তৃতীয় পর্বের পর থেকে।
শেষ গল্প:
বিজ্ঞান কংগ্রেসের প্রস্তুতি কর্মশালা শুরু হয়েছে মে মাসে। সে উপলক্ষে বিজ্ঞান-প্রেমী স্বেচ্ছাসেবীদের দেশের বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়েছে। স্কুলে স্কুলে প্রস্তুতি কর্মশালার একটিভেশনের কাজে আমাদের এলাকায় এসেছিলেন আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ভাই [আমি উনাকে ভাই বলে ডাকি]। কাজ শেষে বিকেলে আমরা তিতাস নদীর পারে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আর যাওয়া মাত্রই আকাশ কালো করে সে কী হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি! পাশেই ছিল টিনের চালের আশ্রয়। আর সে টিনের চালাতে হয়েছিল “মন্দ্রসপ্তক”। টিনের চালা আছে কিন্তু বেড়া নেই। বৃষ্টির এতই তোড় যে আশ্রয়ের মাঝে এসে সবাইকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। ভিজলেও কারো খারাপ লাগা নেই। সবাই আনন্দ পাচ্ছে। সেই দৃশ্য আমার এমন ভাল লেগেছিল যার কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এটাকে স্মরণীয় করে রাখব। তারই প্রয়াস এই লেখা।
নোটঃ
[১] দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশে যে সকল পাকিস্তানীরা চাকুরী কিংবা অন্যান্য সূত্রে থাকতো তারা সবাই বাংলাদেশ [পূর্ব-পাকিস্তান] ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যায়। একজন লোক থেকে যায় বাংলাদেশে। পাকিস্তানে বাংলাদেশের মত এমন দারুণ বৃষ্টি হয় না তাই সে পাকিস্তানে যায় নি। বৃষ্টির শব্দ শুনতে না পারলে সে থাকতে পারবে না। সে বাংলাদেশের বৃষ্টির প্রেমে পড়ে যায়। (হুমায়ুন আহমেদের কোনো একটা আত্মজীবনীতে এ ঘটনাটার উল্লেখ আছে।)
[২] আবদ্ধ কক্ষে ক্রমাগত ইলেকট্রিক ফ্যান চলতে থাকলে ফ্যান কক্ষের ভিতরের বাতাসই ক্রমাগত নাড়াচাড়া করে যাবে। ফলে অল্প পরিমাণ হওয়াতে একসময় সমস্ত রুমের বাতাস গরম হয়ে যাবে। তখন যে বাতাসটা পাওয়া যাবে সেটা স্বস্তিদায়ক হয় না। যেটাকে আমরা গরম বাতাস বলে থাকি। তবে ঘরে ফাঁক-ফোঁকর থাকলে কিংবা জানালা খুলে রাখলে এমনটা হয় না। বাইরের ও ভিতরের বাতাসের চলাচল হয় তাই সমস্ত বাতাস গরম হয়ে যায় না।
[৩]
জুল-থমসন প্রভাব: একটা ব্যাবস্থা বা সিস্টেমে কিছু পরিমাণ গ্যাসকে অধিক পরিমাণ চাপ প্রয়োগ করে সংকুচিত করে নেয়া হয়। তারপর একটা প্লাগের ভিতর দিয়ে নিম্নচাপ বিশিষ্ট বিশাল আয়তনের কক্ষে হঠাৎ করে প্রসারিত হতে দিলে সে গ্যাসের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। তরলও হয়ে যেতে পারে। এটাই জুল-থমসন প্রভাব। এমনটা হবার কারণ, যখন গ্যাস সংকুচিত অবস্থায় থাকে তখন গ্যাসের অণুগুলোর মাঝে একধরণের আকর্ষণ বল ক্রিয়াশীল থাকে। অধিক চাপ থেকে হঠাৎ করে প্রসারিত হতে দিলে গ্যাসের অণুগুলোকে তাদের মাঝে বিদ্যমান আকর্ষণ বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়। কাজ সেটা বিরুদ্ধ হোক আর যাই হোক তা করতে গেলে শক্তির দরকার হবে। এই শক্তিটা গ্যাসের ভিতর থেকেই সংগ্রহ করে নেয়। এতে করে গ্যাসের তাপমাত্রা কমে যায়।
[৪] বায়ুর বাষ্প ধারণের একটা সীমা আছে। যদি কোনো অঞ্চলের বায়ু তার সর্বোচ্চ ক্ষমতায় বাষ্প ধারণ করে তবে সে বায়ুকে বলা হবে ‘সম্পৃক্ত’। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বায়ুর বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা বাড়ে। এমন অবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে আরও বেশি বাষ্প বায়ুতে মিশলে সে অবস্থাকে বলা হবে ‘অতি সম্পৃক্ত’। তাপমাত্রা আবার কমে গেলে বাতাসের ধারণক্ষমতা হ্রাস পাবে- আর তখন তার ধারণ করা কিছু বাষ্প নিচে ছেড়ে দিতে হবে। শীতের শিশিরের বেলায় এটাই ঘটে।
[৫] উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে প্রতি বছর ৫০৫,০০০ ঘন কিলোমিটার [১২১,০০০ ঘন মাইল] পানি ঝড়ে পড়ছে। তার মাঝে ৩৯৮,০০০ ঘন কিলোমিটার বা ৯৫ হাজার ঘন মাইল পানি সমুদ্রে এবং ১০৭,০০০ ঘন কিলোমিটার বা ২৬ হাজার ঘন মাইল পানি পড়ছে ডাঙ্গায়।
তথ্যসূত্র:
- বৃষ্টি ও বজ্র : মুহাম্মদ ইব্রাহীম; বাংলা একাডেমি, ভাষা-শহীদ গ্রন্থমালা
- বিজ্ঞান বিশ্বকোষ : তৃতীয় খণ্ড; বাংলা একাডেমি
- Wikipedia : Precipitation
- Wikipedia : Rain
- Wikipedia : Cloud_seeding
- মাধ্যমিক ভূগোল [পুরাতন সিলেবাস]
- http://kvgktrailblazers.weebly.com/forms-of-precipitation.html
- http://www.metoffice.gov.uk/learning/rain/what-is-precipitation
- http://www.youtube.com/watch?v=SesRrocIFtc
- মেঘ বৃষ্টি রোদ : আবদুল্লাহ আল-মুতী
- আয় বৃষ্টি ঝেঁপে : আবদুল্লাহ আল-মুতী
Leave a Reply