two clear shot glasses filled with alcohol

নেশা ১

আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের দেহকে খুব সহজে খেলাতে পারে। খেলানোর জন্য একধরনের ‘রিওয়ার্ড সিস্টেম’ চালু করেছে সে। ‘কোন একটা কাজ করলে আপনি পুরষ্কার পাবেন’ – এই মন্ত্র দিয়ে মস্তিষ্ক মানুষকে দিয়ে বিভিন্ন কাজ করিয়ে নিতে পারে। পুরষ্কারটির নাম ডোপামিন, একধরনের রাসায়নিক যা মস্তিষ্ক কোষ নিঃসরণ করে। এই ডোপামিন নিঃসৃত হয়ে কোষের গ্রাহকে (রিসেপ্টর) লেগে যায় এবং আমাদের মধ্যে আনন্দের বা ভাললাগা অনুভূত হয়। যত বেশি ডোপামিন নিঃসৃত হবে তত বেশি আমাদের ভাল লাগার অনুভূতি কাজ করবে। তাই, মজার খাবার খেলে বা যৌনানুভূতিতে ডোপামিন নিঃসরণ হয়। কাজটা মস্তিষ্ক করে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই। আমরা খাবার না খেলে বাঁচবো না, তেমনি সঙ্গমে লিপ্ত না হলে সন্তান উৎপাদন করতে পারবোনা। তাই, পুনঃ পুনঃ একই ধরনের কাজ করা উৎসাহ দেয় মস্তিষ্ক। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য, মানব-প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু নেশার দ্রব্য এই সিস্টেমকে হাইজ্যাক করে।

Pin by aceorganicchem.com on Chemistry | Brain science, Brain chemistry,  Brain facts

মস্তিষ্ক কাজ করে বিভিন্নরকম সিগনালিং বা সংকেতের মাধ্যমে তথ্য সরবরাহ করে। মস্তিষ্কের যে জায়গা থেকে ডোপামিন নিঃসৃত হয় সেটাকে তাই সংকেত, যেমন, ইলেক্ট্রিক শক বা অন্য রাসায়নিক (কোকেইন) দিয়ে উত্তেজিত করা যায়। ফলে সাধারনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মাত্রায় ডোপামিন নিঃসরণ ঘটানো যায়। কোকেইন সেই কাজই করে। একই কাজ করানো যায় ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে। কয়েকটি পরীক্ষার কথা উল্লেখ করছি:

১. একবার একটা ইঁদুরের মস্তিষ্কের মধ্যে ইলেক্ট্রোড বসিয়ে দিয়ে ডোপামিন নিঃসরণের জায়গাকে একটি সুইচ দিয়ে উত্তেজিত করা হয়েছিল। ইঁদুরকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল কোথায় চাপ দিলে ডোপামিন নিঃসরণ হবে নিজের মস্তিষ্কে। ইঁদুরটি নাওয়া-খাওয়া ভুলে ২৪ ঘন্টা শুধু সুইচ টিপেছে, বারবার বারবার বারবার। শেষে না খেয়ে মারা যায়।

২. একটা ইঁদুরকে পাশাপাশি খাবার আর কোকেইন দিয়ে রাখা হয়েছিল কয়েকদিন। মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত ইঁদুরটি শুধু কোকেইন খেয়েছে। খাবার স্পর্শও করেনি। মারা গিয়েছে খাবার না খেয়ে। কোকেইন তাকে খাবারের চেয়ে বেশি মাত্রায় ডোপামিন উপহার দেয়, খাবার কেন ছুঁয়ে দেখবে।

৩. পুনঃপুনঃ ডোপামিন নিঃসরণ আমাদেরকে সামাজিক জীব হিসেবে তৈরি করেছে। আমরা পরিবারের মানুষদেরকে ভালবাসি। তার কারনটাও ডোপামিন। একধরনের বানরের পুরুষদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ হয়না বলে তারা পরিবার তৈরি করেনা, কারন সঙ্গমে ভাললাগার কোন অনুভূতি পায়না। তাদের মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে দেখা গেল তারা সুন্দর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করছে যেটা প্রাকৃতিকভাবে কখনই করতোনা। শিশু যখন, মায়ের স্তনদুগ্ধ পান করে তখন মায়ের মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসৃত হয়। ফলে মা শিশুর প্রতি গভীর ভালবাসা অনুভব করেন।

মানুষের দৈহিক ডিজাইন একেবারে নিখুঁত নয়। পৃথিবীর কোন জীবেরই নয়। বিবর্তনিক পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলেই এরকম। নিখুঁত বলে কোন কিছু নাই। তাই দেহের ব্যবস্থায় বিভিন্নরকম ‘লুপহোল’ খুঁজে বের করে ফেলা যায় যা দিয়ে পুরো সিস্টেমের বারোটা বাজিয়ে দেয়া যায়। নেশাদ্রব্য তাই করে।বিবর্তনিকভাবেই আমরা প্রকৃতিতে (বা সিনথেটিক) রাসায়নিক দ্রব্যের প্রতি সংবেদনশীল। আমাদের নিজেদের সিস্টেমই নেশাদ্রব্যকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে।

সূত্র:

১. বই: মিন জিনস (Mean Genes)


খান ওসমান Avatar

মন্তব্য

  1. আরাফাত রহমান Avatar

    Mean Genes বইটা পড়তে হবে দেখছি!

    1. খান ওসমান Avatar
      খান ওসমান

      ইন্টারেষ্টিং বই। পড়তে পারো। জিনের সাথে মানুষের আচরনের সম্পর্ক নিয়ে এইধরনের অনেকগুলা বই এখন বাজারে আছে। মিন জিনস এইধরনের প্রথম বই বলে দাবী করা হয়েছে।

  2. রুহশান আহমেদ Avatar

    নেশা ২ এর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত।

    1. খান ওসমান Avatar
      খান ওসমান

      ধন্যবাদ। তবে কবে আসে ঠিক নাই, নিকোটিন নিয়েই আসতে পারে।

  3. সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ Avatar
    সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ

    ধূমপানের ক্ষেত্রেও কি একই ব্যাপার ঘটে?

    1. খান ওসমান Avatar
      খান ওসমান

      একইধরনের, কিন্তু ভিন্ন জিনিসের উপর ক্রিয়া করে। লিখবো পরে।

  4. সাদাত কামাল Avatar
    সাদাত কামাল

    দারুন লেখা। দেহ ব্যবস্থায় অন্যান্য লুপহোল-গুলি জানতে চাই। ধন্যবাদ।

  5. dilip ghosh Avatar

    দারুন লেখা। দেহ ব্যবস্থায় অন্যান্য লুপহোল-গুলি জানতে চাই। ধন্যবাদ।

  6. raktim45871 Avatar
    raktim45871

    আমরা খাবার না খেলে বাঁচবো না, তেমনি সঙ্গমে লিপ্ত না হলে সন্তান উৎপাদন করতে পারবোনা। তাই, পুনঃ পুনঃ একই ধরনের কাজ করতে উৎসাহ দিতে মস্তিষ্ক ডোপামিন রিলিজ করায় । অর্থাৎ মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই ডোপামিনের প্রধান উদ্দেশ্য । এখন কথা হলো বিবর্তনের কোন স্তরে, মস্তিষ্ক কিভাবে এবং কোন পদ্ধতিতে, কিসের ভিত্তিতে, মস্তিষ্ক মানবজাতিকে টিকিয়ে রাখার গুরুত্ত্ব বুঝতে পেরেছে ? এবং কিভাবে বুঝতে পেরেছে ?

Leave a Reply