ও কি গরম! বসে আছি বাইরে গাছের ছায়ায় চেয়ার পেতে। তাতে যদি গরমের কষ্টটা একটু কমে! পাখা দিয়ে করছি বাতাস। হুট করেই পিচ্চি ভাগ্নে সিফাত প্রশ্ন করে বসে- পাখাগুলো বাতাস জমিয়ে রাখে কই? পাখাটা নাড়া দিলে বাতাস কোথা থেকে বের হয়? বাতাসটা যে সবসময় আরামদায়ক হয়। এমন হয় কেন? :O প্রশ্ন শুনে আমি হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছিলাম না। এ আবার কেমন প্রশ্ন? শেষমেশ চুপ করেই রইলাম। নিষ্পাপ শিশুমনকে নিরুৎসাহিত করতে নেই।
পাখা থেকে বাতাস আসা লাগবে কেন? বাতাস তো সবসময়ই আছে। পাখা নাড়ালেও আছে, না নাড়ালেও আছে। এই বাতাস না থাকলে তো আমরা মারাই পরতাম। আমরা যে অক্সিজেন নিই নাকের ভিতর দিয়ে শ্বাসের মাধ্যমে তা তো এই বাতাসই। যখন পাখাটাকে আমরা নাড়াচাড়া করি তখন আমাদের আশেপাশের বাতাসগুলো এদিক-সেদিক হতে পারে, নড়াচড়া করতে পারে। আর নড়াচড়া করার মাধ্যমেই আমরা অনুভব করি ঠাণ্ডা, আরাম।
তবে এমন কেন হয়? দেখা যাক পাখার বাতাসের সময় কী ঘটনা ঘটে। আমাদের শরীরের ভেতরটা অনেক গরম। সারাক্ষণ সেখানে রক্ত চলাচল করছে। তাতে শরীর হয় গরম। আর আমরা যে খাবার খাই তা হজম হতে গিয়েও শরীর হয়ে যায় অনেক গরম। আমরা যে অক্সিজেন গ্রহণ করি, তা সে খাবারকে পরিপাক করতে কাজে লাগে। আর জানোই তো অক্সিজেনের কাহিনী মানেই আগুন, অক্সিজেন মানেই গরম, অক্সিজেনের বিক্রিয়া মানেই দহন। নাইট্রোজেন নামক একটা প্রায় নিষ্ক্রিয় এবং দারুণ উপকারী গ্যাসের প্রভাবে আমাদের শরীরে এই অক্সিজেনের বিক্রিয়ার সময় আগুন জ্বলে না। নইলে কবে অক্সিজেন সাহেব আমাদের পুড়িয়ে ছাই করে ফেলতো!
যখন আমাদের শরীরের চারপাশের বাতাস স্থির থাকে তখন আমাদের শরীরের গরমে এই বাতাস গরম হয়ে ওঠে। আর জানোই তো বাতাস তাপের তেমন একটা ভাল পরিবাহী নয়। বাতাস তাপ পরিবহনে দারুণ বাধা দেয়। যখন আমাদের গায়ের আশে পাশে থাকা বাতাসগুলো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে তখন সে উত্তপ্ত বাতাস আমাদের শরীর থেকে উত্তাপ হারাতে বাঁধা প্রদান করে। যখনি আমরা পাখা দিয়ে বাতাস করি তখন আর কিছুই ঘটে না গায়ের আশপাশে থাকা গরম বাতাসগুলো সরে যায় আর নতুন অনুত্তপ্ত বাতাস শরীরের সংস্পর্শে আসে। আর অনুতপ্ত ঠাণ্ডা বাতাস শরীরের কাছে এলে আবার শরীর তার থেকে তাপ ত্যাগ করতে পারে। এরকম তাপ ত্যাগ করার মাধ্যমেই ঠাণ্ডা অনুভব করি।
আরেকটা কথা তো ভাল করেই জানো কোনো দুই বস্তুর মাঝে তাপের আদান প্রদান হতে হলে তাপমাত্রার পার্থক্য থাকতে হবে। যখন ঠাণ্ডা বাতাসের সংস্পর্শে শরীর আসে তখন বাতাসের তাপমাত্রার সাথে শরীরের তাপমাত্রার পার্থক্য হয়। বাতাস থেকে ঠাণ্ডা চলে আসে শরীরে আর শরীর থেকে গরম চলে যায় বাতাসে। যখন এই বাতাসটাও আবার গরম হয়ে ওঠে তখন আর তাপ পরিবহণ করতে পারে না। করবে কি করে? তখন যে বাতাসও শরীরের মতোই গরম হয়ে ওঠে। আর সে গরম হওয়া তাপের কুপরিবাহী বাতাস শরীরকে অন্য দিকে তাপ হারাতে বাঁধা প্রদান করে। আর তখুনি আমাদের শরীরে লাগে অস্বস্তিকর গরম। সে গরম থেকে বেঁচে সস্তি পেতে হলে বাতাস করতে হবে ক্রমাগত। এভাবেই শরীর থেকে তাপ হারানোর উপায় করে পাখা আমাদের ঠাণ্ডা প্রদান করে। দেখা গেল তো পাখার মাঝে আসলে বাতাসের কিছু নাই, বাতাস জমানো নাই। সে শুধুমাত্র বাতাসকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঠেলে দেয়।
আমাদের শরীর ঠাণ্ডা থাকার কারণ হিসেবে আরেকটা দারুণ জিনিস আছে। সেটা মাটির কলসির মত। আমাদের শরীর থেকে প্রতিনিয়ত ঘাম বের হচ্ছে। ঘাম শরীরের উপরে জমে থাক না থাক বের হচ্ছে প্রতিনিয়তই। আর এই ঘাম নামক পানিকণা বাষ্প হয়ে বের হয়ে যায় শরীর থেকে। যখনি বাষ্প হয়ে বের হয়ে যায় তখন শরীর থেকে টেনে নেয় প্রচুর তাপ। আর তাপ শোষণ করে নিয়ে আমাদের শরীরকে রাখে ঠাণ্ডা। আর আমরা ভোগ করি আরাম। 🙂
দ্রষ্টব্য: লেখাটি জিরো টু ইনফিনিটিতে প্রকাশিত হয়েছিল।
একটি প্রশ্ন
আমরা জানি, পানি 373 K তাপমাত্রায় বাষ্পে রুপান্তরিত হয়। কিন্তু এই যে এত কম তাপমাত্রায় ঘাম শুকানো, কাপড় শুকানো, বা পানি শুকিয়ে যাওয়া ; এগুলোর ক্রিয়াকৌশল কি?
উত্তর:
ইভ্যাপারেশন বা স্বতঃবাষ্পীভবন বলে পদার্থবিজ্ঞানের একটা টার্ম আছে। এই স্বতঃবাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় ঘাম শুকায়। ব্যাপারটা এরকম– পানির কণাগুলো প্রতিনিয়ত কম্পনশীল। আর আমরা জানি কোনো বস্তুর উপরে তাপ পড়লে তার কম্পন বেড়ে যায়। যখন কম্পন বেড়ে যায় তখন পানির কণা তার পানি পৃষ্ঠ হতে “জাম্প” দিয়ে বায়ুতে মিশে যেতে পারে। পানিতে সাধারণত হাইড্রোজেন বন্ধন থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত এমন শক্তি না হবে যাতে করে হাইড্রোজেন বন্ড ভাংতে না পারে ততক্ষন পানি পৃষ্ঠের বাইরে যেতে পারবে না। কিন্তু হাইড্রোজেন বন্ড অনেক দুর্বল। অল্পতেই ভেঙ্গে যায়। সামান্য সূর্যের আলোর তাপের শক্তি নিয়েই পানির অণু এই বন্ড ছেড়ে যেতে পারে। এভাবে একটু একটু করে করে পানি চলে যায় বাতাসে। আর এতে করে কাপড় শুকায়, পুকুরের পানি কমে, ঘাম শুকায়। ইত্যাদি।
Leave a Reply