close up photo of gray metal pipes

ব্ল্যাকহোল


লিখেছেন

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

মাধ্যাকর্ষণ আলোকে টান দেয়। আমরা জানি আমরা পাথরকে কক্ষপথে ঘোরাতে পারি, কিন্তু আমরা আলোকে কি কক্ষপথে ঘুরাতে পারি? হ্যাঁ! কিন্তু তার জন্য দরকার খুবই ভারী কোন বস্তু যার ব্যাসার্ধ খুবই ছোট। উদাহরণ স্বরূপ : এমন কিছু দরকার যা সূর্যের মত ভারী কিন্তু ব্যাসার্ধ ৩ কি.মি. এর চেয়ে কম। এমন কিছুর কাছে ঠিক দিকে আলোকে পাঠালে এটি কক্ষপথে ঘোরা শুরু করবে। যদি তুমি আলো ঘোরার সময় নিজেকে আলোর পথে বসাও তাহলে তুমি নিজের পেছন দিক দেখতে পাবে।

আমরা আরো বিশাল ও সঙ্কুচিত কোন বস্তু কল্পনা করতে পারি যেখানে কোন লেজার রশ্মি ছোড়া হলে এটি ঐ বস্তুর পৃষ্ঠেই থেকে যাবে। অর্থাৎ যেহেতু এই বস্তুটি থেকে কোন আলো বেড় হয়ে আসতে পারে না তাই এটি সম্পূর্ণ কালো দেখাবে, এটাই ব্ল্যাকহোল। যেকোন বস্তু ব্ল্যাকহোলের যথেষ্ট কাছে আসা মাত্রই এর ভিতরে গায়েব হয়ে যাবে। (আলোর চেয়ে দ্রুতগতির কিছু নেই আর যা আলোকেই ফাঁদে আটকাতে পারে সেটা বাকি সবকিছুকেই ফাঁদে আটকাতে পারবে)

ব্ল্যাকহোলের প্রভাব মহাকর্ষ প্রভাবের মতই দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে কমে। তার মানে ব্ল্যাকহোলকে ঘিরে একটা সীমানা আছে যেটা কোন কিছু একবার অতিক্রম করলে আর বেড় হতে পারবে না, একে বলে ব্ল্যাকহোল দিগন্ত। যেকোন কিছু এই দিগন্ত একবার পার করলে আজীবন সেখানে আটক।

image

ব্ল্যাকহোল থেকে এই দিগন্তের দূরত্ব নির্ভর করে ব্ল্যাকহোলের ভরের উপর। ভর যত বেশী কেন্দ্র থেকে দিগন্তের দূরত্বও তত বেশী হবে। সূর্যের সমান ভর বিশিষ্ট কোন ব্ল্যাকহোলের দিগন্তের দূরত্ব হবে কেন্দ্র থেকে ৩ কি.মি.। সূর্যের চেয়ে বিলিয়ন গুন বেশী (হ্যা এমন জিনিসও আছে) ভর হলে এই দূরত্ব হবে ৩x১০ কি.মি, যা সূর্য থেকে ইউরেনাসের দূরত্বের সমান। কিছু বিশাল ব্ল্যাকহোলের দিগন্ত এত বড় যে কোন পর্যবেক্ষক বুঝতেও পারবে না কি ঘটে গিয়েছে, শুধু এখান থেকে বেড় হওয়ার সব চেষ্টা বৃথা হবার পর বুঝতে পারবে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে চলেছে।

একজন সাহসী (নির্বোধ?) নভোচারীর কথা কল্পনা করি যিনি সিদ্ধান্ত নিলেন দিগন্তে প্রবেশ করবেন এবং ব্ল্যাকহোলের খুব কাছাকাছি যাবেন আর আমরা তার পর্যবেক্ষণ অনুসরণ করি। প্রথম যে প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে তা হল তিনি যত দিগন্তের কাছাকাছি যাবেন তার ঘড়ি মহাকাশযানের ঘড়ির তুলনার ধীর গতিতে চলবে যা ব্ল্যাকহোলের অনেক দূরে অবস্থিত। দিগন্ত অতিক্রম করতে মহাকাশযানের সময়ে অসীম সময় লাগবে। অন্যদিকে নভোচারীর সময়ে সসীম পরিমাণ সময় লাগবে দিগন্ত অতিক্রম করতে, সময়ের আপেক্ষিকতার একটি চরম ক্ষেত্র ।

নভোচারী যে আলো নির্গত করবে তা লালের দিকে স্থানান্তরিত হতে থাকবে। একসময় তা অবলোহিত, তারপর মাইক্রোওয়েভ, তারপর বেতার তরঙ্গ ইত্যাদি। মহাকাশযান থেকে তাকে দেখার জন্য প্রথমে অবলোহিত, তারপর রেডিও, তারপর মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি শনাক্ত করতে হবে।

দিগন্ত অতিক্রম করা নভোচারীর জন্য যন্ত্রনাদায়ক নাও হতে পারে কিন্তু তার চূড়ান্ত পরিণতির ক্ষেত্রে একই কথা বলা যায় না। মনেকরি সে আগে পা দিল, যখন ব্ল্যাকহোলের যথেষ্ঠ কাছাকাছি যাবে তার পায়ের উপর মহাকর্ষীয় টান তার মাথার তুলনায় অনেক বেশী হবে এবং আক্ষরিক ভাবেই তিনি ছিড়ে টুকরা টুকরা হয়ে যাবেন।

সুতরাং ব্ল্যাকহোল হচ্ছে সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের অকাট্য প্রমাণ। এদের বৈশিষ্ট্যই এমন যে এখান থেকে কোন বিকিরণ বেড় হতে পারে না। তাই দূর থেকে ব্ল্যাকহোল শণাক্ত করা যায় না আর তুমি যদি সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নাও, ফেরত এসে তোমার বন্ধুদের বলতে পারবে না এটা আসলেই ব্ল্যাকহোল ছিল নাকি তুমি উদ্ভট দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছ। কিন্তু এটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অসত্য প্রমাণের জন্য মৌলিক প্রয়োজনের বিরোধিতা করে না?

supernova-1993j-before
ব্ল্যাকহোল নক্ষত্র থেকে পদার্থ গ্রাস করছে। ডান দিকে ব্ল্যাকহোল, বাম দিকে নক্ষত্র। ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষীয় টানে নক্ষত্রের আকারের বিকৃতি ঘটেছে

কিন্তু না, এমন কি সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের এই চরম ভবিষ্যদ্বাণীকেও ভুল প্রমাণ করা যায়। ব্ল্যাকহোলের চারপাশ ঘিরে থাকা বিভিন্ন পদার্থ এই পরিস্থিতি প্রদান করে। এসব পদার্থকে ক্রমাগত ব্ল্যাকহোল টেনে নিয়ে গ্রাস করে, কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় পদার্থগুলি অনেক উত্তপ্ত হয়ে যায় আর আলো, অতিবেগুনী রশ্মি এবং এক্স-রে বিকিরণ করে। এই মহাজাগতিক ধ্বংসলীলা এতই বিশৃঙ্খল যে এই বিকিরণ খুবই দ্রুত পাল্টাতে থাকে, কখনও খুবই তীব্র, কখনও খুবই দুর্বল আর এই পরিবর্তন খুবই দ্রুত ঘটে। এই পরিবর্তন থেকে যে বস্তু বিকিরণ করছে তার আকার নির্ণয় করা যায়।

অন্যদিকে নভোচারীরা নিকটবর্তী নক্ষত্রের উপর এই বিকিরণের মহাকর্ষীয় প্রভাব দেখতে পাবে যেখান থেকেই বিকিরণ আসুক না কেন। আর এই প্রভাব থেকে তারা ঐ দানবের(ব্ল্যকহোল) ভর নির্ণয় করতে পারবে। আকার, ভর আর বিকিরণের পদ্ধতি জানার পর কেউ সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ভবিষ্যদ্বানীর সাথে তুলনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এটি ব্ল্যাকহোল কিনা। এই পদ্ধতিতে পাওয়া ব্ল্যাকহোলের সবচেয়ে ভাল প্রার্থী হল সিগনাস এক্স-১। (সিগনাস নক্ষত্রপুঁঞ্জে প্রথম পরিলক্ষিত এক্স-রে উৎস, দ্যা সোয়ান)

hl0304-fig2

ব্ল্যাকহোল শণাক্ত করার সব উপায় নির্ভর করে এটি এর চারপাশের পদার্থের উপর কিভাবে প্রভাব ফেলে। কিছু বহুদূরবর্তী এক্স-রে উৎস সবচেয়ে আকর্ষণীয় উদাহরণ প্রদান করে যেগুলো আপেক্ষিক ভাবে সঙ্কুচিত (ছায়াপথ আকৃতির) এবং অনেক দূরে অবস্থিত। আমাদের দেখার জন্য এগুলোকে হতে হবে খুবই উজ্জ্বল, আর আমরা জানি এই উজ্জ্বলতার উৎস শুধু একটা জিনিসই হতে পারে: ব্ল্যাকহোল পদার্থকে গ্রাস করার সময় পদার্থ থেকে নির্গত বিকিরণ। আমাদের কাছে এসব বস্তুর যে ছবি আছে তাকে সাধারনত বলা হয় সক্রিয় ছায়াপথ কেন্দ্রীণ। এগুলো হচ্ছে অসীম ভরের ব্ল্যাকহোল (সোইরভরের বিলিয়ন গুণ বা এমন কিছু) যা প্রতি সেকেন্ডে অসংখ্য নক্ষত্র হজম করছে এবং নির্গত শক্তি নক্ষত্রের মৃত্যু ঘোষণা করছে।

মূল: Space-Time,Relativity, and Cosmology Jose Wudka

লেখাটি 860-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Responses

  1. দারুণ। বলার ভঙ্গিমাটা আকর্ষণীয়। ইন্টারনেটে ভালো তথ্যসূত্র খুঁজে এরকম অনুবাদ করা সহজ নয়।
    বিজ্ঞান ব্লগে স্বাগতম!

    1. ধন্যবাদ 🙂

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading