বই পরিচিতিঃ জাতিস্মর

বিজ্ঞানী অ্যাডভেঞ্চারিস্ট ড. মাকসুদ জামিল, যাকে সারা বিশ্বের তাবড় তাবড় লোক দুর্ধর্ষ রহস্যানুসন্ধানী বলে জানে এবং মানে। তুখড় মেধাবী জামিল পিএইচডি করে নিজ দেশে ফিরে এসেছিলেন কোথাও কোনো অধ্যাপনা কিংবা চাকরি না করেই। সীমান্ত শহর দর্শনার পারিবারিক বাড়িতেই গড়ে তুলেন নিজস্ব ল্যাব। এখানে বসেই তাঁর করা মহা মহা আবিষ্কার বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেয়। তবে তাঁর সৃষ্টি নিউক্লিয়ার শক্তি দ্বারা চালিত, সেকেন্ডে এক লক্ষ আশি হাজার কিলোমিটার গতির অত্যাধুনিক মহাকাশযান ‘পঙ্খিরাজ ১৯৭১’-এর কথা সরকারিমহল জানলেও বিজ্ঞানীমহল বিন্দুমাত্রও জানে না। জামিল এই মহাকাশযানের কথা গোপন রাখতে পেরেছেন কারণ তিনি যেকোনো প্রয়োজনে সরকার এমনকি মার্কিন সরকারকেও সহযোগিতা করেন।

বই’য়ের প্রচ্ছদ।

আর জামিলের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হলো ‘সফু’। তবে সফু কোনো মানুষ নয়, জামিলের সৃষ্টি করা একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সফট বট, যা গুগল-ফেসবুক-উইকিপিডিয়া ঘেঁটে শক্তিশালী করেছে নিজের এআই সিস্টেমকে। পৃথিবীর সকল লাইব্রেরি, মিউজিয়ামসহ সংবাদ সংস্থা কিংবা পত্রিকা সাইটেরও অ্যাকসেস তার আয়ত্তে। শুধু তাই নয় মানুষের মস্তিষ্ক থেকে হারিয়ে যাওয়া অথবা মুছে যাওয়া স্মৃতিকেও অনায়াসেই পুনরুদ্ধার করতে পারে সফু।

হঠাৎ করেই নদীর পানি কমতে শুরু করে, শুকিয়ে যায় খাল-বিল, সাথে মাঠের ফসল, বনের লতা গুল্মগুলো বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। এমনকি বড় বড় গাছগুলো পর্যন্ত শুকিয়ে যাওয়া কাঠে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু জামিলের পর্যবেক্ষণে আসলো, সবকিছু যত নির্জীবতার দিকে ধাবিত হচ্ছে কড়ই গাছগুলো যেন তত জীবন্ত হয়ে উঠছে, হয়ে উঠছে দলবদ্ধ ও আক্রমণাত্মক। রহস্যানুসন্ধানের এক পর্যায়ে উঠে আসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জগদীশ চন্দ্র বসুর নাম। কিন্তু কেনই বা সম্পর্কযুক্ত হলো প্রায় শত বছর আগে গত হওয়া দুই জগদ্বিখ্যাত ব্যক্তির কথা? কী হয়েছিল কড়ই গাছগুলোর সাথে? কীভাবে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে?

লেখক আবদুল গাফফার রনি।

২০১৯ সালে চন্দ্র বিজয়ের ৫০ বৎসর উদ্‌যাপন হলেও জামিল নিশ্চিত করেই জানে যে, ৫০ নয় বরং আরও বহুবছর আগেই মানুষ চাঁদে পা রেখেছে! কিন্তু তিনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন? আর সত্য জেনেও জামিলের মতো বিজ্ঞানী কেন বিষয়টি গোপন রাখছেন?

হঠাৎ এক অদ্ভুত খুনির আবির্ভাব হয়েছে দেশে, সঙ্গে রহস্যময় প্রডিজি। এই আধুনিক যুগেও খুনি ঠগির গামছা পেঁচিয়ে খুন করছে? এদের সঙ্গে জাতিস্মরের কী সম্পর্ক? কীভাবে এই রহস্যের উন্মোচন করবে জামিল?

একবার মহাকাশ ভ্রমণের সময় কিডন্যাপ হয় জামিল। তবে কিডন্যাপার কোনো মানুষ নয়, ভিনগ্রহের অমর প্রাণী। যারা জামিলের মস্তিষ্কের ভিতর প্রবেশ করতে পারে। শুধু তা-ই নয়, অনায়াসেই মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত করতে পারে। কিন্তু তাদের নেই কোনো আবেগ, মায়া-দয়া-মমতা। হঠাৎ তাদের জানতে ইচ্ছে হয় মৃত্যুর স্বাদ কেমন। শুরু করে জামিলের উপর ট্রিটমেন্ট। জামিল কি এ যাত্রায় নিজের প্রাণকে বাঁচাতে পারবে?

বৃষ্টি মানুষের মনে প্রশান্তি এনে দেয়। একথা জামিলেরও অজানা নয়। তাইতো জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ঘনঘোর বর্ষার মুষলধারে বৃষ্টি উপভোগ করছিল জামিল। কিন্তু তখনই জগমোহনের ডাকে টিভি চ্যানেলের খবরে দেখলো পৃথিবী থেকে চার আলোকবর্ষ দূরের আকাশের আলফা সেন্টাউরি নক্ষত্রটা হারিয়ে গেছে। এর কিছুদিনের মধ্যেই গায়েব হতে শুরু করে পৃথিবীর মহা মহা বিজ্ঞানীগণ। কিন্তু কীভাবে হচ্ছে এসব? আলফা সেন্টাউরি নক্ষত্র আর পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের মাঝে কী এমন যোগসূত্র? 

গয়লা দ্বীপপুঞ্জে বিধ্বস্ত জাহাজ সাগরকন্যায় সাধারণ একটা রাইফেল হাতে জামিল আর হাঙ্গরমারা হারপুন নিয়ে আছে মেট। তাদেরকে আক্রমণ করছে বিশালাকার ডাইনোসর।  কিন্তু আধুনিক যুগে কোথা থেকে এলো ডাইনোসর? কীভাবে রক্ষা পাবে জামিল ও তার সঙ্গীরা?

বিজ্ঞানী বিষ্ণুপদ বাড়ুজ্জে বিজ্ঞানের কেমিক্যাল বায়োলজি শাখায় এমন একটি আবিষ্কার করেন যা সভ্যতাকে পরিবর্তন করে ফেলবে। কিন্তু কুচক্রী মহল পিছু লাগায় তিনি বুঝতে পারেন পৃথিবীতে আর বেশি সময় থাকতে পারবেন না। নিজের আবিষ্কারের ফাইল কোথায় রেখেছেন তা জামিলের সাথে ফোনে বলার সময় তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। জামিল কি সেই ফাইল উদ্ধার করতে পেরেছিল? আর খুনিকে-ই খুঁজে পাবে কীভাবে? এবং এই খুনের সাথে একটি বিড়ালের ই-বা কী সম্পর্ক? 

পৃথিবীর প্রথম মানুষ হিসেবে চতুর্মাত্রার জগৎ পাড়ি দিল জামিল। কিন্তু এখানে এসে মুখোমুখি হতে হয় ডাইনোসর গিলে খেতে পারবে এমন ব্যাঙের সাথে, দেখা হয় হিমালয়ের সমান ব্ল্যাক প্যান্থারের সাথে। কিন্তু জামিল কীভাবে আবার নিজের বাসায় ফিরলো? বাড়িতে ফিরে কেনই বিস্মিত হলো?

একের পর এক হারিয়ে যাচ্ছে মানুষ। কীভাবে কেউ জানে না। সঙ্গে ভয়াল এক দানবের আবির্ভাব হয়েছে ময়নামতি পাহাড়ে। পাঁচ বছরের একটি ছেলের সাথে দানবটির কী এমন সম্পর্ক, যে ছেলেটিকে না মেরে মাথায় বসিয়ে রাখে? ভিনগ্রহের প্রাণীর সাথেই-বা দানবটির কী সম্পর্ক? 

এমনই সব উত্তেজনায় ভরপুর এক ডজন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ হলো ‘জাতিস্মর’ বইটি। বইটি আমাদেরকে নতুন কিছু নিয়ে ভাবতে শেখায়, নতুন কিছু নিয়ে কল্পনা করায়। ‘জাতিস্মর’ সকল শ্রেণির পাঠকের পঠন উপযোগী গ্রন্থ। আমি সানন্দেই বইটি পড়তে পেরেছি। আশা করি অন্যদের কাছেও ভালো লাগবে।

সবশেষে লেখকের প্রতি নিরন্তর ভালোবাসা ও শুভকামনা। পরবর্তী কল্পবিজ্ঞান বইয়ের অপেক্ষা নিয়ে বইটির রিভিউ সমাপ্ত করলাম। 

বইয়ের নাম: জাতিস্মর

ক্যাটাগরি: সায়েন্স ফিকশন

লেখক: আবদুল গাফফার রনি

প্রকাশকাল: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩

প্রকাশক: আসমা আরা বেগম

প্রকাশনী: আফসার ব্রাদার্স

পৃষ্ঠাসংখ্যা: ১২৮

মুদ্রিত মূল্য: ৳২৫০


Meer Ashraf Hossain Avatar

মন্তব্য

Leave a Reply