Anirban Maitra
অপবিজ্ঞান বুঝবেন যেভাবে
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে স্যামুয়েল হানিম্যান বলে এক জর্মন ডাক্তার নতুন এক চিকিৎসা-পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। এর নাম ‘হোমিওপ্যাথি’। সিনকোনা গাছের বাকল থেকে ম্যালেরিয়ার ওষুধ বানানো যায় এ-খবর অনেক কাল থেকেই মানুষের জানা ছিলো। হানিম্যান পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, সুস্থ মানুষকে সিনকোনা গাছের বাকল খাওয়ালে তার দেহে ম্যালেরিয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। এই ঘটনা থেকেই হানিম্যান হোমিওপ্যাথির মূলতত্ত্ব দাঁড়…
কগনিটিভ ডিজোনেন্স: মানুষ কেনো সহজে তার মত বদলায় না
“A man with a conviction is a hard man to change. Tell him you disagree and he turns away. Show him facts and he questions your sources. Appeal to logic and he fails to see your point.” ~Leon Festinger ১৯৫০’র দশকে যুক্তরাষ্ট্রের এক কাল্ট-দল প্রচার করেছিলো চার বছর পর,মানে ১৯৫৪ সনের ২১শে ডিসেম্বর হবে পৃথিবীর…
হুরোনীয় বরফ যুগ কিংবা পৃথিবীর বুকে প্রথম গণবিলুপ্তি
একটা জীব একসময় বদলে দিয়েছিলো গোটা দুনিয়ার চেহারা। পৃথিবীর বুকে প্রাণের প্রথম গণবিলুপ্তি এদের কারণেই ঘটে,আবার এরাই প্রশস্ত করে দেয় জটিল জীবন উদ্ভবের রাস্তা। কীভাবে? পরিবেশে প্রথমবারের মতো অক্সিজেন অণু মুক্ত করে। বলছি এককোষী সায়ানোব্যাকটেরিয়ার কথা। নেই নিউক্লিয়াস এবং আরো বেশিরভাগ সুপরিচিত কোষ-অঙ্গাণুই; কিন্তু অতি সরল এই জীবটির গল্প পৃথিবীতে প্রাণের ইতিহাসের এক বড়ো অধ্যায়…
টাসকিগি সিফিলিস এক্সপেরিমেন্ট: বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়
গত শতকের তিরিশের দশকের আমেরিকা। প্রায় দশজনে এক জন আক্রান্ত হতো এক ব্যাকটেরিয়া-ঘটিত যৌন-সংক্রামক রোগে। নাম তার সিফিলিস। সারা দেহে দেখা দেয় যন্ত্রণাদায়ক ঘা এবং র্যাশ। এই অবস্থা থাকতে পারে প্রায় দুই বছর। অন্তিম পর্যায়ে (Late-stage) সিফিলিস থেকে হৃদপিণ্ড-মস্তিষ্কসহ দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে সমস্যা দেখা দেয়, তৈরি হতে পারে অন্ধত্ব’ও। এই রোগের সংক্রমণ রোধ করা মারাত্মক…
কখ এবং পাস্তুরঃ যে দুই বিজ্ঞানী বদলে দেন অণুজীববিদ্যার ইতিহাস
ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর এবং জার্মান চিকিৎসক রবার্ট কখ- অণুজীববিদ্যার দুই বড়ো স্তম্ভ। বিদ্যাজগত এবং জনপরিসরে প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কার,অপবিজ্ঞান আর অলৌকিক চিন্তাভাবনার জাল ভেদ করে উনিশ শতকের শেষ দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো রোগের জীবাণুতত্ত্ব (Germ theory of disease)। এর অর্থ, রোগ কোনো অলৌকিক অরিশক্তির প্রভাবে ঘটে না, ঘটে না কোনো অশুভ বায়ুর প্রভাবে; রোগের কারণ খালি…
জীববিজ্ঞানের সুন্দরতম পরীক্ষণ
ডিএনএকে বলা হয় জীবনের নীল নকশা। দ্বিসূত্রক ডিএনএ’তে A,T,C,G এই চারটি অক্ষরে জীবনের যাবতীয় তথ্যাদি ‘লেখা’ থাকে। জীবনের এই তথ্যকে ‘রেসিপির সাথে তুলনা করা যেতে পারে, যে রেসিপি’ অনুযায়ী তৈরি হয় নানাবিধ প্রোটিন। প্রোটিনের মাধ্যমেই আমাদের চোখের রং, চুলের ধরন থেকে শুরু করে কোষে অক্সিজেন পরিবহণ, বহিরাগত জীবাণুর মোকাবিলাসহ নানাবিধ শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়। যাহোক,…
কেমন হলো ‘দ্য মাঙ্গা গাইড টু বায়োকেমিস্ট্রি’?
এবারের বইমেলায় প্রকাশিত বিজ্ঞানের বইগুলোর মধ্যে আগ্রহের শীর্ষে ছিলো দ্য মাঙ্গা গাইড টু বায়োকেমিস্ট্রি। তার একটি কারণ তো অনুবাদকের বিজ্ঞান-লেখালেখির সাথে পূর্ব-পরিচিতি, আরেকটি কারণ এই বইয়ের বিষয়বস্তু প্রাণ-রসায়ন। খুব মজার, রসালো বিষয় হিশেবে এর সুনাম একেবারেই নেই, বরং আছে উল্টোটা। উচ্চ মাধ্যমিকে জীবনবিজ্ঞান প্রথম পত্রের ‘কোষ-রসায়ন’ অধ্যায় দিয়ে শিক্ষার্থীরা পরিচিত হয় এই বিষয়টির সাথে। সেখানে…
জিএম শস্য: শঙ্কা ও সচেতনতা
এই লেখাটিকে ‘জিএম শস্য: কী, কেন, কীভাবে‘ শীর্ষক লেখার দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। জিএম শস্য তৈরির বৈজ্ঞানিক কৃৎকৌশল ছাড়াও এটি নিয়ে সারা দুনিয়ায় যে জমজমাট বিতর্ক চলছে, তার কিছু ইশারা ওই লেখার শেষে দেওয়া হয়েছিলো। এই লেখায় তার কিছু দিক তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। দুনিয়ার ইতিহাসের কোন মুহূর্তে জিএম ফসল ঠিক…
জিএম শস্য : কী, কেন, কীভাবে
বিগত চল্লিশ বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। কিন্তু আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ বেড়েছে সামান্যই। এরপরেও আমরা,রাজনৈতিক কারণ ছাড়া, পৃথিবীতে বড়সড় কোনো খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হই নি। আসলে, উল্লেখ্য সময়কালে জনপ্রতি খাদ্যোৎপাদন প্রায় পঁচিশ শতাংশ বেড়েছে। জমির পরিমাণ যদি তেমন না-ই বেড়ে থাকে,তাহলে কীভাবে সম্ভব হলো এই চমৎকার? ফসল উৎপাদনের দারুণ বৃদ্ধির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে…