শীঘ্রই আসছে : কৃত্রিম রক্ত

লিখেছেন

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

মেডিক্যালে পড়ার কারণে এক ব্যাগ রক্তের জন্য মানুষের যে কী হাহাকার, কী কষ্ট, কী ছুটোছুটি, কী দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তা খুব কাছ থেকেই অনুভব করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আনকমন ব্লাড গ্রুপ যেমন যেকোন নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপ হলে তো কথাই নেই। এমনিতে হয়তো রোগ তেমন সিরিয়াস না, মাত্র এক ব্যাগ রক্তই পারে রোগীকে মৃত্যুযাত্রা থেকে ফেরাতে। কিন্তু রক্তপ্রার্থীদের অজ্ঞতা আর রক্তদানে মানুষের চরম অনাগ্রহের কারণে এই এক ব্যাগ রক্তের অভাবেই রোগীটি মারা যেতে হচ্ছে। অন্তত এক দশমাংশ সুস্থ-সক্ষম মানুষ যদি স্বেচ্ছায় নিয়মিত রক্তদান করত তাহলে এই মানুষগুলোকে রক্তের জন্য এতো ছুটোছুটি, এতো হাহাকার করা লাগতো না।

তবে সেদিন বোধহয় খুব বেশি দেরি নয়; যেদিন এক ব্যাগ রক্তের জন্য অসুস্থ মানুষ ও তাদের আত্মীয়স্বজনকে আমাদের মতো সুস্থ-সবল মানুষের পেছন-পেছন দৌড়াতে হবে না। প্রফেসর মার্ক টার্নারের নেতৃত্বে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির একটি টিম জানিয়েছে- মাত্র ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যেই তারা মানবদেহের জন্য কৃত্রিম রক্ত প্রস্তুত করতে যাচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে তারা বিরল ‘O-Negative’ গ্রুপের রক্ত তৈরি করছেন।

অনেক বছর ধরেই কৃত্রিম রক্ত তৈরির চেষ্টা চলছে। ইনজুরি, সার্জারিসহ নানা প্যাথলজিক্যাল কারণে প্রতিদিন সারা বিশ্বে কোটি কোটি ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও রক্ত পরিসঞ্চালন করতে গিয়ে এইচআইভি, হেপাটাইটিস-সহ নানা সংক্রামক রোগের বিস্তার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

প্রফেসর মার্ক টার্নার জানান যে- এ পদ্ধতিতে প্রথমে সুস্থ মানুষের ‘বোন ম্যারো’ থেকে স্টেম সেল তৈরি করা হবে। পরে ঐ স্টেম সেল ল্যাবরেটরীতে একটি বিশেষ ম্যাটেরিয়ালের মধ্যে বিকশিত করা হবে যেটা RBC বা লোহিত রক্ত কণিকার খুবই কাছাকাছি চরিত্রের। এই কাজটি তারা দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে পারবেন বলে দৃঢ়ভাবে আশা করছেন। এদিকে পুরো পৃথিবীজুড়েই অন্যান্য বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম হিমোগ্লোবিন তৈরির চেষ্টা করছেন। তারাও আশা করা যায় ২-৪ বছরের মধ্যেই সফল হবেন। তখন এডিনবার্গের তৈরি রক্তাংশের সাথে হিমোগ্লোবিন সম্পূরণ করে পূর্ণ রক্ত তৈরি করা হবে। অবশ্য মেডিক্যাল প্র্যাকটিস লেভেলে আসতে আসতে এতে প্রায় ১০ বছর সময় লেগে যেতে পারে।

তবে এই কৃত্রিম রক্ত কিন্তু প্রাকৃতিক রক্তের স্থায়ী বিকল্প ও সমাধান নয়। এটা সাময়িকভাবে প্রাকৃতিক রক্তের কাজ দিবে। মেডিক্যাল এমার্জেন্সিতে এ রক্ত ব্যবহার করে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে। এতে আসল রক্ত সংগ্রহ করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় পাওয়া যাবে। তাছাড়াও আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এটি প্রাকৃতিক রক্তের সম্পূর্ণ বিকল্প কৃত্রিম রক্ত তৈরির পথ দেখিয়ে দিল।

লেখাটি 211-বার পড়া হয়েছে।


আলোচনা

Response

  1. চমৎকার পোস্ট প্রাণঝরনা। একটা ডকুমেন্টারী দেখছিলাম – মানুষ যদি ভিন গ্রহে পাড়ি দিতে চায় বসবাসের জন্য, তাহলে তার শারীরিক সামর্থ্যকে অনেক পরিবর্তন করতে হবে। জীবনকাল, সহ্যক্ষমতা বাড়াতে হবে তাকে। কৃত্রিম রক্ত আবিষ্কার দেখে মজা লাগছে – মানুষের মহাকাশ যাত্রার হয়তো আর বেশি দেরি নেই!

    আমরা নিয়মিত চিকিৎসা-বিজ্ঞান বিষয়ক পোস্ট চাই!

Leave a Reply

ই-মেইলে গ্রাহক হয়ে যান

আপনার ই-মেইলে চলে যাবে নতুন প্রকাশিত লেখার খবর। দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ডাইজেস্ট হিসেবেও পরিবর্তন করতে পারেন সাবস্ক্রাইবের পর ।

Join 908 other subscribers