নেভিয়ার স্টোকস সমীকরণ : পেছনের দর্শন

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

প্রবাহী পদার্থের কোলাহল

পদার্থের প্রচলিত সব ধরনের অবস্থার মধ্যে কঠিন এবং প্রবাহী পদার্থের (তরল, বায়ু) সাথে আমাদের পরিচিতি সবচেয়ে বেশি। এই দুই প্রকার পদার্থের মাঝে মূল পার্থক্য হলো সামান্যতম ধাক্কা বা বলের ইশারা (non-zero force) পেলেই তরল এবং বায়বীয় পদার্থ আর আগের আকৃতিতে থাকে না, তারা রূপ পরিবর্তন করে ফেলে। অন্যদিকে কঠিন পদার্থের আকৃতি পরিবর্তনের জন্য এবং তাকে তার জায়গা থেকে সরানোর জন্য অন্তত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি (yielding force) প্রয়োগ করতে হয়।

প্রবাহী পদার্থের কোলাহল আমাদের চারপাশে সর্বত্র। পুকুরে ছোঁড়া ছোট্ট ঢিলের তরঙ্গ থেকে উত্তাল সাগরের উর্মিমালা, নিশ্বাসের নিস্তব্ধতা থেকে আগ্নেয়গিরির ধূমায়িত চিৎকার, গাছের পাতাকে আলতো ছুঁয়ে যাওয়া শীতল বাতাস থেকে প্রলয়ংকারী সাইক্লোন, বিন্দু বিন্দু ভোরের কুয়াশা থেকে সর্বগ্রাসী বন্যা – সর্বত্র প্রবাহীরা তাদের উপস্থিতির জানান দিয়ে যাচ্ছে। এই চলমানতাকে কি আমরা কখনো অনুভব করি? নিজেদের দিকে তাকাই – আমাদের হৃৎপিণ্ড থেকে ফুসফুস হয়ে রক্ত সারা দেহে বয়ে যাচ্ছে। ঘরের ভেতরে তাকাই – ফ্যানের বাতাস কিছু ধুলো এবং বিড়ালের লোমকে উল্টে পালটে দিচ্ছে এদিক থেকে ওদিকে। বাইরে তাকাই – জানালা থেকে দমকা হাওয়া জানিয়ে দিচ্ছে আজকের গরম কেমন। প্রবাহীরা চির গতিশীল, দুরন্ত, সমীকরণ না মানা শক্তি। 

ছবিঃ প্রবাহীর গতি চলাচলের সাধারণ চিত্র। হতে পারে তা ঝর্নার পানির ফোয়ারা, আকাশের মেঘ, সূর্যের অভ্যন্তর, বা মহাকাশে থাকা নেবুলা ক্লাউড যার হৃদয় থেকে নতুন তারার জন্ম হয়। 

তারপরও প্রবাহী পদার্থের এই অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের হৃদয় কোটরে আমরা অনন্য একটি সমীকরণের সন্ধান পেয়েছি। যেই সমীকরণকে সমাধান করতে বিজ্ঞানীরা গত প্রায় দেড়শ বছর ধরেই প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই লেখায় আমি বড় বড় ফিজিক্সের সূত্র, সর্বাধুনিক কম্পিউটারের সিমুলেশন ফলাফল, কিংবা জটিলতম গাণিতিক রসায়নকে এক পাশে রেখে আলোকপাত করবো প্রবাহী পদার্থের এমন এক রহস্যময় সমীকরণকে যা বুঝতে গিয়ে অনেক বিজ্ঞানী বিষণ্ণতায় ভুগেছেন, অনেক বিজ্ঞানীর সাংসারিক জীবন ভেঙ্গে গেছে, এবং অনেকে প্রায় বেছে নিয়েছিলেন আত্নহনন এর পথ। প্রায় বিশ হাজারের বেশি পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন হয়েছে এই সমীকরণকে ভিত্তি ধরেই। এই সমীকরণকে ব্যবহার করে প্রগতিশীলতার চূড়ান্তে পৌঁছেছে জাহাজের মাস্তুল, গাড়ির দক্ষতা, সাবমেরিনের নকশা, চিকিৎসা প্রযুক্তি, রকেট সায়েন্স, এবং মহাকাশ গবেষণা। তবুও অধরা রয়ে গেছে প্রকৃত বাস্তব সমাধান। এই সমীকরণটির নাম নেভিয়ার স্টোকস সমীকরণ, যা পৃথিবীর বিখ্যাত সেই ৯ টি সমীকরণের একটি যেটা সমাধান করতে পারলে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সমীকরণের ব্যবচ্ছেদ

সমীকরণ আসলে কী? সংজ্ঞানুযায়ী, সমীকরণ আসলে এমন একটি গাণিতিক বর্ণনা যেখান দুইটি অভিব্যক্তি এর মাঝে সমতা দেখানো হয়। যখন আমরা বলি x=5, তখন আমরা বুঝাই যে x হলো এমন একটি গাণিতিক বর্ণনা যার মান পাঁচ। এই পাঁচ হতে পারে পাঁচ মিটার, পাঁচ কিলোগ্রাম, পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ইত্যাদি। সমীকরণ আমাদেরকে শুধু মান সম্পর্কে ধারণা দেয়, ধরন সম্পর্কে নয়। বৈজ্ঞানিকভাবে কোনো কিছু বর্ণনা করতে গেলে সমীকরণই একমাত্র মাধ্যম আমাদের সমস্যার পরিচিতি, পরিধি, এবং মান সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য।

সহজভাবে উদাহরণ দিয়ে আগানো যাক। ধরি, আমরা মাটিতে একটি চলমান টেনিস বলের অতিক্রান্ত দূরত্বের সমীকরণ লিখতে চাই। বলটি যদি প্রতি সেকেন্ডে ২ মিটার এগিয়ে যায় তাহলে ৫ সেকেন্ড পরে এটি তার শুরুর অবস্থান থেকে কত দূর আগাবে? সহজ উত্তরঃ ১০ মিটার। কারণ আমরা জানি যে এই অতিক্রান্ত দূরত্ব নির্ভর করছে দুইটি জিনিসের উপরে – বলের গতি এবং সময়। ফিজিক্সের ভাষায় আমরা বলি বলের অতিক্রান্ত দূরত্ব তার গতি এবং কত সময় ধরে চলছে তার ফাংশন। সমীকরণ আকারে লিখতে গেলে লেখা যায় –

দূরত্ব =  f(গতি, সময়)

এই পর্যন্ত সহজে বুঝা গেলো। তবে বাস্তব উদাহরণ অবশ্যই এত সহজে অনুমেয় না। বরং এই একই সমীকরণ যদি আমরা বলটির সাথে সামগ্রিকভাবে যতকিছু ঘটতে পারে তার সব সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে লিখতে চাই তাহলে সেই সাধারণ সমীকরণটি (generalized equation) দেখতে অনেকটা এমন হবে –

বলের অতিক্রান্ত দূরত্ব = f(বলের গতি, বলটি কত সময় ধরে চলছে, মাটি কী পরিমাণ ঘর্ষণ দিচ্ছে, মাটি কত ডিগ্রি কোণে সমতল, বলের সাথে মাটি এবং পরিবেশের মিথস্ক্রিয়া, পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা, বিপরীতমুখী বাতাসের বেগ, বলটি শুরুতে কত জোরে ছাড়া হয়েছিলো, পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণ, মাটির রুক্ষতা, বলটির জড়তার ভ্রামক, বলটির আকৃতি, ইত্যাদি)

একজন ব্যতিক্রম বৈজ্ঞানিক 

একটি বৈজ্ঞানিক মন সবসময় উত্তর খুঁজে পেতে চায়। বিশেষ করে গতিবিদ্যা নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাঁদের জীবনের বড় একটি সময় যেকোনো বস্তুর গতিকে ব্যাখ্যা করতে পারার আনন্দে কেটে যায়। এমনই একজন গতিবিদ্যা এবং গণিত গবেষক ছিলেন সুইডিশ দার্শনিক লিওনার্দ ইউলার (অনেকে তাঁকে “অয়লার” ও বলে থাকেন)। সময়টা অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। কোপার্নিকাস, কেপলার, ভিঞ্চি, প্যাসকেল, এবং নিউটন প্রমুখ বিজ্ঞানীদের  কাজের কল্যাণে বলবিদ্যা এবং গতিবিদ্যা ততদিনে অনেকখানি এগিয়েছে। মৌলিক তত্ত্বগুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং ব্যক্তিগত পরিসরেও ব্যাপক গবেষণা হতো।

কিন্তু ইউলারের মাথায় ছিল অন্য চিন্তা। মাটিতে গড়িয়ে পড়া মধুর দিকে তাকিয়ে তিনি ভাবতেন, কীভাবে ছিটকে পড়া পানি এতো দ্রুত এগিয়ে যায় যেখানে কিনা তেল বা মধু এতো ধীরগতির? বৃষ্টি হলে তিনি ছুটে যেতেন খোলা মাঠে। বৃষ্টির স্নিগ্ধ ফোঁটা তাঁর ঠোঁটের কোণে আলতো হাসি নিয়ে আসতো। তিনি অবাক হয়ে দেখতেন এতো বড় মেঘের আবেশ শত শত কিলোমিটার পানি কীভাবে বহন করে নিয়ে যায়। কিন্তু আকাশ থেকে নেমে আসা এই পানির ফোঁটার গতিকে তিনি তখনো সমাধান করতে পারেননি। চিন্তার সামান্য ভাঁজ তাঁর কপালে। নিজেকে প্রশ্ন করতেন মেঘের এই গতিবেগ কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? চিন্তা করতেন প্রবাহী পদার্থের গতি ব্যাখ্যা করার জন্য আমরা কোন কোন মৌলিক উপাদানকে সমীকরণে বসাবো?

ছবিঃ লিওনার্দ ইউলার। ছবি কৃতজ্ঞতা উইকিপিডিয়া। 

১৭৫০ সাল নাগাদ ইউলার গুছিয়ে পরিকল্পনা শুরু করলেন। মাথায় বুনতে লাগলেন একটির পর একটি সমাধানের সূত্র। তাঁর জীবনের গুরত্বপূর্ণ একটি সময় তিনি কাটিয়েছেন প্রবাহী পদার্থের গতির রহস্য ভেদ করায়। তবে তিনি শুরু করলেন সমস্যাটিকে খুব সহজ করে চিন্তা করার মাধ্যমে। পাঠকের সহজ বোধগম্যতার জন্য আমি এখন থেকে প্রবাহী পদার্থের জায়গায় পানির উদাহরণ ব্যবহার করবো। তিনি এক মুহূর্তের জন্য কল্পনা করে নিলেন যে যদি তিনি তাঁর পানির কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে ধ্রুবক বা স্থির হিসেবে ধরে নেন, তাহলে আরও পরিষ্কারভাবে গতিসূত্রটিকে লেখা যায়।

তার এই চিন্তা সমীকরণটির প্রস্তাবনাকে অনেকখানি সহজ করে দেয়। তরল পদার্থ তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে সাথে তার ঘনত্ব পরিবর্তন করে (ভারী বা হালকা হয়ে যায়)। এছাড়াও তরল পদার্থের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার সান্দ্রতা। সান্দ্রতা হলো তরল পদার্থের বয়ে যাবার ক্ষেত্রে বাঁধার পরিমাপ। একেক তরল পদার্থের সান্দ্রতার পরিমাপ একেক রকম, যেমন গ্লিসারিনের থেকে পানির সান্দ্রতা বেশি, পানির থেকে দুধের সান্দ্রতা বেশি, দুধের থেকে মধুর, এবং মধুর থেকে আলকাতরার। ইউলার তার সমীকরণের কল্পনায় এমন এক পানির কথা ভাবলেন যা তার সম্পূর্ণ গতিপথে ১) সান্দ্রতা পরিবর্তন করবে না (inviscid), ২) ঘনত্ব পরিবর্তন করবেনা (incompressible), ৩) ঘুরবে না (irrotational), ৪) মৌলিক ধারাবাহিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন করবেনা (isotropic), এবং ৫) বাইরে থেকে এই পানির উপরে কোন বল বা শক্তি কাজ করবে না (zero external force)।

সম্ভাবনার দুয়ার খোলা

ইউলারের এই প্রকল্পনা বাস্তব প্রবাহী পদার্থের গতিবিদ্যাকে শতভাগ ব্যাখ্যা করতে না পারলেও তা পরবর্তী বিজ্ঞানীদের জন্য রোল মডেল হিসেবে কাজ করে। ১৮২২ সালে ফরাসি প্রকৌশলী ক্লদে-লুই নেভিয়ার প্রথমবারের মতো প্রবাহীর সান্দ্রতাকে ইউলারের সমীকরণের ভিতরে নিয়ে আসেন। এটা সত্যিকার অর্থে খুবই গুরত্বপূর্ণ একটি ধাপ কেননা বাস্তব জগতে প্রতিটি প্রবাহী পদার্থের কিছু না কিছু সান্দ্রতা ধর্ম থাকে। তাছাড়া এই লেখার শুরুতেই আমরা যেই উদাহরণ দিয়ে শুরু করেছি সেখান থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে গতির সমীকরণকে ভালোভাবে বোঝার জন্য যত বেশি নির্ভরশীল উপাদান সমীকরণে নিয়ে আসা যায় তত ভালোভাবে সেই সমীকরণকে ব্যাখ্যা করা যায়।

নেভিয়ারের এই প্রস্তাবনা সে সময়ের পদার্থ বিজ্ঞানীদের মাঝে সাড়া ফেলে দেয়। প্রায় ২০ বছর পরে আইরিশ বিজ্ঞানী জর্জ গ্যাব্রিয়েল স্টোকস এই সমীকরণকে আরও বিস্তৃত করেন। ইউলার যে ব্যাপারগুলোকে উপেক্ষা করেছিলেন, তাঁর প্রায় প্রতিটিকেই নেভিয়ার এবং স্টোকস তাঁদের প্রস্তাবিত সমীকরণে লিপিবদ্ধ করেন। এই সমীকরণটিই বিখ্যাত নেভিয়ার-স্টোকস সমীকরণ বা Navier-Stokes Equation যা দেখতে এরকম–

This image has an empty alt attribute; its file name is AD_4nXc9wOQx-xG9G2HnHGoowbkXchfddf670uzKt-TwqlzRNlJZOHVmuBBdpA7k7fSIv137s0JDQ3yDZFoeTAPHrhlEgg8QU0xg2Y0jVDXZUKev3IKp5nJWkrg3zb9S2s1RAUxP4iyM2LV_UMByaNgtNPM6Ig0

এই সমীকরণের প্রতিটি টার্মের ব্যাখ্যা এবং পাদটীকা নিয়ে পরবর্তী লেখায় আমি বিস্তারিত লিখবো। এছাড়াও একদম খসড়া থেকে এই সমীকরণের বিস্তারিত প্রমাণ নিয়ে সামনে লিখবো। এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো নেভিয়ার স্টোকস সমীকরণ সম্পর্কে একটি পটভূমি দাঁড় করানো। তবে এখনো কিছু বিষয় এই লেখা থেকে পরিষ্কার হয়নি। যেমন, কেনো এই সমীকরণ “রহস্যময়”? কেনো এই সমীকরণ সমাধান এত কঠিন? এবং কেনো এই সমীকরণকে আমরা গুরুত্ব দিবো? 

মজার ব্যাপার হলো, তিনটি প্রশ্নের উত্তরই একসাথে দেয়া যায়। তবে উত্তর দেয়ার আগে বলে রাখা ভালো, এই যে এতো কৌতূহল এবং উত্তেজনা, সবই কিন্তু নিমেষেই গায়েব হয়ে যায় যখন একজন গুরুতরভাবে এই সমীকরণ নিয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন। বিশেষ করে ত্রিমাত্রিক বিশৃঙ্খল টার্বুলেন্স মডেলের গাণিতিক বর্ণনা অসম্ভব জটিল এবং প্রায় অসাধ্য। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে (বা সৌভাগ্যক্রমে, কে জানে!) আমাদের চারপাশের সবই বিশৃঙ্খল। আকাশের মেঘের ভ্রমণ, গাড়ি নির্গত ধোঁয়া, কথা বলার সময় আমাদের প্রশ্বাস, নিভে যাওয়া মোমবাতির ধূম্র কুণ্ডলী, বেসিনের পানির ঘূর্ণন, রান্নার সময় কড়াই এ ঝোলের নড়াচড়া, সদ্য স্নান করা চুল থেকে চুঁইয়ে পড়া পানির গতি। এদের কোনোকিছুকেই আমরা সাধারণ কোন গতি সমীকরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারবো না। এই মহাবিশ্বে যেকোনো  সভ্যতা আধুনিক হতে হলে, তাদের একটা সময় নেভিয়ার-স্টোকস সমীকরণ খুঁজে বের করতেই হতো। ছিঁড়ে-ফুড়ে বের হতে হতো এই রহস্য থেকে।  

বাস্তবতার বেড়াজাল

কিন্তু আমরা চাইলে এই সমীকরণের বাইরে বের হতে পারবো না। নেভিয়ার-স্টোকস সমীকরণ এর দর্শনের সাথে প্রজাপতি-তত্ত্ব (Butterfly effect) এর এক অন্তর্নিহিত মিল আছে। প্রজাপতি-তত্ত্ব বলে, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন বনে কোনো প্রজাপতি যদি ডানা ঝাপটায়, তাহলে সুদূর উত্তর আমেরিকার ফ্লোরিডাতে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। কেন এমনটা হয়? সরাসরি তো কোনো সামঞ্জস্যতা খুঁজে পাই না আমরা। তবে এই অসামঞ্জস্যতা কি আমাদের জীবনের বিশৃঙ্খল অপূর্বতাই না? চোখ বন্ধ করুন। মনে করার চেষ্টা করুন আপনার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুকে কীভাবে খুঁজে পেয়েছিলেন? কিংবা আপনার প্রিয়তমাকে? কোন ঘটনা প্রবাহ আপনাকে নিয়ে এসেছিল তার কাছে? হয়ত রাস্তায় চলার সময় কোন কোকাকোলার ক্যানে লাথি মারাকে কেন্দ্র করে আপনার পরিচয় হয় আপনার জীবনের সবচেয়ে কাছের বড় ভাইটির সাথে। হয়ত কোনোদিন রাস্তার বাসি ঝালমুড়ি খেয়ে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে পরীক্ষা খারাপ হলো, সেই খারাপ রেজাল্ট আপনার জন্য খুলে দিলো সম্পূর্ণ নতুন এক সুযোগ, এবং আপনার বর্তমান জীবন সেই সুযোগের চূড়ান্ত ফলাফল। আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন এই অপূর্ব বিশৃঙ্খলাগুলোকে? ঠিক একইভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না প্রবাহী পদার্থের কোলাহলকে। কারণ পুকুরের পাড়ে কয়েক ফোঁটা পানির সামান্যতম আণবিক পরিবর্তন ধেয়ে যায় অসামান্য বিশাল বৈশ্বিক জলবায়ু প্যাটার্নের দিকে। 

ছবিঃ প্রজাপতি-তত্ত্ব। সবকিছু কি এভাবেই ঘটে? ছবি কৃতজ্ঞতাঃ উইজডম নাগেটস।

নেভিয়ার-স্টোকস সমীকরণ বোঝার কোনো রাজকীয় রাস্তা নেই। আমাদের জ্ঞান সীমিত এবং যতটুকু আমরা এ পর্যন্ত জানি তা এসেছে অসংখ্য বিজ্ঞানীর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নির্ঘুম রাতের বিনিময়ে। তারপরেও, আশা করি আমার এই সিরিজের লেখাগুলোর মাধ্যমে আমি এই সমীকরণের পিছনের দর্শন, কার্যকারিতা, এবং প্রয়োগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষদের কাছে তুলে ধরতে পারবো। 

লেখাটি 0-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading