চা, কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি

আচ্ছা যদি একজন মানুষ কোন এক ব্ল্যাক হোলের দিকে মোহে আকৃষ্ট হয়ে অগ্রসর হতে থাকে তাহলে সে কি দেখবে? তার চারপাশের দুনিয়াটাই বা কেমন হবে? সে কেমনই বা অনুভব করবে? সে কি আদৌ এই মোহের টান ছিন্ন করে বের হয়ে আসতে পারবে? নাকি সেই ব্লাকহোলের জগতে হারিয়ে যাবে?…

বইয়ের প্রথম অধ্যায়টা পড়লে মোটামুটি এইসব অদ্ভুত প্রশ্নের উদয় হবে। এটাই স্বাভাবিক। কেননা অধ্যায়টা শুরু হয়েছে রাস্তা নামে একটা হরর সাইফাই দিয়ে। যেখানে গল্পের মূল নায়ক ভুলবশত ব্ল্যাক হোলের দিকে গাড়ি নিয়ে অগ্রসর হয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা সম্মুখীন হন। আর তার জীবনের বিনিময়ে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে পাঠকের মনে যে প্রশ্ন, খটকা জন্মায় তা রিলেটিভিটির মতো কাঠখোট্টা মার্কা টপিকের প্রতি পাঠকের আগ্রহ জন্মাতে সাহায্য করে। আর এর পরের অধ্যায়টায় রয়েছে সেই সব মহারথীদের কথা যাদের কারণে জেনারেল রিলেটিভিটির মতো টপিকে সাথে আমরা পরিচিত হতে পেরেছি। যাদের কারণে আজ আমরা এত আরাম করে জীবনযাপন করতে পারছি। সিরিয়াসলি জোক করছি না।

বই এর প্রচ্ছদ।

যাইহোক এবার পরবর্তী অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করা যাক। ভাইরে ভাই এর আগের চ্যাপ্টারগুলো তো কিছুই না। শুরু তো এখান থেকেই। এই অধ্যায় থেকে শুরু হয়েছে আপনার যাত্রা। এই চ্যাপ্টারটা নাম ‘ফাউন্ডেশন’। আশা করি নাম দেখেই বুঝতে পারছেন চ্যাপ্টারটা কী নিয়ে? যদি না বুঝে থাকেন তাহলে বলি এই রিলেটিভিটি নামের যে দৈত্যের সাথে আপনি লড়াই করতে যাচ্ছেন, যার পেটের কথা জানতে চাচ্ছেন তার সম্পর্কে কিছুই না জেনে তার সাথে লড়তে যাবেন? একবার তার সম্পর্কে জেনে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করবেন না? মূলত এই অধ্যায়টা এই সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু বিষয় নিয়েই। যা ছাড়া আপনি সেই দৈত্যের সাথে লড়তে পারবেন না। সেখানে আলোচনা করা হয়েছে মাত্রা, ভেক্টর, ত্বরণ, বেগ, সময়, স্থান এসব নিয়ে আরকি। মূলত এগুলো কি, কীভাবে কাজ করে। এসব নিয়ে প্রাথমিক ধারণা দেয় আরকি।

তো যে দৈত্যকে নিয়ে আলোচনা করছি তার সম্পর্কে না হয় মোটামুটি জানলাম। এবার তো গভীরে ঢুকতে হবে তাই না? যা নিয়েই মূলত এর পরের চ্যাপ্টারটা। আচ্ছা বইয়ের নাম তো চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভি। তার মানে কি এখানে শুধু জেনারেল রিলেটিভি নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে? 

উত্তর হলো না।

শুরুতেই জেনারেল রিলেটিভি নিয়ে আলোচনা না করে আলোচনা করে স্পেশাল রিলেটিভিটি নিয়ে। কেননা তিনি যদি তা না করতেন তাহলে সামনে গেলে মানে জেনারেল রিলেটিভিটির দিকে সোজাসুজি অগ্রসর হলে অনেক প্যারা খেতে হবে। পরে তেমন কিছু বুঝব না। তাই তিনি আগে স্পেশাল রিলেটিভিটি নিয়ে আলোচনা করেছেন। মোটকথা জেনারেল রিলেটিভিটির ভিত্তি গড়তে যা যা প্রয়োজন তার সবই আলোচনা করেছেন। যাইহোক এর পরের অধ্যায় থেকে শুরু হয়েছে জেনারেল রিলেটিভিটি। যা বুঝতে হলেই প্রথমেই জানতে হবে স্পেস বড় হওয়া ছোট হওয়া বলতে আসলে কী বুঝায়, স্পেস টাইমের চাদর বলতেই বা কি বুঝায়? পাশাপাশি বুঝতে হবে টেন্সর,

মেট্রিক সমীকরণ, পোলার কো-অর্ডিনেট সিস্টেম। এখানে মূলত টেন্সর শিখিয়ে পোলার কো অর্ডিনেট সিস্টেম বুঝানো হবে। আর এরপরের চ্যাপ্টারটা হলো আমাদের অতি পরিচিত মহাকর্ষকে নিয়ে। এখানে মূলত এই মহাকর্ষের অ্যানাটমি করা হয়েছে। মহাকর্ষ আসলে কী? কেউ বলে বল (নিউটন) কেউ বলে এটা বল নয় অন্য কিছু (আইনস্টাইন)। কে ঠিক?

আরেহ ভাই এই অংশটা পড়ে আবার আমাকে মারতে আসিয়েন না।

লেখক নাঈম হোসেন ফারুকী।

এই অধ্যায়ে লেখক আমাদের সোজাসুজি নিউটনের মাথার মধ্যে নিয়ে যান। যেই মুহূর্তে নিউটনের মাথায় তাল (ইয়ে মানে আপেল আরকি) পড়ে তখন তিনি কিভাবে মহাকর্ষকে আবিস্কার করেন তার কথা বলেন। এ নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি শুধু নিউটনকেই না কেপলারকে টেনে এনেছেন। শুধু মহাকর্ষ কী এটা বুঝানোর জন্য। যখন সবকিছু বুঝানো শেষ করে প্রমাণ করলেন যে মহাকর্ষ আসলে বল। ঠিক তখনই তিনি আইনস্টাইনকে টেনে এনে প্রমাণ করেন মহাকর্ষ কোন বল নয়। কেমনে? প্রচুর প্রশ্ন জাগছে না? এই প্রশ্নের উত্তর না হয় না’ই দেই। কিছু কিছু জিনিসের উত্তর না জানাই ভালো!

এইবার শেষ অধ্যায় নিয়ে কথা বলি চলেন। এটি সবচেয়ে অদ্ভুত আর মজার অধ্যায়। ‘ব্ল্যাকহোল’। যেটা নিয়ে একেবারে শুরুতেই আলোচনা করেছিলাম। অধ্যায়ের নাম থেকেই বুঝা যাচ্ছে এর বিষয়বস্তু কি নিয়ে। এখানেও আগের অধ্যায়ের মতো মহাকর্ষের জায়গায় ব্ল্যাকহোলের অ্যানাটমি করা হয়েছে। এখানে আলোচনা করা হয়েছে ব্ল্যাক হোল কি জিনিস? এটা খায় না মাথায় দেয়? কিভাবে ব্ল্যাক হোলের জন্ম হয়? ব্ল্যাকহোল দেখতে কেমন? এর মধ্যে আছেটা কি? কেউ যদি ব্ল্যাকহোলে অগ্রসর হয় তাহলে সে কি দেখবে? ব্ল্যাকহোলের সাথে টাইম মেশিনের সম্পর্ক কি? এসব আরকি পাশাপাশি ওই যে একেবারে শুরুর দিকে যেসব প্রশ্নের উদয় হয়েছে সে সব কিছুর উত্তর পাওয়া যাবে এই অধ্যায়ে।

এতকিছু পড়ে যদি মনে করেন যে আপনার রিলেটিভিটি নিয়ে সবকিছু জানা হয়ে গেছে তাহলে বলব থামুন। এখনো অনেক কিছু বাকি আছে আলোচনা করার। এজন্য তিনি পুরা বইটাকে দুই খন্ডে রুপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন। আর এসব নিয়েই এই বইটার প্রথম খন্ড। তো জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে এখনই বইটা সংগ্রহ করতে পারেন। রকমারিসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত লাইব্রেরি থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন বইটা।

সমালোচনা

বইটিতে লেখক কিছু কিছু বিষয় বোঝানোর ক্ষেত্রে একটু কাঠখোট্টা নীতি অবলম্বন করেছেন। বইটি পড়ার পূর্বে বেশকিছু ধারণা রেখে তবেই বইটি পড়া উচিত। লেখক বেসিক থেকে টানেন নি। বরং এক্ষেত্রে তিনি তার পাঠককে যথেষ্ট ধারনা রাখে এমন ধরেই বইটি এগিয়েছেন। কাজেই একদমই বেসিক জানে না এমন কারো কথা ভেবে তিনি বইটি লিখেননি। অপরদিকে, তার লেখায় বৈয়াকরণিক অলংকার বা ভাষার মাধুর্যতা অবলম্বনের খুব বেশি প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় নি।

হ্যাপি রিডিং!

লেখাটি 88-বার পড়া হয়েছে।

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 905 other subscribers