বাস্তবতা কী?


লিখেছেন

লেখাটি , বিভাগে প্রকাশিত

জগতে যার অস্তিত্ব আছে তাই বাস্তব, জগতে যা বাস্তব তা-ই হলো বাস্তবতা। কথাটা কেমন যেন একটু সোজাসাপ্টা শোনাচ্ছে। আসলে বাস্তবতা শব্দটি এতটা সোজাসাপ্টা নয়। এই বিষয়টাকে একটু বিশ্লেষণ করা দরকার। প্রথমে ডায়নোসরদের কথা বিবেচনা করি, অনেক অনেক আগে এদের অস্তিত্ব ছিল কিন্তু এখন আর নেই। বর্তমানের প্রেক্ষাপটে এরা কি বাস্তব? আকাশের তারাদের কথা বিবেচনা করি, আজকের দিনে আমরা কোনো একটা তারাকে যে রূপে দেখছি এটি সত্যিকার অর্থে সেই রূপে নেই। তারার বুক থেকে আলোক রশ্মি মুক্তি পেয়ে হাজার হাজার বছর ধরে মহাশূন্যে ভ্রমণ করে তারপর আমাদের চোখে এসে লাগে। ভ্রমণপথের এই সময়ের মাঝে তারার পরিবর্তন হয়ে গেছে অনেক। হয়তোবা তারাটি বিস্ফোরিত হয়ে মরেও গেছে এতদিনে। এমন পরিস্থিতিতে আকাশের তারারা কি বাস্তব?

এগুলো নাহয় অতীতের জিনিস, এদের বাস্তবতা কিছুটা ঘোলাটে। বর্তমানের কোনো কিছুর বাস্তবতা আমরা কীভাবে নির্ধারণ করি? প্রথম শর্ত হলো তার অস্তিত্ব থাকতে হবে। তার অস্তিত্ব আছে এটা কীভাবে নির্ধারণ করি? আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে নির্ধারণ করতে পারি কোনো জিনিসের অস্তিত্ব আছে নাকি নেই। পঞ্চ ইন্দ্রিয় হচ্ছে মানুষের প্রধান পাঁচটি অনুভূতি- দৃষ্টি শক্তি, ঘ্রাণশক্তি, শ্রবণ শক্তি, স্পর্শের অনুভূতি ও স্বাদ গ্রহণের অনুভূতি। এগুলো ব্যবহার করে সাদামাটাভাবে কোনো কিছুর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। পঞ্চ ইন্দ্রিয় ব্যবহার করেই নোনতা লবণ ও মিষ্টি চিনি, শক্ত পাথর ও নরম কাদা, শুকনো কাঠ ও কচি ঘাস, ক্যাটকেটে হলুদ কাপড় ও নীল আকাশের অস্তিত্ব শনাক্ত করতে পারি।

কিন্তু ‘অস্তিত্ব’ বা ‘বাস্তবতা’র সংজ্ঞা জন্য এতটুকু কি যথেষ্ট? যাদেরকে পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে শনাক্ত করা যায় শুধুমাত্র তাদেরকেই বাস্তব বলব? অন্য সবকিছু কি তালিকা থেকে বাদ?

ব্যাপারটাকে আরেকটু বিস্তৃত করি। খুব দূরের কোনো গ্যালাক্সির কথা বিবেচনা করি। এতোই দূরের যে খালি চোখে তাকে দেখাই যায় না। কিংবা অতিক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়ার কথা, এদেরকেও খালি চোখে দেখা অসম্ভব। তাহলে কি বলতে পারবো যেহেতু তাদের দেখা যায় না সেহেতু তারা অবাস্তব? না, এমনটা বলা যাবে না। আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়কে আরো বিস্তৃতভাবে ব্যবহার করতে পারি। ইন্দ্রিয়কে বিস্তৃত করতে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতির সাহায্য নিতে পারি। যেমন দূরের গ্যালাক্সি দেখতে টেলিস্কোপের সাহায্য নিতে পারি কিংবা ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে জানতে মাইক্রোস্কোপের সাহায্য নিতে পারি।

আমরা যেহেতু টেলিস্কোপ ও মাইক্রোস্কোপের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে জানি তাই তারা যে জিনিসকে সত্য বলে সাক্ষ্য দিবে সে জিনিসকে বাস্তব বলে ধরে নিতে পারি। এই ক্ষেত্রে দুটি যন্ত্রের উভয়ই আলোক তরঙ্গ ব্যবহার করে কাজ করে। অন্যদিকে আমাদের চোখও আলোক তরঙ্গ ব্যবহার করেই দেখার কাজ সম্পন্ন করে। তাই টেলিস্কোপ ও মাইক্রোস্কোপ যদি দূরের কোনো গ্যালাক্সি কিংবা ক্ষুদ্র কোনো ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয় তাহলে গ্যালাক্সি বা ব্যাকটেরিয়াকে বাস্তব বলে ধরে নিতে পারি।

রেডিও তরঙ্গের কথা বিবেচনা করি, চোখের মাধ্যমে তাদের দেখতে পাই না, কানের মাধ্যমে শুনতে পারি না। তারা কি বাস্তব? তাদের কি অস্তিত্ব আছে? হয়তো আমরা দেখতে বা শুনতে পাই না, কিন্তু বিশেষ কোনো যন্ত্র যেমন টেলিভিশনের মাধ্যমে তাদের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি। সম্প্রচার কেন্দ্র থেকে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে সিগনাল প্রেরিত হয়, যা পরবর্তীতে টেলিভিশনের এন্টেনায় ধরা পড়ে, টেলিভিশন সেই সিগনালকে রূপান্তরিত করে পর্দায় উপস্থাপন করে, যা আমরা দেখতে পাই ও শুনতে পারি। এই হিসেবে যদিও আমরা রেডিও তরঙ্গ শুনতে কিংবা দেখতে পাই না, তারপরেও আমরা ধরে নিতে পারি এই তরঙ্গের অস্তিত্ব আছে। এটি বাস্তব।

অদৃশ্য বস্তুর বাস্তবতা অনুধাবনের চমৎকার একটি উদাহরণ হতে পারে মোবাইল ফোন। নেটওয়ার্কের সাহায্য নিয়ে মোবাইলের মোবাইলের মাধ্যমে কথা বলা কিংবা ইন্টারনেট চালানো যায়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন টাওয়ার হতে তড়িৎচুম্বক তরঙ্গের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সরবরাহ করা হয়। এই তরঙ্গও আমরা দেখতে কিংবা শুনতে পাই না কিন্তু মোবাইল, মডেম ও রাউটারের মাধ্যমে তাদের ব্যবহার করে নানা কাজ করছি। যেহেতু মোবাইলের কার্যপ্রণালী জানি এবং মোবাইল তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছে তাই তাদেরকে বাস্তব বলে ধরে নিতে পারি।

ডায়নোসরের কাছে ফিরে যাই। আজকের যুগে তাদের কোনো অস্তিত্বই নেই। তাদেরকে কখনো দেখিনি, তাদের চিৎকার চেঁচামেচি কখনো শুনিনি, তাদের ভয়ে কখনো দৌরে পালাতে হয়নি। তাহলে কীভাবে জানতে পারলাম তারা একসময় এই পৃথিবীতে রাজত্ব করে বেড়িয়েছিল? টাইম মেশিন নামে কোনো কিছু যদি থাকতো তাহলে মেশিনে চরে অতীতে গিয়ে দেখতে পারতাম আসলেই তাদের অস্তিত্ব ছিল কিনা। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, টাইম মেশিন নামে কোনো কিছু নেই।

এই দিক থেকে তাদের অস্তিত্ব শনাক্ত করতে অসমর্থ হলেও অন্য আরেক দিক থেকে কিন্তু ঠিকই তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। আমাদের কাছে আছে ফসিল রেকর্ড, এবং এসব ফসিল আমরা খালি চোখেই দেখতে পাই। ফসিল কীভাবে গঠিত হয় এবং ফসিলের স্বভাব চরিত্র ও কার্যপ্রণালী সম্পর্কে আমরা জানি। এদের মাধ্যমে ইতিহাসের কোন সময়ে কী হয়েছিল তা অনুধাবন করতে পারি। এমনকি কোটি কোটি বছর আগে কী হয়েছিল সে সম্পর্কেও ধারণা লাভ করতে পারি।

আমাদের ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যদিও সরাসরি এদের দেখতে পাই না কিন্তু অন্য কোনো মাধ্যম ব্যবহার করে এটা অনুধাবন করতে পারি যে ডায়নোসরদের অস্তিত্ব ছিল। তাদের রেখে যাওয়া দেহের ছাপ দেখতে পাই, এমনকি হাত দিয়ে ছুঁয়েও দেখতে পারি। কোনো কিছুকে বাস্তব হতে হলে তাকে উপস্থিত থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অনুপস্থিত থেকেও সে তার বাস্তবতার জানান দিতে পারে। কিন্তু অবশ্যই তার বাস্তবতার পক্ষে প্রমাণ থাকতে হবে। সরাসরি হোক কিংবা প্রায়োগিকভাবে হোক, কোনো একভাবে ইন্দ্রিয়ে অনুভূতি জাগাতে সক্ষম হতে হবে।

আমাদের কাছে টাইম মেশিন না থাকলেও ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে টেলিস্কোপকে টাইম মেশিন হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। আমরা যা দেখি তা মূলত বস্তু থেকে আসা আলোক রশ্মি, আর আলোক রশ্মি বস্তু থেকে আসতে কিছু পরিমাণ সময় লাগে। এমনকি কেউ যদি তার পাশাপাশি বসে থাকা বন্ধুর চেহারার দিকে তাকায়, ঐ চেহারা থেকেও আলো আসতে কিছু পরিমাণ সময় লাগবে। যত ক্ষুদ্রই হোক সময় ঠিকই লাগবে। এই দিক থেকে আমরা যা দেখছি তা আসলে অতীত। প্রতিনিয়ত অতীতের জিনিস দেখে চলছি।

মূলত সব তরঙ্গেরই ভ্রমণ পথে কিছুটা সময় ব্যয় হয়। যেমন শব্দ তরঙ্গ। শব্দ তরঙ্গের বেগ আলোক তরঙ্গের বেগের চেয়ে অনেক কম। কোথাও বজ্রপাত হলে আমরা প্রথমে আলোর ঝিলিক দেখতে পাই, পরে জোরে ঠাট ঠাট শব্দ শুনতে পাই। মূলত আলোর ঝিলিক ও শব্দ একই সময়ে উৎপন্ন হয়। শব্দের বেগ আলোর বেগের চেয়ে কম বলে আমাদের কানে এসে পৌঁছুতে দেরি লাগে। এই হিসেবে আমরা অধিকতর অতীতের শব্দ শুনছি। পৃথিবীর মাঝে কোনো ঘটনা ঘটা মাত্রই আমরা তা দেখতে পাই। আলো আসতে খুব একটা সময় লাগে না। আলো প্রতি সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে। অন্যদিকে শব্দ প্রতি সেকেন্ডে আধা কিলোমিটারও অতিক্রম করতে পারে না।

চিত্রঃ বজ্রপাত। আগে আলোর ঝিলিক দেখা যায়, পরে শব্দ শোনা যায়।

আমাদের আশেপাশের কোনো বস্তু থেকে আলো আসতে যদিও সময় অল্প লাগে কিন্তু আকাশের নক্ষত্র (তারা) ও গ্যালাক্সির বেলায় কিন্তু অনেক সময় লাগে। কারণ নক্ষত্রেরা পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। এমনকি আমাদের নিজেদের নক্ষত্র সূর্য থেকেও আলো আসতে ৮ মিনিট সময় লাগে। এই মুহূর্তে সূর্য যদি বিস্ফোরিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে ৮ মিনিটের আগে তা আমাদের ইন্দ্রিয়ে ধরা পড়বে না।

সূর্যের পর পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কাছে অবস্থিত নক্ষত্রটির নাম প্রক্সিমা সেন্টারি (Proxima Centauri)। এটি থেকে আলো আসতে ৪ বছর লেগে যায়। আজকে ঐ নক্ষত্রকে আমরা যে অবস্থায় দেখছি তা আসলে চার বছরের আগের অবস্থা। ২০১৬ সালে যা দেখছি তা ঘটে গিয়েছে ২০১২ সালেই।

নক্ষত্রের পর আসে গ্যালাক্সি, অনেক অনেক নক্ষত্রের সমাবেশে গ্যালাক্সি গঠিত হয়। আমাদের সূর্য মানে আমরাও একটি গ্যালাক্সির অংশ। আমাদের গ্যালাক্সিটির নাম মিল্কি ওয়ে (Milky Way)। বাংলায় একে ‘আকাশগঙ্গা’ বলেও ডাকা হয়ে থাকে। মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি থেকে সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সিটি হলো এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি। এটি থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে আড়াই মিলিয়ন বছর সময় লাগে। গ্যালাক্সির পরে আসে ক্লাস্টার (Cluster)। ক্লাস্টারের বাংলা হচ্ছে স্তবক বা গুচ্ছ। অনেকগুলো গ্যালাক্সি একত্র হয়ে গ্যালাক্সি-ক্লাস্টার গঠন করে। ‘স্টেফানের পাঁচক’ (Stephan’s Quintet) নামে একটি ক্লাস্টার আছে। এডওয়ার্ড স্টেফান নামে একজন জ্যোতির্বিদ পাঁচটি গ্যালাক্সি মিলে তৈরি এই ক্লাস্টারটি আবিষ্কার করেছেন বলে তার নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। হাবল টেলিস্কোপের তোলা ছবির মাধ্যমে দেখা যায় এই ক্লাস্টারের একটি গ্যালাক্সির সাথে আরেকটি গ্যালাক্সির সংঘর্ষ হচ্ছে। ছবিতে এই সংঘর্ষ খুব দৃষ্টিনন্দন হিসেবে ধরা দেয়। কিন্তু দূর থেকে দেখা নান্দনিক এই দৃশ্যের ঘটনা ঘটে গেছে আজ থেকে ২৮০ মিলিয়ন বছর আগেই। হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থেই আমরা টাইম মেশিনে ভ্রমণ করছি। টেলিস্কোপের মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগের ঘটনা দেখছি।

চিত্রঃ স্টেফানের পাঁচক। ছবিঃ নাসা

এবার অন্যদিক থেকে বিবেচনা করি। ঐ ক্লাস্টারের কোনো একটি গ্যালাক্সিতে যদি এলিয়েনের অস্তিত্ব থাকে এবং ঐ এলিয়েন যদি খুব শক্তিশালী টেলিস্কোপ তাক করে আমাদের পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করে তাহলে এই মুহূর্তে কী দেখতে পাবে? এই মুহূর্তে কিন্তু গুগল আর ফেসবুক ব্যবহারকারী কোনো মানুষকে দেখতে পাবে না। তারা দেখবে আজ থেকে মিলিয়ন বছর আগের ডায়নোসরদের রাজত্ব। টেলিস্কোপ এখানে টাইম মেশিন হিসেবে কাজ করছে এবং পৃথিবীতে ডায়নোসরদের বাস্তবতার জানান দিচ্ছে।

কথার পিঠে কথা চলে আসে। সত্যি সত্যিই কি এলিয়েনের অস্তিত্ব আছে? আমরা তাদেরকে কখনো দেখিনি, তাদের কথাবার্তা কখনো শুনিনি, কোনো ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করিনি। তাহলে তারা কি বাস্তবতার অংশ? এর উত্তর এখনো কেউ জানে না। যদি কোনোদিন তাদের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় তাহলেই তারা বাস্তবতার অংশ হিসেবে গণ্য হবে। কোনো একদিন কেউ যদি অতি মাত্রায় শক্তিশালী কোনো টেলিস্কোপ তৈরি করে যা দিয়ে খুব দূরের কোনো গ্রহের প্রাণীদেরকেও পর্যবেক্ষণ করা যায়, তাহলে হয়তো আমরা এলিয়েনের অস্তিত্ব পর্যবেক্ষণ করতে পারবো। কিংবা এমনও হতে পারে কোনো রিসিভারে এলিয়েনদের পাঠানো বার্তা ধরা পড়লো তখন হয়তো তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। (অস্তিত্ব নিশ্চিত হবার আগ পর্যন্ত এরা কাল্পনিক। কাল্পনিক কোনো কিছু বাস্তবতার অংশ নয়।)

তথ্যসূত্র

এই লেখাটি রিচার্ড ডকিন্স-এর চলমান ভাবানুবাদকৃত বই বাস্তবতার যাদু (The Magic of Reality)-র অংশ।

[এই লেখাটি পড়ার পর যদি আরো প্রশ্ন জেগে থাকে, যেমন মাল্টিভার্স থিওরি প্রমাণিত হয়নি তাহলে এটি কি বাস্তব না অবাস্তব? হাট্টিমাটিম টিম কি অবাস্তব? কিন্তু এটি তো কারো না কারো বাস্তব মস্তিষ্কেরই কর্মকাণ্ডের ফল ইত্যাদি প্রশ্ন মাথায় উঁকি দিলে অনুরোধ থাকবে লেখাটির পরের অংশ- “মডেলঃ কল্পনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা” পড়ে দেখার।]

লেখাটি 5,659-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Responses

  1. সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ Avatar
    সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ

    অনুবাদ খুব ঝরঝরে ও প্রাঞ্জল!

    আমার মনে কিছু প্রশ্ন আছে বাস্তবতা কে নিয়ে! ডকিন্সের মতে বাস্তবতা তাই যার অস্তিত্ব আমরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রমাণ করতে পারি। যতক্ষণ পর্যন্ত তা প্রমাণ করতে পারছি না ততক্ষণ পর্যন্ত তা বাস্তব নয়। কিন্তু প্রমাণ করা মাত্রই তা বাস্তবতার অন্তর্ভুক্ত হবে। জানি এটা বিজ্ঞানের মূল নীতি। কিন্তু আমরা কখনই সবকিছু প্রমাণ করতে পারব না। কারণ আমাদের পক্ষে কখনই সবকিছু জানা সম্ভব হবে না। আমরা ধীরে ধীরে আমাদের জানার পরিধি বাড়াতে পারি। ফলে আমাদের বাস্তবতার পরিধি বাড়বে। কিন্তু সে বাস্তবতা কখনই পরম বাস্তবতা হবে না। আমাদের শেষ পর্যন্ত অনিশ্চয়তার কাছে মাথা নোয়াতেই হবে। আমরা যদি শুধু প্রমানিত বাস্তবতা নিয়ে এগুই তাহলে আমাদের বাস্তবতার পরিধি সব সময় সঙ্কীর্ণই থাকবে। আজ থেকে লক্ষ্য বছর পরেও! তবে আমরা যে কম জানি এটা আমাদের ব্যর্থতা নয়। জীবনের সৌন্দর্য এখানেই! কৌতূহল বেঁচে থাকার একটা প্রধান নিয়ামক!

    তাই প্রমাণিত বাস্তবতার পাশাপাশি ফ্যান্টাসিরও অনেক গুরুত্ব আছে। আগের সেই মিথগুলো। কাগজে লেখা সেই কাল্পনিক উপন্যাস কিংবা কবিতায়ও বাস্তবতা আছে। যদিও তার প্রমাণ নেই! মানুষের কেন যেন অন্তর্জ্ঞানের ক্ষমতা আছে। মানুষ অনেক সময় কোন কিছু না জেনেও বাস্তবতা উপলব্ধি করেছে। মানুষ কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আবিষ্কার হওয়ার পূর্বেই ওই জিনিস ব্যবহার করেছে বৈজ্ঞানিকভাবে। আগে উপলব্ধি এসছে, তার পর প্রমাণ!

    কেউ যদি আমাকে এসে বলে ভালোবাসা শুধু হরমোনের খেলা। এতে অন্য কিছু নেই! তারপরেও আমি ভালোবাসার কবিতা লিখব । ভালোবাসার উপন্যাস পড়ব। কারণ হরমোনের খেলাতেও কিছু খেলা বাকি থেকে যায়!

    1. ভাইয়া খুব দার্শনিক মতামত দিয়ে দিলেন। 😀 আসলে বাস্তবতার ব্যাপারটাকে পরিষ্কার করার জন্য এমন আকৃতির আরেকটা লেখার দরকার। ডকিন্সের বইয়ে এর পরের অংশ থেকে আছেও। অনুবাদও করে ফেলেছি। মূলত আপনার মতামতের দিকটাই ব্যাখ্যা করা হয়েছে ঐ অংশটাতে। এখানে একটি কথা না বললেই নয়, এই পোস্টের সর্বশেষ বাক্য দুটি ডকিন্সের বইতে ছিল না। এতটুকু পর্যন্ত লেখার একটা সমাপ্তি টানার জন্য বাক্য দুটি নিজে থেকে যোগ করেছিলাম। (উচিৎ হয়েছে বলে মনে হয় না।) যোগ করেছিলাম কারণ এটা না হলে জ্বিন-পরি-যাদু-টোনা-মৃত আত্মা **** ইত্যাদির অস্তিত্বও বাস্তবতার ভেতরে নিয়ে আসতে হয়। এসব জিনিসকে বাস্তবতা থেকে ছেটে ফেলার জন্য এই অংশটা যোগ করেছিলাম। বাকি অংশটা পোস্ট করি, দেখা যাক ডকিন্সের ভাষায় কতটা পরিষ্কার হয়।

      লেখাটা ঝরঝরে ও প্রাঞ্জল লেগেছে বলে খুশি হয়েছি। 🙂 অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

      1. সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ Avatar
        সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ

        অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি পরবর্তী লেখার! বাস্তবতা এইবার বুইঝাই ছাড়বো! আর কোন ছাড়াছাড়ি নাই 😀

    2. আমিও বলি যে অনুবাদ খুব ঝরঝরে ও প্রাঞ্জল! ডকিন্স সংক্ষেপে বলতে চাচ্ছেন যে যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপায়ে পর্যবেক্ষণ করা যায় তাই বাস্তবতা। এখন ধরা যাক, রামগড়ুরের ছানা বাস্তব নয় কারণ এর অস্তিত্বের কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রমাণ নেই। কিন্তু সুকুমার রায়ের ছড়ায় এদের পাওয়া যায়। তার মানে সুকুমার রায়ের কল্পনায় অবশ্যই এদের অস্তিত্ব ছিলো। কারো অনুভূতি বা কল্পনায় অস্তিত্ব থাকাটা কি অবাস্তব, অন্তত ঐ কল্পনা বা অনুভূতিটা? তাহলে রামগড়ুরের ছানা কি বাস্তব না অবাস্তব?

      1. রামগড়ুরের ছানাকে লেখক বস্তু হিসেবে কল্পনা করেছিলেন। এই বস্তুর অস্তিত্ব নেই। তাই এটি অবাস্তব। বস্তুটি অবাস্তব হলেও লেখকের কল্পনাটি বাস্তব। এমনই কথা প্রযোজ্য হাট্টিমাটিম টিমের ক্ষেত্রে। অন্যদিকে কোনোকিছু যদি ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে কিন্তু অন্তরে (মস্তিষ্কে) তার অনুভূতি হয় তাহলে সেটি বাস্তব হতে পারে। যেমন প্রেম-ভালোবাসা। আমরা জানি প্রেম-ভালোবাসা-আবেগ-অনুভূতি মূলত মস্তিষ্কের মাঝে ঘটে চলে কিছু বিক্রিয়া মাত্র। তাই এটি এবস্ট্রাক্ট হলেও বাস্তব। অন্যদিকে সুকুমার রায়ের রামগড়ুরের ছানা কিন্তু এমন এবস্ট্রাক্ট নয়। একে বস্তু হিসেবে কল্পনা করা হয়েছিল যা বাস্তব জগতে অস্তিত্বহীন।

        1. ধন্যবাদ!

  2. ভাইয়া, জ্বীন-পরী, মৃত আত্মা এগুলো কি pseudo science এও পড়েনা? Just want to know! কেনোনা এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলোর বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব কিন্তু এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞান প্রমাণ করতে বা ধরতে পারেনি! ঠিক এলিয়েনের মতোই ব্যাপারটা!মহাবিশ্বকে আপাতদৃষ্টিতে ইউনিফর্ম ধরা হয়! সে অনুযায়ী মানুষ বা পৃথিবীর ইউনিকনেস নাই! এরকম আরও অনেক পৃথিবী এবং বুদ্ধিমান বা বোকা (😜) প্রজাতি থাকতে “পারে”! এমনকি অনেক মাল্টিভার্স হাইপোথেসিস এ আইডেন্টিকাল ইউনিভার্স এর কথাও বলা হয়ে থাকে! মজার বিষয় (& weird thing 😒) সব মাল্টিভার্স হাইপোথেসিসেই প্রায় বলা থাকে যে অন্য ইউনিভার্স এর সাথে কমিউনিকেশন সম্ভব না! তাহলে আমরা স্পষ্টভাবেই এদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারবোনা! তাহলে আমরা এদের নিয়ে ভাববো কেনো? এরা কি বাস্তবতার অংশ? নাকি হাইপোথেসিস প্রণেতারা ইচ্ছা করেই এই লিমিটেশন তৈরি করেছেন? নাকি এর বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো প্রমাণ আছে যে আসলেই আউটার ইউনিভার্সের সাথে কমিউনিকেশন সম্ভব না? & কেনো?
    By the রাস্তা, আগের মূল টপিকে ফিরে আসি! জ্বীন-পরী কিংবা মৃত আত্মার আলাদা (উচু হোক বা নিচু হোক) মাত্রায় অস্তিত্ব থাকাটা কি অবৈজ্ঞানিক কিছু?

    1. ভাইয়া, আপনার প্রশ্নগুলোকে ব্যাখ্যার আওতায় আনতে নিয়ে আস্ত একটা লেখার দরকার। আশার কথা হচ্ছে আস্ত লেখটা লিখে ফেলেছি। এই লেখার পরের অংশ পড়ুন এখান থেকে “মডেলঃ কল্পনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা”http://goo.gl/RjYqPJ এটি পড়ার পরেও যদি কিছু জিজ্ঞাস্য থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। কমেন্টে জানালে লেখাটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে আমার কিছুটা সুবিধা হবে। 🙂

  3. নতুন পাঠক হিসেবে আমার কাছে সমালোচনা বা কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু ভাল লেগেছে লেখাটা

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading