পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণী বিলুপ্ত!

gray and black hive printed textile
Photo by Iva Muškić on Pexels.com
আমি আর আমার এক বন্ধু গল্প করছিলাম কি যেন এক বিষয় নিয়ে। হঠাৎ বন্ধুটি বলল ‘মানুষ সবচেয়ে খারাপ জাতি। নিজের ক্ষতি নিজে আর কোন প্রাণী করে না’। মনে মনে ভাবলাম মানুষ সবচেয়ে খারাপ জাতি হতে পারে তবে সবচেয়ে যে ব্যাপারটি ভয়ঙ্কর তা হলো মানুষ সবচেয়ে ক্ষমতাধর জাতি। মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা তাকে সবার উপরে এনে দাঁড় করিয়েছে। ফলে সে যে শুধু নিজের ক্ষতি করে তা না সে পুরো পৃথিবীর ক্ষতি করতে সমর্থ। এজন্যেই হয়তো Friedrich Nietzsche বলে গিয়েছেন “Man is the cruelest animal.” এর প্রমাণ সম্প্রতি বিলুপ্ত হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণী Bramble Cay melomys। যা একধরণের ইঁদুর। অস্ট্রেলিয়ার সরকার এই প্রাণীটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। এটি মানবসৃষ্ট কারণে বিলুপ্ত হওয়া প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণী।
 
বিলুপ্ত হওয়া Bramble Cay melomys
বিলুপ্ত হওয়া Bramble Cay melomys
 
গ্রেট বেরিয়ায়র রিফের উত্তর প্রান্তের ছোট প্রবাল দ্বীপে Bramble Cay melomys বাস করতো। দ্বীপটির আয়তন ছিল ৫১০০০ মি। সমুদ্রের বড় বড় ঢেউয়ের কারণে দ্বীপটির ৯৭ ভাগ সবুজ অংশ তলিয়ে গেছে যা ছিল Bramble Cay এর প্রধান খাবার। দ্বীপটির বেশিরভাগ অংশ এখন সমুদ্রে তলিয়ে গিয়েছে। এখন সেখানে রাতদিন বড় বড় ঢেউ খেলা করে।
 
তথ্যমতে সর্বশেষ এই প্রাণীটিকে দেখে এক জেলে সেই ২০০৯ সালে। তবে এই বিলুপ্ত হওয়াতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। একসময় এই ইঁদুরটি ছিল পর্যাপ্ত পরিমাণে। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এসে এর পরিমাণ কমতে থাকলো আশঙ্কাজনকভাবে। তথ্যমতে ১৯৯৮ সালে এর সংখ্যা ছিল ৯৩। কয়েক দশক আগেও যা কি না ছিল কয়েকশ। ২০০২ ও ২০০৪ সালের শুমারিতে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ থেকে ১২টি।
 
এখন মানবসৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয় বিশেষ করে বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে Bramble Cay এর বিলুপ্ত হওয়ার কারণ বলে ধরা হচ্ছে। কুইন্সল্যান্ডের পরিবেশ ও প্রত্নতাত্ত্বিক রক্ষা বিভাগও একই মত পোষণ করেছে।
 
এত খারাপের মাঝে একটু আশার আলো হলো গবেষকরা বলছেন এই প্রাণী বা তার কাছাকাছি প্রজাতিদের অন্য কোন দ্বীপে পাওয়া যেতে পারে যেখানে এখনও কোন খোঁজ চালানো হয় নি। Bramble Cay এর বিলুপ্ত হওয়ায় এখন চোখ পড়ছে কিছু সামুদ্রিক পাখি ও সবুজ কাছিমের উপর যাদের আবাস্থল ওইখানেই। গবেষকরা বলছেন ভবিষ্যতে এই প্রাণীগুলোকে বিলুপ্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
 
ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছিল প্রাকৃতিক কারণে। কিন্তু মানবসৃষ্ট কারণে কোন প্রাণী বিলুপ্ত হলে বুঝতে হবে কোথাও বড় ধরণের ঝামেলা হচ্ছে। মানুষ কেন এত অবিবেচক হবে যে সে তার আবাস্থলকেই ধ্বংস করবে! ভাবটা এমন যেন এই ক্ষতি তাকে স্পর্শ করবে না। মনে রাখতে হবে আমরা এই প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ! যদি প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয় তবে মানবজাতির কপালে শনি আছে। পরে কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। এখনই সময় চোখ খুলে বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার।
 
# লেখাটি নিচের লেখার ভাবানুবাদঃ
(http://blogs.scientificamerican.com/extinction-countdown/climate-change-first-mammal-extinction/)

সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ
অজানাকে জানার চেষ্টা সবসময় রোমাঞ্চকর ও আনন্দের। সেই আনন্দ পাবার লোভে বিজ্ঞান নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করার চেষ্টা করি ।অণুজীববিজ্ঞানে অনার্স সম্পন্ন করেছি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে পিএইচডি করছি ন্যাশনাল চুং শিং ইউনিভার্সিটি, তাইওয়ানে।