আমরা যদি একটু খেয়াল করি আমাদের পরিচিত বয়োবৃদ্ধদের দিকে একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখতে পাবো।
তাদের মধ্যে অনেকের হাত পা ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে, হাতটা মুঠোবন্দি করতে পারেনা! কেন এমন হয়! এটা কি অসুখ? বিজ্ঞানমহলে এই রোগটি পার্কিন্সন নামেই পরিচিত।
পারকিন্সন রোগ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যা মূলত মোটর সিস্টেমকে প্রভাবিত করে।
একথাও প্রচলিত নির্দিষ্ট কীটনাশক এর সংস্পর্শে আসলে পূর্ব থেকেই মস্তিষ্ক আঘাতপ্রাপ্তদের এ রোগের আক্রান্ত হবার প্রকোপ বেশি। পারকিন্সন রোগ মূলত ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের ১ শতাংশের ক্ষেত্রে ঘটে। বাংলাদেশে যেহেতু বৃহৎ আকারে এই নিয়ে গবেষণা খুব বেশি হয়নি তাই আমাদের দেশের সঠিক পরিসংখ্যানটা বলা যাচ্ছেনা।তবে বিশ্বমান হিসেবে দেশেও ১ শতাংশ ধরা হয়। খাদ্য এবং পুনর্বাসন কিছুটা উন্নয়ন ঘটাতে পারে এই রোগের।
১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ চিকিৎসক জেমস পারকিন্সন এই রোগ প্রথমে বর্ণনা করেন(Shaking palsy)নামে। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১১ ই এপ্রিল পার্কিন্সন রোগের জনসচেতনতা দিবস পালন করা হয় যা প্রকৃতপক্ষে জেমস পার্কিনসনের জন্মদিন। লাল টিউলিপ ফুলকে এই রোগের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
২০১৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হা এলডিওপিএ কে পারকিন্সন রোগের একটি জরুরি ঔষধ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

এ রোগের উপসর্গ ধীরে ধীরে শুরু হয়। রোগটি বাড়ার সাথে মোটরবিহীন/নন মোটর লক্ষণগুলি আরও সাধারণ হয়ে ওঠে। শুরুর দিকে সুপষ্ট লক্ষণগুলি হলো কাঁপুনি, অনমনীয়তা,এবং হাঁটাচলাতে অসুবিধা। তবে আচরণগত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এই রোগের রোগীরা শরীরের বিশেষ করে হাতের আঙুলের কাঁপুনি এবং পেশি সমূহের কাঠিন্যে ভোগেন। এছাড়াও এক তৃতীয়াংশ রোগী হতাশা ও দুশ্চিন্তায় ভোগেন।
পার্কিনসন রোগ আরো জটিল পর্যায়ে গেলে ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়া সাধারণ হয়ে ওঠে। হতাশা এবং উদ্বেগ ছাড়াও পারকিন্সন রোগ চলাচলে প্রভাব ফেলে এবং মোটর লক্ষণ তৈরি করে। চলাফেরার অসুবিধা,ঘুমের অসুবিধা,কাঁপুনি এবং কঠোরতার মতো তথাকথিত মোটর লক্ষণগুলো ছাড়া স্বাস্থ্য সমস্যা প্রকাশ পেতে পারে। এই উপসর্গ গুলো বৈচিত্র্যময় তবে সম্মিলিতভাবে নন মোটর লক্ষণ হিসাবে পরিচিত। এসব লক্ষণ থাকলে সম্মিলিতভাবে “পার্কিনসনিজম” বা “পার্কিনসোনিয়ান সিন্ড্রোম” বলা হয়।
পার্কিন্সন রোগের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই।প্রাথমিক চিকিৎসা সাধারণভাবে লেভোডোপা (এল-ডিওপিএ) ওষুধ দিয়ে হয়। এ রোগের চিকিৎসায় এল- ডিওপিএ অনুসরণ করা হয় যখন ডোপামিন অ্যাগোনিস্ট লেভোডোপা কম কাজ করে। ডোপামিন অ্যাগ্রোনিস্ট ব্যবহৃত হয় ঘুমের সমস্যা মেজাজ পরিবর্তন ব্যথার চিকিৎসায়। ডোপামিন অ্যাগ্রোনিস্ট পারকিন্সন রোগের এক প্রকার ঔষধ। ডোপামিন হচ্ছে শরীর ও মস্তিষ্কের এমন একটি হরমোন ও নিউরোট্রান্সমিটার যা শরীর ও মস্তিষ্কে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি টমেটোতে জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে এ রোগের ওষুধ তৈরির গবেষণা চলছে।
ডোপামিন ঘাটতির কারণে মধ্য মস্তিষ্কের সাব্সটেনশিয়াল (সারগর্ভ) নায়াগ্রা অঞ্চলে কোষের মৃত্যু ঘটতে পারে। তাই সেই সময়ে পেশীসমূহ গতিবিধি নির্ণয়ের জন্যে মাইক্রো ইলেক্ট্রোড স্থাপনের শল্য চিকিৎসা করা যেতে পারে। ঘুমের ব্যাঘাত এবং আবেগজনিত সমস্যার মতো হাঁটা চলাফেরা সম্পর্কিত লক্ষণ অনুসারে চিকিৎসার প্রমাণ খুব দুর্বল।
পার্কিনসন রোগের স্বীকৃত উপসর্গ গুলো হলো চলাফেরা মোটর সম্পর্কিত। মোটরবিহীন উপসর্গের মধ্যে নিউরোসাইকিয়াট্রিক সমস্যা, ঘুমের সমস্যা অন্তর্ভুক্ত।
এই ননমোটর কিছু উপসর্গ নির্ণয়ের সময় উপস্থিত চারটি উপসর্গকে মূল উপসর্গ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কাঁপুনি, ধীরগতির চলাফেরা(ব্র্যাডিকিনিসিয়া), অনমনীয়তা এবং ভৌত অস্থিরতা।
পার্কিন্সন রোগকে মাঝেমাঝে বিজ্ঞানীরা ইডিওপ্যাথিক পার্কিন্সন রোগ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। পার্কিন্সন রোগটাকেও অ্যালঝেইমার্স রোগের মত স্মৃতিভ্রম বলা হলেও এ রোগের মূল উপসর্গ অ্যালঝেইমারের সাথে সম্পর্কিত নয়। এ রোগের কারণ কিছুটা ধোঁয়াশায় ঘেরা।
এটা সাধারণভাবে জিনগত ত্রুটি বিবেচনা করা হলেও বিশেষ কারণ এখনও পাওয়া যায়নি। এর কারণ ও উৎস অজানা থাকলেও এটা জিনতত্ত্ব বিষয়ক রোগ কিংবা পরিবেশগত কারণে সৃষ্ট রোগ বলে বিবেচনা করা হয়।
তথ্যসূত্র: Parkinson’s Disease
An informative writing indeed. Personally i just heard about this disease but did not search for details. This writings helped me now and i am afraid of myself as well !
But why? বৃদ্ধ বয়সের অাগে হবার চাণ্স কম!
পার্কিন্সন বা পার্কিন্সনিজমের উপর চমৎকার তথ্যমূলক লেখা। কিছু প্রশ্ন রয়ে গেলো। যেমন অ্যাগোনিস্ট কি? মোটর বা নন-মোটর লক্ষণ কি? বিজ্ঞান ব্লগে স্বাগতম!
স্যার,তিনটি শব্দই ব্যাখা করা উচিৎ ছিল। কিন্তু আমি বুঝিনি কিভাবে add করবো। সামনের লেখা গুলোতে ভালভাবে ব্যাখ্যা করবো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার।