টেকনিকস ইন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং

অ্যাকাডেমিক আগ্রহ থেকে আমরা যে-সব বই পড়ি সেগুলোকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক হচ্ছে সেই সমস্ত বই যেগুলো আমাদের কৌতূহলকে মেটায় বা আরো বেশি কৌতূহলী করে তুলে। অন্যদিকে, দুই হচ্ছে সেই সমস্ত বই যেগুলো আমাদের পরীক্ষার ফলাফলকে ভালো করতে সাহায্য করে। আর উপরের এই দুই শ্রেণির মধ্যে সুন্দর ভারসাম্য রেখে লেখা হয়েছে টেকনিকস ইন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বইটি।

এইজেল আকস্যান কুরনাজ (বাংলা উচ্চারণ নিয়ে আমি নিশ্চিত নই ‘Isil Aksan Kurnaz’) এর লেখা এই বইটি একইসাথে জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং এর টুলসগুলোকে আমাদের বোধগম্য ভাষাতে উপস্থাপন করতে চেয়েছে এবং সমান্তরাল গতিতে দেখিয়ে গিয়েছে এই টুলসগুলোর রিয়েল লাইফ ল্যাবরেটরি অ্যাপ্লিকেশনস। তবে বইয়ের শুরুতেই লেখিকা সাবধান করে দিয়েছেন যে বইটি লেখা হয়েছে শুধু স্নাতক শিক্ষার্থীদেরকে উদ্দেশ্য করে এবং এটাকে যাতে কেউ ল্যাবরেটরি ম্যানুয়েল মনে না করে। বইটি পড়ার পর তার এ সাবধান বাণীকে আমার কাছে যথার্থই মনে হয়েছে।

বই এর প্রচ্ছদ।

সহজ এবং সাবলীল ইংরেজিতে লেখা এই বইটিতে লেখিকা তুরস্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার আট বছরেরও বেশি সময় ধরে নেয়া টেকনিকস ইন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের পাঠদান অভিজ্ঞতাকেই সারা বিশ্বের আন্ডারগ্রেডদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে চেয়েছেন। বইটি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ফিল্ডের শুরু এবং এর প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরেছে। সেই যে ব্যাকটেরিওফাজ নিয়ে গবেষণা করতে করতে বিজ্ঞানীরা রেস্ট্রিকশন এন্ডোনিউক্লিয়েজ এনজাইম আবিষ্কার করেছিলেন, সেখান থেকে শুরু করে জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং ফিল্ডের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা পর্যন্ত সবকিছুর ধারণা দেয়া হয়েছে অসাধারণ উপস্থাপনা শৈলীতে। সাথে জেল ইলেকট্রোফোরেসিস, পিসিআর, ওয়েস্টার্ন ব্লটিং, নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিং এর মতো অত্যাধুনিক এবং দারুণ জনপ্রিয় টপিকগুলোতো আছেই। প্রতিটি টপিকের গভীরে গিয়ে সকল বিষয় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনা করা সম্ভব না হলেও, লেখিকা চেষ্টা করেছেন আসলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ল্যাবরেটরি কৌশল গুলো ঠিক কীভাবে কাজ করে সেটা সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যাখ্যা করতে।

ঠিক কীভাবে ডিএনএকে পিসিআর করে ক্লোন করা হয়, কীভাবে রেস্ট্রিকশন এনজাইম ল্যাবরেটরিতে কাজ করে, কীভাবে ডিএনএ নমুনাকে ব্যবহার করে ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং করা হয়, সেগুলোর জন্য ব্যবহার করা ল্যাবরেটরি কৌশলগুলো ঠিক কীভাবে কাজ করে এ সকল বিষয়েই পাঠককে সংক্ষেপে বলা হয়েছে। মাত্র তিনশ পৃষ্ঠার বইটিতে অহেতুক কোনো অতিরঞ্জন করা হয়নি। একইসাথে সাবধান থাকা হয়েছে কোনো টপিক কে অতি দুর্বোধ্য না করার ব্যাপারেও। লেখিকা একজন অত্যন্ত অভিজ্ঞ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার দরুনই হয়ত শিক্ষার্থীদের পক্ষে রিলেট করা সহজ হবে এমন বর্ণনাতেই বইটি লিখেছেন।

বই এর লেখক এইজেল আকস্যান কুরনাজ।

পুরো বই হতে আমার সবচেয়ে প্রিয় অংশ হচ্ছে প্রতিটি অধ্যায়ের শেষের প্রবলেম সেশনটুকু। যেখানে জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং টেকনিকস এর রিয়েল লাইফ কেস স্টাডি প্রবলেমস তুলে ধরা হয়েছে, একইসাথে এই সমস্যাগুলো সমাধান করার উপায় হিসেবে বইয়ের শেষেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে স্যাম্পল সলিউশনস।

তবে বইটির টপিকগুলোকে যতই সাবলীলভাবে উপস্থাপনা করা হোক না কেন, কোথায় জানি কাঠিন্যের ছাপটা থেকে গেছে। হয়ত এটা এ কারণেই যে আণবিক পর্যায়ে জীববিজ্ঞানের গবেষণা তাত্ত্বিকভাবে কখনো কখনো সহজ মনে হলেও আসলে পিসিআর/জেল ইলেক্ট্রোফোরেসিস/ক্লোনিং এর মতো আধুনিক প্রযুক্তিগুলো যদি কেউ আয়ত্তে আনতে চায়, তাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। এই কারণে বইতে থাকা প্রবলেম সেশন যথেষ্ট কাটখোট্টা এবং সবগুলো সমাধান করা এখনো আমার সাধ্যে কুলাইনি।

কে জানে হয়ত এটাই পৃথিবীর অলিখিত নিয়ম যে, যা কিছু প্রিয় তা সবসময়ই একটু দুর্বোধ্য এবং সাধ্যের বাইরে থাকবে। তবে অন্য সবকিছুর মতো, এক্ষেত্রেও আমি আশাবাদী থাকার পক্ষে, তাই স্বপ্ন দেখি হয়ত একদিন আমিও এই বইতে দেওয়া প্রতিটি সমস্যা সমাধান করতে পারব। শিখে নিতে পারব এই বইয়ে আলোচিত জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সবগুলো কৌশল।

সেদিনের অপেক্ষায় থাকা এই আমার জন্য, অনেক অনেক শুভকামনা।

ইংরেজিতে কন্টেন্ট রাইটার হয়ে গড়ে তুলতে পারেন নিজের ফ্রিল্যান্স-ক্যারিয়ার।

কীভাবে? দেখুন ফ্রি-মাস্টারক্লাস ভিডিও

মোঃ রাসেল উদ্দিন
মোঃ রাসেল উদ্দিন বর্তমানে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জৈবপ্রযুক্তি বিভাগে ব্যাচেলর প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত আছে। ছোটোবেলা থেকেই জীববিজ্ঞান নিয়ে তুমুল আগ্রহী লেখকের, সকল আগ্রহ ও উদ্দীপনা বর্তমানে গেঁথে আছে ডিএনএ কাটাছেঁড়া করার ক্রিসপার প্রযুক্তিতে। গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে জীববিজ্ঞানের উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানুষের উপকারে কাজে আসার লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করছে সে।