থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে,
কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে
দেশ হতে দেশ দেশান্তরে ছুটছে,
তারা কেমন করে,
কিসের নেশায় কেমন করে মরছে যে বীর লাখে লাখে,
কিসের আশায় করছে তারা বরণ মরণ-যন্ত্রণারে
-কাজী নজরুল ইসলাম
মানুষ প্রাণী হিসেবে অত্যন্ত কৌতূহলী। হাজার হাজার বছর আগে, যখন আমাদের পূর্বপুরুষরা গুহায় বসবাস করত, তখন কৌতূহলই তাদের আগুন আবিষ্কারের দিকে ধাবিত করেছিল। ঝড়ের রাতে আকাশ থেকে পড়া বিদ্যুৎ আর গাছপালা পোড়ার দৃশ্য দেখে তাদের মনে প্রশ্ন জেগেছিল – “এই আগুন কী? আমরা কি একে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি?” এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তারা শিখল কীভাবে আগুন জ্বালাতে হয়।
এই আগুন কেবল তাপ এবং আলোই দেয়নি, এটি মানুষের চিন্তার জগতেও বিপ্লব এনেছিল। কৌতূহলের কারণে মানুষ আগুন দিয়ে খাবার রান্না করতে শিখল, যা তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাল। কৌতূহলই তাদের শিকার, কৃষি এবং আরও অনেক নতুন আবিষ্কারের দিকে এগিয়ে নিল।পরবর্তীতে, যখন মানুষ নৌকা বানিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিল, তখনও কৌতূহলই ছিল তাদের মূল চালিকাশক্তি। নতুন ভূখণ্ড, নতুন মানুষ, এবং নতুন সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে চাওয়ার ইচ্ছাই সভ্যতাকে আরও সমৃদ্ধ করেছিল।

এই দেখুন না আপনিই কেমন কৌতূহলী, কৌতূহল সম্পর্কে জানার ইচ্ছা থেকে লেখাটি পড়তে পড়তে এতদূর এসেছেন। ছোটবেলায় আমাদের আশেপাশের জগৎ নিয়ে কত প্রশ্ন ছিলো, “আকাশ নীল কেন? কেন বৃষ্টি হয়? সূর্য ডুবে কোথায় চলে যায়? আবার দিনের বেলায় কোথা থেকে হাজির হয়?
আমরা সবসময়ই অজানাকে জানতে চাই। এই অজানাকে জানার কৌতূহলই আমাদের সভ্যতা এগিয়ে নেওয়ার রসদ জুগিয়েছে।কৌতূহলের কারণেই আমরা নতুন কিছু শিখি, শেখার প্রক্রিয়াকে আমাদের মস্তিষ্ক অভ্যন্তরীণভাবে মার্কিং করে রাখে যে আমরা কতটা ভালোভাবে শিখছি, আমাদের অগ্রগতি কতদূর। কৌতূহল যখন তীব্র হয় তখন শেখা আরও সহজ এবং আনন্দময় হয়। জার্মানির টিউবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী কৌমুয়ারাম এ নিয়ে বলেছেন,
“কোনো কিছু শেখার পর যদি কারো ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে তাহলে সেটা পরবর্তীতে নতুন কিছু শেখার অনুপ্রেরণা জোগায়”
আমরা কেন কৌতূহলী এবং কৌতূহল কীভাবে কাজ করে এটা নিয়ে বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছেন কিন্তু এখনো খুব বেশিদূর এগোনো যায়নি। এর কারণ হলো কৌতূহল শব্দটির জন্য একটি একক এবং সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞার অভাব। অনেক গবেষক মনে করেন, কৌতূহল মূলত তথ্য অনুসন্ধানের একটি বিশেষ ধরনের প্রক্রিয়া। তবে, কৌতূহল এবং তথ্য অনুসন্ধানের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। নেচার রিভিউস সাইকোলজি এর ২০২৪ সালের একটি পর্যালোচনায় ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমি জে. জিরাউট এবং তার সহকর্মীরা বলছেন যে কৌতূহল তখনই জন্মায় যখন এটি কোনোরকমের বাধ্যবাধকতা ছাড়া আমাদের ভেতর থেকে আসে।
যেমন ধরুন একটি শিশু যদি রংধনু দেখে জিজ্ঞাসা করে, “রংধনু কী? এটার সাতটা রং কেন? এটা কীভাবে তৈরি হয়?” তাহলে এটি হলো কৌতূহল। কিন্তু যদি সেই একই প্রশ্ন আসন্ন বিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য করা হয়, তাহলে এটি আর কৌতূহল থাকে না বরং প্রয়োজনের কারণে হয়। সব তথ্য জানার ইচ্ছাই কৌতূহল নয়। যেমন, মেডিকেল টেস্টের ফলাফল জানতে চাওয়া দুশ্চিন্তা থেকেও হতে পারে, কৌতূহল থেকে নয়।
অনেক গবেষণা যা কৌতূহলের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত কিন্তু সেখানে কৌতূহল শব্দটি সরাসরি ব্যবহার না করে অন্যান্য ভিন্ন বিষয়গুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে । এই ধরনের বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে অনুসন্ধান, রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং (reinforcement learning), লেটেন্ট লার্নিং, নিউফিলিয়া বা নতুন কিছু পছন্দ করার প্রবণতা, এবং তথ্য জানার নিজস্ব ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ।
অপরদিকে যেসব গবেষণা কৌতূহল শব্দটি ব্যবহার করেছে, সেগুলোর ক্ষেত্রও এতটাই বিস্তৃত যে, এটি একদিকে যেমন কুইজ প্রশ্নের উত্তর জানার আকাঙ্ক্ষাকে বোঝায় অন্যদিকে চারপাশের পরিবেশের দিকে তাকানোর সময় যাদৃচ্ছিকভাবে কোনো জিনিসের উপর দৃষ্টি দেওয়াকেও বোঝায় । এই কারণে, কৌতূহল নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্র ব্যাপক এবং বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে বিভাজিত। এটি কৌতূহলের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা নির্ধারণকে আরও জটিল করে তোলে।
কৌতূহলকে ব্যাখ্যা করতে আমেরিকার কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জর্জ লোয়েনস্টাইন ১৯৯৪ সালে “তথ্য শূন্যতা” তত্ত্বের মূল ধারণা দেন। তার মতে কৌতূহল তখনই জন্মায় যখন আমাদের মনে বিদ্যমান জ্ঞান ও যা জানা দরকার তার মধ্যে একটি ফাঁক বা ‘শূন্যতা’ থাকে। সহজভাবে বলতে গেলে, আমরা যখন কোনো বিষয়ে অসম্পূর্ণ বা আংশিক তথ্য ধারণ করি, তখন সেই অসম্পূর্ণতা আমাদের মনে একটি অস্বস্তিকর বা অপ্রাপ্তির অবস্থা সৃষ্টি করে। এই অবস্থাকে দূর করার জন্য আমাদের মন প্ররোচিত হয়—অর্থাৎ, আমরা জানার জন্য উৎসুক হয়ে উঠি।
ক্যালিফর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনলোজির গবেষক মিন জিয়ং ক্যাং এবং তার সহকর্মীরা লোয়েনস্টাইনের তথ্য শূন্যতার তত্ত্ব পরীক্ষা করতে কৌতূহল প্ররোচনার একটি কাজ পরিচালনা করেছিলেন। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের কুইজ প্রশ্ন পড়ানো হয় এবং তাদের কৌতূহলের অনুভূতি এফএমআরআই (fMRI) মেশিনে পরীক্ষা করা হয়। আমাদের মস্তিষ্কে C আকৃতির দেখতে একটি অংশ আছে যাকে বলা হয় কোডেট নিউক্লিয়াস (caudate nucleus) এবং ফ্রন্টাল লোবে আছে ইনফিরিয়র ফ্রন্টাল গাইরাস (Inferior frontal gyrus- IFG) এই দুটি মস্তিষ্কের অংশ বিভিন্ন ধরণের পুরস্কারের প্রত্যাশায় সক্রিয় হয়। পরীক্ষায় দেখা যায় মস্তিষ্কের এই অংশদুটি সক্রিয় হয়েছে। এই ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে কৌতূহল একটি পুরস্কারের প্রত্যাশা তৈরি করে, যা লোয়েনস্টাইনের তত্ত্বের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
আবার প্রশ্নের উত্তর প্রকাশের পর মস্তিষ্কের প্যারাহিপ্পোক্যাম্পাল গাইরাস (Parahippocampal gyrus) এবং হিপ্পোক্যাম্পা (hippocampus)-এর মতো শেখা এবং স্মৃতির সাথে সম্পর্কিত অংশগুলোর মধ্যে কার্যকলাপ দেখা যায়। এটি দেখায় যে কৌতূহল শেখার সময় স্মৃতি তৈরিতে সাহায্য করে, বিশেষত তখন যখন অংশগ্রহণকারীদের উত্তর ভুল হয়। সেসময় শেখার মাত্রা সবচেয়ে বেশি হয়।
কৌতূহল নিয়ে একটা চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, এটা যে শুধু আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা নয় । ইঁদুর, মাছ, বানর সহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে নতুন কিছু জানার ইচ্ছা বিদ্যমান। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ভিক্টর আজুওন বলেন, “প্রাণীরা জানে, তথ্য-ই তাদের টিকে থাকার মূল হাতিয়ার।” একটা ইঁদুর যে গর্ত থেকে বেরোতে ভয় পায়, সেই একই ইঁদুর খাবারের আশায় সব ভয়কে জয় করে নতুন কিছু খোঁজে। এ যেন এক অদৃশ্য শক্তি, যা আমাদের সব অজানা রাস্তায় টেনে নিয়ে যায়।
মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির স্নায়ুবিজ্ঞানী বেঞ্জামিন হেইডেন এবং তার দল একটি পরীক্ষা পরিচালনা করেন যেখানে বানরদের পুরস্কার হিসেবে পানি দেওয়া হয়। বানরদের পুরস্কারটি আগে থেকেই জানতে চাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। দেখা যায়, তারা ৮০-৯০ শতাংশ সময় এই আগাম জানার সুযোগটি বেছে নেয়, এমনকি তারা কেবল তথ্যটি জানার জন্য বড় পুরস্কার হারাতেও রাজি হয় । হেইডেন বলেন, “তারা যেন বলছে যে আমি এতটাই কৌতূহলী যে আমি এখনই এই তথ্যটি জানতে চাই।’”
সুকারম্যান ইনস্টিটিউটের মনোবিজ্ঞানী জেনিফার বুসেল বলেন যে বানর ও ইঁদুর উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রাথমিক পর্যায়ে জড়িত ওএফসি বা অরবিটোফ্রন্টাল কর্টেক্সের (OFC) নিউরনগুলো পানির পুরস্কার এবং সেই পুরস্কারের পূর্বাভাস দেওয়া সংকেত, এই দুটি জিনিসের প্রতি ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। বুসেল বলেন, “নতুন কিছু শেখা ও তথ্য সংগ্রহ করার জন্যই সম্ভবত এমন একটি বিবর্তনের মাধ্যমে এমন একটি প্রবৃত্তি তৈরি হয়েছে কারণ প্রকৃতির জগতে ৯৯ শতাংশ সময় তথ্যটি প্রাণীর জন্য উপকারী।” এটা শিকারীর ভয়কে অতিক্রম করে প্রাণীকে গর্ত থেকে বের করার জন্য প্রকৃতির নেওয়া কৌশল। মস্তিষ্ক যদি এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করে যেখানে তথ্য সংগ্রহ এবং অনিশ্চয়তা কমানোকে পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে যেকোনো প্রাণীই ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা দেখাবে।
আমেরিকার ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী ইলিয়া মনোসভ এবং তার সহকর্মীদের ২০২৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ওএফসি নিউরনের কোডিং করা কাঁচামাল নিয়ে কাজ করার এবং তথ্য ও পুরস্কারের মান একত্রিত করার দায়িত্ব পালন করে মস্তিষ্কের মধ্যাংশের একটি অংশ, যার নাম ল্যাটারাল হ্যাবেনুলা। বিভিন্ন প্রজাতিতে ল্যাটারাল হ্যাবেনুলা উপস্থিতি দেখা যায়। এটার কাজ হচ্ছে আমাদের প্রেরণাগুলোর মধ্যে কোনটা কম গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা নির্ধারণ করা। মনোসভ বলেন, “আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা খুব কমই শুধুমাত্র পুরস্কার বা শুধুমাত্র তথ্য জানার আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের মস্তিষ্ক আসলে এই দুটি প্রয়োজনের মধ্যে তুলনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। উদাহরণস্বরূপ, “আমি এখন ঘুমাব, নাকি রহস্য উপন্যাসের শেষ অধ্যায়টি পড়ে ফেলব?” মস্তিষ্ক প্রতিনিয়ত এই ধরনের ভারসাম্য তৈরির কাজ করে। এটি আমাদের বাস্তব চাহিদা এবং কৌতূহলের মধ্যে জটিল হিসাব করে একটি উপসংহারে পৌঁছায়।”
যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী জ্যাকুলনি গটলিব এবং তার সহকর্মীরা মিলে কৌতূহল নিয়ে একটি পরীক্ষা করেন। তারা অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন জীব এবং জড়বস্তুর ছবি দেখান। এই ছবিগুলো স্পষ্টতা অনুযায়ী বিভিন্ন রকম ছিল- কিছু সহজেই চেনা যায়, আবার কিছু ছিল অস্পষ্ট। দেখা যায় মস্তিষ্ক জীবিত ও জড় বস্তু আলাদা করতে “বারকোড” এর মতো সংকেত ব্যবহার করে। যখন মানুষ নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারে তারা কী দেখছে তখন মস্তিষ্ক বস্তুটি সম্পর্কে স্পষ্ট সংকেত পাঠায় । কিন্তু যখন তারা সুনিশ্চিত নয়, তখন এই সংকেত অস্পষ্ট হয়। এই সংকেত ফ্রন্টাল কর্টেক্সে পৌঁছালে তা আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস অথবা কৌতূহল জাগায়। মনে যত বেশি অনিশ্চয়তা থাকে কৌতূহলের পরিমাণও থাকে তত বেশি হয়। এই গবেষণা দেখায় যে মস্তিষ্ক কীভাবে অনিশ্চয়তা প্রক্রিয়া করে এবং এটি কৌতূহলের অনুভূতি কীভাবে সৃষ্টি হয়।
কীভাবে কৌতূহলী কম্পিউটার তৈরি করা যায় তা নিয়ে প্রচেষ্টা অনেক দিনের। আমাদের কম্পিউটারগুলো আদতে কৌতূহলী নয়। এগুলো শুধুমাত্র তার, মোটর এবং সেন্সরের সমাহার। ২০১৬ সালে যখন গুগল ডিপমাইন্ড এমন একটি কম্পিউটার তৈরি করেছিল যা জটিল চীনা খেলা গো-তে ১৮ বার বিশ্ব শিরোপাধারীকে পরাজিত করেছিল, তখনও সেই কম্পিউটার তার উন্নত অনুসন্ধান ক্ষমতা ও প্রোগ্রাম করা তথ্যের ওপর নির্ভর করেছিল। “কৌতূহল ও শেখার মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক আছে” এই আইডিয়াটা পরীক্ষা করতে ফ্রান্সের ইন্সটিটিউট ফর রিসার্চ ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড অটোমেশন এর গবেষক পিয়ের ইভ ওউদেয়ার ও তাঁর সহকর্মীরা কাজটি করেছেন টর্সো নামের একটি রোবট তৈরি করেছেন।
এই রোবটটিকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে যেভাবে একটি শিশু তার চারপাশ থেকে শিখে বড় হয়, এটিও তেমনটাই করবে। টর্সোর শেখার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো এমন কিছু খুঁজে বের করা, যা তার উন্নতির পথ সহজ করে। যত বেশি টর্সো শেখে, ততই সে নিজেই বুঝতে শেখে কোন কাজটি কার্যকর। প্রতিটি সঠিক অনুমানে সে পুরস্কৃত হয়, যা তাকে আরও সামনে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। এই প্রক্রিয়া মূলত রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিংয়ের একটি অ্যালগরিদমিক রূপ, যেখানে শেখার সঙ্গে প্র্যাকটিসের যোগসূত্র তৈরি করা হয়। একটি শিশুকে শিখতে হলে অবশ্যই প্র্যাকটিস করতে হয়। কিন্তু প্র্যাকটিসে উদ্দীপনা আনতে পারে তার প্রেরণামূলক সিস্টেম। কৌতূহলই হলো সেই শক্তি, যা জীবকে নতুন কিছু শেখার প্রতি আগ্রহী করে তোলে এবং শেখার প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখে।
পরীক্ষায় দেখা যায় কৌতূহলের কারণে টর্সো খুব দ্রুত এবং কার্যকরভাবে নড়াচড়া এবং চলাফেরা শিখে ফেলে। এই ধরনের পরীক্ষাগুলি দেখায়, কৌতূহল ও শেখার মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক আছে। কৌতূহলই মানব মনের চিরন্তন মশাল। এটা আঁধারের বুক চিরে আমাদের আলোর পথ দেখায়। কৌতূহলের ডানায় ভর করে আমরা পেরিয়েছি সমুদ্র, ছুঁয়েছি আকাশ, আর এগিয়েছি মহাকাশের অসীমে। অজানার আহ্বানে সাড়া দেওয়া আমরা কখনো থামাবো না কারণ মানবতার আসল পরিচয় লুকিয়ে আছে এই অনন্ত অনুসন্ধানের মধ্যেই।
Leave a Reply