মানুষের বংশগতি বৈশিষ্ট্য জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। মানুষ কি ইচ্ছা অনুযায়ী জিন এ পরিবর্তন মাধ্যমে তার বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আনতে পারবে? মানুষ কেন বংশপরম্পরায় পাওয়া জিন এর দাস হয়ে থাকবে? এ প্রশ্নের উওর খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানী জোসেফ জেইনার কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যের জন্য তার নিজ-দেহের জিন এর পরিবর্তন ঘটান।তিনি তার হাতের মাংস পেশির একটি জিন এর পরিবর্তন ঘটান। জিন এর পরিবর্তন করে নতুন বৈশিষ্টের উদ্ভব মানুষে এই প্রথম। এর আগে কাঙ্খিত বৈশিষ্টের জন্য বিজ্ঞানীরা অনুজীব সহ অনেক উদ্ভিদ এ জিন পরিবর্তনের কৌশল (জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং) প্রয়োগ করা হয়ে আসছে।
মানবদেহ অসংখ্য কোষের সমন্বয়ে ঘঠিত।প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াসে নিউক্লিক এসিড হিসেবে থাকে ডিঅক্সি রাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ, DNA) ও রাইবোনিউক্লিক এসিড (আরএন এ, RNA)। DNA তে থাকে মানুষের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী জিন। জিন এ মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলো কোড করা থাকে। জৈবিক প্রক্রিয়া ট্রান্সক্রিপশনের মাধ্যমে DNA এর জিনগুলোর তথ্য mRNA (messenger RNA)-তে স্থানান্তরিত হয়। তারপর এটি আর একটি জৈবিক প্রক্রিয়া ট্রান্সলেশন এর মাধ্যমে mRNA থেকে প্রোটিন তৈরি হয়।
চিত্র: জীববিজ্ঞানের central dogma of life
জিনের পরিবর্তনের জন্য নতুন উদ্ভাবিত কৌশলটির নাম হল CRISPR। CRISPR হল একটি বয়োটেক টুল, যা দিয়ে মানুষ ইচ্ছামত তার জিনকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। CRISPR উদ্ভিদ সহ অনুজীব (ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া) এ ব্যবহার করা যায়।
সম্প্রতি মার্কিন মহাকাশ গবেষনা সংস্থা NASA-এর এক বিজ্ঞানী জোসেফ জেইনার নিজের দেহে জিন পরিবর্তন করেন। এখন পর্যন্ত তিনি দুই বার তার শরীরে জিন এর পরিবর্তন করেন। তিনি CRISPR ব্যবহার করে তার হাতের মাংসপেশির মায়োস্টেটিন নামক একটি জিন এর পরিবর্তন করেন। এ প্রক্রিয়ায় একটি DNA-র পাশাপাশি Cas9 নামক একটি প্রোটিন ও guide mRNA জড়িত থাকে। গাইড mRNA-টি Cas9 প্রোটিন তৈরি হওয়ার পর কোথায় যাবে এটা নির্ধারণ করে। যখন পরিবর্তিত DNA হাতের মাংস পেশিতে অনুপ্রবেশ করানো হয় এবং Cas 9 প্রোটিন ও guide RNA লক্ষ্য বানানো হবে, তখন মায়োস্টেটিন জিনটি কেটে বাদ হয়ে যাবে । পরিবর্তিত মায়োস্টেটিন জিন থেকে প্রোটিন তৈরি হবে না। মায়োস্টেটিন জিন থেকে তৈরি হওয়া প্রোটিন হাতের মাংস পেশির বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে। যার ফলে তার মাংস পেশির বৃদ্ধি হয়েছিল।
কিন্তু তার মাংসপেশির বৃদ্ধি হবে এটা তার পরীক্ষার মূল উদ্দেশ ছিল না। বরং পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই প্রথম যে মানুষ এখন আর জন্ম সূত্রে পাওয়া জিন এর দাস নয়।
বংশগতির বিভিন্ন পদ্ধতি (যেমন: CRISPR) নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীরা বলেন, জেইনার নিজেকে অফ টার্গেট ইফেক্ট এর ফাঁদেও ফেলতে পারেন। ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বংশগতিবিদ ড. অনীয়াল খান বলেন,মানুষে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটছে তা এখনো সুস্পষ্ট ভাবে আমরা জানিনা। যদি এটি এমন একটি অংশতে যায়, যা টিউমার এর গ্রোথ কে নিয়ন্ত্রণ করে, তখন এমন ও হতে পারে ঐ অংশটি পরিবর্তিত হয়ে টিউমার এর ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এটারই রহস্য বিজ্ঞানীরা উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করছেন।
জেইনার বলেন এটা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই সমান্য। তিনি মনে করেন তার জন্য অন্তত ঐ পরিমাণ ক্ষতি হবে না যতটা অনেকে বলেছেন। তিনি বলেন এখন পর্যন্ত CRISPR ব্যবহার করে পশু ও বহুকোষী জীবে টিউমার বা ক্যান্সার হয় নাই।
এমনও হতে পারে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বর্তমানে প্রতিকারহীন অনেক রোগের প্রতিরোধ বের হয়ে যাবে। তখন মানুষ রোগ প্রতিরোধের জন্য এ পদ্ধতিটির (জিন পরির্তনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্টে পরিবর্তন) উপর বেশি নির্ভর হয়ে যেতে পারে!
সূত্র:
Leave a Reply