অপবিজ্ঞানের ব্যবচ্ছেদ-অপবিজ্ঞানের উৎস সন্ধান, (পর্ব-১)

লেখাটি , বিভাগে প্রকাশিত

চলুন আজকে সিউডোসায়েন্স প্রচার করা কিছু বইয়ের সাথে আপনাদের পরিচয় করাই, যেগুলিতে বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে প্রচলিত অনেক অপবিজ্ঞানের উৎস রয়েছে৷ অপবিজ্ঞানের উৎস সন্ধান করতে এ প্রবন্ধে আমরা বেছে নিয়েছি কিছু বইকে। আলোচনার শুরুতেই বলে রাখি যে, এ প্রবন্ধে আমরা অপবিজ্ঞানের বইগুলিকে কেবলমাত্র রিভিউ করবো। অপবিজ্ঞানের খন্ডন না থাকলেও কিছু অংশের খন্ডন অন্য উৎস থেকে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। একই সিরিজের পরবর্তী অংশে ধারাবাহিকভাবে আমরা এ বইগুলির মূল আলোচ্য বিষয়, এবং অপবৈজ্ঞানিক দাবিগুলিকে খন্ডন করবো এক এক করে—বিস্তারিত পরিসরে।পূর্বে পরিষ্কার করা যাক, অপবিজ্ঞান বা আসলে কি?অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি(দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৮৯) সিউডোসায়েন্সকে সংজ্ঞায়িত করেছে এভাবে যে,

“A pretended or spurious science; a collection of related beliefs about the world mistakenly regarded as being based on scientific method or as having the status that scientific truths now have.”

মোটামুটি সোজা বাংলায় বললে বলা যায়, বিশ্বাস আশ্রিত, অপ্রমাণিত কোনো মতবাদ বা চিন্তাভাবনা কে বিজ্ঞান বলে চালিয়ে দেয়ার এই ব্যাপারটাকেই বলে অপবিজ্ঞান। ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ তাঁর “মহাবিশ্ব” বইয়ে P এর অনুবাদ করেছেন “ছদ্মবিজ্ঞান”। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে এটাই বেশি এপ্রোপ্রিয়েট মনে হয়। এবার চলুন অল্প কথায় দেশী-বিদেশী কিছু অপবিজ্ঞান বইয়ের ব্যাপারে জানা যাক। আমরা মোট ৮ টি বই নিয়ে আলোচনা করবো অপবিজ্ঞান সিরিজের এ অংশে।

হোমো স্যাপিয়েনস: রিটেলিং আওয়ার স্টোরি, রাফান আহমেদ

এ বইটির উদ্দেশ্য ছিলো বিবর্তন তত্ত্ব সহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত মতবাদকে স্কেপ্টিকাল করে তুলে ধরা। বইটিতে লেখকের ধারণা ফাইন টিউনিংকে ঝেটিয়ে বিদায় করতেই ” মাল্টিভার্স” নামক ধারণা আনা হয়। অথচ সত্যি কথা হচ্ছে, বেল অসমতার এক সমাধান হিসেবে কোয়ান্টাম মেকানিক্সে এই ধারণা এসেছিলো। পুরো বইজুড়েই তিনি পাঠকদের বুঝাতে চেয়েছেন বিজ্ঞানের বিভিন্ন ফিল্ডে কাজ করা গবেষকদের কাজই হচ্ছে মানুষের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করা। এ বইয়ে সবচেয়ে বড় আলোচনা হয়েছে থিওরি অব ইভোলিউশন এর মতো বিজ্ঞানের সুপ্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের বিরুদ্ধে। তিনি শত শত দাবি তুলেছেন এর বিরুদ্ধে। ইস্কনের ফ্রি ল্যান্সার লেখক দ্রুতকর্ম দাস এর বিভিন্ন ব্লগ, বই আর ইউটিউব ভিডিও দিয়ে তিনি দাবি করেছেন ডায়নোসর আর মানুষ একই সময়ে থাকতো। তিনি বিশ্বাস করেন ডায়নোসর যুগেও থালা বাসন ছিলো। তাই বিবর্তন তত্ত্ব ভুয়া। বিস্তারিত পড়ুন এখানে [১]।

প্রায় একশ বছর আগে হ্যাকেলের বায়োজেনিক ল’ বাতিল করেছেন ইভোলিউশন নিয়ে কাজ কিছু গবেষক। পরিবর্তে বিবর্তন তত্ত্বের জিন-তাত্ত্বিক প্রমাণের ঝুলিতে এসেছে আরও শত শত প্রমাণ। তারপরও রাফান আহমেদের ধারণা যেহেতু বায়োজেনিক ল’ বাতিল, তাই বিবর্তন তত্ত্ব-ও বাতিল। বিস্তারিত পড়ুন এখানে [২]।

পুরো বই জুড়ে লেখকের শতভাগ চেষ্টা ছিলো বিজ্ঞানের প্রচলিত কনসেপ্টগুলির ব্যাপারে রহস্যীকরণ। লেখকের বিশ্বাস, মহাকর্ষের সংজ্ঞা বাঁচাতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা ‘ডার্ক ম্যাটার’, ‘ডার্ক এনার্জি’ এর ধারণাগুলি জোর করে হাজির করেছেন । এ বই নিয়ে বিস্তারিত লিখা আসবে কোনো একদিন। আপাতত আমাদের অপবিজ্ঞান বই তালিকায় প্রথম জায়গা করে নেয়া বইটির আলোচনায় ইতি টানছি।

পৃথিবী নয় সূর্য ঘোরে, মুহাম্মদ নুরল ইসলাম

বইটিতে লেখকে দেখাতে চেয়েছেন, পৃথিবী স্থির এবং তার চারপাশে সূর্য ঘোরে। পুরো বইয়ের প্রথমাংশে লেখক বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের রেফারেন্স টেনে মানুষকে ইমোশনালি ব্লেকমেইল করে তার প্রস্তাবিত দাবিতে বিশ্বাস করানোর জোর চেষ্টা চালিয়েছেন।পরবর্তীতে লেখক আঘাত হেনেছেন পৃথিবীর আহ্নিক গতির ওপর।

লেখকের মতে, যেখানে কিনা জোরে বাস চললেই তাতে বসে থাকা মুশকিল, সেখানে ঘণ্টায় হাজার মাইল বেগে ঘূর্ণায়মান পৃথিবীতে মানুষ বসবাস করছে সেটা চিন্তা করাটা হাস্যকর! লেখক বিশ্বাস করেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন “পৃথিবী ঘুরে এর কোন বাস্তব প্রমাণ নেই!” এবং গ্যালিলিওকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে দাবি করেছেন কেবল নাস্তিক হলেই আহ্নিক গতিতে বিশ্বাস করা সম্ভব।বইয়ে আরও আছে, পৃথিবী একটি কঠিন পদার্থ, যার অনেক ওজন। সূর্য একটি অগ্নি গোলক, আমরা সবাই জানি আগুনের কোন ওজন নেই। ওজনহীন একটা ভারি জিনিসকে ঘোরাবে, এহেন ধারণাকে লেখক হাস্যকর বলে ভাবেন। তিনি আরও বলেছেন, সূর্যের চেয়ে ধ্রুবতারা আরও বড়। কিন্তু সূর্য ধ্রুব তারাকে কেন্দ্র করে ঘোরে না কেন?অতএব, নিউটনের অভিকর্ষ তত্ত্ব ভুল। বিমান থেকে মাটির দিকে তাকালেও দেখা যায় মাটি বা ভূমি স্থির হয়ে আছে। তাই লেখক এই কনক্লুশান টেনেছেন এই বলে যে পৃথিবীর আহ্নিক গতি ভুয়া। পুরো বই জুড়ে মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম ক্ষোভ ঢেলেছেন নিউটন আর গ্যালিলিওর ওপর। বইয়ে লেখক জোরদমে দাবি করেছেন, সব স্যাটেলাইট আসলে আকাশে, আমাদের বায়ুমন্ডলের ওপরই “উড়ে” বেড়ায়। তিনি তার বইয়ে জায়গায় জায়গায় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন অনেক ব্যাপারে।

কস্টিপাথর, শামসুল আরেফীন শক্তি

বইয়ে ঝারফুঁক, কুনজরের মতো বিশ্বাস আশ্রিত অবৈজ্ঞানিক বিষয়গুলিকে বৈজ্ঞানিক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। জাপানিজ অপবিজ্ঞান প্রচারক মাসুরো ইমোতোর পানি সম্পর্কিত অপবিজ্ঞান প্রচার করা হয়েছে। পানীয়তে মাছি ডোবালে এন্টিবায়োটিক পাওয়া যাবে এসবও প্রচার করা হয়েছে। ঢিলেঢালা পোশাক না পড়লে পুরুষত্ব চলে যেতে পারে ,হাই কমোডে মলত্যাগ করলে কোলন ক্যান্সার হতে পারে টাইপ হাজারো আজগুবি আলোচনা চলেছে পুরো বই জুড়েই।

মাসুরো ইমোতোর ভুয়া গবেষণা সম্পর্কে পড়তে বিজ্ঞান ব্লগের এ আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন [৩]।

আরজ আলি সমীপে, আরিফ আজাদ

বইতে এর আত্মার ওজন মাপা, নামক ভুয়া এক্সপেরিমেন্টগুলিকে “বিজ্ঞান” হিসেবে উপস্থাপন করার হাস্যকর চেষ্টা করা হয়েছে। বইয়ের শেষদিকে বিবর্তন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনায় “ফসিল নেই”, ” প্রমাণ নেই” এসব মিথ্যাচার করা হয়েছে। শেষদিকে ১৯৭০/৮০ সালের আউটডেটেড গবেষণা দিয়ে বিবর্তন তত্ত্ব নিয়ে প্রচুর ভুলভাল বকা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে বিজ্ঞান ব্লগের এ আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন [৪]।

ভার্চুয়াল ব্যাংস্পেস, রিসাস ভার্চু (বর্তমান নাম আন্দ্রেস লিহান)

বইটা ঠিক কোন জনরার, তা অনেক চেষ্টা করেও কেউ বুঝে উঠতে পারেন নি। ফিজিক্স,ক্যামিস্ট্রি, বায়োলজি,সাইকোলজিসহ অসংখ্য বিষয়ের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। হাইপারকন্ডাক্টিভ মাইন্ড,মাইন্ড ডাইমেনশন,হাইপার ব্রেনলেস ব্যাং নিউরন,টাইমলেস মাইন্ড,মোটরবিশ্ব, কোয়ান্টাম সাব এমিনা ব্যাংস্পেস, হাইপারসনিক হিপোক্রেসি বিগব্যাংস্পেস ইত্যাদি বহু বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে,যা বিজ্ঞানের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক জায়গায় লেখক সায়েন্স ফিকশান থেকে জানা চটকদার টার্মগুলিকে পিওর সায়েন্স ভেবে খুব তৃপ্তিভরে লিখেছেন এ বই। নির্ভেজাল অপবিজ্ঞান। বিস্তারিত এখানে

ডেথঃ এন ইনসাইড স্টোরি, সাদগুরু

বইটি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের জনপ্রিয় ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, সাদগুরুর লিখা৷ বইটি প্রতিবেশী দেশে প্রকাশিত হলেও বাংলাদেশের স্পিরিচুয়াল গোছের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় এবং পূজনীয়। ২০২৩ সালে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্র আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার পূর্বে তার টেবিলে এ বই পড়েছিলো। এবং মৃত্যুর পূর্বে তার লিখে যাওয়া সুইসাইড নোট দেখেও বোঝা যাচ্ছিলো, বেচারা এ বই দ্বারা যথেষ্ট ইনফ্লুয়েন্সড ছিলো।

বইয়ের আধ্যাত্মিক, ধর্মীয়—এসব কোনোকিছুতে আলোকপাত না করে এ রিভিউটায় কেবল নজর দেয়া হয়েছে, লেখক বিজ্ঞান নিয়ে কোথায় তালগোল পাকিয়েছেন। পুরো বইজুড়ে অসংখ্য অপবিজ্ঞানৈক দাবি তুললেও এ রিভিউতে অল্প কিছু তুলে ধরছি। বইয়ে লেখক এক পর্যায়ে লিখেছেন, কারো যদি স্মৃতি ফুরিয়ে যায় কিন্তু শক্তি অবশিষ্ট থাকে তবে সে অকালে মৃত্যুবরণ করবে অথবা নিস্তেজ জীবনযাপন করবে। তবে যদি কোনো ব্যক্তির শক্তি ফুরিয়ে যায় কিন্তু মেমোরি অবশিষ্ট থাকে তাহলে সেই ব্যক্তি মরার পরে ভূত হয়ে যাবে। উনি এবং জীব সবাইকে একটি শক্তি রূপে দেখেছেন। কাউকে যখন ভূতে ধরে তখন মূলত একটি শক্তির সাথে আরেকটি শক্তির ক্রিয়া ঘটে। যে ব্যক্তির সাথে কোনো অশরীরীর রক্তের গ্রুপ এবং কর্ম মিলে যায় তার দেহের সাথেই নাকি এই অশরীরী শক্তি ক্রিয়া করে। ভদ্রলোক একটা নতুন টার্মের প্রবর্তন করেছেন, জেনেটিক মেমোরি নামে। মৃত্যুর পর নাকি জীব চারপাশে তাদের জেনেটিক মেমোরি খুঁজে বেড়ায়। বইয়ে এক জায়গায় লেখক দাবি করেছেন, কোবরা সাপের কামড় খেলে রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বেড়ে যায় এবং ক্ষতস্থানে টিউমার পর্যন্ত হয়। কিন্তু মৃত কোবরা সাপের কামড় খেলে ত্বকে রেশ হয়৷ লেখকের দাবি, এ ব্যাপারে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে। তাই এটা এম্পিরিকাল।পুরো বইজুড়েই রয়েছে উদ্ভট সব দাবি। কিছু দাবিকে বৈজ্ঞানিক, কিছু দাবিকে ব্যক্তিগত কিংবা মাঝে মাঝে তালগোল পাকিয়ে নিজের ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনাকে বিজ্ঞানের নামে প্রচার করেছেন।

বৈজ্ঞানিক মুহাম্মদ (দঃ), মুহাম্মদ নুরল ইসলাম

এ বইটির মূল উদ্দেশ্য ছিলো বিজ্ঞান দিয়ে ধর্ম এবং ধর্মীয় অলৌকিকতাকে ভ্যালিডেশন দেয়া। যদিও এটা সঠিক কোনো পথ নয়। আমাদের এ রিভিউতে এই ভ্যালিডেশনের ব্যাপারটিকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে কেন বইটিকে আমাদের এ “অপবিজ্ঞান” বইয়ের তালিকায় রাখা হয়েছে, সেটা উল্লেখ করা যাক।পুরো বইজুড়েই এক প্রকার জোর করে বিজ্ঞান-ধর্মের সমন্বয় গঠাতে গিয়ে লেখক অনেক অপবিজ্ঞানও উল্লাসভরে লিখেছেন। অপবিজ্ঞানের পরিমাণটা এতোই বেশি যে, বিস্তারিত পরিসরে সব উল্লেখ করতে গেলে পুরোপুরি আলাদা একটা রিভিউ লিখতে হবে৷

তবে যে বিষয়গুলি চোখে লেগেছে, সেগুলি নিয়ে লিখা যায়। বইটিতে পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কিত আলোচনায় লেখক দুই প্রকার সময়ের অবতারণা করেন৷ একটিকে বললেন, “মহাজাগতিক সময়”, আরেকটি ” জাগতিক সময়”; এবং উনি ঠিক করে দিয়েছিলেন, মহাজাগতিক আর জাগতিক সময়ের মধ্যে পার্থক্যও।তিনি “বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইনের মতামত অনুযায়ী” এ হিসেব পেশ করলেন। সে হিসেব অনুযায়ী মহাজাগতিক ২ বছর= পৃথিবীর ২০০ বছর, মহাজাগতিক ১ বছর= পৃথিবীর ১০০ বছর। শুধু তাই-ই না, একই অংশে লেখক দাবি করেছেন, আইনস্টাইন নাকি এমন এক জগতের কথা উল্লেখ করে গেছেন, যেখানে,

“সময় বহে না—মহাকর্ষ নিচের দিকে টানিয়া নামায় না। পদার্থ বলিয়া সেখানে কিছু নাই, আলোক সেখানে অচল। পরিবর্তন সেখানে অসম্ভব। কাজেই নতুন গণিত আমাদের স্বর্গের প্রচলিত ধারণার কাছে লইয়া যাইতেছে।”

বইয়ে লেখক আরও দাবি করেছেন, জর্জ ল্যামিটার নাকি মহাবিশ্ব সৃষ্টি নিয়ে বলেছেন যে, বিশ্ব সম্প্রসারণ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে বিশ্বের সমস্ত পদার্থ তরল আকারে একটি ঘনীভূত কেন্দ্রকণা গঠন করেছিলো। এ সময় নাকি তাপমাত্রা “কম” ছিলো। আরেক অংশে তিনি দাবি করলেন, মাত্র ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি বরফে রূপান্তর হয়।এভাবেই বইজুড়ে লেখক উল্লাসভরে, আত্মবিশ্বাসের সাথে আজগুবি কথাবার্তা বিজ্ঞানের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। নির্জলা অপবিজ্ঞান।

মরণের পরে, স্বামী অভেদানন্দ

আমাদের লিস্টের শেষ বইটি মূলত পশ্চিমবঙ্গের। বইটির শুরুর দিকে লেখক “প্রেত-তত্ত্ব” কে “বৈজ্ঞানিক” আখ্যা দিয়ে দাবি করেন, এই প্রেততত্ত্বের গবেষণা বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপ আমেরিকার অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী এ তত্ত্বের গবেষণায় জড়িত। পুরো বই জুড়ে তিনি রাফান আহমেদ এর মতো নিজের মন্তব্য এমন সব ‘বিদেশী নামের’ লোকদের দিয়ে চালিয়েছেন, যাদের নাম হাজার খুঁজেও বের করা যায় নি ইন্টারনেটে।

আমাদের দেশের আরিফ আজাদের মতো তিনিও “আত্মা” কনসেপ্ট-টাকে বৈজ্ঞানিক বানাতে ভুলেন নি। বইয়ের এক পর্যায়ে তিনি প্রমান করেছেন,একটি মুরগির মাথা কাটার পরও শরীর নাড়াচাড়া করে। এ থেকে তিনি দাবি করেন মস্তিষ্কের মৃত্যু মানেই মৃত্যু নয়। কারণ, শরীরে তখনও আত্মা থাকে৷ বইয়ে আরও লিখা আছে, মৃত্যুর পর মেঘের মতো সাদা গ্যাস বের হয়। এবং সেটা নাকি ক্যামেরায়ও ধারণ করা যায়৷ বইটিতে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, লেখক টার্মিনোলজিটাকে নিজের মতো করে ব্যখ্যা করেছেন। তার মতে, মানুষ মৃত্যুর পর পাপ-পূণ্যের হিসেব মেটার পর আবারও বৃষ্টির মাধ্যমে পৃথিবীতে এসে মাটিতে মিশে যায়। তারপর সেই আত্মা ফসলের মাধ্যমের মানুষের শরীরে ঢুকে আবারও মানুষ হয়ে জন্ম নেয়। লেখকের মতে এটাই হচ্ছে ন্যাচারাল সিলেকশন।

তথ্যসূত্রঃ

লেখাটি 317-বার পড়া হয়েছে।

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।