আমাদের চারপাশে রয়েছে অনেক প্রাণী। তাদের মাঝে কিছু কিছু প্রাণীর আছে যাদের স্বভাব ভিন্ন রকমের। যার কারণে এদের নামের মাঝেও আছে এমন ভিন্নতা। এদের ভিন্নতার কারণেই এত বিচিত্র আমাদের এই প্রাণী জগত। এমন কিছু অদ্ভুত প্রাণীদের সম্পর্কে আজকে তাহলে কিছু জেনে নেয়া যাক।
বেলুন মাছ (Puffer fish)
এরা ডায়োডোনটিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। দেহের মধ্যে পানি ঢুকিয়ে দেহকে বেলুনের মতো ফুলিয়ে ফেলতে পারে বলেই এদের “বেলুন মাছ” নামে ডাকা করা হয়।
বসবাসঃ
সর্বাধিক বেলুন মাছ ক্রান্তীয় এবং এর আশেপাশের সমুদ্রের পানিতে পাওয়া যায়। সমুদ্রের লোনা পানির পাশাপাশি কিছু প্রজাতি স্বাদু পানিতেও বাস করতে পারে। সামুদ্রিক মাছ হওয়া সত্ত্বেও এদের মাঝে যারা মিঠা পানিতেও বাস করে, তাঁরা বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে পটকা মাছ,ফোটকা মাছ বা টেপা মাছ হিসেবে পরিচিত।
খাদ্যঃ
বেলুন মাছ সাধারণত অমেরুদন্ডী প্রাণী ও জলজ উদ্ভিদ খায়। এরা এদের দাঁতগুলোকে একত্র করে মুখকে ঠোঁটের মতো করে শামুক,সামুদ্রিক আর্চিন ও হার্মিট কাঁকড়ার খোলস ফাটিয়ে ফেলতে পারে। শামুক, আর্চিন,কাঁকড়া ইত্যাদি জলজ প্রাণীই এদের খাবার। অন্যদিকে ডলফিন ও হাঙ্গর এবং পেলাজিক অঞ্চলের বিভিন্ন শিকারি মাছ এদের প্রধান শত্রু।
ফোরোনিডা (Phoronida)
এই অদ্ভুত প্রাণী ঘোড়ার নাল কৃমি নামে পরিচিত। অগভীর জলের মধ্যে পাওয়া যায় এদের। সাধারণত এরা ভোজ্য পুষ্টির জন্য পানিকে স্পর্শ করতে একটি বিশেষ অঙ্গ পরিশোধক তলের ব্যবহার করে। তাঁদের পর্বে মাত্র ১০টি প্রজাতি আছে। শিলার মধ্যে সংযুক্ত হতে বা ছিদ্র করতে বিশেষ টিউব ব্যবহার করে। জৈবিক দিক থেকে উভলিঙ্গ।
কিউক্কা (Quokka)
Setonix এর একমাত্র সদস্য। এরা তৃণভোজী এবং প্রধানত নিশাচর প্রাণী। আকৃতিতে এরা বিড়ালের মতো। অস্ট্রেলীয়ার পশ্চিম উপকূলে কিছু ছোট ছোট দ্বীপে এদের বসবাস। কিউক্কাকে বিশ্বের সবচেয়ে হাসিখুশি প্রাণী বলা হয়ে থাকে। এরা হতে পারে মানুষের হাসিখুশি থাকার অনুপ্রেরণা।
Enypniastes
এরা গভীর সমুদ্রের কর্কন্ধু বা Sea Cucumbe বর্গবিশিষ্ট। এই বর্গের মধ্যে দুইটি প্রজাতি আছে E. eximia এবং E. globosa। এদের ঝিল্লিবিশিষ্ট শরীর সাঁতার কাটার কাজে সক্ষম।
ডোরাকাটা পাজামা
এদেরকে ডোরাকাটা পাজামা StripedPyjama Squid নামে ডাকা হয়। তারমানে এই নয় যে এরা পাজামা পরে সমুদ্র তলে ঘুরে বেড়ায়! এমন নাম হওয়ার পিছনে মূলত এর দেহের বর্ণ দায়ী। এরা দক্ষিণ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় একটি সামুদ্রিক প্রাণী। তবে একসময় এরা অস্ট্রেলিয়ার দিকে যাত্রা শুরু করে। বালির উপরে, সামুদ্রিক ঘাসের মাঝে এবং ২০ মিটার গভীর জলের গভীরে এদের দেখতে পাওয়া যায়। দেখতে ছোট এবং চেহারা বৃত্তাকার হয়ে থাকে। এদের মজ্জা বৃদ্ধি পেয়ে দৈর্ঘ্যে ৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়। বাহু খুব ছোট,ঝিল্লি বিশিষ্ট দেহ সম্পন্ন। সমগ্র শরীর লম্বালম্বি গাঢ় বাদামী ফিতের আবরণবিশিষ্ট। এরা বালির মাঝে নিজেকে এমনভাবে আবৃত করে রাখে যার ফলে শুধু মাথার উপরের অংশ দেখা যায়। সংরহের জন্য এদের নমুনা দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়া থেকে সংগ্রহ করে প্যারিসের জাতীয় যাদুঘরে জমা দেওয়া হয়েছে।
মূলগারা (Mulgara)
দৈহিক গঠনঃ
দেহটি ১২.৫ থেকে ২২ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। লেজের দৈর্ঘ্য হয় ৭ থেকে ১৩ সে.মি.। মধ্য অস্ট্রেলিয়ায় এদেরকে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এই প্রাণী পানি খুব কম পান করে তাই তাদের কিডনি জল সংরক্ষণ করার জন্য বিকশিত হয়ে থাকে। জুন-সেপ্টেম্বর মাসে এরা বংশবৃদ্ধি করে।
লাক্সটা
নাম Trilobite cockroach (Laxta) । এরা লম্বায় ১০ মি.মি. থেকে ২৫ মি.মি. হয়ে থাকে। এই তেলাপোকা অস্ট্রেলিয়াতে পাওয়া যায়। সংখ্যার দিক থেকে হিসাব করলে এরা বিলুপ্ত-প্রায় প্রাণীদের মধ্যে পড়ে।
ওম্বেট (Wombat)
তাসমানিয়া সহ দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার বন ও পাহাড়ী এলাকায় এদের বসবাস। এই প্রাণীর রয়েছে ছোট পা,পেশীবহুল দেহ ও লেজ। এরা প্রায় ১ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হয়ে থাকে। এরা Vombatidae পরিবারের সদস্য।
আরেকটি কথা বলতে তো ভুলেই গেছি। এই ওম্বেটদের মল হয়ে থাকে চার কোনাকার !
হন্ডুরান বাদুড়
সাদা হন্ডুরান বাদুড় (Ectophylla Alba)। সাদা পশম, হলুদ নাক ও কান বিশিষ্ট হয়ে থাকে। আকৃতিতে শুধুমাত্র ৩.৭-৪.৭ সেমি হয়ে থাকে।
বীজের প্রতি ভালবাসা যাদের :
ক্যাঙ্গারু ইঁদুর (kangaroo rat) নামের প্রাণীটির রয়েছে বীজের প্রতি তীব্র ভালবাসা। আসলে ক্যাঙ্গারুর সাথে এদের কোনো সম্পর্ক নেই কিন্তু তার দুই পা, শারীরস্থান এবং ক্যাঙ্গারুর মত কিছু দৈহিক বৈশিষ্ট্য থাকায় এমন নামকরণ করা হয়েছে।
ক্যাঙ্গারু ইঁদুরের দেহে একধরণের থলে আছে,এই থলে তাদের পেটে নয় বরং গালের বাইরে রয়েছে এবং এটি সন্তান রাখার জন্যে নয় বরং বীজ পরিবহনের জন্য ব্যবহার করে। এরা উত্তর আমেরিকার মরুভূমিতে জীবন যাপন করে। এই পরিবেশে ক্যাঙ্গারু ইঁদুরের জলের খুব প্রয়োজন হয় এবং সে তার খাদ্য (বীজ) থেকে প্রয়োজনীয় জল সংগ্রহ করে।
নিশাচর জীবনধারা তাদের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র রাতে সক্রিয় হয়ে উঠে কারণ তাপমাত্রা কম থাকে তখন। মরুভূমির দিনগুলোতে ভূগর্ভস্থ বারোজের মধ্যে ঘুমিয়ে সময় কাটায় তারা।
ফ্রগফিশ
নাম- ফ্রগফিশ Frogfish এদেরকে এঞ্জেলফিশ নামে ডাকা হয় অস্ট্রেলিয়ায়। এছাড়াও রয়েছে সমুদ্রে বসবাসরত অনেক শামুক আর এমন সব মাছ যা কিনা এদের মতোই মাটির উপরে বাস করতে জানে!
আজ এই পর্যন্তই। অন্য আরেক দিন তুলে ধরব সমুদ্র তলের প্রাণীদের বিচিত্র জীবন।
Leave a Reply