বইঃ চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

এই পর্যালোচনাটি ‘চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ এর দ্বিতীয় সংস্করণের উপর লেখা। তাই পরবর্তীতে অন্য কোনো সংস্করণ বের হলে এই রিভিউর কিছুটা অমিল হতে পারে। বইটির মোট ৩৩৬ টি পৃষ্ঠা। স্বভাবতই পর্যালোচনা একটু বড় হবে।

বইটির লেখক ও সকল পাঠকদের উদ্দেশ্য করেই আলোচনার চেষ্টা করেছি।

বইটি কাদের জন্য

আমি মনে করি যারা ৯ম শ্রেণীতে ৬ মাস বা কিছু ত্রিকোণমিতি শিখেছে তারাও এই বইয়ের অনেক গাণিতিক প্রক্রিয়া বুঝতে পারবে। গণিত ছাড়া আক্ষরিক ব্যাখ্যা সবাই বুঝতে পারবে। তবে যারা HSC(দ্বাদশ শ্রেণী) শেষ করেছে তারা পুরোপুরিই বুঝতে পারবে। আর যারা আগে থেকেই ভালো গণিত জানে তারাও ভালোমতো বুঝবে। যদিও এখানে সেরকম কঠিন কোনো গণিত ব্যবহৃত হয় নাই।

রিভিউ

শুরুতেই বলতে চাই ‘চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ বিনোদনে ভরপুর। পুরো বইটিতে বিনোদনের মাধ্যমে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা শেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর আগেও কণাবাদী বলবিজ্ঞান এর উপর কিছু বই পড়েছি, তাই বলে এই নতুন বইটি পড়ে এক ফোটাও বিরক্ত অনুভব করিনি। কারণ এই বইয়ের মতো এতো মজার বিনোদন নিয়ে কখনো কোয়ান্টাম মেকানিক্স পড়ি নাই। আপনি যদি নতুন হয়ে থাকেন এবং আগ্রহবশত এ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আপনার জন্য ‘চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ বইটা সুপারিশ করতে চাই। এতে কোয়ান্টাম মেকানিক্স সম্পর্কে আরো আগ্রহ বাড়বে। বইটিতে ১০ টি অধ্যায়। আবার একেকটা অধ্যায়ের গড়ে ৫ টি করে পাঠ আছে।

ছবিঃ বইয়ের প্রচ্ছদ।

প্রত্যেকটা অধ্যায়ের শেষে চা পানের বিরতি নামক একটা ব্যাপার আছে যেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে। আবার প্রত্যেকটা অধ্যায়ের শুরুতে বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের বাণী দেওয়া হয়েছে যা আমার কাছে ভালো লেগেছে। কিছু কিছু বিষয় আমার বেশি ভালো লেগেছে, যেমনঃ তরঙ্গ বলবিদ্যা সংক্রান্ত হিসেব নিকেশ শিখানোর জন্যে, একটি গোল চাকা বা বৃত্তের ব্যবহার করাটা আমার ভালো লেগেছে। সেই বৃত্তের হিসাব থেকে ইলেক্ট্রনের গতিবেগ ও কক্ষপথ ব্যাখ্যাটা খুব ভালো। এতে সহজেই তরঙ্গের হিসাব বুঝা যায়।

ছবিঃ বইয়ের সূচির প্রথম পৃষ্ঠার ছবি।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। কোয়ান্টাম কম্পিউটার যে কত দ্রুত হতে তা ভেবেই অবাক হয়েছি। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পিছনে যেসব তত্ত্ব রয়েছে তার সম্পর্কে জানলাম। কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়ে যেকোনো দীর্ঘ পাসওয়ার্ড হ্যাক করা যায় মুহূর্তের মধ্যে। তবে বাঘেরও যেমন বাবা আছে তেমনি কোয়ান্টাম কম্পিউটারকেও হ্যাক করা থেকে বাধা দিতে পারে এমন পদ্ধতিও আছে, যা এই বই পড়লে স্পষ্ট বুঝবেন। ভরের জন্ম, তরঙ্গের কোথায় কণা থাকে, কণা তরঙ্গের দ্বৈততা, ই পি আর প্যারাডক্স, এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট, বেলের অসমতা, সিমিউলেটেড ইউনিভার্স ইত্যাদি সব আকর্ষণীয় টপিকস আমার খুব ভালো লেগেছে। কারণ এই গুলো খুব ভালোমতো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর শেষের অধ্যায়টা(১০ম) খুব ভালো লেগেছে। আমি এই অধ্যায়টা কয়েকবার পড়েছি।

বইটার ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞানীদের যত আজব কান্ড, পাগলামি আর গোপন তথ্য, আর একে অপরের সাথে ঝগড়া বিতর্ক ইত্যাদি সব তথ্য আছে। বইটা শেষ করে আমি বুঝতে পারলাম, আমি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিভিন্ন টপিকস শেখার পাশাপাশি অনেক বিজ্ঞানীদের সংক্ষিপ্ত জীবনীও পড়লাম।বইটার আরেকটা ভালো দিক খেয়াল করেছি। সেটা হলো বইটা যেমন শুরু হয়েছে খুব আগ্রহী ব্যাপার দিয়ে তেমনি শেষ হয়েছে আরো আগ্রহ দিয়ে। পুরো বইটি পড়ে মনে হলো যেন একটা নাটক দেখেছি যেখানে কোয়ান্টাম মেকানিক্স শেখানো হয়েছে। আর মনে হলো লেখক নাঈম হোসেন ফারুকি হুমায়ূন আহমেদের অনেক বই পড়েছেন। যারা হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ে তারা এই বইতে হুমায়ুন আহমেদের গন্ধ পাবে।

ছবিঃ লেখক নাঈম হোসেন ফারুকী।

আমার কিছু নিজস্ব সমালোচনা

১। এই বইটা একটা বিজ্ঞানের বই, এখানে গণিত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই গণিতকে ভয় পেয়ে এড়িয়ে গেলে হবেনা। কিন্তু এই বইয়ে দুইটা এমন ইমোজি ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো গণিতের প্রতি ভয় জাগ্রত করবে। যেমন উদাহরণ স্বরুপ- ছবি ১. সামনে বিপদজ্জনক সমীকরণ পড়তে না চাইলে স্কিপ করো এবং ২. সমীকরণ শেষ। এবার রিলাক্স করা যায়। এই বইয়ে বিজ্ঞানের অন্য সকল বিষয়কে মজার হিসেবে দেখানো হয়েছে অথচ গণিতকে ভয়ানক হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং তাকে পড়তে না চাইলে এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে। যা আমার ভালো লাগে নি। এর চেয়ে ভালো হতো যদি এমন একটি ছবি ব্যবহার করা হতো যেখানে বলা হবে- কোমরে গামছা বাধো, সামনে সমীকরণ।

২। বেলের অসমতা অধ্যায়টা আরো বড় করলে ভালো হতো। আরো বিস্তারিত বুঝিয়ে দিলে ভালো হতো, কারণ এমনিতেও এবছর নোবেল পুরস্কার বেলের অসমতা ভঙ্গের জন্য দেওয়া হয়েছে।

৩। বইটার নাম চা কফি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স হলেও এখানে শুধু চা’র ব্যাপার-ই বার বার এসেছে। কারণ প্রত্যেকটা অধ্যায়ের শেষে “চা পানের বিরতি” নামক পাঠ আছে কিন্তু কফির নাম নাই। কফিকে বঞ্চিত করা হয়েছে, অথচ কফির ছবি দিয়ে চায়ের নাম লেখা হয়েছে।

৪। বইয়ের শেষে নাঈম হোসেন ফারুকী ভাইয়ের একটু জীবনী দেওয়া আছে। সেখানে তার সানগ্লাস পরা ছবি দেওয়া আছে। আর সেই সানগ্লাসে ফোটোগ্রাফারসহ আরেকজনকে দেখা যাচ্ছে।

মূল্য

বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪০০ টাকা হলেও রকমারিতে ৩৫০ এর কমে পাবেন। বইয়ের ৩৩৬ টি পৃষ্ঠা রয়েছে।তাও আবার হার্ডকভার, তাই আমার মতে দাম ঠিক আছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য

আপনি যদি মনে করেন এই বই পরে পুরো কোয়ান্টাম মেকানিক্স শিখতে পারবেন তাহলে সেটা ভুল ধারণা। কোয়ান্টাম মেকানিক্স শেখা অনেক সাধনা ও ধৈর্য্যের ব্যাপার। এই বইতে শুধু মৌলিক বিষয়গুলো শিখতে পারবেন। এখান থেকে আপনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জগতে প্রবেশ করতে পারবেন। এ বিষয়ে আরো গভীরে যেতে হলে আপনাকে আরো অনেক বই পড়তে হবে এবং অনেক ঘাটাঘাটি করতে হবে। তবেই আপনি অনেককিছু শিখতে পারবেন। তবে এই বই আপনার আগ্রহটাকে আরো বাড়িয়ে দিবে। এ ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি।

লেখাটি 337-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Response

  1. রহমাতুল্লাহ আল আরাবী Avatar
    রহমাতুল্লাহ আল আরাবী

    great review

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading