পৃথিবী থেকে দশ হাজারের উপর বিভিন্ন সাইজের পৃথিবীর নিকটবর্তী বস্তু(Earth objects (NEOs)) আছে যাদের শনাক্ত করা হয়েছে গ্রহাণু এবং ধূমকেতু হিসেবে এবং যারা কিনা পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে ৪৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। ১০ হাজার আবিষ্কারের মধ্যে শুধু ১০ পারসেণ্টের সাইজ হলো এক কিলোমিটারের ১০ ভাগের ৬ ভাগের সমান ,পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট করার যা কিনা যথেষ্ট বড়।১৯৫০ ডিএ হলো সেগুলোরে মধ্যে একটি।
বিজ্ঞানীরা ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি আবিষ্কার করেন। ১৯৫০ডিএ গ্রহাণু প্রশস্তে ১.১ কিলোমিটার এবং যেটি কিনা ১৭ দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল এবং শেষে দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে যায়। এটি আবার একবিংশ শতকের দ্বার প্রান্তে ২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর চিহ্নিত করা হয়েছিল। অবশেষে কিছু দেরিতে হলেও ২০০০ সালের মার্চে অধিকতর উচ্চ ঘূর্ণন হারের সহিত এটি রাডারের মাধ্যমে আবার ধরা পরে।২৮৮০সালের ১৬ মার্চে ১৯৫০ ডিএ নামের এই গ্রহাণুটি বঙ্কিম পথের জন্যই মূলত এটি পৃথিবীর অনেক কাছে চলে আসবে। কতোটা নিকটে?
এতোটা কাছে যে ২০ মিনিটের একটি সংঘর্ষের সম্ভাবনা মোটেও উড়িয়ে দেওয়া যায়না।
Puerto Rico তে অবস্থিত Arecibo মানমন্দির থেকে উপরের ছবিটি রাডার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তোলা হয়েছে।
এটি কি একটি ভবিষ্যৎ বিধ্বংসী বস্তু ?এটির ঘূর্ণন হার,প্রতিফলক ক্ষমতা, গঠন, ভর, গাঠনিক উপাদানের বিভিন্নতা, আলাদা বস্তুর সাথে মহাকর্ষিক বল এবং আরও অনেক কিছু যা এখনো আবিষ্কার করা হয়নি , যারা কিনা গ্রহাণুটির কক্ষপথ পরিবর্তনের জন্য অণুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।মহাকাশে গ্রহাণুটির গতিপথ পরিবর্তনের জন্য অনেক অণুঘটক থাকতে পারে।
১৯৫০ ডিএ ধূমকেতুর অবস্থান অনেক দূরে হওয়ায় রাডার পর্যবেক্ষণ এবং সিমিত গবেষণা দ্বারা নাসার জেট প্রপুলিউসন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানি J.D. Giorgini, S. J. Ostro, Don Yeomans এবং JPLএর অন্যান্য অনেক বিজ্ঞানি এবং আলাদা অনেক সংগঠনের বিজ্ঞানীরা বর্ণনা করেছেন যে, ১৯৫০ডিএ ধূমকেতু পৃথিবীতে আঘাত হানার সম্ভাবনা মাত্র তিনশ ভাগের এক ভাগ(১/৩০০)।
তিনশ ভাগের এক ভাগ হতে পারে খুব খুদ্র একটি সুযোগ কিন্তু বাস্তবে বর্তমান থেকে সেই সময় পর্যন্ত পৃথিবীর জন্য হুমকিরুপী বস্তু হিসেবে এটির সম্ভাবনা আলাদা কোন কিছুর চেয়ে ৫০ গুণ বেশি! গবেষণায় আরে দেখা যায় যে, ১৯৫০ ডিএ গ্রহাণুর সংঘর্ষের পাল্লা মাত্র ০% থেকে .৩৩ %(০-.৩৩%) । সংঘর্ষের সম্ভাব্যতার পরিমান মূলত এই গ্রহানু সম্পর্কে বিশদ গবেষণার দ্বারা পরিমাপ করা যেতে পারে এবং এই বৃহত্তম পাল্লা বাড়তে পারে অথবা কমতেও পারে। এই গ্রহানু সম্পর্কে রাডারের মাধ্যমে বিস্তারিত গবেষণার একটি সুযোগ পাওয়া যাবে পরবর্তী ২০৩২ সালে।
অর্ধেক মাইল ব্যাসের ১৯৫০ ডিএ নামের এই গ্রহাণুটি পৃথিবীতে আঘাত হানলে কি হতে পারে?
এটি মূলত অনেক জিনিসের উপর নির্ভর করে যেমন এর গাঠনিক উপাদান, বেগ, কৌণিক দ্রুতি, ঘূর্ণন হার, কোথায় এটি আঘাত হানবে ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ের উপর।এটা বলা বাকি থাকেনা যে, বৃহত্তর একটি এলাকা জুরে এর ধ্বংসসীমা থাকবে। এটি পৃথিবীতে আঘাত হানলে অর্ধেক মিলিয়ন মেগাটন শক্তি নিঃসারিত হবে যা কিনা ১০০ মাইল ব্যাসের এলাকা জুরে বিদ্যমান সবকিছু একদম মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারে এবং এই দূরত্ব হলো বোস্টন থেকে ওয়াশিংটন ডিসির দূরত্বের অর্ধেক।শুধু বিস্ফোরনই নয় এর ফলে এর ভগ্নাবশেষ গোটা বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়বে, আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে যেতে পারে (যেমনটি ৬ কোটি বছর আগে এক গ্রহানুর ধাক্কায় ডাইনোসর প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল) এছাড়া এর ফল সরূপ বড় ধরণের সুনামির(যদি এটি সমুদ্র গিয়ে আঘাত হানে) সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায়না। এর ধ্বংসলীলা আরো একশ মাইল দূরে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এর ভয়াবহতা শুধু এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ না থেকে গোটা পৃথিবীব্যাপী মানুষের আর্থিক, শারিরিক, অর্থনৈতিক এবং মানুষের মনে পর্যন্ত এর খারাপ প্রভাব পড়বে।
তবে সুখবর এইটি যে, ১৯৫০ডিএ গ্রহাণু পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছাতে আরো ৮৬৭ বছর বাকি আছে এবং যা কিনা আরো ৩৫ টি জেনারেশন পরে ঘটবে।এর সম্পর্কে বর্তমানে অনেক কম তথ্য থাকায় এর কক্ষপথ সম্পর্কে ভবিষ্যতে বৃহৎ গবেষণা করে পৃথিবীতে আঘাত হানার সম্ভাবনা পুনরায় বিবেচনা করা যেতে পারে। সময়ের সাথে মানুষের জ্ঞান বাড়ছে এবং এই দীর্ঘ সময়ে পৃথিবীর শত্রু স্বরূপ এইসব বস্তুর গতিপথ পরিবর্তনের জন্য যে নতুন কোন পদ্ধতি বের হবেনা এটা বলা যায়না। যদি পৃথিবীর কাছা কাছি চলেই আসে তাহলে পৃথিবী থেকে সোলার স্পেসক্রাফট পাঠিয়ে এর দিক পরিবর্তন করে কিংবা আলদা কোন উপায়ে এর প্রতিফলক ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটিয়ে সূর্যের আলোর মাধ্যমে এর গতিপথ মন্থর করে দেওয়ার পদ্ধতি প্রয়োগের কথাও বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
তথ্যসুত্রঃ নাসা
বিস্তারিতঃ http://news.discovery.com/space/asteroids-meteors-meteorites/meet-the-asteroid-that-might-hit-earth-in-2880-131008.htm
Leave a Reply