(এটি Nature Career column এ Julia Nolte এর লেখা “Why comparing yourself to other graduate students is counter-productive” এর অনুবাদ)
কর্নেল ইউনিভার্সিটি, ইথাকা, নিউয়র্কে মনোবিজ্ঞানে পিএইচডি করার মাঝামাঝি সময় আমার মনে হলো একটা প্রজেক্ট শেষ এবং পাবলিশ করার জন্য যে মানসিক ক্ষমতা লাগে তা আমার নেই। এটা মনে হচ্ছিলো অন্য গ্র্যাজুয়েট ছাত্ররা যে সময়ে কয়েকটা গবেষণাপত্র প্রকাশ করছিলো, আমার একটি এক্সপেরিমেন্ট করতেই একই সময় লাগছিলো। আমি আমার সর্বোচ্চ পরিশ্রম করছিলাম কিন্তু আমার অগ্রগতি অন্যদের তুলনায় ধীর মনে হচ্ছিলো।
আমি যখন আমার সুপারভাইজারের সাথে বিষয়গুলো শেয়ার করলাম তিনি জিনিসগুলো অন্যভাবে নিলেন। তিনি আমাকে নিশ্চিত করলেন “তুমি ভুল কিছু করছো না” । “তুমি শুধু আলাদা ধরণের গবেষণা করছো”। তিনি আমাকে মনে করিয়ে দিলেন আমার মতো যারা মানুষের জীবনকাল নিয়ে কাজ করে, তরুণ-মধ্যবয়সী-প্রৌঢ়দের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে কাজ করে, তাদের একটি গবেষণা প্রজেক্ট শেষ করতে অন্যদের চেয়ে বেশী সময় লাগে। তাই হয়তো অন্য সহকর্মীরা যারা ভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করছেন তাদের চেয়ে ধীর গতিতে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হবে।
আমার এটা জানা ছিলো প্রতিটা ছাত্রের গবেষণার অগ্রগতি আলাদা গতিতে এগোয়। আমার গবেষণার বিষয় সামাজ বিজ্ঞানে কিছু কিছু গবেষক টুইটার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কিংবা কিংবা অনলাইনে হাজার হাজার অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে কয়েকদিনের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করে ফেলে। কিন্তু যারা জীবনকাল নিয়ে গবেষণা করে তারা প্রতিজন মানুষ থেকে আলাদা করে আরও বিশদভাবে তথ্য নেয়। এরকম একশো অংশগ্রহণকারীকে পরীক্ষা করতে কিংবা ইন্টার্ভিউ নিতে মাস থেকে বছর পার হয়ে যাবে।
আমি যে গবেষণা করি তা অন্য সমাজ বিজ্ঞানের গবেষণা থেকে আরও কিছু কারণে আলাদা। যেমন অর্থায়ন, লোকবল, নতুন তথ্য সংগ্রহের জন্য যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং তথ্য সংগ্রহ এবং এনালাইসিস করার জন্য অনুমতি নেয়া। আমার গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা যেখানে ৩০-৯০ মিনিট খরচ করে তা পাঁচ মিনিট অনলাইন জরিপ থেকে অবশ্যই ব্যায়বহুল হবে। আমি আমার গবেষণায় অংশগ্রহণকারীকে আমার কাছে আসার জন্য জনপ্রতি ২০ ডলার দিই অন্যদিকে অনলাইন সার্ভে অংশগ্রহণকারীকে ০.২০ ডলার দেয়। (অবশ্য অনেক জরিপ শুধুমাত্র সেচ্ছাসেবী দিয়ে করা হয় যেখানে কোন অর্থ দেয়া হয় না।)
এছাড়াও আরও অর্থ ও সময়ের ব্যাপার আছে। আমার একটি গবেষণাতে আমি অংশগ্রহণকারীদের ছবি দেখিয়ে ও শব্দ শুনিয়ে তাদের দেহের চামড়ার তড়িৎ আধান পরিমাপ করে তাদের আবেগীয় সাড়া পরিমাপ করি। অনলাইন জড়িপের তুলনায় এই ধরণের গবেষণা বেশি অর্থ খরচ হয় এবং বাড়তি যন্ত্রপাতি ও দক্ষতা লাগে। কিন্তু এ ধরণের গবেষণা থেকে আরও বিশদ তথ্য পাই। করোনাভাইরাস মহমারীর কারণে অবশ্য আমার এই কাজ বন্ধ আছে।
দ্বিতীয় প্রজেক্টে আমি স্থানীয় ১৩৮ লোকের ইন্টার্ভিউ বিশ্লেষণ করছি। এতগুলো ইন্টার্ভিউ রেকর্ড করা, প্রতিলিপি তৈরি করা এবং কোডিং করতে বছর না লাগলেও কয়েকমাস লেগে যাবে। অবশেষে আমাকে দুইটি প্রোগ্রামিং লেঙ্গুয়েজ শিখতে হয়েছে যাতে করে আমি তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করতে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারি যা আমি আগে থেকে জানতাম না। এই তিনটি প্রজেক্ট থেকে হয়তো তিনটি গবেষণাপত্র হবে, যার মধ্যে একটি আমি ইতিমধ্যে সাবমিট করে দিয়েছি যা এখন রিভিউতে আছে।
ভিন্ন গবেষণা ভিন্ন ধরণের প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে এবং আমি অনুভব করেছি দুইজন ছাত্রের অগ্রগতিকে তুলনা করা সহজ কিংবা ঠিক নয়। যদিও একাডেমিয়া খুবই প্রতিযোগিতামূলক অন্য ছাত্র যে কিনা ভিন্ন গবেষণা কিংবা ভিন্ন ক্ষেত্রের তার সাথে তুলনা না করেও আমি আমার ব্যক্তিগত অগ্রগতিকে আরও অর্থপূর্ণ উপায়ে তুলনা করতে পারি। যেহেতু প্রত্যেক গ্র্যাজুয়েট ছাত্র আলাদা পরিস্থিতিতে কাজ করে, আমি বুঝতে পেরেছি কেবল একধরণের তুলনায় ঠিক আর তা হলো আমার পুর্বের ক্যারিয়ারের সাথে আমার বর্তমান ক্যারিয়ার তুলনা করা।
আমার সুপারভাইজারের সাথে ঐ কথোপকথনের পর আমার পিএইচডির প্রথম তিন বছরের মধ্যে আমি তিনটি ফার্স্ট অথর গবেষণা পত্র পাবলিশ করেছি কোন রকম ম্যাজিক ছাড়াই, যেটা আমি মনে করেছিলাম আমার সহকর্মীরা করছিলো। যদিও এখন আমি নিজেকে অন্যের সাথে তুলনায় ঝামেলায় পড়ি তখন আমি আবার আমি আমার নিজের পেছনের অগ্রগতি দেখি এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করি, গত বছরে বা পিএইচডির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমি কী কী লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি?
গবেষণাপত্র প্রকাশ করা ছাড়াও অন্য অর্জনগুলো হলো বাহিরের গবেষকদের সাথে কলাবরেশন করা, আন্ডারগ্রেজুয়েট রিসার্চ এসিস্ট্যান্টসহ অন্য ছাত্রদের মেন্টরিং করা। এছাড়াও আমি আমার গবেষণার প্রজেক্টকে এখন প্রি-রেজিস্টার করি। প্রি-রেজিস্টার করার মানে হলো তথ্য সংগ্রহ করার আগে আমার হাইপোথিসিস, মেথড এবং এনালাইসিস প্ল্যান লিখে ফেলা। প্রি-রেজিস্টার আমার গবেষণার মূল্য বাড়ায় কিন্তু কোন গবেষণায় আমি নিজেকে নিয়োজিত করবো তা বুঝতে আমার সময় লেগেছে।
এখন আমি প্রতি সেমিস্টারে কী লক্ষ্য অর্জন করতে চাই এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তা আগে থেকেই ম্যাপ করে ফেলি। যদিও এই লক্ষ্যগুলো হয়তো অন্য গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টের সাথে তুলনা করবো না কিন্তু পিএইডির শুরু থেকে এই পর্যন্ত যে পথ অতিক্রম করেছি তা নিজেই এক সফলতা।
Leave a Reply