মাইক্রোপ্লাস্টিক হচ্ছে প্লাস্টিক পদার্থের অতিক্ষুদ্র কণা যেগুলো প্লাস্টিক পদার্থের তৈরি বৃহত্তর বস্তু ভাঙ্গনের ফলে ধীরে ধীরে তৈরি হয় এবং জমা হয়। এসব মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশের জন্য একটি বিশাল হুমকির কারণ। এগুলো সহজেই প্রাণীদের খাবারের সাথে প্রাণী দেহে প্রবেশ করে আর এগুলো এত ক্ষুদ্র যে এগুলো পরিষ্কার করা অত্যন্ত কঠিন। মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো সমুদ্রের মধ্যে অনেক বিস্তৃত, তবে স্থলে বিশেষ করে দূরবর্তী পর্বতের চূড়ায় এসবের অস্তিত্ব নিয়ে তেমন গবেষণা করা হয় না।
সম্প্রতি গবেষকরা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এবং রোলেক্স পের্পেটুয়াল প্ল্যানেট এর এভারেস্ট অভিযান হতে প্রাপ্ত তুষার ও প্রবাহের নমুনাগুলো বিশ্লেষণ করে মাউন্ট এভারেস্টে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের প্রমাণ পেয়েছেন। বেইজ ক্যাম্পের আশেপাশে যেখানে হাইকার এবং ট্রেকাররা বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করে থাকেন, সেখানে মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলোর সর্বাধিক ঘনত্ব ছিল। দলটি সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৮,৪৪০ মিটার উঁচুতেও মাইক্রোপ্লাস্টিক খুঁজে পেয়েছিল। গত ২০ নভেম্বর “ওয়ান আর্থ” জার্নালে এই ফলাফলগুলো প্রকাশিত হয়েছে। (সূত্রঃ https://doi.org/10.1016/j.oneear.2020.10.020)
গবেষণাপত্রটির প্রথম লেখক বিজ্ঞানী ইমোজেন ন্যাপার নিজেও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এক্সপ্লোরার এবং প্লাইমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিজ্ঞানী। তিনি তার সহকর্মীদের কাছে “প্লাস্টিক গোয়েন্দা” হিসাবে পরিচিত। তিনি বলেছেন “মাউন্ট এভারেস্টকে বিশ্বের সর্বোচ্চ ময়লার ভান্ডার হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে”। তিনি আরো বলেন, “এর আগে এই পর্বতে মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলোকে নিয়ে গবেষণা করা হয়নি, তবে সাধারণত এই ধরণের মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলোকে অপসারণ করা ময়লার বিশাল ধ্বংসস্তূপ অপসারণের তুলনায় আরও কঠিন”।
বিজ্ঞানী ন্যাপার বলেন, “বিশ্লেষণের ফলাফল কি হতে পারে তা নিয়ে আমার কোন ধারণা ছিল না। তবে আমার বিশ্লেষণ করা প্রতিটি তুষারের নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি আমাকে অবাক করেছে। মাউন্ট এভারেস্ট এর ব্যাপারে সবসময় আমার ধারণা ছিল যে এটি কোন এক দূরবর্তী এবং আদিম স্থান। কিন্তু আমরা যে এই সর্বচ্চ শৃঙ্গের চূড়ার কাছেও দূষণ করে চলেছি সেটা জানতে পেরে সত্যি চোখ খুলে গেলো”
গবেষক দলের কিছু সদস্য ২০১৯ সালের বসন্তে এভারেস্ট অভিযানের সময় পর্বতে আরোহণ করে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। তবে বেশিরভাগ কাজই করা হয়েছিল সেখান থেকে অনেক মাইল দূরে একটি ল্যাবে, যেখানে ন্যাপার এবং তার গবেষক দল নমুনাগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি কেবল এই পর্বতে প্লাস্টিক আছে কিনা তা জানতে চেয়েছিলেন এমন নয়, বরং সেখানে কী ধরণের প্লাস্টিক ছিল সে ব্যাপারেও বিশ্লেষণ করেছিলেন। দূষণের সূত্রপাত কোথায় তা জানার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ন্যাপার বলেন “নমুনাগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পলিএস্টার, অ্যাক্রিলিক, নাইলন এবং পলিপ্রপিলিন ফাইবার পাওয়া গেছে। এগুলো পর্বতারোহীদের পোশাক, তাঁবু এবং আরোহণের দড়ি তৈরি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই সন্দেহ করা হচ্ছে যে, খাদ্য সামগ্রী নয় বরং এ জাতীয় জিনিসপত্রগুলোই দূষণের প্রধান উৎস”।
এই সমীক্ষায় মাউন্ট এভারেস্টে মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলোর উপস্থিতি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে এই দূষণকে পরিষ্কার করার উপায় এখনও জানা যায়নি।
তিনি বলেন, “বর্তমানে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রচেষ্টাগুলোর মাঝে অন্যতম হল অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য জিনিসগুলো পুনঃব্যবহারের দিকে মনোনিবেশ করা। যদিও এটি গুরুত্বপূর্ণ, তবে আমাদের আরও গভীর প্রযুক্তিগত সমাধানগুলোতে মনোনিবেশ করা শুরু করা উচিত যা মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলোতে ফোকাস করে, যেমন ফ্যাব্রিক ডিজাইন পরিবর্তন করা এবং যথাসম্ভব প্লাস্টিকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক তন্তুগুলোর ব্যবহার করা” ।
গবেষকরা আরও আশা করেন যে, প্লাস্টিকের দূষণ যে কেবল সাগর নয় বরং সমস্ত পরিবেশকে বিপুল পরিমাণে বিপদগ্রস্থ করে তোলে তা তাদের কাজের মাধ্যমে স্পষ্ট করতে সহায়তা করবে।
“এগুলো এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হওয়া সর্বাধিক মাইক্রোপ্লাস্টিক” ন্যাপার বলেছেন “যদিও এটি উত্তেজনাকর শোনায়, এর মানে হলো হল মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো সমুদ্রের গভীর থেকে শুরু করে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে। আমাদের পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলোর সর্বব্যাপী বিস্তৃত এ অবস্থায়, উপযুক্ত পরিবেশগত সমাধানগুলো অবহিত করার বিষয়ে আমাদের এখন নজর দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের গ্রহকে রক্ষা এবং যত্ন করতে হবে।
তথ্যসূত্র:
১. There are microplastics near the top of Mount Everest too, Phys.org
Leave a Reply