভি তৈরি করতে পারেন। তবে সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল জৈবিক অণুকে আপনি ত্রিমাত্রিকভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে পারাটা। যারা জৈব অণুর গঠন বোঝেন তার এই গঠন থেকে কাজের সম্পর্ক, লাইগেন্ড বন্ধন ইত্যাদি বিষয়ও প্রোগ্রামটি ব্যবহার করে বুঝে নিতে পারবেন। প্রোগ্রামটি এমন যে যারা কম্পিউটার গেইম খেলতে পছন্দ করেন তারা এটাকে পাজল হিসেবে নিয়ে গেইম খেলার আনন্দ পেতে পারেন। আজকে আমি শুধু দেখাচ্ছি কিভাবে সুন্দর ছবি তৈরি করা যায়। এটি তৈরি করা হয়েছিল শিক্ষক.কম এর প্রোটিনের গাঠনিক জীববিজ্ঞান কোর্সটি পড়ানোর উদ্দেশ্যে। উপরে ইউটিউব থেকে চট করে দেখে ফেলুন:
যারা ইউটিউব ব্যবহার করতে পারছেন না তারা এখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। (ফাইলটা বেশ বড় আকারের এবং .mov ফরম্যাট এর। .mp4 ও দেয়ার চেষ্টা করছি।)
—————————————————————————————————————————————
এখানে বলে দিচ্ছি ছোট করে ধাপে ধাপে:
১. প্রথমে যাবেন প্রোটিন ডাটা ব্যাংক এ। সেখানে গিয়ে যেই প্রোটিনের গঠন নিয়ে কাজ করতে চান তার নাম লিখে খুঁজে বের করে নেবেন সার্চ রেজাল্ট থেকে। ডানপাশের ‘ডাউনলোড ফাইল’ ট্যাব থেকে ‘টেক্সট’ ফাইল ডাউনলোড করে নিন।
২. তারপর কম্পিউটারে পাইমোল সফটঅয়্যার ডাউনলোড করবেন। ছাত্র হিসেবে ফ্রি কপি পাওয়ার কথা। নতুবা ট্রায়াল ভার্সন দিয়ে কাজ চালিয়ে নিন।
৩. পাইমোল দিয়ে ডাউনলোড করা ফাইলটি ওপেন করুন। তারপর ভিডিওতে দেখানো উপায় অনুযায়ী তৈরি করে ফেলুন কয়েকটি ছবি।
—————————————————————————————————————————————
তাহলে এবার দেখি পাইমোল প্রোগ্রামটি ব্যবহার করে কিভাবে আমি একটা প্রোটিনকে বিভিন্নভাবে দেখতে পারি। এখানের উদাহরণটি একটি ব্যাকটেরিয়ার লাইগেজ এনজাইম এর। দেখুন কিভাবে আমি প্রোটিনটির বিভিন্ন অংশ হাইলাইট করেছি। প্রথমটাতে পুরো প্রোটিন একই রঙে, মাঝেরটিতে শুধু প্রোটিনটির একটি ডোমেইন হাইলাইট করা, আর শেষেরটিতে একটি ডোমেইনের শুধু একটি অংশ হাইলাইট করা। (ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখে নিতে পারেন।)
আবার একই প্রোটিনটিকে বিভিন্ন ধরনে প্রকাশ করতে পারেন। যেমন উপরে ছবিগুলি রিপ্রেজেন্টেশানকে বলে ‘কার্টুন’। নিচের ছবি দুইটির প্রথমটি হল ‘মেশ’ এবং দ্বিতীয়টি হল ‘সারফেস’।
—————————————————————————————————————————————
আবার পাইমোল ছাড়া অন্য প্রোগ্রামও আছে যারা আরও অন্য কয়েক রকমভাবে ছবি তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। যেমন: মোলসফট, কাইমেরা ইত্যাদি। এই দুইটিই ফ্রি সফটঅয়্যার।
সার্ভার এবং প্রোগ্রামের মূল ওয়েবপেইজগুলির (যেখান থেকে ডাউনলোড করবেন) লিংক এখানে দিয়ে দেয়া হল:
১। প্রোটিন ডাটা ব্যাংক (ডাউনলোডের প্রয়োজন নেই)
২। পাইমোল
৩। কাইমেরা
৪। মোলসফট
—————————————————————————————————————————————
প্রোগ্রামগুলি দিয়ে শুধু যে প্রোটিনের গঠন নিয়েই শুধু কাজ করা যায় এমন নয়। ডিএনএ বা অন্য জৈব অণূ বা যেকোন যৌগকেই আপনি দেখতে পারেন ত্রিমাত্রিকভাবে। তাহলে দেরি কেন? শুরু করে দিন আপনার পছন্দের প্রোটিনটির ছবি তৈরি। টিপস: সবচেয়ে সহজ হয় আমি ভিডিওতে যেইভাবে করেছি প্রথমবারে ঠিক সেই প্রোটিন নিয়ে একইরকম ছবি তৈরি করার চেষ্টা করা।
[পাঠক এই ধরনের লেখায় উৎসাহী হলে আমি অন্য কিছু টেকনিক নিয়েও টিউটোরিয়াল তৈরি করে দেব, যেমন মুভি তৈরি, প্রোটিনের মধ্যে বা প্রোটিনের সাথে ডিএনএ’র সংযোগ কিভাবে বের করে দেখাতে হয় এসব।]
ভালো জিনিস,
এই ধরনের টেকনিক্যাল পোস্ট আরো চাই।
ধন্যবাদ। দেখা যাক।
প্রোটিনের গঠন নিয়ে যারা নাড়াচাড়া আগ্রহী তাদের শুরু করতে সুবিধা করে দেবে এই টিউটোরিয়ালটি।
বায়োইনফরমাটিক্স শিখার ইচ্ছা ছিল। এখন শুরু করতে পারব।
আমার একটা প্রশ্ন আছে। বায়োইনফরমেটিক্স শিখার জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখা কতটা জরুরী?
আপনি যদি ওয়েট ল্যাবের দরকারে রুটিন বায়োইনফরমেটিক্সের কাজ করতে চান তাহলে প্রোগ্রামিং শেখাটা ততোটা জরুরী না। খানিকটা স্ক্রিপ্টিং (মানে পাইথন, আর ইত্যাদি) আপনার অনেক সময় বাঁচিয়ে দেবে অজস্র ফাইল হ্যান্ডেলিঙের সময়। আর যদি বায়োইনফরমেটিক্স ভালোভাবে শিখতে চান তাহলে প্রোগ্রামিং শেখাটা জরুরী। নেচারের এই আর্টিকেলটা দেখতে পারেন: http://www.nature.com/naturejobs/science/articles/10.1038/nj7479-319a
এইসব বিষয়ে আরও লিখবেন আশা করি