অনেক বছর আগে প্রথম যখন মিউট্যান্ট কথাটা প্রথম শুনি তখন… আমার মনেও নেই যে কোন ক্লাসে পড়ি। এক্স-ম্যান সিরিজের শুরুর দিকের কোন একটা সিনেমাতে শুনেছিলাম। এক্স ম্যান ছাড়াও অনেক গল্প সিনেমাতে সুপার হিরো তৈরির অন্যতম সরঞ্জাম এই মিউটেশন। তবে এখন পর্যন্ত আমরা বাস্তবে যতধরনের মিউটেশন সম্পর্কে জানি তার বেশিরভাগের ফলাফলই ক্ষতিকর। এখন যদি, কোন মানুষের মধ্যে এমন কিছু ক্ষতিকর মিউটেশন থাকা সত্বেও তিনি দিব্যি সুস্থ স্বাভাবিক দিন কাটাতে পারেন, তাহলে কি তাকে একজন সুপারহিরো বলা যায়?
প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষের জিন গবেষণা করে খুব অল্প সংখ্যক ব্যাক্তিকে পাওয়া গেছে যারা মারাত্নক রোগ সৃষ্টিকারী মিউটেশন ধারণকারী মিউট্যান্ট, কিন্তু তারা সুস্থ। এই সৌভাগ্যবান ১৩ জনের মধ্যে রয়েছে ৮ ধরনের জিনগত ব্যাধির মিউটেশন। সিস্টিক ফাইব্রোসিস, আটেলোস্টিওজেনেসিস সহ ৮ ধরনের ব্যাধি যেগুলোতে আক্রান্ত শিশু জন্মের বেশি দিন বাঁচেনা।
আইকান স্কুল অব মেডিসিন এর এরিক শাট এবং একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেজ বায়োনেটোয়ার্ক্স এর স্টিফেন ফ্রেন্ড এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। বিখ্যাত বায়োটেকনোলজি কোম্পানি 23andme এবং বেইজিং জিনোমিক্স ইন্সটিটিউট প্রাথমিক ভাবে ৫৮৯,৩০৬ জনের ডিএনএ সিকোয়েন্স যোগান দেয়। এর মধ্যে ৩,৫২৪ জনের ছিল সম্পুর্ন জিনোম সিকোয়েন্স। বাকি গুলো ছিল এক্সোম সিকোয়েন্স কিংবা নির্দিষ্ট কিছু জিনের মিউটেশন পরীক্ষার তথ্য।
ডঃ এরিক, ডঃ ফ্রেন্ড এবং তাদের সহকর্মীবৃন্দ শুধু মাত্র মেন্ডেলিয় ব্যাধির সাথে জড়িত জিনের মিউটেশনের উপস্থিতিকে বিবেচনা করে সিকোয়েন্স সংখ্যাকে কমিয়ে আনেন ১৫,৫৯৭ এ। ওই জিনগুলোতে বিভিন্ন রকম মিউটেশন ঘটলেও যেসব মিউটেশনে সবসময়ই রোগ সৃষ্টি হয় তারা সেগুলোকেই নির্বাচিত করেন। এই ১৫,৫৯৭ জন ১৬৩ টি ব্যাধির সাথে জড়িত মিউটেশনগুলোর অন্তত একটি ধারণ করেন।
এই পর্যায়ে তারা যেসব সিকোয়েন্সে ভুল থাকতে পারে সেগুলো বাদ দেন। এরপরে যেসব মিউটেশন ০.৫ শতাংশে জনগণে পাওয়া যায় সেসবও বাদ দিলেন। কেননা সুলভ ধরনের মিউটেশনে সাধারণত রোগের তীব্রতা মৃদু থাকে। এই অবস্থায় মাত্র ৩০৩ জন অবশিষ্ট থাকে যাদের ডাক্তারি রিপোর্ট বলে তাঁরা সম্পুর্ন সুস্থ এবং একই সাথে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত মারাত্নক সব জিনগত রোগের সাথে জড়িত মিউটেশনগুলো বহন করছেন যেসবে মানুষ বয়ঃপ্রাপ্তির আগেই মারা যায়। গবেষক দল যেসব কেসের জন্য পেরেছেন সেসবের জন্য আবার জৈব স্যাম্পল সংগ্রহ করে ডিএনএ সিকোয়েন্স যাচাই করে দেখেছেন।
শেষ পর্যন্ত অনেক যাচাই বাছাই করে রইলো মাত্র সৌভাগ্যবান ১৩ জন। কিন্তু সমস্যা যেটা এদের প্রত্যেকেরই সিকোয়েন্স হল আংশিক সিকোয়েন্স। তাহলে, পরবর্তী যৌক্তিক ধাপ হতে পারে তাদের সম্পুর্ন ডিএনএ সিকোয়েন্স করে দেখা, কি কারণে এই বিধ্বংসী মিউতেশন, যেগুলো সাধারণের মৃত্যুর কারণ , সেগুলো ধারণ করেও তারা বহাল তবিয়তে আছেন। এমন কোন জিন যদি পাওয়া যায়, যেটা সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সৃষ্টি করছে তাহলে সেটাকে কেটে নিয়ে ল্যাবরেটরিতে আক্রান্ত কোষের ভেতর প্রবেশ করিয়ে পর্যবেক্ষন করা… কি ফলাফল পাওয়া যায়। কিংবা এমনও হতে পারে তাদের জিনোমের অন্য কোন মিউটেশন তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে। আবার এটাও হতে পারে, তারা যেই পরিবেশে বসবাস করছেন সেখানকার কোন উপাদানই হয়তো তাদের আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখছে। অনেক কিছুই হতে পারে, যা সঠিকভাবে জানা গেলে হয়তো নতুন ধরনের চিকিৎসা উদ্ভাবন সম্ভব ওই রোগগুলোর জন্য। হতাশার ব্যপার এটাই যে গবেষকরা এটা করতে পারছেন না। কারণ সাবজেক্টরা, যাদের ডিএনএ নিয়ে গবেষণাটি করা হল তারা সম্মতিপত্রে নিজেদের কোন ঠিকানা কিংবা যোগাযোগের উপায় উল্লেখ করেননি।
তাই এখন পর্যন্ত, এই জেনেটিক সুপারহিরোদের পরিচয় একটি রহস্য।
লেখাটি জিরোটুইনফিনিটি জুন’১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত।
Leave a Reply