মানবজাতি এক দুঃসাহসিক প্রাণী। পৃথিবীপৃষ্ঠে নিজেদের সফল আবির্ভাবের শুরু থেকে আজ অবধি অজানাকে জানার চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। প্রাগৈতিহাসিক কালে কখনো উদ্দাম সমুদ্র পেরিয়ে, কখনো নির্জন পাহাড় ডিঙিয়ে, কখনো আবার জলের অতলে হিংস্র প্রাণীদের মাঝে ডুব দিয়ে, আর এখন মহাশূন্যের পানে হাত বাড়িয়ে– দুরন্তপনায় কখনোই পিছিয়ে ছিলো না মানুষ।
১৯৬৯ সালে চন্দ্রপৃষ্ঠে মানুষের সফল অবতরণের পর এই দুরন্তপনার পরিধি আরও বৃদ্ধি পায়। প্রসারিত হয় আরও দূরে– পৃথিবীর সীমানা পেরিয়ে নিঃসীম অন্ধকার মহাশূন্যের পানে। দূরের লক্ষ্য বলতে— মঙ্গল, শুক্র, বৃহস্পতি, শনির উপগ্রহ, এমনকি একদিন হয়তো অন্যকোনো নক্ষত্রের গ্রহ-উপগ্রহেও মানবজাতির সক্ষমতার দেখা মিলবে। দৃষ্টিগোচর হবে সফল মহাকাশ অভিযাত্রার রোমাঞ্চকর অনুভূতির গল্প।
এ স্বজাতির চিরন্তন স্বপ্ন, মহাবিশ্বের তাবৎ রহস্যের মূলোৎপাটন ঘটানো। উন্মোচন করা এর অত্যাশ্চর্য শৈল্পিক ঘটনামালা। পৃথিবীর অধিবাসী হিসেবে সেখানে দাপিয়ে বেড়ানোরও প্রবল ইচ্ছা। আচমকা একদিন বুদ্ধিমান প্রাণীদের সাক্ষাৎ পাওয়ার স্বপ্নও তাদের প্রবল আকাঙ্ক্ষা।
আর তাই, চাঁদের বুকে মানুষের প্রথম পদচিহ্ন, মঙ্গলের মাটিতে অভিযানের পরিকল্পনা— এ সবকিছুই ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযাত্রার পূর্ব প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়।
কিন্তু, রহস্যময় মহাকাশ এক বিশালায়তনের অন্ধকার চাদরে আবৃত। প্রতিটি মহাকাশ অভিযানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিপুল ঝুঁকি ও সীমাবদ্ধতা, মানব শরীরে মহাকাশ ভ্রমণের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি! ভাসমান সে পরিবেশে— রেডিয়েশন, ওজনহীনতা, খাদ্য ও অক্সিজেন স্বল্পতা, মানসিক চাপ, স্বাস্থ্য সমস্যা— এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অভিযান পরিচালনাই সবচেয়ে বড় কাজ।
কেননা, মহাকাশের প্রতিকূল পরিবেশ মানবদেহের জন্য উপযুক্ত নয়। সেখানে বেঁচে থাকার জন্য যথাযথ প্রযুক্তি, প্রস্তুতি, পর্যাপ্ত খাবার-সরঞ্জাম ও আরও নানাবিধ বিষয়েরও প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় পৃথিবীর মায়া ছেড়ে হাজারো কিলোমিটার দূরে পাড়ি জমানোর শক্ত মনোবল। আপনজনের সঙ্গ ছেড়ে প্রতিকূল সে পরিবেশে বসবাসের মানসিক সক্ষমতা।
আর তাই, আজকাল বিজ্ঞানীরা ভাবছেন– এআই চালিত রোবটগুলো কি মহাকাশ অভিযানে মানুষের বিকল্প হতে পারে? চলুন আজ এ বিষয়েই আলোকপাত করা যাক। জেনে আসা যাক, মহাকাশ অভিযানে মানুষ ও রোবটের ভবিষ্যৎ পথচলা।

সূচনা
মহাকাশ অভিযানে রোভারের ব্যবহার বহুদিনের। অনেককাল পূর্ব থেকেই তারা সফলভাবে মহাকাশ অভিযানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চন্দ্র ও মঙ্গলপৃষ্ঠে। কিউরিওসিটি, পারসিভিয়ারেন্স, স্পিরিট, অপরচুনিটি, সোজার্নার তাদেরই কতক। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে রোবোনট, কানাডআর্ম ২, ডেক্সট্রের মতো রোবটগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ গুরুত্ববহ সরঞ্জাম সারাতে।
বর্তমান সময় এআই এর যুগ। এআই এর যুগান্তকারী আবির্ভাব বিজ্ঞান মনে নতুন ভাবনার খোরাক জোগাচ্ছে। আশা দেখাচ্ছে মহাকাশ অভিযানের দারুণ সম্ভাবনার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং রোবোটিক্সের সম্মিলিত উন্নতি আশির্বাদ হয়ে ধরা দিবে বলে বিশ্বাস বিজ্ঞানীদের।
তাদের ভাবনা এখন– মানবজাতির ক্ষতির কথা ভেবে মহাকাশ অভিযানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন এআই রোবট প্রেরণ করা। অনেকে মনে করছেন, ভবিষ্যতে মানুষের জায়গায় রোবটরাই মহাকাশের গভীরে অভিযান চালাবে। মানুষের হয়ে মঙ্গলে তৈরি করবে ছিমছাম মানব বসতি।
কিন্তু এই পরিবর্তন কীভাবে আসতে পারে? এতে করে কি মানুষের স্থান এআই দখল করে নেবে? নাকি এআই এবং মানুষ সহযোগী হিসেবে কাজ করবে? আজকের এই লেখায় আমরা এসব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজবো। তার আগে দেখব বর্তমান মহাকাশ অভিযানে মানবজাতির সীমাবদ্ধতা।

মহাকাশ অভিযানে মানবজাতির সীমাবদ্ধতা
মহাকাশ অভিযান রোমাঞ্চকর হলেও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ, আছে নানাবিধ সীমাবদ্ধতা। মানুষ চাইলেই সে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারে না। যেমন:
শারীরিক চ্যালেঞ্জ
মনুষ্যদেহ মহাশূন্যের বৈরী পরিবেশের জন্য উপযুক্ত নয়। উপযুক্ত নয় জটিল সে পরিবেশে দীর্ঘদিনের জন্য বসবাস করাও। ওজনহীন সে পরিবেশে শরীরের হাড় ও পেশির ঘনত্ব ধীরে ধীরে কমে আসে, সমস্যা হয় রক্ত সঞ্চালনে, হ্রাস পায় চোখের দৃষ্টিশক্তি। কখনো কখনো এমন হয় যে, দেহের কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমও দুর্বল হয়ে পড়ে। মহাকাশচারীরা বেশ কয়েক মাসের জন্য মহাকাশে অবস্থান শেষে ফিরে আসার পর তাদের জীবন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হতে অনেক দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন পড়ে।
কসমিক রেডিয়েশন
পৃথিবীর প্রাণীকূলের জন্য বায়ুমণ্ডল এক আশির্বাদপুষ্ট সুরক্ষাচাদর। মহাশূন্য থেকে আগত নানাবিধ ক্ষতিকর রশ্মি থেকে এটি আমাদের সুরক্ষা দেয়। রক্ষা করে নানাবিধ রোগব্যাধি থেকে। কিন্তু মহাকাশে তো কোনো বায়ুমণ্ডল (সুরক্ষা চাদর) নেই। তাহলে? যা হওয়ার তা-ই হয়, সেখানে নভোচারীরা শক্তিশালী কসমিক রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসে, যা সৃষ্টি করে ক্যান্সারসহ নানান জটিল রোগের।
মানসিক ভারসাম্যহীনতা
দীর্ঘকাল মহাকাশ পরিভ্রমণ মানুষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। দুর্বল করে দিতে পারে ভেতরের স্বাভাবিক কর্মস্পৃহা। পরিবার-পরিজন ছেড়ে বিচ্ছিন্ন বসবাস, কোণঠাসা স্থানে দীর্ঘ সময় অবস্থান, একই ধরনের কাজ বারবার করতে গিয়ে একঘেয়েমি— এজাতীয় আরও নানাবিধ মানসিক চাপ তৈরি করে।
খাবার ও অক্সিজেনের সংকট
মানবদেহের জন্য খাবার এক অত্যাবশকীয় উপাদান। দেহের স্বাভাবিক কার্যাদি পরিচালনার চালিকাশক্তি। এর পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন পানি, অক্সিজেন এবং বিশ্রামেরও খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজন আরও নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদির। কিন্তু, দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার জন্য এসবের পর্যাপ্ত যোগান সরবরাহ করা খুবই ব্যয়বহুল ও জটিল কাজ।
ব্যয়বহুল অভিযান
মানুষকে মহাকাশে পাঠানো এবং নিরাপদে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বিশেষ কৌশলে সৃষ্ট ক্যাপসুল, লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম, নিরাপত্তা সরঞ্জামের যোগান— এসবের জন্য বিশাল খরচের দরকার।
এত এত চ্যালেঞ্জের কারণে বিজ্ঞানীরা এখন ভাবছেন, যদি মানুষের বদলে এআই চালিত রোবট পাঠানো যায়, তবে কি অভিযান সফল হবে? চলুন মহাকাশ অভিযানে রোবটের কার্যক্ষমতা দেখে আসা যাক।

এআই রোবট ও মহাকাশ অভিযানের ভবিষ্যৎ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও রোবোটিক্সের উন্নত সংস্করণ পৃথিবীবাসীর সামনে নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। মেলে ধরেছে এক অপার সম্ভাবনাময় দিগন্ত। অত্যাধুনিক রোবটে এআই সংযোজন মনুষ্যবিহীন মহাকাশ অভিযানে মানবজাতির সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। কিন্তু কীভাবে?
রোবটদের অভিযোজন ক্ষমতা
রোবটরা প্রযুক্তিগত উপাদানে সৃষ্ট এক প্রকার যন্ত্র কেবল। বৈরী পরিবেশে তাদের দৈহিক ক্ষতির সম্ভাবনা তেমন নেই। তারা ক্ষতিকর বিকিরণ সহ্য করতে পারে, কাজ করতে পারে দীর্ঘক্ষণ মহাকর্ষহীন পরিবেশে। এসময় খাদ্য বা বিশ্রামেরও প্রয়োজন হবে না।
স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ
আধুনিক এআই সিস্টেম এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে তারা মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নাসার পার্সেভিয়ারেন্স (Perseverance) রোভার বর্তমানে মঙ্গলে কাজ করছে, যেখানে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাস্তা খুঁজে নিতে পারে, নমুনা সংগ্রহ করতে পারে, এমনকি তার নিজস্ব সমস্যাগুলোও সমাধান করতে পারে। আর তাই এআই সংযোজিত রোবটগুলো তাদের চেয়েও অধিকতর স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হবে।
ব্যয় হ্রাস করা
মানুষদের মতো রোবটদের অতসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রয়োজন পড়ে না। প্রয়োজন পড়ে না নানাবিধ খাবার, পানি, অক্সিজেন, নিরাপত্তা সামগ্রীর। রোবট পাঠালে এসব অক্সিজেন, খাবার, নিরাপত্তা ব্যবস্থার খরচ কমে আসবে। হ্রাস পাবে অযাচিত স্বাস্থ্য ঝুঁকিও। ফলে ব্যয় কমে যাবে বহুলাংশে।
দীর্ঘমেয়াদী অভিযান পরিচালনা
রোবট অনির্দিষ্টকালের জন্য মহাকাশে থাকতে পারে, যেখানে মানুষ কয়েক মাসের বেশি টিকে থাকতে পারে না। ১৯৭৭ সালে মহাকাশে ভয়েজার ১ ও ২ পাঠানো হয়েছিল, যা এখনো সংকেত পাঠাচ্ছে!
উন্নত মেশিন লার্নিং ও এআই
এআই এখন কেবল নির্দেশ পালনের জন্য নয়, বরং নিজেই শেখার ক্ষমতা রাখে। ভবিষ্যতের রোবট আরও বেশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে এবং নিজেরাই নতুন নতুন কৌশল তৈরি করতে সক্ষম হবে।

মানুষ বনাম এআই রোবট: কে কোথায় এগিয়ে?
রোবট
• বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করতে পারবে।
• অক্সিজেন, খাদ্য বা বিশ্রামের প্রয়োজন নেই।
• ক্ষতিকর বিকিরণ বা মহাকর্ষহীনতার সমস্যা নেই।
• দীর্ঘমেয়াদী অভিযানে অংশ নিতে পারবে।
• ব্যয় অনেক কম হবে।
মানুষ
• জটিল সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে পারে।
• আবেগ, সৃজনশীলতা ও নৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা রাখে।
• কার্যকর চিন্তাভাবনার সামর্থ বেশি।

ভবিষ্যতের চিত্রপট
মানুষ এবং রোবট দুজনেই প্রয়োজনীয়। রোবট যেখানে মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে তারা নেতৃত্ব দেবে। কিন্তু জটিল সিদ্ধান্ত এবং গবেষণায় মানুষের ভূমিকা অপরিহার্য থাকবে। মহাকাশ অভিযানে এআই রোবটদের ভূমিকা কী হতে পারে তা নিয়েই ভাবনার সময় এখন। তাদের কর্মপরিধি কোথায় হবে সেসবও সময়ই বলে দেবে। তবে, তারা যেসব জায়গায় নিজেদের মেলে ধরতে পারে, তা হলো–
স্বয়ংক্রিয় মহাকাশ গবেষণায়
নাসা, স্পেস এক্স, ইএসএ, রসকসমস ও সিএনএসএ’র মতো মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই মঙ্গলে মানববসতি গড়ার স্বপ্ন বুনছে। ইলন মাস্কের মাথায় ঘুরছে আরও চমকপ্রদ চিন্তা– মঙ্গলে স্বয়ংসম্পূর্ণ উপনিবেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন।
মাস্কের ভাবনা, যদি মানবজাতি শুধু পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে একসময় মহাজাগতিক বিপর্যয়ের কারণে (যেমন বিশাল উল্কাপাত বা জলবায়ু পরিবর্তন) ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তাই তিনি চান, মানুষ বহুগ্রহে (multiplanetary) বসবাসকারী প্রজাতি হয়ে উঠুক। বেড়ে উঠুক একটি আন্তগ্রহীয় (interplanetary) প্রজাতি হিসেবে।
আর তাই, বলাই যায়, ভবিষ্যতে পৃথিবীর সীমানা পেরিয়ে চাঁদ বা মঙ্গলে সম্পূর্ণ রোবট পরিচালিত গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হতে পারে, যেখানে মনুষ্যবিহীন পরিবেশে কিংবা মানুষদের সঙ্গে গবেষণাকার্য পরিচালনা করবে রোবটরা।
এআই নভোচারী সহকারী
মানুষের সহযোগী হিসেবে এআই রোবট থাকবে, যারা জটিল সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। মহাকাশচারীদের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সহায়তা করবে তারা। মহাকাশযানের যান্ত্রিক সমস্যা শনাক্ত ও সমাধান করা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। মহাকাশচারীদের মানসিক সঙ্গী হিসেবে কাজ করা। এসব সহকারী মহাকাশযান পরিচালনা, ডেটা বিশ্লেষণ, যোগাযোগ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করতে পারে।
স্বয়ংক্রিয় গ্রহ অনুসন্ধান মিশন
মানুষের আগে রোবট পাঠিয়ে মহাকাশের নতুন গ্রহের বাসযোগ্যতা যাচাই করা হবে এর মাধ্যমে। ইলন মাস্ক ইতোমধ্যেই এমনকিছু ভাবছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালে মঙ্গলে মানুষ প্রেরণের পূর্বে ২০২৬ সালে এক বা একাধিক এআই রোবট প্রেরণ করবে সে। চেখে দেখবে সেখানকার উপযোগী পরিবেশ, আবহাওয়া। আর তাই, অদূর ভবিষ্যতেও এজাতীয় রোবট প্রেরণ থেমে থাকবে না।
চাঁদ ও মঙ্গলে রোবট কলোনি
মানুষের সহযোগী হিসেবে রোবটরা যখন কাজ করবে, তখন তাদের আলাদা একটি কলোনিরও প্রয়োজন হতে পারে। প্রয়োজন হতে পারে তাদের সংঘবদ্ধ কার্যপরিচালনায়। এক্ষেত্রে রোবট কলোনি তৈরি করা আবশ্যক। এই রোবট কলোনিগুলো মূলত অগ্রগামী দল হিসেবে কাজ করবে। চাঁদ ও মঙ্গলে রোবট কলোনি ভবিষ্যতে মানব বসতির ভিত্তি হিসেবেও কাজ করবে। এটি হবে মহাকাশে বাসযোগ্য শহর গড়ায় আমাদের প্রথম ধাপ!

পরিশেষে
প্রশ্ন উঠতে পারে, এআই কি সত্যিই মানুষের বিকল্প হতে চলেছে? এর যৌক্তিক উত্তর হবে– এআই রোবটরা মানুষের বিকল্প নয়, বরং তারা আমাদের এক নতুন যুগের সহযাত্রী। মহাকাশ অভিযানের যেসব ঝুঁকি মানুষকে সীমাবদ্ধ করে রাখে, সেসব ক্ষেত্রে রোবটদের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তবে মানবজাতি কেবল প্রযুক্তি নির্ভর নয়, বরং আবেগ, অনুভূতি, সৃজনশীলতা ও অভিযোজন ক্ষমতাও আমাদের অন্যতম বড় শক্তি। আর তাই ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানে আমরা একসঙ্গে রোবট এবং মানুষদের দেখতে পাবো এক নতুন যুগের মহাজাগতিক অভিযাত্রী হিসেবে।
হয়তো দেখতে পাবো, পৃথিবী থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের কোনো গ্রহ-উপগ্রহে, মানুষ ও রোবট একসঙ্গে কাজ করছে। তৈরি করছে নিজেদের জন্য নতুন আবাসভূমি। ভাবুন তো, কী চমৎকার দৃশ্য হবে সেটি?

তথ্যসূত্র:
- Future of space travel: Could robots really replace human astronauts? – BBC
- AI in Space Exploration: The Pros and Cons of Human and Robotic Missions – Medium
- AI And Space Exploration: Current and Future Applications – Artificial Intelligence +
- Humans versus robots for space exploration and development – Space Policy.
Leave a Reply