নিকোটিন এবং মারিজুয়ানা যেভাবে মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে


লিখেছেন

লেখাটি , , বিভাগে প্রকাশিত

একটি প্রচলিত বাক্য আমরা সচরাচর দেখে থাকি।  “ধূমপানে ক্যান্সার হয়, এমনকি মৃত্যু ও হতে পারে।” এই সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বার্তা যত্রতত্র দেখেছেন হয়তো। মুভির শুরুতে, বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপনে এমনকি খোদ সিগারেটের প্যাকেটে লিখা থাকে।  এইসব দেখেও ,না দেখার ভান করে মানুষ দেদারসে বিড়ি ফুঁকছে,  সিগারেটের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন রাখছে নিজেকে। ধূমপান বা মারিজুয়ানার প্রভাব ব্যক্তির ক্ষেত্রে ,মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে ভয়ংকর। আসুন, সেসব নিয়ে ধাপে ধাপে আলোচনা হয়ে যাক।

কেন মানুষ নিকোটিনে আসক্ত হয়?

একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের সিগারেটে আসক্ত হবার পেছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করে। সব তো ব্যাখ্যা করা বা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। গবেষকরা প্রধানত যেসব কারণ চিহ্নিত করেছেন তা নিয়ে আলোকপাত করা যায়। ডিপ্রেশান ( depression) নিকোটিনে আসক্ত হবার অন্যতম কারণ। হতাশা, মানসিক চাপ, তীব্র দুঃখ, ব্যক্তিগত জীবনে ব্যর্থতা ক্রমশ একজন সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করে তোলে। ডিপ্রেশান এক ভয়ংকর ব্যাধি। যে মানুষ একবার ডিপ্রেশানের কালো অন্ধকার জগত দেখেছে, তার পক্ষে সেখান থেকে বের হওয়া মুশকিল। একবার পেয়ে বসলে ব্যক্তির ভূত-ভবিষ্যৎ সব ধূসর হয়ে যায়। ডিপ্রেশানের কালো থাবায় নিমিষে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যায় বিবেকবান মানুষ। আর এই হিতাহিতশূন্য অবস্থায় হাতছানি দেয় মাদক। সিগারেট আজকাল সহজলভ্য হওয়ায় ব্যক্তি হাতে তুলে নেয় সিগারেটের মরণব্যাধির ধুম্রশলাকা। চুমুকে চুমুকে নিঃশেষ করে দিতে চায় প্রাণ বায়ু। তাদের কাছে মনে হয় ভেতরের আগুনের কাছে সামান্য শলাকার আগুন নস্যি ব্যাপার। কেউবা নাম দেয় দুঃখযান, কেউবা নাম দেয় গহীন নিকষ অন্ধকারের একমাত্র মশাল। বস্তুত, সিগারেটের নিকোটিন হতাশা, ক্ষোভ,রাগ প্রশমনে সহযোগিতা করে। ঘাবড়ে যাবেন না! আমি সাফাই গাইছি না মোটেও এর পক্ষে। গবেষকরা যে যুক্তি দিয়েছেন তার নিরিখেই বলা এসব। 

যখন কেউ ধূমপান করে, নিকোটিন মাত্র দশ সেকেন্ডে তার মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। আর এই নিকোটিন মস্তিষ্কের পুরস্কার অংশকে উত্তেজিত করে ডোপামিন (dopamine) হরমোন ক্ষরণে ভূমিকা রাখে। যার ফলে ব্যক্তি নিমিষে আনন্দ অনুভব করে। প্রথমদিকে,  নিকোটিন ব্যক্তির মানসিকতা এবং মনোযোগে প্রভাব ফেলে। পেশীদের শান্ত করে দেয়,  রাগ-হতাশা কমায়। একই সাথে ক্ষুধার আগ্রহকে কমিয়ে দেয়। এভাবে নিয়মিত নিকোটিনের প্রভাবে ব্যক্তির মস্তিষ্ক পরিবর্তিত হতে থাকে। ব্যক্তির অভ্যাসে পরিবর্তন ঘটায়। যা ধীরে ধীরে উইথড্রয়াল সিম্পটোমের (withdrawal symptom) দিকে প্ররোচিত করতে থাকে। যা প্রকট হয়ে উঠে যখন ব্যক্তি নিকোটিনের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে চায়। মানে সিগারেট ছাড়তে চায়। তাই ব্যাপারটা তার কাছে দুঃসাধ্য হয়ে উঠে। অনেকে সফল হয় কাটিয়ে উঠার, অনেকে পড়ে থাকে ধোঁয়ার জগতে হার মেনে।

নিকোটিন যেভাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে

আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন প্রকারের নিউরোট্রান্সমিটার (neurotransmitter) থাকে। ধূমপানে বিদ্যমান থাকা নিকোটিন ,মস্তিষ্কে এক প্রকার নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে। আগেই বলেছি, নিকোটিন সংকেত পাঠিয়ে ডোপামিন হরমোন ক্ষরণ করে , যা ভাল অনুভূতির উদ্রেক করে।  সময়ের সাথে সাথে যখন ধূমপানের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন মস্তিষ্ক অত্যাধিক হরমোন ক্ষরণ ঠেকাতে এসিটাইলকোলিন (acetylcholine) গ্রাহকের (receptor) সংখ্যা কমিয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে মস্তিষ্ক নিকোটিনে সহনশীল হয়ে উঠে। অধিক পরিমাণে নিকোটিনে আকাঙ্ক্ষা দেখায়। ব্যক্তি আসক্ত হয়ে পড়ে  ধূমপানে। এই ক্রমাগত অভ্যাস যখনি সে বর্জন করতে চায় তখন উইথড্রয়াল সিম্পটোম জোরদার হয়ে উঠে। এই সিম্পটোমের ফলে কিছু মারাত্নক লক্ষণ দেখা দেয়। এই যেমন ধরুন- অবসাদ, বমির ভাব, ক্ষুধায় অনীহা, বিরক্তি অনুভব করা,কাজে অমনোযোগ, ঘুমের সমস্যা, ঘাম বেড়ে যাওয়া, পেশীতে ব্যাথা ইত্যাদি। এইসব লক্ষণ ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হয়ে থাকে।তবে প্রায় সবক্ষেত্রেই একই কান্ড দেখা যায়। এইসব থেকে বাঁচতে ব্যক্তি ফের সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়ে।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং নারীর মস্তিষ্কের আয়তন যথাক্রমে ১২৬০ ঘন সে.মি এবং ১১৩০ ঘন সে.মি।  সাম্প্রতিক (২০১৭ সালের)  এক গবেষণায় দেখা গেছে, যত বেশি সময় ধরে কেউ ধূমপান করে তত দ্রুত তার মস্তিষ্কের আয়তন কমতে থাকে। এর কারণ হচ্ছে মস্তিষ্কের কোষ এবং টিস্যুর সংকোচন বা শুকিয়ে যাওয়া। ধূমপান মস্তিষ্কের সাব-কর্টিকাল (sub-cortical) অংশে প্রভাব ফেলে। এই অংশ সাধারণত হরমোন উৎপাদন, আনন্দ সঞ্চার, অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ এবং স্মৃতিতে ভূমিকা রাখে। এইজন্যে ধূমপায়ীরা বেশি বয়সে উপনীত হলে ভুলে যাবার প্রবণতা বা ডিমেনসিয়া (Dementia) রোগে ভুগে থাকে। আর এই পুরো বিষয়টাই যৌথ প্রযোজনায় ব্যক্তির সামগ্রিক চিন্তাভাবনা, স্মৃতি সংরক্ষণ এবং আচরণে প্রভাব ফেলে।

ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব

মানুষের বয়স বাড়লে স্নায়ুবিক সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে তা বেশ আগেই দেখা দেয়।  বেশ কিছু স্নায়ুবিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেঃ-

  • বিভ্রম
  • আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
  • উদ্বিগ্নতা
  • হ্যালুসিনেশান
  • হতাশা
  • ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন 

ধূমপানের কারণে স্ট্রোক হবার প্রবণতা বেড়ে যায়। তামাকে প্রায় ৭০০০ প্রকারের রাসায়নিক আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ- ফরমালডিহাইড, সায়নাইড, আর্সেনিক, কার্বন- মনোক্সাইড অন্যতম। ধূমপানের ফলে এই ক্ষতিকর রাসায়নিক ফুসফুস থেকে রক্তে পৌঁছে। রক্তের অণুচক্রিকাকে (platelet) একসাথে লেগে থাকার বা যুক্ত হবার ইন্ধন দেয়। প্ররোচনার তোড়জোড়ে অণুচক্রিকা জমাট হতে শুরু করে। একটু ভেঙ্গে বললে, সাধারণত অণুচক্রিকা  জমাট বাঁধে একমাত্র কোথাও কেটে গেলে রক্তক্ষরণের সময়ে। রক্তপড়া বন্ধ করতে তারা সদলবলে হাজির হয়ে সীমানা প্রাচীর তুলে দেয়। এখন ধরুন, একটা ধমনী পথ যা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে- সেখানে যদি অণুচক্রিকা জমাটবাঁধতে শুরু করে তখন কি হবে? রক্ত চলাচল বাঁধাগ্রস্থ হবে, ধমনীপথ সংকুচিত হয়ে যাবে। ফলশ্রুতিতে স্ট্রোক হয় ব্যক্তির।

 অবাক হতে অনেক দেরি মশাই। ধূমপানের ফলে কিন্তু মস্তিষ্কের ক্যান্সার হয়ে থাকে। সিগারেটের যেসব রাসায়নিক এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে তা হলোঃ-

  • টার (Tar) – যখন তামাককে ঠান্ডা এবং ঘনীভূত করা হয় তখন এই বাদামী রঙের বস্তুর উদ্ভব হয়। যা ক্যান্সার ঘটায়।
  • নিকোটিন (Nicotine) – তামাকের ক্ষতিকর নেশাজাতীয় বস্তু।
  • আর্সেনিক (Arsenic) – তামাক চাষাবাদের সময়ে যে সমস্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হয় তাতে কীটনাশক থাকে। যা পরোক্ষভাবে সিগারেটে চলে আসে।
  • এসিটোন (Acetone) – এটা সাধারণত নেইল পলিশ রিমুভার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভাবুন তো, এই জিনিষ খাচ্ছেন আর তা কিরকম প্রভাব ফেলতে পারে।

এছাড়াও আরো কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক ক্যান্সারে মহা ভূমিকা রাখে তা হলোঃ- মিথাইলএমিন, পোলোনিয়াম, কার্বন-মনোক্সাইড, অ্যামোনিয়াম, টলুইন, মিথানল ইত্যাদি। এইসব ক্ষতিকর দিক থেকে অনেকে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হয়তো। ভাবছেন সমাধান কি! জেনে রাখুন, দুনিয়ার সকল সমস্যার সমাধান আছে। একটু খুঁজে নিতে হয়, এই যা!

ধূমপান থেকে মুক্তির উপায়

ধূমপান ছাড়া খানিকটা দুঃসাধ্য হলেও অসাধ্য কিছু নয়। এটা সম্ভব। কিছু পরীক্ষিত উপায় আছে , যা ধূমপান ছাড়তে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যেমন-

  • ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। যেহেতু কিছু উপসর্গ দেখা দেয় ছাড়ার সময়ে ,তাই ডাক্তার সেগুলো ঠিক করতে ওষুধ দিয়ে ভালো করতে পারেন। 
  • নিকোটিন প্রতিস্থাপন থেরাপি। কিছু কিছু দেশ এই উপায় বের করেছে। তারা নিকোটিন চুইংগাম, চকোলেট উদ্ভাবন করেছে।  নিকোটিন ইনহেলার, নিকোটিন ন্যাসাল স্প্রে বের হয়েছে- যা মস্তিষ্কে নিকোটিনের প্রভাবকে বন্ধ করে দেয়। 
  • মেডিটেশন – এই উপায়ে পেশী নির্মল উপায়ে শান্ত হয়। তা নিকোটিনের প্রয়োজনকে অগ্রাহ্য করে দেয়। 
  • খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন। নিয়মিত ব্যায়াম,পরিমিত ঘুম, শখের কাজে ব্যস্ত থাকা – এইসবের মাধ্যমে ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়া সহজতর হয়।

ধূমপান ছাড়ার মাত্র ২০ মিনিটের মাঝে আপনার হৃদ স্পন্দন গতি কমে যাবে।  মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যে দেহে কার্বন-মনোক্সাইডের পরিমাণ কমতে শুরু করবে।  মাত্র ৩ মাসের মাঝে, ফুসফুস আগের চেয়ে ভাল কাজ করবে এবং দেহে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যাবে। মাত্র ১ বছরের মধ্যে আপনার হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যাবে প্রায় ৫০%। আর ৫-১৫ বছরের মধ্যে, একজন অ-ধূমপায়ীর মতো আপনার স্ট্রোক হবার ঝুঁকি কমে যাবে।

এইতো গেল সিগারেট, নিকোটিন নিয়ে ইতিবৃত্তের সমাচার, এবার একটু নড়েচড়ে বসুন। আলোচনা করতে যাচ্ছি, মারিজুয়ানা নিয়ে। মারিজুয়ানা বললে অনেকে হয়তো নাও চিনতে পারেন। খাঁটি দেশীয় ভাষায় যদি বলি, তা হলো গাঁজা। নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য হিসেবে এই গাঁজার চাষ আইনত দন্ডনীয়। তবুও কিন্তু থেমে নেই এর প্রসার। মারিজুয়ানার সহজলভ্যতা নেই ঠিকই কিন্ত ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশের আনাচে-কানাচে। 

মস্তিষ্কে মারিজুয়ানার প্রভাব

সাধারণত ফ্যান্টাসি বা অন্যান্য কারণে মানুষ মারিজুয়ানায় আসক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালের তরুণ-তরুণীরা খুব সহজে এতে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এছাড়া ও যেকোন বয়সে মানুষ এতে আসক্ত হয়ে থাকে। যারা মারিজুয়ানা সেবন করে থাকে তাদের অভিমত চমকপ্রদ। শুনতে বিদঘুটে মনে হলেও তারা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী এসব ধারণায়। অনেকের মতে, মারিজুয়ানা সেবনে উচ্চমাত্রার অনুভূতির (high feeling) সঞ্চার হয়, আবার অনেকের ধারণা সামাজিক বন্ধন বা যোগাযোগ অটুট রাখতে এটা ভূমিকা রাখে। কেউ কেউ বলে থাকে তারা চিকিৎসার অংশ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। কেউ বলে মন মেজাজ ঠিক রাখতে এটা কার্যকরী। হাসি পাচ্ছে নিশ্চয়ই। এক পশলা হাসির ঝড় বয়ে যাক না হয় এই উছিলায় !

এবার আসি কাজের কথায়। বিজ্ঞান কি বলে মারিজুয়ানা নিয়ে।  যারা মারিজুয়ানার আসক্ত, তাদের অভিমতের সাথে বিজ্ঞান আদতে একমত নয়। গবেষকরা বলেন, মাত্র কিছু সময়ের জন্য তারা এইসব অনুভূতির জোয়ারে ভেসে থাকেন। কিন্তু নিয়মিত এর ব্যবহারের ফল মারাত্মক। দীর্ঘদিন মারিজুয়ানা বা গাঁজা সেবনের ফলে তরুণ-তরুণীদের বা যুবক যুবতীদের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মারিজুয়ানা বিবেক বোধ বুদ্ধিকে কব্জায় নিয়ে ফেলে। ব্যক্তি এক লহমায় অন্য জগতে স্থানান্তরিত হয়ে বাস্তব সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকে। কিছু মানুষ তো বোধ হারিয়ে বিপজ্জনক কাজে যুক্ত হয়ে যায়। এই যেমন ধরুন- রাস্তায় ফুল স্পিডে গাড়ি চালানো।

গবেষকরা মানসিক এই স্থিতির ব্যাখ্যা খুঁজতে গবেষণা চালান। তারা ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (MRI) যন্ত্রে বয়ঃসন্ধিকালীন এবং যুবকদের মস্তিষ্কে এর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন। দেখা যায় যে, মারিজুয়ানার প্রভাবে মস্তিষ্কের দুটো অংশ পরিবর্তিত হয়ে যায়।

প্রথম অংশ- যা এন্ডোকান্নাবিনোয়েড প্রক্রিয়া (endocannabinoid system) নামে পরিচিত। এই অংশ মূলত মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ রাখতে ভূমিকা রাখে। মারিজুয়ানার বিধ্বংসী থাবায় তা বিধ্বস্ত হয় অবলীলায়।

দ্বিতীয় অংশ- প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স (prefrontal cortex) নামে পরিচিত। এই অংশ মূলত নির্দেশ দাতা হিসেবে কাজ করে- সিদ্ধান্ত গ্রহণে, সমস্যা সমাধানে, আচরণ নিয়ন্ত্রণে। মারিজুয়ানার করাল ছোঁয়ায় এই অংশ ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে ব্যক্তি হিতাহিত বিচারে পিছিয়ে যায়।

গবেষকরা বলেন যে, এন্ডোকান্নাবিনোয়েড প্রক্রিয়া এবং প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স উভয় অংশ মধ্য বয়স মানে ২০ বছর অব্দি পরিবর্তিত হতে থাকে। তাই মারিজুয়ানার বা অন্যান্য নেশায় সহজে সংবেদনশীল আচরণ করে থাকে। মারিজুয়ানার প্রভাবে শিখন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটে থাকে। স্মৃতি শক্তি প্রভাবিত হয়ে থাকে। মারিজুয়ানার নিয়মিত ব্যবহার মস্তিষ্কের আকার-আকৃতি এবং কর্মকান্ডে নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। ব্যক্তি উদাসীন মনোভাব পোষণ করতে শুরু করে। আগ্রহ হারিয়ে ফেলে যেকোন কাজে। মাঝেমাঝে স্মৃতি বিভ্রম ও ঘটে থাকে।

চিত্র- মারিজুয়ানার প্রভাবে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবার সামগ্রিক অবস্থা।

অনেকে ভাবছেন এ থেকে তবে কি পরিত্রাণের উপায় নেই। অবশ্যই আছে।

গবেষকরা বলেন, যদি কেউ টানা তিন মাস মারিজুয়ানা সেবন বন্ধ রাখে, তবে তার পূর্বের স্বাভাবিক মনোযোগ,স্মৃতি, আগ্রহ ফিরে আসে। 

জীবন অদ্ভুত সুন্দর। এর মোড়ে মোড়ে চমক অপেক্ষা করে আছে। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত অনন্য সৃষ্টিকে বিশুদ্ধ চিত্তে উপভোগ করা উচিত। মাঝখান থেকে ধূমপান,নিকোটিন আসক্তিতে, মারিজুয়ানায় ডুবে গিয়ে বিভ্রমে জগত দেখার কোন অর্থ নেই। শরীর নিজের বলে , যাচ্ছে-তাই গ্রহণে তার সর্বনাশ করে শুধু বিপদই আসে। সমস্যা আসবেই। জীবনে ডিপ্রশান, হতাশা, ব্যর্থতা, বিতৃষ্ণা আসা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই বলে সমাধান না খুঁজে, ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাওয়া বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। জীবনকে তার মতো করে চলতে দিয়ে,  দৃঢ় চিত্তে এগিয়ে যাওয়ার মাঝেই স্বার্থকতা। 

তথ্যসুত্র-

১। Cannabis and the Learning Brain

২। Does Smoking Really Affect Your Brain?

৩। What You Need to Know About Smoking and Your Brain

৪। What Is Withdrawal?

লেখাটি 1,092-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Response

  1. Nice Article Brother ♥️♥️,

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading