বর্তমান বিশ্বে প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ পারকিনসন নামক একটি ভয়ানক স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত। এই রোগের সঠিক চিকিৎসা কি সেটা এখনো অজানা। আমাদের মস্তিষ্কের কিছু কোষ আছে যারা ডোপামিন নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ ( নিউরোট্রান্সমিটার) ক্ষরণ করে, যেটা কিনা মানবদেহে বিভিন্ন আনন্দদায়ক অনুভূতির সৃষ্টি করে এবং পেশী সঞ্চালনে সহায়তা করে চলাচলে সাহায্য করে। কিন্তু, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির স্নায়ুকোষগুলো ডোপামিন ক্ষরণে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে এদের মৃত্যু ঘটে। আর ডোপামিনের অভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে কাঁপুনি শুরু হয়, চলাফেরায় কষ্ট হয় এমনকি দৈনন্দিন জীবনের কিছু ছোটখাটো কিন্তু গুরুত্বপূর্ন কাজ যেমন দাঁত ব্রাশ করা, শার্টের বোতাম লাগানো ইত্যাদি করতেও অনেক কষ্ট হয়।
চিকিৎসকরা এই রোগের চিকিৎসায় কারবিডোপা, লিভোডোপা নামক কিছু ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন যেগুলো মস্তিষ্কে ডোপামিন ক্ষরণের হার বৃদ্ধি করে। কিন্তু সময়ের সাথে ঔষধের কার্যকারিতা কমে গেলে অস্ত্রপচারের সাহায্য নিতে হয়। সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী পারকিনসনের চিকিৎসায় অভূতপূর্ব সম্ভবনার খোঁজ পান নার- 1 রিসেপ্টর নামক একটি ব্রেইন প্রোটিনের কার্যপ্রণালীর উপর গবেষণা করে। বিজ্ঞানীরা ইউ এস ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন ( এফডিএ) কর্তৃক অনুমোদিত প্রায় ১০০০ টি ঔষধ এই নার- 1এর কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে প্রয়াগ করেছেন,কিন্তু মাত্র দুটি ঔষধ ক্লোরোকুইন এবং এমোডায়াকুইন নার-1 রিসেপ্টরের উপর প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এই দুটি ঔষধ বহু বছর যাবত ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এই গবেষণার আগ পর্যন্ত কোনো ঔষধ বা রাসায়নিক দ্রব্য এই রিসেপ্টরের সাথে বাইন্ড করতে পারে এটা অজানা ছিল।
ল্যাবরেটরিতে পারকিনসন রোগের লক্ষণ আছে এমন কিছু ইঁদুরে এই ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ঔষধ দুটি প্রয়োগ করে ইঁদুর গুলোকে পারকিনসন মুক্ত করতে বিজ্ঞানীরা সফল হয়েছেন। চিকিৎসাধীন ইঁদুরগুলোতে এই ঔষধগুলোর কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই দেখা যায় নি যেখানে বর্তমানে মানুষের চিকিৎসায় বহুল প্রচলিত পারকিনসনের কিছু ঔষধ মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া করে। বিজ্ঞানীরা এই সাধারণ ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক ঔষধ দুটি দিয়ে ইঁদুরে পারকিনসন রোধ করতে পারলেও মানুষে এই ঔষধ গুলোর ব্যাবহার নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাদের মতে মানুষেও যদি এই দুটি ঔষধ একইভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তবে বিজ্ঞানের এই বিশাল জগতে এই চিকিৎসার উদ্ভাবন এক বিস্ময়কর সুফল বয়ে আনবে।
Leave a Reply