মানুষের সভ্যতার বয়স কতো? পৃথিবীর বয়সের তুলনায় খুববেশি হয়তো নয়, মাত্র দশ হাজার হবে। এর আগের মানুষেরা ছিলো অসভ্য, বর্বর। তারও আগে মানুষ যাপন করতো আদিম বন্য জীবন। সে আজ থেকে প্রায় দুই লাখ বছর আগের কথা। এই সুদীর্ঘকাল সময়ের মধ্যে আমরা মানুষ সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ, স্বাস্থ্যজ্জ্বল সময় কাটাচ্ছি। যদি গত দুই লাখ বছর সময়টা গোনায় ধরি, তাহলে যেকোন সময়ের চেয়ে এখন মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু সবচেয়ে কম। আমাদের ঘরবাড়িগুলো ঝড়ে উড়ে যায় না। আগের তুলনায় অনেক কম মানুষ ক্ষুধার্ত সময় কাটায়। অতীতের যেকোন সময়ের চাইতে এখন মানুষের গড় আয়ুস্কাল বেশি। কলেরা কিংবা প্লেগের মহামারীতে অথবা দূর্ভিক্ষে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যায়না। আগের তুলনায় এতো ভালো, এতো নিশ্চিন্ত জীবন আমরা যাপন করছি, তবুও কি আমাদের দুশ্চিন্তা-দূর্ভাবনা কমেছে? বিভিন্ন ভয় কেন আমাদের এখনো তাড়াকরে? অফিসে কিংবা ক্লাসে যেতে দেরি হলে কেন আমরা উৎকন্ঠিত, আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ি? বিভিন্ন সংকটের অনিশ্চয়তা কেন আজো আমাদের তাড়া করে বেড়ায়? হয়তো আমরা বিভিন্ন বাস্তব কারণ দেখাতে পারবো। কিন্তু এই ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল আবেগগুলোর মূল শিকড় কোথায়? ঠিক কবে থেকে এগুলো মানুষের মধ্যে বাসা বাঁধলো? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে অতীতে — যখন আদিম মানুষেরা বনে বনে তাড়া খেয়ে বেড়াচ্ছে শিকারী চিতা, বাঘ কিংবা সিংহের হাত থেকে বাঁচার জন্যে।
খুব বেশি আগের কথা নয়। আধুনিক মানুষ এবং তার পূর্বসূরী প্রাইমেটেরা ঘর–বাড়ি নয়, থাকতো গুহায় আর গাছে গাছে, উন্মুক্ত প্রান্তরে। সেই পূর্বসূরীদের একটা ভালো সম্ভাবনা থাকতো শিকারী বন্য জীবের আক্রমণে প্রাণ হারানোর। এখন মানুষের কোলাহলে সুন্দর বনের বাঘেরা বিলুপ্ত হওয়ার খবর শুনি, কিন্তু বিবর্তনের দীর্ঘ ইতিহাসে মানুষ ছিলো তাদের মতো শিকারী প্রাণীদের অন্যতম প্রিয় খাবার। সেই বিপদ সঙ্কুল বন–জঙ্গল–প্রান্তরে টিকে থাকা আমাদের পূর্বসূরীদের জন্য সহজ কাজ ছিলোনা। ওই সংকটপূর্ণ সময়ে যেসব বৈশিষ্ট্য আদিম মানুষ ও তার পূর্বসূরী প্রাইমেটদের সাহায্য করেছিলো একটু বেশি সময়ের জন্য টিকে থেকে নিজেদের সংখ্যা বাড়াতে, সেই বৈশিষ্ট্যগুলো আধুনিক মানুষ আমরা এখনো বহন করে চলেছি।
শুধু চিতা বা বাঘের মতো বড়ো বেড়ালরাই নয়, দানবাকৃতির হায়েনা, গুহা–ভাল্লুক, সিংহ, ঈগল, সাপ, নেকড়েদের নিয়মিত শিকার হতো আদিম মানুষেরা। যদি আমরা আরো লাখ খানেক বছর পেছনে চলে যাই তবে দেখবো আরো নানা ধরনের প্রাণীর শিকার ছিলো মানুষ ও তাদের পূর্বসূরী প্রাইমেটরা। কুমির, কমোডো ড্রাগন কিংবা হাঙর-মাছ একটু সুযোগ পেলে তা হাতছাড়া করতো না – ভোজ উৎসব মানুষের মতো উপাদেয় খাদ্য দিয়েই পালন করতো। একটু অন্যভাবে দেখলে আমরা মানুষেরা ছিলাম তাদের স্বাদ বদলানোর অন্যতম উপায়।
এখনো আফ্রিকার গহীন বন কিংবা আমাজনে বড় শিকারী জন্তুর নিয়মিত শিকার হয় নানান বানর–নরবানর জাতীয় প্রাইমেটরা। বানর–নরবানরের তুলনায় মানুষের গায়ের লোম অনেক কম। সেজন্যে এদেরকে খাওয়া ও হজম করা তুলনামূলক ভাবে সহজ। জিম করবেটের শিকার কাহিনীগুলো নিশ্চয়ই অনেকেই পড়েছেন। এখনো শ্বাপদ–সংকটিত বনের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে শিশু কিংবা বয়স্ক মানুষ বাঘের শিকার হওয়ার ঘটনা বিরল নয়। বয়স্কদের কাছে গল্প শুনেছি, ঢাকা শহর তিলোত্তমা নগরী হওয়ার অনেক আগে আশে পাশে বাঘের ডাক শোনা যেত। শ্বাপদের বিপদ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের পূর্বপুরুষেরা গ্রাম গড়েছে, নগর গড়েছে। বিভিন্ন শ্বাপদ–আপদদের দূর করে দিয়েছে মানুষের কাছ থেকে। এজন্য ধন্যবাদ দেয়া উচিত যে আমরা ওই বন্য শিকারী প্রাণী থেকে দূরে চলে আসতে পেরেছি। কিন্তু, আসলে কি সত্যই আমরা তাদের থেকে বেশি দূরে চলে এসেছি? সম্ভবত না। কারণ আমাদের বিবর্তিত দেহ এখনো দীর্ঘ অতীতের পালানোর প্রচেষ্টা থেকে তৈরি বিভিন্ন প্রতিবর্তী ক্রিয়া বহন করে চলছে।
মানুষের পূর্বপুরুষ ছোট্ট প্রাইমেটরা যখন গাছে গাছে লাফিয়ে বেড়াতো, আসে পাশে সাম্ভাব্য কোন শিকারীর সন্দেহজনক উপস্থিতি টের পেলে সাথে সাথে সতর্ক হয়ে যাওয়াটা একটা অতি প্রয়োজনীয় গুণ ছিলো। এখনো বিভিন্ন বানর–নরবানরদের মধ্যে দেখা যায় বিভিন্ন শিকারী প্রাণীর উপস্থিতি টের পেয়ে বিপদ-সংকেত দিতে। জিম করবেটের শিকার কাহিনীতে এই পর্যবেক্ষণের অনুপম বর্ণনা পাওয়া যায়। আমাদের কল্পনা করতে অসুবিধা হবেনা আদিম প্রাইমেটদের সেসব বাক–সংকেতের অর্থ কি। কোনটার মানে হয়তো – ‘সাবধান! বাঘ দেখা যাচ্ছে!’; কোনটার অর্থ দাঁড়াবে, ‘বড় ঈগল দেখতে পেয়েছি, পালাও!’; কিংবা কোনটা হয়তো বলবে, ‘দোহাই তোমাদের, ওই ময়াল সাপটা সেই রকম বড় কিন্তু!’। এই বাক–সংকেতের কথা চিন্তা করলে অবশ্য আমাদের বুনো শ্বাপদদের কাছে এক দিক দিয়ে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত! তারা ছিলো বলেই আমাদের পূর্বপুরুষ প্রাইমেটরা কিছু অর্থসূচক ধ্বনি ব্যবহার করা শুরু করেছিলো – যার পরম্পরায় মানুষ পেয়েছে ভাষা। এভাবেই বুনো শিকারী জন্তুরা মানুষের বাকযন্ত্রকে একটি কার্যকর রূপদান করতে সাহায্য করেছে!
শিকারী প্রাণীদের দেখে বাক–সংকেত আবিষ্কার করা ছাড়াও আমাদের পূর্বপুরুষেরা আরো নানা প্রতিক্রিয়া করতো। কোন বিপদ সংকেত শোনার সাথে সাথে – ঘাসে কোন নাড়াচাড়া দেখে – একটু অদ্ভূত ছায়া দেখে তাদের রক্তে কিছু হরমোন নির্গত হতো। যার ফলে ওরা ঠিক করতো, যুদ্ধ করবো নাকি পালাবো? এই নির্দিষ্ট হরমোনের কারণে হৃদপিন্ডের গতি বেড়ে যেত, পেশিতে রক্ত সরবরাহ যেত বেড়ে। ফলে পেশিতে পেশিতে অক্সিজেন সরবরাহ বেড়ে যেত। এর ফলে দ্রুত তৎপর হওয়া তাদের জন্য সুবিধা হতো। এই তৎপরতা হলো কিছু প্রতিক্রিয়া – হতে পারে চারপাশে শিকারী আছে কি না দেখা, লুকানোর চেষ্টা, দৌড়ানো– আর যারা একটু সাহসী তাদের ক্ষেত্রে শিকারীর দিকে একটা ঢিল ছুঁড়ে পেছনে দৌড় দেয়া!
এই ‘যুদ্ধ করো অথবা পালাও‘ জাতীয় হরমোন সংকেত এবং এ সম্পর্কিত শারিরীক পরিবর্তন এখনো আমাদের জীবনের অংশ। এই সংকেত থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন উত্তেজনা, উৎকন্ঠা। আমাদের আধুনিক জীবনের একটা সীমাবদ্ধতা হলো এই আবেগগুলো, কারণ প্রায়ই এরা জীবন–যাপনে নেতিবাচক প্রভাব রাখে। ‘যুদ্ধ করো অথবা পালাও‘ – এই সংকেত পেতে এখন আর বুনো শিকারী প্রাণী প্রয়োজন হয় না, বরং নানা সাধারণ ঘটনাতেই আমরা ভীত হয়ে পড়ি, আমাদের হৃদপিন্ড দ্রুত চলা শুরু করে, ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হই। হতে পারে একটা মিটিঙে দেরি হওয়ার ভয়, হতে পারে হোমওয়ার্ক করতে ভুলে যাওয়া, ক্যামেরা হারিয়ে ফেলা কিংবা দেনা শোধ করার ভাবনা – এ সকল সাধারণ ঘটনাই আমাদের উৎকন্ঠিত করে। কিন্তু এই ‘যুদ্ধ করো অথবা পালাও‘ সংকেতের কি কোন উপযোগিতা আছে বর্তমান জীবনে? কোথায় পালাবো? কার সাথে যুদ্ধ করবো? কত দূরে পালাবো?
আপনি যখন এই লেখাটা পড়ছেন আপনার চারপাশেই হয়তো এরকম উত্তেজিত–উৎকন্ঠিত–উদ্বিগ্ন লোকদের খুঁজে পাবেন। এরা পালাতে চান কোন অনুপস্থিত ‘শিকারী-শ্বাপদ‘ থেকে বহুদূরে। কিন্তু আমরা কলেরা নির্মূল করেছি, আশে পাশে কোন বাঘ–ভাল্লুক নেই। মানুষের এই ‘ভুল উত্তেজনা‘ হয়তো আপাতদৃষ্টিতে বোকামীর মতোই লাগবে। তারপরেও কিন্তু এই বিচ্যুত উত্তেজনা অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে, হতে পারে মৃত্যুর কারণ।
শিকারী জন্তুরা যে সব বিবর্তনীয় প্রভাব আমাদের উপর রেখেছে, তার মধ্যে রয়ে গেছে এই অনাবশ্যক উৎকন্ঠা। এছাড়াও হঠাৎ ভয় পেলে আমাদের দেহে যে শিহরণ বয়ে যায়, গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায় তার উৎপত্তির কারণও এইসব শিকারী শ্বাপদরা। অনেক আগে যখন আমাদের পূর্বপুরুষদের দেহে অনেক লোম ছিলো, গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেলে তাদের একটু বড় লাগতো দেখতে। এটা ছিলো বুনো জন্তুদের সামনে পড়ে গেলে তাদেরকে খানিকটা বিভ্রান্ত করার একটা পন্থা। এখন আমাদের বেশিরভাগ লোম নেই, যেটুকু আছে সেগুলো যথেষ্ট ছোট। কিন্তু চামড়ারতলে ওই মাংশপেশিগুলো রয়ে গেছে, যারা হঠাৎ শিহরণে কার্যকর হয়ে ওঠে।
প্রাইমেট এবং মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসটা অনেক দীর্ঘ, প্রায় ৪০ মিলিয়ন বছরের। শিকারী প্রাণীদের আক্রমণ থেকে এই দীর্ঘ সময়ে অনেক বৈশিষ্ট্য আমাদের টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। এদের মধ্যে বহু বৈশিষ্ট্যই প্রাকৃতিক নির্বাচনের শক্তিশালী ছাঁকনি দিয়ে রয়ে গেছে মানুষের মাঝে। বিজ্ঞানীরা সবে মাত্র এসব বৈশিষ্ট্যের উপর আলো ফেলতে শুরু করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইসবেল বলছেন আমরা যে সাতরঙ দেখতে পারি তাও আসলে প্রাইমেটদের বিবর্তনের ফসল। কেননা আমাদের সেইসব পূর্বপুরুষ যারা কিনা বেশি রঙ দেখতে পারতো তারাই সহজে সাপ থেকে বেঁচে যেত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীই এতগুলো রঙ চিনতে পারেনা। যেমন কুকুররা সাদা–কালো রঙে দুনিয়াটাকে দেখে। অন্য একটি গবেষণা বলছে শিশুরা ফুলের চেয়ে সাপ বেশি দ্রুত সনাক্ত করতে পারে। আবার ধূসর চশমা পড়িয়ে দিলে তাদের সাপ সনাক্ত করার দক্ষতা কমে যায়। এসব গবেষণা অনুযায়ী, আমাদের রঙিন পৃথিবী দেখার ক্ষমতার পেছনে অন্যতম অবদান হলো বিপদজনক জন্তুদের (অবশ্য কেউ কেউ বলেন রঙিন পাকা ফল সনাক্ত করার প্রয়োজনে রঙিন দৃর্ষ্টি পেয়েছে প্রাইমেটরা) !
শুধু বন্য শিকারী জন্তুই যে মানুষের বিবর্তনে প্রভাব রেখেছে তা নয়। বিভিন্ন পরজীবী জীব এবং রোগ–জীবাণুও আছে এই তালিকায়। বন্য হিংস্র প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রাইমেটদের বিবর্তন হয়েছে শিকারীর প্রথম আক্রমণেই যাতে প্রাণ নিয়ে বাঁচা যায় এইউদ্দেশ্যে। পরজীবী বা রোগ–জীবাণু একবার আক্রমণ করলেও বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন ধরা যাক মশার কথা। ম্যালেরিয়াতে এই কয়েক দশক আগেও শত শত মানুষ মারা যেত। মধ্য–আফ্রিকায় সিকল সেল অ্যানিমিয়া বলে এক বংশগত রোগ দেখা যায়। এই রোগে লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যায়। মজার ব্যপার হলো, যাদের সিকল সেল অ্যানিমিয়া হয় তাদের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ায় মারা যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। এমনকি অনেক গবেষক মনে করেন, ভিন্ন ভিন্ন রক্তের গ্রুপ উদ্ভবের পেছনেও এই ম্যালেরিয়ার জীবাণুর প্রভাব আছে। কিছু কিছু রক্তের গ্রুপ দেখা যায় ম্যালেরিয়া রোগের বেশি প্রতিরোধী।
উঁকুন জাতীয় পরজীবি প্রাণীরা মানুষের কিছু রোগ করতে পারে। এই পরজীবিগুলো আমাদের গায়ের লোম হারানোর পেছনে একটা ভূমিকা রাখতে পারে। কম গায়ের লোম মানে উঁকুনের জন্য লুকানোর জায়গা কমে যাওয়া। বানরদের একে অপরের দেহের উঁকুন বাছা অনেকেই খেয়াল করেছেন। প্রাইমেটদের মাঝে গোষ্ঠিবদ্ধ সামাজিকতার উদ্ভবের পেছনেও এদের একটা প্রভাব আছে।
আমাদের দেহ এখন যেভাবে কাজ করে কিংবা কাজ করতে ব্যার্থ হয় তা এক সুদীর্ঘ বিবর্তনের ফসল। এই সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী, পরজীবী এবং জীবাণু প্রভাব রেখেছে। আমরা এখনো বিবর্তিত হচ্ছি। প্রতি প্রজন্মেই আমাদের কিছু জিন অন্য কিছু জিনের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে। অবশ্যই এ বিবর্তনের হার অনেক কম। প্রিয় ফুটবল বা ক্রিকেট টিম খেলায় হেরে যাওয়ায় দেহে যেভাবে উত্তেজনা উৎকন্ঠা সৃষ্টি হয়, তার পেছনে সুদুর অতীতের কোন অন্ধকার গুহাচারী মানুষের বিপদের আশঙ্কা হয়তো শেকড় গেড়ে আছে। আগামী দিনের গবেষণা সেই অন্ধকার অতীতে আরো অলোকপাত করবে।
মূললেখা: What Are You So Scared of? Saber-Toothed Cats, Snakes, and Carnivorous Kangaroos by Rob Dunn
Leave a Reply