এইটা কোনো Textbook নয়। তাই মাত্রা সমীকরণ কাকে বলে, এর তাৎপর্য কী এসব আলোচনা না করে মূল জায়গায় আসি।
সম ত্বরণে চলমান বস্তুর [latex]t[/latex] তম সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দূরত্ব নির্ণয়ের সূত্র হচ্ছেঃ
$$S_{th} = U + 1/2a(2t – 1)$$
এখানে $$S_{th}$$ দ্বারা $$t$$তম সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দূরত্ব (সরণ),$$U$$ দ্বারা আদিবেগ, $$a$$ দ্বারা সম ত্বরণ আর $$t$$ দ্বারা অতিক্রান্ত সময় বোঝাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
গতি বিদ্যায় বহুল প্রচলিত এই সূত্রের মাত্রা সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা করেছেন কখনো? না করে থাকলে এখুনি করুন। আপনি যদি ঠিকঠাক ভাবে (আপাত দৃষ্টিতে ঠিকঠাক) করে থাকেন তাহলে আপনার বাম পক্ষে আসা উচিৎ [L] আর ডান পক্ষ $$[LT^ {-1}]$$। কি মাত্রা সমীকরণ মিলছে না তো !! আবার, আমরা এটাও জানি যে মাত্রা সমীকরণ না মিললে সেই সমীকরণটি বৈধ নয়। তাহলে এতদিন ধরে যে আমরা এই সূত্র ব্যবহার করে এসেছি তা কি ভুল। নিশ্চয় তা ভুল হতে পারে না । তাহলে এর রহস্য কোথায়?
এ সম্পর্কিত আরো লেখা:
১. নিউটনের কামানে চড়ে কক্ষপথে
২. ক্লাসিক্যাল মেকানিক্স পর্ব-১: নিউটনের গতিসূত্রের ইতিহাস
৩. গতির আপেক্ষিতা ও ‘পৃথিবীর চারপাশে সূর্যের ঘূর্ণন’
৪. শব্দের ডপলার প্রভাব এবং সনিক বুম
এর রহস্য ভেদ করতে হলে আপনাকে মাসুদ রানা, কাকাবাবু কিংবা কিশোর পাশার মত তুখোর গোয়েন্দা না হলেও চলবে। গোয়েন্দারা একটা জিনিস পরামর্শ দিয়ে থাকেনঃ তা হলো কোনো কিছু হারিয়ে গেলে সেটা সেখানেই খোঁজ করা উচিৎ যেখান থেকে সেটি হারিয়ে গেছে। চলুন তাহলে আমরা এই সূত্রের প্রতিপাদন নিয়ে একটু মাথা ঘামায়।

আমরা যদি সম ত্বরণে চলা কোনো বস্তুর চতুর্থ সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দূরত্ব বের করতে চায় তাহলে প্রথম চার সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দূরত্ব বের করব, তারপর প্রথম তিন সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দূরত্ব থেকে তা বাদ দিলেই চতুর্থ সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দূরত্ব পেয়ে যাব। (খেয়াল করে দেখুন চতুর্থ সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দূরত্ব আর চার সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দূরত্ব কিন্তু এক কথা নয়)।
কথাটা এইভাবেও বলা যায়ঃ প্রথমে t সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দূরত্ব বের করব। তারপর t – 1sec এ অতিক্রান্ত দূরত্ব বের করে তা থেকে (t সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দূরত্ব থেকে) বিয়োগ দিলে t তম সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দূরত্ব আমরা পেয়ে যাব।
t সেকেন্ডে অতিক্রান্ত দূরত্ব নির্ণয়ের জন্য আমরা নিচের সূত্রটির সাহায্য নিতে পারিঃ
$$S_t = Ut + (1/2)at^2$$
এখন t – 1sec এ অতিক্রান্ত দূরত্ব নির্ণয় করতে হলে t এর জায়গায় t – 1sec বসিয়ে দিলেই হলঃ
$$S_(t-1 sec) = U(t – 1 sec) + 1/2a(t – 1 sec)^2$$
এবার নিচের ছকটি খেয়াল করুন।

আশা করি বুঝতে পারছেন। যারা বুঝতে পারছেন না তাদের জন্য বিষয়টা একটু খোলাসা করা যাক।
১ ও ২ নং লাইনে কী করা হয়েছে তার ফিরিস্তি আগেই দেওয়া হয়েছে। ৩ নং লাইনে ১ নং লাইন থেকে ২ নং লাইন বিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৪ নং লাইনের বাম পক্ষে $$S_t – S_(t-1 sec)$$ এর বদলে $$S_th$$ লেখা হয়েছে। আর ডান পক্ষের প্রথম অংশে U কমন নেওয়া হয়েছে আর দ্বিতীয় অংশে 1/2a কমন নেওয়া হয়েছে। ৫ নং লাইনে ডান পক্ষের প্রথম অংশে t – t চলে গেল শুধু 1sec থাকল। আর দ্বিতীয় অংশে $$a^2 – b^2 = (a+b) (a-b)$$ এর সূত্র প্রয়োগ করা হয়েছে। ৬ নং লাইনের ডান পক্ষের দ্বিতীয় অংশে t + t মিলে 2t হয়েছে আর t – t চলে গিয়ে শুধু 1sec আছে। ৭ নং লাইনের বাম পক্ষে সরণ $$S_{th}$$ এর মাত্রা [L] বসানো হয়েছে। ডান পক্ষের প্রথম অংশে আদিবেগ U এর মাত্রা $$[LT^ {-1}]$$ আর 1sec দ্বারা সময় বোঝাচ্ছে তাই মাত্রা [T] বসেছে। দ্বিতীয় অংশে ত্বরণ a এর মাত্রা $$[LT^ {-2}]$$ এবং (2t – 1sec) পুরোটায় একটা সময় বোঝাচ্ছে বলে মাত্রা [T] বসেছে। 1sec এর জন্য আরেকটা [T] বসেছে। ৮ নং লাইনে ডান পক্ষের প্রথম অংশে [T] আর $$[T^ {-1}]$$ ঘচাং ফু হয়ে শুধু [L] থাকে । দ্বিতীয় অংশে [T] আর [T] মিলে $$[T^2]$$ হয়েছে। ৯ নং লাইনের ডান পক্ষের দ্বিতীয় অংশে $$[T^2]$$ আর $$[T^ {-2}]$$ চলে গিয়ে [L] থাকে। ১০ নং লাইনের বাম ও ডান পক্ষ খেয়াল করে দেখুন তো সমান হয়েছে কি না !!
কি রহস্য উদঘাটন হলো তো!! একটা বিষয় খেয়াল করুন। এই সূত্রের প্রতিপাদন প্রায় সবারই জানা। আমি শুধু t -1 এর বদলে t – 1sec লিখেছি। t -1 এর জায়গায় t – 1sec লেখার ফলে তা কীভাবে আমাদের চোখে আঙ্গুল দেখিয়ে মাত্রা সমীকরণের রহস্য জট খুলতে সাহায্য করল!!
আশা করছি কোনো কিছু বুঝতে কারো অসুবিধা নেই। তারপরও সম্পুর্ণ post টি ভাজা মাছের মত গলাধঃকরণ করতে গিয়ে গলার কোথাও কাঁটা আঁটকে যায় তবে আমাকে Email করতে পারেন। সেখানে আপনার গলার কাঁটা দূর করার চেষ্টা করা হবে।
E-mail: ashifmarshal A com
A = @gmail.
লেখাটি পড়ে ভালো লাগল।
গাণিতিক অংশগুলো LaTeX এ লিখলে ভালো হয়।
LaTeX লেখা খুব সহজ এবং চমৎকার। কিছুটা HTML ট্যাগের মত।
আপনাকে গাণিতিক অংশের সামনে [latex] ও পেছনে [/latex] ট্যাগ দিতে হবে। যেমন: E=mc^2 কে প্রকাশ করতে [latex]E=mc^2[/latex] লিখতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন গাণিতিক প্রতীক, চিহ্ন, ভগ্নাংশ, অপারেটর ইত্যাদি প্রকাশের জন্য LaTeX এ সহজ নির্দিষ্ট কিছু কোড আছে। ইন্টারনেটে ঘাটলে সহজেই পাবেন।
একটা উদাহরণ দেইঃ আপনি লিখেছেন, St = Ut + 1/2at2 । এটা লেখা উচিত ছিল এভাবেঃ s_t = ut + (1/2)at^2
আর LaTeX এ লিখতে হবে, [latex]s_t = ut + (1/2)at^2[/latex], আরো সুন্দর করে প্রকাশ করতে হলে [latex]s_t = ut + \frac{1}{2}at^2[/latex]।
হ্যাপি ব্লগিং।
ধন্যবাদ। এই ধরণের comment আমাদেরকে উৎসাহ দেয়।
পরবর্তীতে latex ব্যবহার করার চেষ্টা করব।
ফুয়াদ, আপনার এই বর্ণনাটা সাহায্য অংশে দিয়ে দিচ্ছি, পরবর্তিতে অন্যদের সাহায্য হবে। 🙂
মাত্রা সমীকরণ পদার্থবিজ্ঞানের সৌন্দর্য প্রকাশ করে। সমীকরণ লেখার জন্য ল্যাটেক্স ব্যবহার করার ভালো, ফুয়াদ যেমন বললেন। বিজ্ঞান ব্লগে স্বাগতম!
লেখাগুলো অনেক ভালো লেগেছে
একটি বস্তুকে উপর থেকে ফেলে দিয়ে যদি নিচে আসে পৌঁছাতে 70 বছর সময় লাগে, সেই বস্তুটি কত দুরত্ব অতিক্রম করবে ???