বাংলাদেশে হাজার রকমের কুসংস্কারের মধ্যে জ্যোতিষী ও জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে কুসংস্কার ব্যাপক ডালপালা বিস্তার করে বট বৃক্ষের রূপ লাভ করেছে। তবে বৃক্ষ আমাদের বাচাঁতে যেই ত্যাগ স্বীকার করে এবং আমাদের বেচেঁ থাকার ক্ষেত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন, এই বট বৃক্ষ সেই কাজের সম্পূর্ণ বিপরীত কাজ করে। অর্থাৎ আমাদের বাচাঁনোর পরিবর্তে মারার ব্যবস্থা করে থাকে। বাংলাদেশে এই ক্ষতিকর বটের ডালপালা এতোই বিস্তৃত যে বিভিন্ন স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে সেগুলোর চটকদার বিজ্ঞাপন দেখা যায় অহরহ। জ্যোতিষবিদদের ডালপালার বিস্তার দেখা যায় অন্য আরেকটি দিকে আর সেটা হলো আমাদের বিভিন্ন পত্রিকা, যেখানে বিজ্ঞানের খবরের সাথে সাথে দেওয়া থাকে জ্যোতিষবিদদের করা ভবিষ্যৎ বাণী অর্থাৎ আজ আপনার দিনটি কেমন যাবে । এইক্ষেত্রে পত্রিকা অলাদের যুক্তি থাকে (অনেকাংশে) সাধারণ মানুষ এই ধরনের খবর চায়। কিন্তু এই সাধারণ মানুষ কারা এর কোনো ব্যাখ্যা কোথাও থাকে না। সাধারণ মানুষের নাম ভেঙ্গে যে বা যারা এই কুসংস্কার প্রচার করে অথবা প্রচারে সহায়তা করে তারাও সেই বটের মত যা মানুষের ক্ষতিই শুধু করে। এই বিষয়গুলো চিন্তা করে অনুসন্ধৎসু চক্রের মুগদা পাড়া শাখার সদস্যরা একটি এলাকাভিত্তিক জরিপ পরিচালনা করে। তবে চক্রের সদস্যদের মাঝে উক্ত কুসংস্কার নিয়ে ভাবনার খোরাক যোগায় কুসংস্কার নিয়ে একটি লেখা।
আলোচনার শুরু চক্রের ঝিনাইদহ শাখা কর্তৃক “কৃত্তিকা” প্রত্রিকার একটি লেখা পড়ার মাধ্যমে, যা “উৎস মানুষ” পত্রিকা থেকে নেয়া হয়েছে। যেখানে একজন ভন্ড জ্যোতিষীর ভন্ডামী প্রকাশ করা হয়। সেই ভন্ড জ্যোতিষী মানুষের হাত দেখে তার ভবিষ্যৎ গণনা করতো, যখন তাকে একটি বানরের হাতের ছাপ দেখানো হলো তখন সেই জ্যোতিষী মানুষের ভাগ্য গণনার মতোই বানরের ভাগ্য গণনা করে ভবিষ্যৎ বাণী করলেন যে বানর জীবনে অনেক বড় কর্ম করতে পারবে। এই লেখা পড়ার পর এবং তা নিয়ে আলোচনা করার পর চক্রের সদস্যরা একটি জরিপ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। জরিপের উদ্দেশ্যে তিনটি দলে ভাগ হয়ে চক্রের সদস্যরা জরিপ পরিচালনা করেন। জরিপের প্রশ্ন ছিলো “আপনি কি জ্যোতিষীর দেওয়া পাথরে ভাগ্য পরিবর্তন হয় বলে বিশ্বাস করেন?”
জরিপে শাখার সদস্যরা মোট ৪০ জন মানুষের কাছে উক্ত প্রশ্ন নিয়ে যায় এবং উত্তর ও মতামত সংগ্রহ করে তা লিপিবদ্ধ করে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমতা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে এবং সকল বয়সের মতামত নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, যদিও বিভিন্ন কারণে সমতা বজায় রাখা যায়নি তবে সন্তোষজনক রাখা সম্ভব হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণ কারী মোট ৪০ জনের মধ্যে ৩৪ জনের (৭৫%) জবাব ছিলো “না” অর্থাৎ তারা জ্যোতিষীর দেওয়া পাথর ও তাদের করা ভবিষ্যৎ বাণীতে বিশ্বাস করেন না। ৩ জন (৭.৫ %) বলেছেন তারা কোনো মতামত দিতে ইচ্ছুক না এবং ৩ জন ( ৭.৫%) বলেছেন তারা বিশ্বাস করেন। যারা বিশ্বাস করেন বলেছেন তাদের বিশ্বাস করার কারণ হিসেবে তারা যেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা ছিলো উল্লেখ করার মত। তারা (যারা হ্যাঁ বলেছেন) বলেন “অনেক মানুষ যেহেতু ব্যবহার করেন সেহেতু জ্যোতিষীর পাথরে তাদের হইতো উপকার হয়, না হলে তারা কেন করবে? তাই বিশ্বাস করি” । জরিপে অংশগ্রহণ কারী একজন রিকশা চালকের জবাব ছিলো,“পাথরে যদি ভাগ্য পরিবর্তন হইতো তাইলে আমি পাথর হাতে দিয়া রাজার হালে থাকতাম”। ২ জন ভিক্ষুক, যাদের বয়স আনুমানিক ৭০ এর কাছাকাছি, জ্যোতিষীর দেওয়া পাথর কে ব্যবসা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “সবই বাটপারি, ভণ্ডামী ব্যবসা”।
Leave a Reply