বায়োরেমিডিয়েশনঃ প্রকৃতির ক্ষত সারানোর হাতিয়ার যে প্রযুক্তি

বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্য মতে, পরিবেশ দূষণ প্রত্যেক বছর প্রায় ৯০ লাখ মৃত্যুর জন্য দায়ী। তার মধ্যে দূষিত বায়ু মৃত্যু ঘটায় ৭০ লাখ লোকের। অর্থাৎ পরিবেশ দূষণ দিন দিন আরো প্রাণঘাতী হবার দিকে যাচ্ছে। মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি নষ্ট করছে বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য, বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীকে। এমতাবস্থায় মাঠে নামানো হয়েছে এমন এক ডিকন্ট্যামিনেশন প্রযুক্তিকে, যার মাধ্যমে পরিবেশের দূষক ও বিষাক্ত পদার্থগুলো ধবংস করার জন্য প্রকৃতির নিজস্ব বিয়োজক (যারা বাস্তুতন্ত্রে মৃত জীবদেহ বা বর্জ্য থেকে শক্তি অবমুক্ত করে) এর কার্যকারিতাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই প্রযুক্তির নাম বায়োরেমিডিয়েশন। 

এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক ও শৈবালকে ব্যবহার করে পরিবেশের দূষক পদার্থকে আংশিক বা সম্পূর্ণ রূপে নিষ্ক্রিয় করে দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়। টেকনিক্যালি, বায়োরেমিডিয়েশন একটি বিশেষ রকমের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং কাজের দিক থেকে এখানে ব্যাক্টেরিয়ার ভূমিকাই মুখ্য, যারা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থকে ভেঙে পচনযোগ্য জৈব উপাদানে পরিণত করে।

দূষক এবং বিষাক্ত পদার্থগুলোর পরিমাণ যদি কমও থাকে, তবুও তাদের ভূমিকা কম বিধবংসী নয়। কারণ বাস্তুতন্ত্রের নিম্নতর থেকে উচ্চতর ট্রফিক লেভেলে গিয়ে জমা হতে পারে, যেটাকে বলা হয় বায়োম্যাগনিফিকেশন। এই দূষক পদার্থগুলো কী কী? ভারী ধাতু, যেমন ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, ভ্যানাডিয়াম, নিকেল, মার্কারি, লেড, আর্সেনিক, টাংস্টেন এগুলোই দূষক এবং জীবের জন্য বিষাক্ত। 

জর্জ এম রবিনসন

আধুনিক বায়োরেমিডিয়েশনের পথচলা শুরু হয়েছিল একজন পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলী জর্জ এম রবিনসনের হাতে, সেই ১৯৬০ সালের দিকে। তবে প্রাকৃতিক বায়োরেমিডিয়েশনকে রোমান সভ্যতার লোকেরা নিজেদের সুবিধের জন্য কাজে লাগিয়েছিল। তাদের শহরগুলোতে পানি প্রবাহের নালা থাকতো আর সেখানে অনেক দূষিত পানি জমাও হতো। তাই তারা সেই সময় একটা সিউয়েজ সিস্টেম তৈরি করেছিল, যেখানে দূষিত পানি অনেক প্যাঁচওয়ালা গোলকধাঁধাঁর মধ্যে দিয়ে গিয়ে প্রাকৃতিকভাবে ফিল্টারড হয়ে আবার ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠত। সময়ের তুলনায় অনেক অগ্রসর প্রযুক্তি ছিলো সেটি। রবিনসন সাহেব একালে এসে সেই প্রাকৃতিক পরিশোধনকেই কৃত্রিম পরিবেশে ঘটাতে সক্ষম হলেন, বিশেষ জাতের কিছু অণুজীব দিয়ে। তাঁর উদ্ভাবিত পদ্ধতি ব্যবহার করে সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়া তেল পরিষ্কার করা সম্ভব হলো।

আগেই বলেছি,বায়োরেমিডিয়েশন কাজ করে মাইক্রোঅর্গানিজমের মাধ্যমে, অনেকটা বাফারের মতো। মাইক্রোঅর্গানিজমগুলো মূলত দূষিত পদার্থকে তাদের শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করে, যার ফলে তারা ঐ দূষকগুলোর বিষাক্ততা কমিয়ে ফেলে বা পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়। এর মাধ্যমে প্রকৃতি নিজেই তার ক্ষত সারাতে শুরু করে।

বায়োরেমেডিয়েশনের কত প্রকারের হয়ঃ

বায়োরেমেডিয়েশন প্রধানত দুটি পদ্ধতিতে বিভক্ত। যথা-

  • ইন-সিটু (In-Situ)
  • এক্স-সিটু (Ex-Situ)

ইন-সিটু বায়োরেমিডিয়েশনঃ

এই পদ্ধতিতে দূষিত স্থান বা পরিবেশের ভেতরেই বায়োরেমিডিয়েশন করা হয়। অর্থাৎ, দূষণকারী পদার্থগুলোকে স্থান থেকে সরানো হয় না, বরং সেখানেই প্রাকৃতিক উপায়ে শোধন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ ফাইটোরেমিডিয়েশনের কথা উল্লেখ করা যায়। ফাইটোরেমিডিয়েশন কয়েকটা ভাবে হতে পারে, যেমনঃ  

  • ফাইটোস্ট্যাবিলাইজেশনঃ এখানে গাছের মূল অথবা রাইজয়েড অঞ্চলে তারা দূষক পদার্থগুলোকে আটকে রাখে। মূলে থাকে মাইকোরাইজাল ছত্রাক, যাদের হাইফিতে মেটাল জমা হয়। হাইফি থেকে গ্লোমিউলিন নামক গ্লাইকোপ্রোটিন নিঃসৃত হয়, যা ধাতুগুলোর সাথে যৌগ তৈরি করে ফেলে। ব্যাকটেরিয়াও কম যায় না, সিউডোমোনাস পুটিডা (Pseudomonas putida) এর নির্গত পেপ্টাইড ক্যাডমিয়ামের বিষাক্ততা কমিয়ে দেয়।
  • ফাইটোভোলাটাইজেশনঃ এখানে গাছের মূল দূষক পদার্থকে গ্রহণ করে এবং তাকে বায়বীয় অবস্থায় রূপান্তর করে পরিবেশে অবমুক্ত করে। যেমন: এক জাতের হাইব্রিড পপলার গাছ আছে, যারা ট্রাইক্লোরো ইথিলিনকে ক্লোরিনেটেড অ্যাসিটেট ও কার্বন ডাই অক্সাইডে রূপান্তর করে নিষ্কাশন করে।

যা হোক, ইন সিটু পদ্ধতিতে খেয়াল রাখতে হয় যে-

  • সব দূষক পদার্থ বিয়োজিত হয়েছে কি না
  • দূষিত পানি বা মাটি পরিশোধনের সময় তা কোনোভাবে পার্শ্ববর্তী এলাকায় অনুপ্রবেশ করছে কি না
  • কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ দূষণের সংস্পর্শে আসছে কিনা

ইন-সিটু বায়োরেমেডিয়েশন পদ্ধতিটাই বেশি ব্যবহৃত হয়। ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী বায়োরেমিডিয়েশন শিল্পের রেভিনিউ উঠেছিল ১২,৩৮৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার, যেখানে ইন-সিটু বায়োরেমিডিয়েশনের অবদান ছিল ৬৯৪৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। বায়োরেমিডিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় সেগমেন্ট ইন-সিটু বায়োরেমিডিয়েশনই। ২০২৪ সালে গোটা ইন্ডাস্ট্রির মার্কেট শেয়ারের ৫৬.৬৩ শতাংশই ইন-সিটুর দখলে ছিল। আর অঞ্চল হিসেবে সবচেয়ে বেশি শেয়ারধারী ছিল উত্তর আমেরিকা।

এক্স-সিটু বায়োরেমিডিয়েশনঃ

এই প্রক্রিয়ায় দূষিত মাটি বা পানি সংগ্রহ করে পরিশোধনের জন্য অন্য কোনো স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে শোধন করা হয়।

যেমন বলা যায় ল্যান্ডফার্মিং এর কথা। এক্ষেত্রে দূষিত মাটি খনন করে নিয়ে তার সাথে সার মিশিয়ে ট্রিটমেন্ট বেডের উপর ০.৩ মিলিমিটার পুরু করে বিছিয়ে দেওয়া হয়। অণুজীব তখন দূষক পদার্থকে ভাঙতে থাকে, এবং মাঝে মাঝে মাটির স্তর উলটে পালটে দেওয়া হয়। ছোট জায়গার জন্য উপযোগী না হলেও এটাই তুলনামূলক সস্তা এক্স সিটু বায়োরেমিডিয়েশন পদ্ধতি। 

এছাড়া, প্রাকৃতিকভাবে ঘটা বায়োরেমেডিয়েশনের মাত্রা বাড়াতে বায়োস্টিমুলেশন (অণুজীবের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার জন্য পুষ্টি বা অন্য রাসায়নিক প্রয়োগ) এবং বায়োঅগমেন্টেশন (দূষণ দূর করার জন্য নির্দিষ্ট প্রজাতির অণুজীব প্রয়োগ যা ঐ দূষণকারী পদার্থ ভাঙতে সক্ষম) করা হয়।

বায়োরেমিডিয়েশনের ব্যবহারক্ষেত্রঃ

বায়োরেমিডিয়েশন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, বিশেষত সেখানে যেখানে প্রচলিত শোধন পদ্ধতি ব্যয়বহুল বা পরিবেশগতভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। কিছু প্রধান ক্ষেত্র নিচে তুলে ধরা হলোঃ

মাটির দূষণ দূরীকরণঃ ভারী ধাতু, পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক সারের মতো ক্ষতিকারক দূষকগুলো কে কীভাবে দূর করা হয় সে সম্পর্কিত ইন-সিটু ও এক্স-সিটু অ্যাপ্রোচের কথা ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে।

পানির দূষণ শোধনঃ শিল্প বর্জ্য (বিশেষত কাগজ ও টেক্সটাইল শিল্প), গৃহস্থালির বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য সমৃদ্ধ পানি বা ওয়েস্টওয়াটার শোধনে বহুমুখী বায়োরেমিডিয়েশন এর আশ্রয় নেওয়া হয় । মূলনীতি একটাই, পানি পরিশোধন। পানি থেকে সালফোনেট, সেলেনিয়াম, নিকেল,ক্যাডমিয়াম,মার্কারি, আর্সেনিক,লেড, কিছু পরিমাণ ফসফরাস সরিয়ে ফেলা হয়। তবে পুরোপুরি সরানো যায় না, কিছুটা থেকে যায়। 

একেক শিল্পের দূষিত পানি একেকভাবে পরিশোধন করা হয়। যেমন ফার্মাসিউটিক্যালসের বর্জ্যে অ্যান্টিবায়োটিক, পলিফেনল যৌগ, পলিঅ্যারোমেটিক যৌগ ও মাইক্রোপ্লাস্টিক শোধনের জন্য একাধারে ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল ও ছত্রাক ব্যবহার করতে হয়। ভারতের তামিলনাড়ুতে এমন একটা স্টাডি করা হয়েছিল, যেখানে তারা নয়টা ভিন্ন ভিন্ন সাইট থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়েস্টওয়াটার সংগ্রহ করেছিল এবং অণুজীব দিয়ে তা দূষণমুক্ত করার চেষ্টা করেছিল।

  • প্রথমে তারা বেসিলাস (Bacillus), সিউডোমোনাস (Pseudomonas), রোডোকোকাস (Rhodococcus) প্রভৃতি গণের ব্যাকটেরিয়া দিয়ে দূষিত পানি ট্রিটমেন্ট করার পর পানিতে সালফেট ও টিডিএস বা টোটাল ডিসলভড সলিড (TDS) এর মান উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।
  • কিন্তু কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড বা সিওডি (COD) এর মান বাড়েনি। তখন ক্লোরেলা (Chlorella), ক্লোরোকোকাম (Chlorococcum) এবং নিওক্লোরিস (Neochloris) শৈবাল ব্যবহার করা হয়। তখন বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড বা বিওডি (BOD) ও সিওডি (COD) উভয়ের মানেরই উন্নতি হয়।
  • এরপর ছত্রাক (হোয়াইট রট ফাংগাস) ব্যবহার করে ফেনল যৌগ ভেঙে ফেলা হয়।

    এভাবেই প্রতিটি শিল্পের বর্জ্য পানিকে পরিশোধন করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন বায়োরেমেডিক এজেন্ট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

    তেল দূষণ নিয়ন্ত্রণঃ জলাশয়ে তেল ছড়িয়ে পড়া পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে জলজ প্রাণীর জন্য, কারণ তেল পানির উপর ভাসতে থাকায় তারা যথেষ্ট অক্সিজেন পায় না। বায়োরেমিডিয়েশন পদ্ধতি এক্ষেত্রে বিশেষভাবে অগ্রণী। মাইকোব্যাকটেরিয়াম (Mycobacterium), অ্যালকালিজিনস (Alcaligenes), স্ফিংগোমোনাস (Sphingomonas), সিউডোমোনাস (Pseudomonas) গণের কিছু ব্যাকটেরিয়ার তেলখাদক হিসেবে পরিচিতি আছে। তারা বায়বীয় অক্সিজেনের উপস্থিতিতে তাদের কোষের বায়োইমালসিফায়ার ব্যবহার করে অক্সিজিনেজ এনজাইমের সহায়তায় তেলের হাইড্রোকার্বনগুলোকে ভেঙে ফেলতে থাকে। বায়োস্টিমুলেশন এক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা ৯৬% পর্যন্ত বাড়াতে সক্ষম। এক্ষেত্রে পুষ্টিসমৃদ্ধ জৈবপদার্থ (সেটা না পাওয়া গেলে বাসাবাড়ির বর্জ্য ট্রিটমেন্টের অবশেষ) এর সাথে ফসফরাস ও নাইট্রোজেনযুক্ত অজৈব সার ব্যবহার করে বায়োস্টিমুলেশন করা হয়।

    ক্রুড বা অপরিশোধিত তেলে বিষাক্ত অ্যারোমেটিক ও অ্যালিফেটিক যৌগ থাকে। সেখানে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে শোধনকর্ম চালিয়ে দেখা গেছে যে, তা ৯৩% অ্যালিফেটিক এবং ৮৫% অ্যারোমেটিক পদার্থ দূরীভূত করতে পারে।

    বায়োরেমিডিয়েশনের সুবিধাঃ

    বায়োরেমিডিয়েশন প্রচলিত দূষণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির তুলনায় বেশ কিছু অনন্য সুবিধা প্রদান করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলঃ

    • পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিঃ এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যেখানে কোনও ধরনের কৃত্রিম রাসায়নিকের ব্যবহার প্রয়োজন হয় না। ফলে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব খুবই কম।
    • নিরাপদ এবং কার্যকরঃ এই পদ্ধতিতে মানবস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য কোনও ক্ষতিকর কোনো পদার্থ উৎপন্ন হয় না। ভারী ধাতু, ফ্লোরাইড, আগাছানাশক, কীটনাশক, আর্সেনিক, নাইট্রেট এগুলোকে বায়োরেমিডিয়েশন করার পর যা অবশিষ্ট থাকে (পানি, অক্সিজেন, বায়োমাস) তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো কিছু নয়।
    • অর্থনৈতিক সাশ্রয়ঃ প্রচলিত ট্রিটমেন্ট ফ্যাসিলিটি গুলোর মেশিনারি, শ্রমিক, জ্বালানি খরচের কথা তুলনা করলে বায়োরেমিডিয়েশনের খরচ অনেক কম। কারণ এখানে মেইন্টেনেন্স কম যেহেতু পুরো প্রক্রিয়াটাই প্রাকৃতিকভাবে ঘটছে।
    • কার্যকারিতাঃ বায়োরেমিডিয়েশন ছোট বড় সব ধরনের দূষণ মোকাবেলা করতে পারে, সেটা সমুদ্রসৈকতে তেল ছড়িয়ে পড়া হোক কিংবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিকন্টামিনেশন।

    বায়োরেমিডিয়েশনের সীমাবদ্ধতাঃ

    যদিও বায়োরেমিডিয়েশন বেশ কার্যকর, তবুও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে এই প্রযুক্তির। এটি ব্যবহারের আগে ভাবতে হবে যেঃ

    • সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়াঃ বায়োরেমিডিয়েশন তুলনামূলক ধীরগতির প্রক্রিয়া। দূষকগুলো ভাঙতে মাইক্রোঅর্গানিজমের কিছু সময় লাগে, তাই তাৎক্ষণিক ফলাফল পাওয়া যাবে না।
    • বিশেষ পরিবেশের প্রয়োজনঃ মাইক্রোঅর্গানিজমের সঠিক কাজ করার জন্য তাদের অনুকূল পরিবেশের প্রয়োজন হয়, যেমন সঠিক তাপমাত্রা, পিএইচ মান, এবং অক্সিজেন সরবরাহ। ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের বৃদ্ধির জন্যও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার।
    • কিছু দূষণ রোধে অপারগতাঃ কিছু কঠিন দূষক, যেমন ভারী ধাতু বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ, বায়োরেমিডিয়েশন প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণরূপে শোধন করা কঠিন।

    বায়োরেমিডিয়েশন গবেষণা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং অণুজীব ব্যবহার করে এই পদ্ধতি আরও কার্যকর এবং বিস্তৃত হতে পারে। এছাড়া, পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকায় বায়োরেমিডিয়েশন প্রক্রিয়া আরও বেশি জনপ্রিয় এবং প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে।

    বিশেষ করে জিন প্রকৌশল ব্যবহার করে অণুজীবের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে, যা দূষণমুক্তকরণের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। উদাহরণস্বরূপ, মাইক্রোঅর্গানিজমের জিন পরিবর্তন করে তাদের বিশেষ বিশেষ দূষকের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর করা হচ্ছে।

    সবশেষে, বায়োরেমিডিয়েশন প্রাকৃতিকভাবে পরিবেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি টেকসই উপায়, যা ভবিষ্যতের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে এসব সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করা সম্ভব।

    তথ্যসুত্রঃ

    লেখাটি 23-বার পড়া হয়েছে।


    নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

    আলোচনা

    Leave a Reply

    ই-মেইল নিউজলেটার

    বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

    আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো, মাসে একবার। নিউজলেটারে সাম্প্রতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর নিয়ে বিশ্লেষণ থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







    Loading