ড্যান ব্রাউনের দ্যা ভিঞ্চি কোড-এর কল্যাণে আমরা প্রায় সবাই গোল্ডেন রেশিও সম্বন্ধে জেনে গেছি। অনেক অনেক জায়গাতে এই গোল্ডেন রেশিও ব্যাবহার করা হয়, একে তো সৌন্দর্যের গাণিতিক মাপকাঠিও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু গোল্ডেন রেশিওর মত সিলভার রেশিও সম্বন্ধে কি আমরা জানি? কিংবা এই গোল্ডেন রেশিও আর সিলভার রেশিও পরিবার মেটালিক রেশিও? কিভাবে বের করা যায় এই রেশিও। আজকে আমরা সাবলীল ভাবে এই ‘কিভাবে’ বের করে ব্যাপারটা জানার চেষ্টা করব। আবার এটাও জানার চেষ্টা করব এই মেটালিক রেশিওর সাথে গোল্ডেন রেশিও আর সিলভার রেশিওর সম্পর্কটাই বা কী?
গোল্ডেন রেশিও
গোল্ডেন রেশিও নিয়ে লিখতে হলে গ্রীক গণিতবিদ ইউক্লিডের সংজ্ঞায়নটাই আগে বলে নিতে হবে। ইউক্লিড বলেছেন,
একটা লম্বা ‘লাইন’ (সরলরেখা বা লাঠি যা ইচ্ছা কল্পনা করতে পারেন) কে দুটো অংশে ভাগ করতে হবে। এই বিভাজনটি হবে অসম। অর্থাৎ এর একটি অংশ হবে অপর অংশের তুলনায় বড়। এখন বড় অংশ আর ছোট অংশটির অনুপাত , পুরো অংশ আর বড় অংশের অনুপাতের সমান হয়। আর এই অনুপাতটাই হল গোল্ডেন রেশিও।
গোল্ডেন রেশিওকে গ্রীক বর্ণ $\Phi$ (ফাই) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
যা হোক, পুরো ব্যাপারটা চিত্রায়নে বোঝা যাক।
উপরে একটা লাইন দেখতে পাচ্ছি আমরা। এই লাইনটাকে $A$ আর $B$ দুটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। স্পষ্টত দৃশ্যমান $A$ অংশটি $B$ অংশের চাইতে বড়। এখন ইউক্লিডের বর্ণনা অনুসারে আমরা যদি গাণিতিকভাবে দেখতে যাই তাহলে-
$\Phi = \frac{A}{B} = \frac{A+B}{A}$
বা, $\Phi= \frac{A}{B} = 1 + \frac{B}{A}$
বা, $\Phi= 1 + \frac{1}{\Phi}$ [ $\frac{A}{B}= \Phi$ হলে $\frac{B}{A}= \frac{1}{ \Phi}$ ]
সমীকরণটিকে $\Phi$ দ্বারা গুণ করলে-
$\Phi^2 = 1+ \Phi$
দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধান করলে দাঁড়ায়-
$\Phi = \frac{1 \pm \sqrt 5 }{2}$
যেহেতু আমরা পজিটিভ দৈর্ঘ্য নিয়ে কথা বলছি, ঋণাত্মক মানটুকু বাদ দিলে পাই-
$\Phi = \frac{1 + \sqrt 5 }{2} = 1.618033 \ldots \ldots$ (এটাই গোল্ডেন রেশিও)
সিলভার রেশিও
গোল্ডেন রেশিও আমাদের কাছে বেশ পরিচিত হলেও গণিতের আরেকটি অমিত সুন্দর অনুপাত সিল্ভার রেশিও। আজকে যেহেতু আমরা মেটালিক রেশিও নিয়ে কথা বলব, তাই মেটালিক রেশিও পরিবারের সদস্য সিল্ভার রেশিও কোথায় ব্যাবহার করা হয় তার চাইতে এটা কি আর কিভাবে পাওয়া যায় সেদিকেই আমাদের মনোযোগ বেশি থাকবে।
সিল্ভার রেশিও নিয়ে আলোচনা করতে হলেও আমাদের আবারও সেই ‘লাইন’ চিন্তা করতে হবে। কিন্তু, গোল্ডেন রেশিওর মত এবার আমরা আর লাইনটাকে দুইভাগে না, বরং তিনভাগে ভাগ করব। এই তিন ভাগের দুটি ভাগ হবে বড় অংশ যারা দৈর্ঘ্যে হবে সমান আর বাকি ভাগটি হবে ছোট অংশ। এখন এই লাইনটার পুরো অংশ আর বড় অংশটির অনুপাত আর যেকোন একটি বড় অংশ আর ছোট অংশের অনুপাত হবে সমান। আর এই অনুপাতটিই হল সিল্ভার রেশিও। সিলভার রেশিওকে প্রকাশ করতে বেছে নেওয়া হয় গ্রীক বর্ণমালার $\sigma$ (সিগমা) বর্ণটিকে।
যা হোক, সিলভার রেশিও বোঝার শুরুতে আমরা আবারও চিত্রায়নে ফিরে যাব –
আবারও উপরে একটি লাইন দেখতে পাচ্ছি আমরা। বর্ণনামতে এটাকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে যার মধ্যে $A$ আর $A$ হল সমান দুটি বড় অংশ আর $B$ হল ছোট আর তিনভাগে ভাগ করার তৃতীয় অংশ।
উপরে বর্ণিত সংজ্ঞাটাকে যদি আমরা এবার গাণিতিকভাবে দেখি তাহলে-
$\sigma = \frac{A}{B} = \frac{2A +B}{A}$ [ পুরো লাইনটার দৈর্ঘ্য $A+A+B= 2A+B$ ]
বা, $\sigma = \frac{A}{B} = 2 + \frac{1}{\sigma}$
বা, $\sigma = 2 + \frac{1}{\sigma}$ [ $\frac{A}{B}=\sigma$ হলে $\frac{B}{A}= \frac{1}{\sigma}$ ]
এবার এখান থেকে যে দ্বিঘাত সমীকরণ পাওয়া যায়-
$\sigma^2= 2\sigma + 1$
দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধান করে ধ্বনাত্মক মান নিয়ে-
$\sigma = \frac{2+\sqrt 8 }{2} = \frac{2+2\sqrt 2}{2} = 1+\sqrt 2 = 2.414213 \ldots \ldots$ (এটাই সিলভার রেশিও)
আলোচনার এই পর্যায়ে আমরা গোল্ডেন রেশিও আর সিলভার রেশিও কিভাবে পাওয়া যায় সেটা জেনে গেলাম। এটাও জানলাম গোল্ডেন রেশিও পাওয়ার ক্ষেত্রে লাইনকে দুইভাগে ভাগ করতে হলেও সিলভার রেশিওর ক্ষেত্রে সেটা হতে হবে তিনভাগে। কিন্তু মেটালিক নাম্বার পরিবারের মূল সদস্য মেটালিক রেশিওর আলোচনা এখনও বাকি আছে। এবার আমরা সেটাই জেনে নেব-
মেটালিক রেশিও
পুরো আলোচনাটাকে আমরা একটু সাধারণভাবে দেখতে চেষ্টা করব এবার।
ধরা যাক এবার একটি লাইনকে $n+1$ অংশে ভাগ করা হল। এই ভাগের $n$ অংশের দৈর্ঘ্য সমান আর তা হল $A$ আর ছোট অংশ হল $B$ । যেমনটা আমরা সিলভার রেশিওর ক্ষেত্রে বলেছিলাম যে তিনটি $(n+1)$ অংশে ভাগ করে বড় দুটি $(n)$ অংশ $A$ আর ছোট অংশটি $B$।
আগের রেশিওর ক্ষেত্রে আমরা যেমনটা বলেছিলাম এখানেও সেটা প্রয়োগ করব এবার। অর্থাৎ বড় অংশটির দৈর্ঘ্য আর ছোট অংশটির দৈর্ঘ্য-এর অনুপাত এবং পুরো অংশের দৈর্ঘ্য আর বড় অংশের দৈর্ঘ্যের অনুপাত –
$\frac{A}{B} = \frac{nA+B}{A}$
[ পুরো লাইনের দৈর্ঘ্য $n$ টা বড় অংশের দৈর্ঘ্য $nA$ আর একমাত্র ছোট অংশের দৈর্ঘ্য $B$ এর যোগফলের সমান= $nA+B$ ]
এই অনুপাতটাকে যদি আমরা গ্রীক বর্ণ $\lambda$ (ল্যামডা) দিয়ে সূচিত করি-
$\lambda= \frac{A}{B} = \frac{nA+B}{A}$
বা, $\lambda = \frac{A}{B} = n + \frac{B}{A}$
বা, $\lambda = n + \frac{1}{\lambda}$ [ $\frac{A}{B}= \lambda$ হলে $\frac{B}{A}= \frac{1}{\lambda}$ ]
বা, $\lambda^2 = n\lambda + 1$
দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধানে ধ্বনাত্মক মান চিন্তা করে-
$\lambda= \frac{n+\sqrt{(n^2+4)}}{2}$
এই সমীকরণে $n>1$ এর জন্যে $\lambda$ কে বলা হয় ‘মেটালিক রেশিও’। কেউ কেউ অবশ্য এটাকে ‘মেটালিক মূল’ও বলে থাকেন। আবার একটু খেয়াল করলে দেখবেন, এই সমীকরণেই $n=1$ এর জন্যে $\lambda$ এর যে মান পাওয়া যায় সেটাই গোল্ডেন রেশিও। আবার $n=2$ এর জন্যে $\lambda$ এর যে মান পাওয়া যায় সেটাই সিলভার রেশিও।
আলোচনার মাঝপথেই বলেছিলাম, গোল্ডেন রেশিও আর সিলভার রেশিও মেটালিক রেশিও পরিবারের সদস্য। এবার মিলল তো?
Leave a Reply