কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল হলো মহাবিশ্বের এমন একটি এলাকা, যেখানে প্রবল মাধ্যাকর্ষণ বল বিরাজমান। এ বল এতটাই শক্তিশালী যে ওই এলাকা থেকে আলোকরশ্মিও বের হতে পারে না। বিজ্ঞানীদের মতে, বিপুল ভরের কোনো নক্ষত্রের মৃত্যুর পর তা কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়। সময়ের সঙ্গে ক্রমেই বৃদ্ধি পায় কৃষ্ণ গহ্বরের (Black Hole) চেহারা। ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে নিজের গবেষণায় প্রাপ্ত এই তত্ত্বের কথা জানিয়েছিলেন কিংবদন্তী পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী হকিংয়ের একটি পূর্বাভাসকে অবশেষে সঠিক প্রমাণ করল ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। প্রায় অর্ধশতাব্দী পর অবশেষে প্রমাণিত হল হকিংয়ের তত্ত্ব।
২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘লাইগো’ অবজারভেটরিতে ধরা পড়া এক মহাকর্ষীয় তরঙ্গকে বিশ্লেষণ করেন বিজ্ঞানীরা। সেই তত্ত্বকেই পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করলেন ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-র একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী। কয়েকশো কোটি বছর পূর্বে ব্রহ্মাণ্ডের দূরপ্রান্তে দুটি ব্ল্যাক হোলের মধ্যে ভয়ঙ্কর সংঘর্ষের বার্তা ছিল সেই তরঙ্গে। কোনও পুকুরের মাঝখানে ঢিল ফেললে যেমন জলে তরঙ্গের জন্ম হয় আর তা ধীরে ধীরে আরও বড় আকার নিয়ে যেমন পাড়ে পৌঁছয়, ঠিক তেমনই ব্রহ্মাণ্ডের কোথাও কোনও ঘটনা বা দুই মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে সংঘর্ষের ফলেও তৈরি হয় মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। যা কয়েকশো কোটি বছরের পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীতে পৌঁছলে জানা যায় সেই সুদূর অতীতে ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল।
কৃষ্ণগহ্বরের গঠন
আমরা আগেই জেনেছি স্বাভাবিকভাবে কোনো একটি নক্ষত্র চুপসে গেলে কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়। তবে নক্ষত্রগুলোর ভর হয় অনেক। আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র সূর্যের বিস্তৃতি প্রায় $1.3\times10^9$ km এবং এর ভর প্রায় $2\times10^{30}$ kg এর কাছাকাছি। নক্ষত্রগুলোর অস্বাভাবিক ভরের জন্য এদের মধ্যাকর্ষণও অনেক। কেননা আমরা জানি মধ্যাকর্ষনের সাথে ভরের একটি অনন্য সম্পর্ক রয়েছে। কারণঃ
$$F = \frac{G m_1 m_2}{r^2}$$
এটি নিউটনের মধ্যাকর্ষন সূত্র। এখানে $G$ এর মান ধ্রুবক। $G = 6.673 \times 10^{-11}$ যা খুব ছোট। যাই হোক, যখন আপনি $m_1 m_2$ তে সূর্য এবং পৃথিবীর ভর রাখবেন এবং $r$ তাদের মধ্যবর্তী দুরত্ব হবে তখন এদের মধ্যে আকর্ষণ মান হবেঃ $3.76 \times10^{22}$ N। যখন নক্ষত্রের বাইরের তাপমাত্রার চাপে ভেতরের মধ্যাকর্ষন বাড়তে থাকে, তখন সেই বলের কারণে নক্ষত্র চুপসে যেতে শুরু করে। সব ভর একটি বিন্দুতে পতিত হতে শুরু করে। এটি ধীরে ধীরে ছোট এবং অধিক ঘনত্বে আসতে শুরু করে এবং এক সময় সমস্ত ভর একটি ছোট্ট বিন্দুতে ভিড় করে যার নাম সিঙ্গুলারিটি। সব চুপসে পড়া নক্ষত্রই কিন্তু কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়না। কৃষ্ণগহ্বর হবে কিনা তা নির্ভর করে তার ভরের উপর। যাই হোক, কৃষ্ণগহ্বর হতে হলে নক্ষত্রকে বা বস্তুকে একটি নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধে আসতে হবে। নিচে সমীকরণটি দেওয়া হলো যার সাহায্যে আমরা নির্ণয় করতে পারি কৃষ্ণগহ্বর হতে হলে কোনো বস্তু বা নক্ষত্রের কত ব্যাসার্ধে আসা দরকারঃ
$$R=\frac{2GM}{c^2}$$
যেখানে $M$ বস্তু বা নক্ষত্রটির ভর। $G$ মহাকর্ষিয় ধ্রুবক। $c$ আলোর বেগ। এই ব্যাসার্ধ পরিমাপের সূত্রটির মান Schwarzschild radius, পদার্থবিজ্ঞানী Karl Schwarzschild এই সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন ১৯১৬ সালে। তার নাম অনুসারে এর নাম রাখা হয়।
স্টিফেন হকিং এর বিখ্যাত রেইথ লেকচার
হকিং মহাবিশ্ব, কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব এবং এদের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে ‘রেইথ লেকচার’ এ বলেছিলেন যে। যদিও কৃষ্ণগহ্বরের ধারণাটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী থেকেও আশ্চর্যজনক, কিন্তু এটি দৃঢ়ভাবে বৈজ্ঞানিক। নক্ষত্র নিজেদের মহাকর্ষের বলে নিজেরাই সংকুচিত হয় এবং এর ফলে সৃষ্ট বস্তুটির প্রকৃতি কেমন হবে, এই বিষয়টি বৈজ্ঞানিক সমাজ উপলব্ধি করতে অনেক সময় নিয়েছে। ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে আলবার্ট আইনস্টাইন দাবি করেন – যেহেতু পদার্থ একটি নির্দিষ্ট সীমার বাইরে সংকুচিত করা যায় না, তাই নক্ষত্র নিজ মহাকর্ষ বলে সংকুচিত হতে পারে না। বহু বিজ্ঞানী তাঁর এই কথায় একমত হয়েছিলেন। তবে একজন আমেরিকান বিজ্ঞানী সেই দলে ছিলেন না এবং তাকেই বলা যায় ব্ল্যাকহোলের গল্পের পথিকৃৎ । একটি সাধারণ নক্ষত্র তার সহস্র বছরের জীবনকালে তাপীয় বহির্মুখী চাপের সহায়তায় নিজের মহাকর্ষের বিপরীতে নিজেকে বজায় রাখে। এই চাপ উৎপন্ন হয় হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে রূপান্তর করার পারমাণবিক প্রক্রিয়ায়।
ধীরে ধীরে নক্ষত্রের এই জ্বালানী শেষ হয়ে যায়। তারপর সে সংকুচিত হয়। কিছু ক্ষেত্রে নক্ষত্রটি একটি শ্বেত বামন হিসেবে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখে।
তবে ১৯৩০ সালে সুব্রামানিয়ান চন্দ্রশেখর দেখিয়েছিলেন, একটি শ্বেত বামনের সর্বোচ্চ ভর হতে পারে আমাদের সূর্যের ভরের ১.৪ গুন।
এছাড়াও একজন সোভিয়েত বিজ্ঞানী লেভ লান্দাউ নিউট্রন দ্বারা নির্মিত একটি নক্ষত্রের জন্য একই ধরণের সর্বোচ্চ ভরের সীমারেখা গণনা করেছিলেন।
তাহলে পারমাণবিক জ্বালানী শেষ হয়ে গেলে সেসব অসংখ্য নক্ষত্রের কি পরিণতি হবে, যাদের ভর শ্বেত বামন বা নিউট্রন নক্ষত্রের চাইতে অধিক?
এই প্রশ্নের উত্তর নিয়েই গবেষণা করেছিলেন অ্যাটম বোমার জনক হিসেবে খ্যাত রবার্ট ওপেনহাইমার। জর্জ ভল্কফ এবং হার্টল্যান্ড স্নাইডারের সঙ্গে যৌথভাবে ১৯৩৯ সালে কিছু গবেষণাপত্রে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে এমন একটি নক্ষত্র বহির্মুখী তাপীয় চাপ দিয়ে অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে না। এই চাপ বাদ দিলে, একটি সুষম গোলীয় নক্ষত্র অসীম ঘনত্বের একটি বিন্দুতে সংকুচিত হয়। এই বিন্দুকে বলা হয় সিঙ্গুলারিটি।
স্থান এবং কাল নিয়ে আমাদের সকল তত্ত্ব এই অনুমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত যে, স্থান ও কাল মসৃণ এবং প্রায় সমতল। তাই এসকল তত্ত্ব সিঙ্গুলারিটিতে এসে অকেজো হয়ে পড়ে, যেখানে স্থান এবং কালের বক্রতা অসীম। আদতে, এখানেই সময়ের সমাপ্তি। এই বিষয়টি আইনস্টাইন মেনে নিতে পারেন নি।
এর মাঝে তখন বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে, রবার্ট ওপেনহাইমারসহ বেশীর ভাগ বিজ্ঞানী মনোযোগ দিলেন পারমাণবিক পদার্থবিদ্যার প্রতি এবং মহাকর্ষীয় বলে নক্ষত্রের সংকোচন চলে গেল পর্দার আড়ালে। এই প্রসঙ্গে পুনরায় আগ্রহ জেগে উঠল দূরবর্তী ‘কোয়াসার’ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে।
১৯৬৩ সালে প্রথম ‘কোয়াসার’, 3C273 আবিষ্কৃত হয়। অচিরেই আরও ‘কোয়াসার’ আবিষ্কৃত হয়। অনেক দূরের হলেও, এগুলো অনেক উজ্জ্বল।
এই ধরনের শক্তির উৎপাদন শুধুমাত্র পারমাণবিক প্রক্রিয়ায় সম্ভব নয় কারণ এতে যে শক্তি উৎপন্ন হয়, তা স্থিতিভরের এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ। এক্ষেত্রে একমাত্র বিকল্প হল মহাকর্ষীয় শক্তি যা মহাকর্ষীয় সংকোচন থেকে সৃষ্ট। মহাকর্ষীয় সংকোচন পুনরাবিষ্কার হয়। সিঙ্গুলারিটিতে আইনস্টাইনের সমীকরণ অসংজ্ঞায়িত। অর্থাৎ অসীম ঘনত্বের এই বিন্দুতে ভবিষ্যদ্বাণী করা অসম্ভব।
তাহলে খুব অদ্ভুত কিছু ঘটবে একটি নক্ষত্রের ধ্বসের পর। যদি সিঙ্গুলারিটিগুলো বাইরের থেকে আবৃত না হয় অর্থাৎ যদি কোন ঘটনা দিগন্তের সৃষ্টি না হয়, তবে ভবিষ্যদ্বাণী করাটা সম্ভব হবে। ১৯৫৭ সালে জন হুইলার ‘ব্ল্যাক হোল’ নামটির আবির্ভাব ঘটালে, পুরনো নাম ‘ফ্রোজেন স্টার’ বাতিল হয়ে যায়। এই নামকরণ থেকেই বোঝা যায় যে ব্ল্যাক হোলের সৃষ্টির উপায় বিবেচনা না করলেও, এর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলোই আগ্রহের উদ্রেক ঘটাতে পারে। কৃষ্ণগহ্বরের সীমারেখা আছে, যাকে বলা হয় event horizon (ঘটনাদিগন্ত) । আলোক রশ্মিকে আটকানো এবং ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট মহাকর্ষ বল সেখানে বিদ্যমান। কিন্তু সূর্যের থেকে মিলিয়ন গুণ বেশী ভরের কিছু ব্ল্যাক হোলে পরলে, ঘটনা দিগন্তে সহজেই পৌঁছানো যাবে।
সুতরাং যদি আমরা একটি কৃষ্ণগহ্বরে অনুসন্ধান চালাতে চাই, আমাদেরকে অধিক ভরের একটি বস্তু বেছে নিতে হবে। আমাদের মিল্কি ওয়ে ছায়াপথের কেন্দ্রে একটি ব্ল্যাক হোল আছে, যার ভর সূর্যের চেয়ে ৪ মিলিয়ন গুণ বেশী।সূর্যের ভরের সমান ভরের কৃষ্ণগহ্বর খুব ধীরগতিতে কণা বিকিরণ করে যা শনাক্ত করা অসম্ভব। তবে একটি পাহাড়ের ভরের সমান ভরের কৃষ্ণগহ্বর ও থাকতে পারে।
এরকম ক্ষুদ্র একটি ব্ল্যাক হোল ১০ মিলিয়ন মেগাওয়াট হারে এক্স-রে ও গামা-রে বিকিরণ করে- এই পরিমাণ পৃথিবীর বৈদ্যুতিক চাহিদার সমান।
তবে এই শক্তি ধারণ করে কাজে লাগানো সহজ হবে না। কৃষ্ণগহ্বরটিকে একটি বৈদ্যুতিক কেন্দ্রে রাখা যাবে না কারণ সে তো মেঝে ভেঙে বেরিয়ে একেবারে পৃথিবীর কেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছাবে।
একটি কৃষ্ণগহ্বরকে রাখার উপায় হবে যদি পৃথিবীর চারিদিকে কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। বিজ্ঞানী জন হুইলারের ভাষ্যমতে, একটা ব্ল্যাক হোলের ভেতরে লুকোনো অনেক তথ্য রয়েছে। সুতরাং, এই গুপ্ত তথ্যের পরিমাণ যদি ব্ল্যাক হোলটির ভরের উপর নির্ভর করে, তবে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী তার তাপমাত্রা থাকার কথা এবং গরম ধাতুর মত তার জ্বলজ্বল করার কথা। কিন্তু এটা তো সম্ভব হওয়ার কথা না, কারণ সবাই জানে কৃষ্ণগহ্বর থেকে কিছুই বের হতে পারেনা। অন্তত এটাই জানা ছিল। এই তথ্যের ভিত্তি ১৯৭৪ পর্যন্ত ছিল, যখন স্টিফেন হকিং কোয়ান্টাম মেকানিকস অনুযায়ী কৃষ্ণগহ্বরের সন্নিকটে পদার্থের ব্যবহার কেমন হবে তা নিয়ে গবেষণা করছিলেন। আশ্চর্যজনকভাবে তিনি দেখেছিলেন ব্ল্যাক হোল থেকে সুষম হারে কণার বিকিরণ ঘটে।
স্টিফেন হকিং তার বক্তৃতার সমাপ্তি টেনেছিলেন এই বলে যে,
এটা কোন অনন্তকালের বন্দিশালা নয়। কৃষ্ণগহ্বর থেকে পদার্থ বেরিয়ে আসতে পারে, সম্ভবত অন্য এক মহাবিশ্বে। হকিংয়ের প্রস্তাবনা সত্য হলে আরেকটি নতুন সম্ভাবনাও সত্য হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে ঢুকে পড়া কণাগুলো যেহেতু পুরোপুরি ধ্বংস হচ্ছে না, সেহেতু আমরা কি ধারণা করতে পারি যে সেটি গহ্বরের ভেতর থেকে অপর প্রান্ত দিয়ে ‘বেরিয়ে’ আসবে? হকিং বলছেন, এই সম্ভাবনাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। কৃষ্ণগহ্বরে ঢুকে পড়া কণাগুলো ঘটনা দিগন্তে নিজেদের তথ্য রেখে যেতে পারছে, তার মানে কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরেও তারা নিজেদেরকে অক্ষুণ্ণ রেখেই প্রবেশ করছে। এটা সত্যি যে গহ্বরের ভেতরে কী ঘটছে তা আমরা এখনও জানি না। হকিংয়ের মতে, গহ্বরে প্রবেশ করা কণাগুলো অন্য প্রান্তে বেরিয়ে আসলে আমাদের মহাবিশ্বে ফেরত আসবে না, বরং তারা পৌঁছে যাবে আমাদেরই সমান্তরাল অন্য একটি মহাবিশ্বে। অনেক পদার্থবিদের মতে, কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে আরেকটি ক্ষুদে মহাবিশ্ব তৈরি হয়। কণাগুলো সেখানেও থাকতে পারে।
সম্ভাবনার যেটাই সত্য হোক না কেন, এটুকু নিশ্চিত যে এই প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে কৃষ্ণগহ্বর ও মহাবিশ্বের নতুন আবিষ্কারের পথ খুলে গেল। কে জানে, হয়তো এই গবেষণা থেকেই বেরিয়ে আসবে সমান্তরাল মহাবিশ্বের সন্ধান!
তথ্য সূত্র
Review: Stephen Hawking’s Reith lectures on black holes – Financial Times
Leave a Reply