কোয়াসার গ্রহের নীল মাটিতে সবুজ গাছ পালা, ফলমূল আর ঔষধের বাগান। বড় বড় কাঁচের বিল্ডিং। সব ঘরই ভার্চুয়াল ও কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত। এখানে কলকারখানা, কৃষিকাজ ও অন্যান্য সকল কাজে রোবটের ব্যবহার লক্ষ্য করার মতো। এসব রোবট জৈবিকভাবে অনুপ্রাণিত! তাই এরা মানুষের কথা বুঝতে পারে। নীনা’র মন খারাপ। কারণ তার মানুষ মা ও বাবা সারাদিন অফিসে ব্যস্ত থাকে। ফলে, সে একদম একা।
কয়েক বছর আগের কথা। কোয়াসার গ্রহ ছিল শিশুশূন্য। কারণ এ গ্রহের কারও সন্তান হয় না। দিন দিন জনসংখ্যা কমে যাচ্ছিল। এ গ্রহের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ড. আসিক ইবরার ব্লেকো-৩ নামক একটি শিশু রোবট তৈরী করেন। যা কিনা মানব শিশুর ৯৫% বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে পারে। এটি পানি দ্বারা শক্তি অর্জন করে একটানা ৪ মাস চার্জিত থাকে। কোয়াসার গ্রহের হাজার হাজার দম্পতিকে সন্তান দেওয়ার জন্য এটা বাজারজাত করা হয়েছে। আর ব্লেকো-৩ মডেলের রোবট নীনাকে ব্যবহার করছেন মিসেস খান ও তার স্বামী ড. খান। যারা পেশায় চিকিৎসা বিজ্ঞানী। কাজের রোবট ফ্রগ সকাল থেকেই ব্যস্ত নীনা কে নিয়ে। সে খাবার খাচ্ছে না। শুধু কান্নাকটি করছে। ফ্রগ হাতের ইশারায় এলইডি দেয়ালের নির্দিষ্ট স্থানে নাম্বার ডায়াল করলো। মিসেস খান কলটা রিসিভ করে বললেন, ‘কী ব্যাপার ফ্রগ, কোন সমস্যা? নীনা ঘুমিয়েছে?’
ফ্রগ বললো, ‘না ম্যাডাম। ও শুধু কান্নাকাটি করছে। আপনাকে আর স্যারকে চাচ্ছে।’
মিসেস খান বললেন, ‘ঠিক আছে ওকে বলো আমি আধা ঘন্টার মধ্যে আসছি।’
ফ্রগ খুশিতে বললো, ‘ঠিক আছে।’
ড.খান ফ্লিট শহরের ‘জাতীয় ভ্রুণ গবেষণা ও মানব শিশুর জন্মদান ইন্সটিটিউট’- এর একজন গবেষক। এই প্রতিষ্ঠান চাচ্ছে পৃথিবী থেকে ডিএনএ এনে সেই ডিএনএ এর সাথে এই গ্রহের মা-বাবার ডিএনএ রিকম্বিনেট করে মানব শিশু জন্ম দেয়ার। ফলে হয়ত কোয়াসার গ্রহের নিঃসন্তান দম্পতিরা তাদের দুঃখ থেকে মুক্তি পাবে। এজন্য তারা পৃথিবীতে সসটেক-৭ নামক যান পাঠিয়েছে কয়েকবার। কিন্তু সেগুলো বার বার ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে। গত শুক্রবার সসটেক-৮ নামক নতুন একটি মহাকাশ যান পৃথিবীতে বাংলাদেশের কোন এক জঙ্গলের মাঝের পোড়াবাড়িতে ল্যান্ড করেছিল। কিন্তু ল্যান্ড করার পর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে তারা আবার সেখান থেকে ফেরত আসে।
এইবার নতুন অভিযানে ড. খান নিজেই যাবেন পৃথিবীতে। হয়ত তিনি পৃথিবীর সভ্য মানুষদের সাহায্য পেতে পারেন। অভিযান পরিচালনা করছে কোয়াসার গ্রহের আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষনা সংস্থা QUASA। কোয়াসার গ্রহ পৃথিবীর থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে। কারণ এখানকার মানুষ অনেক পরিশ্রমী ও নির্লোভ প্রকৃতির। বর্তমান পৃথিবীতে বিজ্ঞান গবেষনার নামে যে মানব হত্যা করা হচ্ছে সেটা নিয়ে তারা অবগত ও পৃথিবীর ভবিষৎ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। এ প্রসঙ্গে QUASA এর একটি অনুষ্ঠানে ড. খান ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা কেন ওদের ধ্বংস করবো? ওরা তো নিজেরাই ধ্বংস হচ্ছে।’
রাত আটটা। সবাই আর্মি দাদুর পোড়া বাড়ির ঘরে সমবেত হয়েছে। চাচ্চু টেলিস্কোপসহ প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেছেন। সবাই গল্প-গুজব করছে। দাদু ও চাচ্চু চা-নাস্তা বানাতে ব্যস্ত। এ বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। থাকার কথাও না। কারণ পুরনো দিনের জমিদার বাড়িতে বিদ্যুৎ থাকা অসম্ভব ব্যাপার। কাচের মোমদানিতে বড় বড় মোমবাতি জ্বলছে। নীলুরা কিছুক্ষণ পর পর হেসে উঠছে। দাদু ও চাচ্চু চা-নাস্তা নিয়ে এলো। সবাই খেতে খেতে পরামর্শ করছে কে কী করবে। হঠাৎ বিকট শব্দে কিছু পড়ার আওয়াজ হলো ছাদে। সবাই দৌড়ে ছাদে গেল। অন্ধকারে কিছু দেখার কথা না। তবুও মোমবাতির আবছা আলোয় ওরা দেখতে পেল, কিছু একটা গোলাকার টাইপের ছাদ থেকে নিচে পড়ে গেল।
সবাই দৌড়ে বাড়ির পেছনে গেল। বাইরে তীব্র আলোর ঝলকানি। সম্ভবত ওটা পুকুর থেকে আসছে। চাচ্চু টেলিস্কাপ অন করলেন। টেলিস্কোপের পর্দায় দেখা গেল, উজ্জ্বল গোলাকার কিছু মাটিতে পুকুরের পাড়ে নামছে। হঠাৎ সিগনাল বন্ধ হয়ে গেল। আর কিছু দেখা যাচ্ছে না টেলিস্কোপের পর্দায়। চাচ্চু ধ্যাঁৎ বলে টেলিস্কোপ অফ করলেন। সবাই রুমে ফিরে আসলো। প্রত্যেকে বাসায় বলে এসেছে যে তারা আজকে রাতটা নীলুদের বাসায় থাকবে। কিন্তু বিপাকে পড়লো নীলু আর চাচ্চু। ওরা কী বলবে বাসায়। চাচ্চু একটা বুদ্ধি বের করলেন। ফোন করে বললেন যে, তারা রাতটা চাচ্চুর বন্ধুর বাসায় কাটাবেন। ব্যাস, সমাধান হয়ে গেল।
দাদু রাতের খাবারের আয়োজন করলেন। বোয়াল মাছের ঝোল, বেগুনভর্তা ও ডিমভাজা। সবাই খুশিতে খেতে লাগল। খাওয়ার পর একটু বিশ্রাম। তারপর রাত বারোটা বাজলেই কাজ শুরু হবে। রাত তিনটায় মধ্যরাত হয়। তাই এই সময়টাই উপযুক্ত সময়। রাত বারোটা বেজে গেলে সবাই ছাদে গেল। চাচ্চু ছাদের কর্ণারে টেলিস্কোপ বসিয়ে সেটা আকাশের দিকে তাক করলেন। ড্রোন-ক্যামেরাটা ছেড়ে দেয়া হলো। ছাদের উপর সিঁড়িঘরে সবাই বসলো। চাচ্চু ল্যাপটপ থেকে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে লাগলেন। নীলুরা চাচ্চুকে সাহায্য করছে। আর্মি দাদু চাচ্চুকে তথ্য দিচ্ছেন। আর চাচ্চু সে মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছেন।
১৩ তারিখ, শুক্রবার। QUASA এর সদর দপ্তর এ প্রচুর লোকের সমাগম। কারণ তাদের দেশের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ড. আসিফ ইবরার আজ নতুন কিছু বলবেন দেশবাসীর প্রতি। হঠাৎ করে পুলিশের করা নিরাপত্তার মধ্যে লাল রঙের গাড়িটা দরজার সামনে থামল। সামনে সাংবাদিকদের ক্যামেরা আর মাইক্রফোনের ভিড়। ড. আসিফ ইবরার গাড়ি থেকে নামলেন। তিনি সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে QUASA এর সদর দপ্তরে ঢুকলেন। ভিতরে আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী ড. খান এগিয়ে এসে ড. আসিফ ইবরারকে কক্ষে স্বাগত জানালেন। কিছুক্ষণের মধ্যে অনুষ্ঠান শুরু হল।
ড. আসিফ ইবরার দেশবাসীর প্রতি তার বক্তৃতা শুরু করলেন, ‘হে আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আজকের দিনটা কোয়াসার গ্রহের জন্য একটা স্মরণীয় দিন। কারণ এই দিন আমরা আমাদের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ড. খান ও তার টিমকে পৃথিবীতে পাঠাচ্ছি। আমি আশাবাদী, তিনি সফল হয়ে এ গ্রহে ফিরবেন। আপনারা জানেন, এর আগে আমরা দু’টো অভিযান করেছিলাম। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেগুলো সফল হয়নি। এবার আমরা QUASA এর বিজ্ঞানীরা বহু সাধনার পর সসটেক-৯ তৈরী করেছি। যা কিনা সসটেক-৭ ও সসটেক-৮ এ থেকে চারগুণ দ্রুতিগতি সম্পন্ন। আর ড. খান পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের সাথে বন্ধুত্ব করে হয়ত আমাদের কাঙ্ক্ষিত ডিএনএ সংগ্রহ করতে সক্ষম হবেন। আমি অভিযানে যাচ্ছি না। কারণ, কোয়াসার গ্রহ থেকে এটি নিয়ন্ত্রনের ভার আমার উপর ন্যস্ত। আমি ড. খানকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করছি।’ সবাই জোরে করতালি দিতে লাগল।
ড. খান শুরু করলেন, ‘হে আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনারা বুঝতে পারছেন আমাদের বর্তমান সমস্যাটা। যদিও আমরা ড. আসিফ ইবরার এর প্রতি কৃতজ্ঞ। কারণ, তিনি ব্লেকো-৩ নামক রোবটটি তৈরী করে আমাদের মা-বাবাদের দুঃখ কিছুটা হলেও লাঘব করেছেন। তারপরও আমি বলবো, আজকের এই অভিযান হয়ত, আমাদের চিরদিনের জন্য মাতৃত্ব বা পিতৃত্বের দুঃখ মিটেয়ে দেবে। আমি মহান স্রষ্টার কাছে সেই প্রার্থনাই করছি। বিকাল চারটা অর্থ্যাৎ আর আধা ঘন্টার মধ্যে সসটেক-৯ মহাকাশে উৎক্ষেপন করা হবে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’
সবাই সমস্বরে বলে উঠল, ‘সসটেক-৯ এর যাত্রা শুভ হোক। QUASA এর সদর দপ্তর এর বিশাল রানওয়েতে সসটেক-৯ রাখা আছে। সুইচ দেয়া মাত্র সেটা মহাশূন্যে উৎক্ষেপিত হবে। চারপাশে প্রচুর লোকের সমাগম। ড. খান ও তার টিম রকেটের ভিতর ঢুকলেন। শেষবারের মত সব ঠিক আছে কিনা তা চেক করা হল। অবশেষে বিকট শব্দে সসটেক-৯ মহাশূন্যের দিকে যেতে শুরু করল। কন্ট্রোল রুমে বিজ্ঞানীরা সেটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। সসটেক-৯ চলছে তার গন্তব্যে। ড. খান স্ক্রীনে দেখতে লাগলেন হাজার হাজার আলোকবর্ষ তারা পার হচ্ছেন। মাঝে মধ্যে ধুমকেতু, উল্কা বা মহাজাগতিক বিভিন্ন বস্তু উড়ে চলছে। ড. খান এর মাথায় এখন বিভিন্ন চিন্তা ভিড় করছে। তিনি কি পারবেন, নাকি আগের যাত্রাগুলোর মতো এটাও ব্যর্থ হবে! তার চোখে ভেসে উঠছে হাজার হাজার নিঃসন্তান দম্পতি তার দিকে চেয়ে আছে। পৃথিবীর সভ্য মানুষেরা কি ডিএনএ দেবে নাকি ফিরিয়ে দেবে?
চাচ্চু হকচকিয়ে গেলেন। কম্পিউটারের স্ক্রীনে একটা লাল বিন্দু এগিয়ে আসছে। সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ পৃথিবী। যাতে শুধু জীবের অস্তিত্ব আছে। অন্য গ্রহে জীব আছে কী নেই এ নিয়ে বির্তক চলছে বিজ্ঞান জগতে। আর RASA এর বিজ্ঞানী ও চাচ্চুর সহকর্মী ড. রুস্তম ভাগিরভ এর আবিষ্কৃত কোয়াসার গ্রহে প্রাণী থাকাটা অবান্তর কিছু নয়। কারণ, ওখানে এর সন্ধান পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয় জীব বেঁচে থাকার সব আলামতই মিলে গেছে ঐ গ্রহে। চাচ্চু ঘেমে যাচ্ছেন, আর হাত দিয়ে কপাল মুছছেন। সবাই আবার ছাদে গেল।
রাত তিনটা বাজে। টেলিস্কপের পর্দায় দেখা গেল পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে যানটা। হঠাৎ তীব্র আলোর ঝলকানিতে চারপাশ আলোকিত হয়ে উঠল। সবাই আকাশের দিকে তাকাতে লাগল। একটা উড়ন্ত যান ধীরে ধীরে পুকুরের পাড়ে ল্যান্ড করলো। সবাই হুড়মুড় করে নিচে গেল। যান থেকে ড. খান নামলেন সাথে তার টিম। চাচ্চু ও আর্মি দাদু এগিয়ে গেলেন। ড. খান মুচকি হেসে বললেন, ‘ভয় পাবেন না। আমরা মানুষ, আপনাদের পৃথিবীর ২০,০০০০ আলোকর্বষ দূরে কোয়াসার নামক গ্রহ থেকে এসেছি। আর আমি বিজ্ঞানী ড. খান। আমার পুরো টিম আমার সাথে।’
ডা. খানের ৬ সদস্যের টিম একে একে চাচ্চুর সাথে হ্যান্ডশেক করল। চাচ্চু নিজের ও আর্মি দাদুর পরিচয় দিলেন। অবশেষে সবাই রুমে প্রবেশ করল। দাদু সবার জন্য চা ও শুকনো খাবার এর ব্যবস্থা করলেন। খেতে খেতে ড. খান সব খুলে বললেন। চাচ্চু তাদের আশস্ত করলেন। এদিকে চাচ্চু রাশিয়ায় ড. রস্তম ভাগিরভ এর সাথে যোগাযোগ করলেন। ড. ভাগিরভ বাংলাদেশ আসতে চাইলেন। আগামিকাল বিকাল পাঁচটায় তিনি ঢাকায় জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসছেন। চাচ্চু ড. খানকে বললেন, ‘আপনারা পৃথিবীতে এসেছেন এটা ঘুণাক্ষরেও কেউ যেন না জানে। তাই ফ্লাইং সসার সসটেক-৯ থেকে সরিয়ে রাজবাড়ির পেছনে ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে রাখা উচিত। তাই নয় কী ড. খান?’
ড. খান বললেন, অবশ্যই। আমারও তাই মনে হয়। চলুন সবাই যানটা একবার দেখে নেই। সবাই যানের ভিতরে প্রবেশ করলো। নীলুরা হতবাক। তারা খুব মনোযোগ সহকারে ভিতরটা দেখতে লাগল। ড. খান কন্ট্রোল সিটে বসে যানটা স্টার্ট দিয়ে সেটাকে জঙ্গলের ভিতরে নিয়ে গেলেন। সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সবার বিশ্রাম দরকার। যা করার কালকেই করা যাবে।
মস্কো বিমান বন্দরে প্রচুর ভিড়। ড. রুস্তম ভাগিরভ এর গাড়ির সামনে সাংবাদিকদের জটলা। রাশিয়ান এয়ার ওয়েজের একটি বিশেষ বিমানে তাকে বাংলাদেশে পৌঁছানো হবে। আর মাত্র পাঁচ মিনিট পরে বিমান ছেড়ে দেয়া হবে। অল্প সময়ের মধ্যে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বিমানে উঠলেন ড. ভাগিরভ। বিমান ছেড়ে দিলো। প্রায় আট ঘন্টা পর বিমান জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যান্ড করল। চাচ্চু ও নীলুরা বিমানবন্দরে ড. ভাগিরভকে রিসিভ করলো। তারা সবাই চাচ্চুর লাল রঙের কারটাতে উঠল। কার ঢাকা থেকে ছুটে চললো গ্রামের বাড়ির দিকে। চাচ্চু গাড়ি ড্রাইভ করছেন। পাশে ড. ভাগিরভ, পেছনের সিটে নীলুরা বসেছে। নীলু খেয়াল করলো ড. ভাগিরভকে খুশি খুশি দেখাচ্ছে। আর দেখাবেই না কেন? কারণ কোয়াসার গ্রহের সন্ধান তিনিই তো দিয়েছেন। ড. ভাগিরভ খুব ভালো বাংলা না জানলেও চাচ্চুর সুবাদে তিনি বাংলায় কথা বলতে পারেন। তাই নীলু ড. ভাগিরভকে চাচ্চু বলে সম্বোধন করে বললো, ‘আপনি মনে হয় সবচেয়ে খুশি আজকে?’
ড. ভাগিরভ হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ রে নীলু, এটা পৃথিবীর জন্য একটা বিশাল পাওয়া। আজকের দিনটার জন্যই হয়ত আমরা এত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’ ঢাকা থেকে হিজলতলী গ্রাম খুব বেশি দূরে না হওয়ায় তারা এক ঘন্টার মধ্যে গ্রামে প্রবেশ করলো।
সবাই ড্রয়িং রুমে বসেছে। চাচ্চু ড. ভাগিরভকে ড. খান ও তার টিমের পরিচয় দিলেন। নীলুর মা নাস্তা বানাতে ব্যস্ত। কাজের মেয়ে রহিমার মাও তাকে সাহায্য করছে। খাওয়া-দাওয়া শেষ। সবাই চাচ্চুর রুমে বসে পড়লো। ড. খান প্রথমে তার গ্রহের সমস্যার কথা তুলে ধরলেন। ড. ভাগিরভ সেগুলো লিখে RASA এর সদর দপ্তরে মেইল করে দিলেন। RASA এর প্রধান ড. ফার্ন্দানেন্স ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় প্রেরণ করার ঘোষণা দেয়ায় সবাই ‘বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষনা প্রতিষ্ঠান’ এ যোগ দিতে ঢাকায় উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল।
ঢাকায় ৩ দিন মিটিং শেষে সবাই এ সিন্ধান্তে উপনীত হল যে কোয়াসার গ্রহে মানুষের ডিএনএ প্রদান ও তাদের সমস্যা সমাধান শুধু মানবিক দিক থেকেই নয় বরং জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় পৃথিবী একধাপ এগিয়ে যাবে। আর পৃথিবীকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন ড. খান। তিনি কোয়াসার গ্রহে ড. আসিফ ইবরার ও অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সাথে বিশেষ ধরনের কম্পিউটারের মাধ্যমে মতবিনিময় করলেন। অবশেষে ডিএনএ সংগ্রহের পালা। আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার ঘোষণা দিলেন ড. ভাগিরভ। তারপর সবাই নীলুদের বাসায় ফিরে আসলেন।
মধ্যরাত। তিনটা বাজে। আকাশে আজ প্রচুর জ্যোৎস্না। রাজবাড়ির পরিবেশ থমথমে। কারণ, ড. খান ও তার টিম বিদায় নিবেন। তাদের ডিএনএ সংগ্রহ শেষ। সবাই আর্মি দাদুর রুমে। ড. খানেরা গোছগাছ করে তৈরী হলেন। সবাই বাইরে বেরিয়ে এসে মহাকাশ যানটার দিকে গেলেন। যানটার দরজা খুলে কন্ট্রোল রুমে ড. খান বসলেন। আর বাকিরা সবাই যার যার সিটে বসলেন। বিকট শব্দ করে যানটা কেঁপে উঠল। লাল ও নীল আলোতে ভরে গেল চারপাশ। শেষবারের মত সবাই হাত নাড়লো। ফ্লাইং সসারটি ধীরে ধীরে উড়তে লাগল। নীলুরা তাকিয়ে থাকলো। দেখতে দেখতে মহাকাশ যানটা মহাশূন্যে মিলিয়ে গেল। অতিথির বিদায় বেদনায় সবাই স্তব্ধ। যদিও এর মধ্যে আনন্দও আছে। আজকের এই মধ্যরাত নীলুদের জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
চারপাশ পূর্ণিমার আলোতে ঝলমল করছে। হঠাৎ নীলু আকাশের দিকে তাকালো। হাজার হাজার তারকা মিটমিট করে জ্বলছে। অযথাই নীলুর চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল। কেউ সেটা বুঝতে পারলো না। এসময় এক টুকরো মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দিল। নীলুর লজ্জা ঢাকবার জন্য হয়তো!
Leave a Reply