জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে বাংলায় লেখালেখির পরিমাণ বেশ অল্প। যেগুলো আছে অনেকক্ষেত্রেই আপডেটেড না, পুরোনো তথ্যে ভরপুর। বইটা এবছর প্রকাশিত হয়েছে তারা, গ্রহাণু, উল্কা, ছায়াপথ ইত্যাদি নিয়ে আগ্রহ থাকলে বইটা অবশ্যই পড়া উচিত।
প্রথম অধ্যায়টা শুরু হয়েছে “জ্যোতিবিহীন জ্যোতিষশাস্ত্র” শিরোনামে। জ্যোতির্বিজ্ঞান (astronomy) , জ্যোতিষশাস্ত্র (astrology) দুইটা খুবই কাছাকাছি শব্দ কিন্তু অর্থের মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক।

• জ্যোতির্বিজ্ঞান ফিজিক্স কেমিস্ট্রির মতোই ন্যাচারাল সায়েন্সের একটা ফিল্ড যা গ্রহ, গ্রহাণু, নক্ষত্র, নেবুলা ছায়াপথ, ইউনিভার্স ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে। এর বিভিন্ন শাখাও রয়েছে Astrophysics, Astrobiology, Cosmology ইত্যাদি।
• জ্যোতিষশাস্ত্র পুরোপুরি ভাঁওতাবাজির ফ্যাক্টরি। রাশিফল, হাতের রেখা, আকাশে তারার অবস্থান দিয়ে ভাগ্যনির্ধারণ করে। এগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
অনেককেই এটা বোঝাতে বোঝাতে বেশ ক্লান্ত। যাইহোক প্রাচীনকালে তখন জ্যোতির্বিজ্ঞানের অবস্থা এখনকার মতো ছিল না বলতে গেলে ডেভেলপই করেনি। জ্যোতিষশাস্ত্রের রাজত্ব চলতো তখন মানুষ তারা দেখতো ভাগ্য জানার জন্য , অনেকগুলো তারা জুড়ে দিয়ে বিভিন্ন প্রাণির আকৃতির কল্পনা করত আবার নাবিকরা তারা দেখে সমুদ্রে নিজেদের অবস্থান নির্ণয় করত। ধীরে ধীরে নতুন নতুন আবিষ্কারের সাথে সাথে জ্যোতিষশাস্ত্রের ভুলভ্রান্তি ধরা পড়তে থাকে। জ্যোতির্বিজ্ঞান এগিয়ে চলে আপন গতিতে একসময় পৃথকও হয়ে যায় । লেখক এই অধ্যায়ে প্রাথমিক দিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ডেভেলপমেন্ট শুরুর জন্য জ্যোতিষশাস্ত্রের অবদানের কথা স্বীকার করেই এগিয়েছেন।
বিভিন্ন সভ্যতার জ্ঞানের আদান প্রদানের মাধ্যমে সভ্যতা এগিয়ে যায়৷ মেসোপোটেমিয়া, আসিরিয়, মিশরীয়, গ্রিক, ভারতীয়, মুসলিম সভ্যতার অবদান সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করেছেন লেখক।
একটি অধ্যায় বরাদ্দ রয়েছে জ্যোর্তিবিদ্যার ভ্রান্ত ধারণাগুলো নিয়ে যেমনঃ আলোকবর্ষ সময়ের হিসাব নয় দুরত্বের হিসাব, শুকতারা কোনো তারা নয় বরং শুক্রগ্রহ, চীনের মহাপ্রাচীর চাঁদ থেকে দেখা যায় এটা ভুল, শুধুমাত্র শনিগ্রহ নয় বৃহস্পতি,ইউরেনাস, নেপচুনেরও বলয় বা রিং আছে ইত্যাদিসহ আরও কমন আনকমন ৪০টা ভ্রান্তধারণার খন্ডন।
এছাড়া রয়েছে কেসলার সিনড্রোম, মিরা, ল্যাগ্র্যাঞ্জ পয়েন্ট, জেমিনিডস, পার্সেইড, গামারশ্মি নিয়ে আলোচনা। খুব ছোট হলেও বাংলাদেশী পদার্থবিদ জামাল নজরুল ইসলামকে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
এটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে। আগ্রহী পাঠকদের কেউ যদি জ্যোর্তিবিদ্যা শিখতে চায় তার জন্য ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বইয়ের লিস্ট তাও আবার ভাগে ভাগে যেমনঃ জ্যোর্তিবিদ্যা, জ্যোর্তিঃপদার্থবিদ্যা, পর্যবেক্ষণ জোর্তিবিদ্যা, জ্যোর্তিবিদ্যার ইতিহাস, গাণিতিক জ্যোর্তিবিদ্যা, সৃষ্টিতত্ত্ব, বায়োগ্রাফি। আপনার ইচ্ছামতো পড়া শুরু করে দিতে পারেন। বাংলা, ইংরেজি, অনুবাদ সব টাইপেরই আছে।
আরও রিসোর্স হিসেবে দেওয়া হয়েছে ডকুমেন্টারি, অ্যাপ, ওয়েবসাইটের ঠিকানা।
লেখার মধ্যে আর্ট আছে। অধ্যায়গুলো শুরু হয়েছে সুন্দর সুন্দর উক্তির মাধ্যমে এবং মধ্যেও রয়েছে বিভিন্ন কবিতা যেগুলো লেখাকে দারুণ করে তুলেছে।
লেখকের এটা প্রথম বই সে হিসেবে বেশ ভালো লিখেছেন। আশাকরি সামনেও লেখালেখি চালিয়ে যাবেন। তবে বইটা পড়তে গিয়ে কিছু সময় মনে হয়েছে ইনফরমেশন বেশি দেওয়া হয়েছে সেটা কমালে হয়তো পাঠক আরও বইয়ের আষ্টেপৃষ্টে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতো এবং বেশি সুখপাঠ্য হতো ।
আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তুলনামূলক কঠিন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো কমানো যেতো। যেমন “পাশ্চাত্য নাম” না বলে “ইংরেজি নাম” বলা, “জ্যোর্তিবৈজ্ঞানিক নাম” না বলে “বৈজ্ঞানিক নাম” ইত্যাদি।
ভিন্নমত থাকতে পারে তবে মনে হয়েছে “Coelum Australe Stelliferum” ” le chevalet et la palette ” “la machine pneumetique” ” le Reticule Romoboide” ইত্যাদি শব্দগুলো ডিটেইলস এ জানার জন্য দেওয়া হয়েছে বুঝতে পারছি কিন্তু এগুলো পড়ার মাঝে প্রচুর ডিসটার্ব করেছে। পাঠকের এগুলো জানা কতটুকু প্রয়োজন সেটাও শিওর না।
শেষকথা, বইটা যতোটা না জ্যোর্তিবিদ্যা শেখার জন্য প্রয়োজন তারচেয়ে বেশি বিগিনার লেভেলদের গাইডলাইনে জন্য। জ্যোর্তিবিদ্যা নিয়ে আগ্রহ রাখলে বইটা অবশ্যই রেকমেন্ডেড। প্রতিটা অধ্যায়ের আকার খুব ছোটও না আবার বড়ও না সেকারণে ধরলে শেষ করতে কোনো প্রবলেম হবে না কিংবা খেই হারিয়ে ফেলবেন না।
লেখকের পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষায় রইলাম। হ্যাপি রিডিং।
Leave a Reply