আমাদের চেনা পৃথিবীর চেহারা সব সময় এক রকম ছিল না। ২০০ মিলিয়ন বছর আগে সব মহাদেশ একসঙ্গে লেগে ছিল, ভূতাত্তি্বকরা এর নাম দিয়েছেন প্যানাজিয়া। এই সুপার কন্টিনেন্ট টুকরো টুকরো হয়ে আফ্রিকা, এশিয়া, আমেরিকা হয়েছে। দিন কয়েক আগে বিজ্ঞানীরা আবার বললেন, আবার পৃথিবীর জোড়া লাগার সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাঁরা অনুমান করছেন, আমেরিকা আর এশিয়া উভয়েই উত্তরের দিকে সরে গিয়ে গঠন করবে অ্যামাশিয়া সুপার কন্টিনেন্ট। আর্কটিক সাগরের অনেকখানি গায়েব হয়ে যেতে পারে এতে।
সুপার কন্টিনেন্ট যেনতেন ব্যাপার নয়। ডায়নোসরদের আমলে প্যানজিয়াই শুধু ছিল পৃথিবীতে। সুপার কন্টিনেন্ট গঠন নিয়ে নানান মত আছে। সবচেয়ে প্রচলিত, আগের সুপার কন্টিনেন্টের মাথার ওপর থেকে নতুনটি জন্ম নেয়। একে বলে ইন্ট্রোভার্সন বা অন্তর্মুখিতা। আর যদি আগেরটির পা থেকে নতুনটি হয় তাকে বলে এঙ্ট্রোভার্সন বা বহির্মুখিতা। এ তত্ত্ব অনুযায়ী অ্যামাশিয়া হবে প্যানজিয়া যেখানে ছিল সেখান থেকে। আরো বলা হচ্ছে, প্যানজিয়ার পার্শ্বদেশ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে অ্যামাশিয়া। এখন সেখানে আছে সুমেরু। এ বিষয়ক তত্ত্বের প্রধান বক্তা ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ রস মিচেল।
যেভাবে সুপারকন্টিনেন্ট গঠিত হয়েছিল
মহাসাগরের প্লেটগুলো গঠিত হয়ে গিয়েছিল ইতিমধ্যে। প্রসারণও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই জোড়া লেগে গিয়েছিল স্থলভাগের প্লেটগুলো, তৈরি হয়েছিল প্যানজিয়া। এঙ্ট্রোভার্সন মডেল সমর্থকদের একটু ভিন্নমত আছে। তাঁরা বলেন, প্রসারণ এখনো চলছে। কন্টিনেন্টগুলো আরো দূরে সরে যাচ্ছে। সুপার কন্টিনেন্ট তৈরি হবে পৃথিবীর অন্য পিঠ দিয়ে। মিচেল ও তাঁর সহযোগীরা যে মডেল তৈরি করেছেন তার নাম অর্থোভার্সন। এ মডেল চলছে মহাদেশ বা কন্টিনেন্টগুলোর গতির ওপর ভর করে। কন্টিনেন্টগুলো নির্দিষ্ট বেগে দূরে সরে যাচ্ছে। প্যানজিয়া ভেঙে যাওয়ার সময় বৃত্তাকার কাঠামো পৃথিবীর নিচের দিকে চলে গেছে। কাঠামোটি এখন ঘিরে আছে প্রশান্ত মহাসাগরকে। এটির এখনকার কেতাবি নাম ‘রিং অব ফায়ার’ বা ‘অগ্নিবৃত্ত’। নামেই বোঝা যায়, অগ্ন্যুৎপাত আর ভূমিকম্প এখানে আস্তানা গেড়েছে।
অর্থোভার্সন মডেলের প্রস্তাবনা
আগের সুপার কন্টিনেন্ট হতে উৎপন্ন এ অগি্নবৃত্ত আবার হাঁটা শুরু করেছে। এবারের গন্তব্য, মহাদেশগুলোর কেন্দ্রে। ফলে মহাদেশগুলোর কোনোটি উত্তরে কোনোটি-বা দক্ষিণে সরে যাবে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মাঝখানে ক্যারিবিয়ান সাগর এবং দুই আমেরিকা ও এশিয়ার মাঝখানে আর্কটিক মহাসাগর। প্রকৃতিগতভাবেই এরা চঞ্চল। বিজ্ঞানীরা হিসাব কষে দেখেছেন আমেরিকা ও এশিয়া দুই-ই উত্তরে সরে আসবে এবং মিলবেই। উল্লেখ্য, ৭৫০ মিলিয়ন বছর আগে যে সুপার কন্টিনেন্ট ছিল তার নাম রডিনিয়া। ১.৫ বিলিয়ন বছর আগে যেটি ছিল তার নাম নূনা। বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করছেন অ্যামাশিয়া কোন ধরনটিকে অনুসরণ করে।
শিলাবৃত্তান্ত
প্রাচীন শিলাখণ্ডের ওপর পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাব নিয়ে খুব মাথা ঘামাচ্ছেন রস মিচেল। চৌম্বক প্রভাবিত তরলীভূত খনিজ উপাদানগুলো কম্পাসের মতো আচরণ করে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে একই রেখায় অবস্থান করে। বিশেষ করে যখন তরল শিলাগুলো কঠিন হয়ে যায়। স্বভাবতই চৌম্বকধর্ম অনুযায়ী রেখাগুলো উত্তর-দক্ষিণমুখী হয়ে থাকে। এটি পরিষ্কার করে দেয়, কন্টিনেন্টের ভূখণ্ডগুলো কালের বিবর্তনে কিভাবে কোনদিকে চলে গিয়েছিল। গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, রডিনিয়া যেখানে গঠিত হয়েছিল প্যানজিয়া গঠিত হয়েছিল তার ঠিক ৯০ ডিগ্রি কোণে। অর্থোভার্সন মডেল অনুযায়ী, সুপার কন্টিনেন্টই প্রথম গঠিত হয়, পরে তা টুকরো টুকরো হয়ে গঠিত হয় কন্টিনেন্ট।
কবে হচ্ছে অ্যামাশিয়া
এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না। তাঁরা বলছেন, সুপার কন্টিনেন্টের জীবনচক্র কেঁচো, তেলাপোকার মতো সরল নয়, নিয়মিতও নয়। মিশেল কেবল এটুকুই বলছেন, চক্রটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুততর হচ্ছে। দুটি সুপার কন্টিনেন্ট গঠনের মধ্যবর্তী সময়সীমা কমে যাচ্ছে। প্যানজিয়া গঠিত হয়েছিল ৩০০ মিলিয়ন বছরে।
Leave a Reply