এন্টিম্যাটারের খোঁজে

এন্টিম্যাটার(Antimatter) বা প্রতিপদার্থ হলো সেই বস্তু যা কোন পদার্থের সংস্পর্শে এলে উভয়েই ধ্বংস হয়ে যায় এবং বিপুল পরিমান শক্তি উৎপন্ন হয়। যে কোন পদার্থই আবার অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মূল কণিকা দিয়ে তৈরি। সেই হিসেবে এন্টিম্যাটারও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণিকা দ্বারা তৈরি। কাজেই যে কোন মুল কণিকার একটি বিপরীত মূল কণিকা আছে। এই মূলকণিকাগুলো তাদের প্রতিপদার্থের একই রকম মূলকণিকার সংস্পর্শে এলে উভয়েই নিশ্চিন্হ হয়ে যায় এবং বিপুল পরিমান শক্তি উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ আপনি যদি আপনার দেহের সমপরিমান কোন এন্টিম্যাটারের সংস্পর্শে আসেন তাহলে উভয়েই বিলুপ্ত হয়ে যাবেন তবে বিলুপ্ত হয়ে যাবার সময় উত্তরাধিকারীদের জন্য প্রচুর পরিমান শক্তি রেখে যেতে পারবেন।

ভয় পাবেন না। আপনার আশেপাশে আপনি যা দেখতে পান বা দেখতে পান না তার সবই স্বাভাবিক পদার্থ। আকাশে যে সব গ্রহ নক্ষত্র দেখা যায় সেসবও স্বাভাবিক পদার্থ। দূর-দূরান্তে যেসব গ্যালাক্সী বা গ্যালাক্সী ক্লাস্টার আছে সেগুলোও সবই আপনি যে ধরনের পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়েছেন সেই একই ধরনের পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়েছে। সহসাই এন্টিম্যাটারের সংস্পর্শে আসার কোন সুযোগ(!) আপনার নেই। কারন মহাবিশ্বে এন্টিম্যাটার তেমন একটা নেই বললেই চলে।

তাহলে এন্টিম্যাটারের ধারনা আসল কেন? এন্টি ম্যাটারের ধারনা তৈরি হওয়ার কারন হচ্ছে পদার্থবিদরা এন্টিম্যাটারের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন। ১৮৯৮ সালে জার্মান বিজ্ঞানী আর্থার শুস্টার প্রথম এন্টিম্যাটারের ধারনা দেন এবং এন্টিএটম বা প্রতিপরমানুর অস্তিত্ব অনুমান করেন। তবে তাঁর অনুমান নির্ভর তত্ত্বের অনেকাংশই পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা পরিমার্জন করেন। ১৯২৮ সালে বিজ্ঞানী পল ডিরাক তাঁর একটিগবেষণাপত্রে এন্টিম্যাটারের আধুনিক তত্ত্ব ব্যখ্যা করেন। এর ধারাবাহিকতায় শ্রডিঞ্জারের তরঙ্গতত্ত্বের আলোকে ইলেক্ট্রনের বিপরীত পদার্থ পজিট্রন তৈরির সম্ভাবনা দেখা যায় এবং ১৯৩২ সালে বিজ্ঞানী কার্ল ডি এন্ডারসন পজিট্রন আবিষ্কার করেন। পরবর্তিতে আরো কিছু পারমানবিক মূল কণিকা যেমন, এন্টিপ্রোটন, এন্টিনিউট্রন এবং এদের সমন্বয়ে এন্টি নিউক্লিয়াস তৈরি করা হয়। এন্টিনিউক্লিয়াস এবং পজিট্রনের সমন্বয়ে পরমানুর বিপরীত কণিকা এন্টিএটম বা প্রতিপরমানু তৈরি করা হয় ১৯৯৫ সালে। প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে সাথে গবেষণাগারে তুলনামূলক বড় আঙ্গিকে(সেই বড় আঙ্গিকের পরিমানও বেশ সামান্য) এন্টিম্যাটার তৈরি করা হয়। এন্টিম্যাটার তৈরির পর সবচেয়ে বড় চ্যালেন্জ এটাকে টিকিয়ে রাখা। কারন একে যে পাত্রে রাখা হবে সেটা কোন না কোন পদার্থ দ্বারা তৈরি করতে হবে। ফলে সেই পদার্থ প্রতিপদার্থের সাথে মিলে নিশ্চিন্থ করে ফেলবে। তবে গতবছর বিজ্ঞানীরা এই সমস্যার সমাধান করেন। তাঁরা বিশেষ স্থিতিশীল চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে তার ভিতরে এন্টিম্যাটার সংরক্ষণ করেন। চৌম্বকক্ষেত্র কোন পদার্থ দিয়ে তৈরি হয় না। এটা শুধুমাত্র একটি বলক্ষেত্র যেখানে প্রতিপদার্থ আকৃষ্ট হয়ে আটকে যায় এবং কোন পদার্থের সংস্পর্শে না আসতে পারায় সংরক্ষিত থাকে।

মহাবিশ্বে স্বাভাবিকভাবেই কখনো কখনো এন্টিম্যাটার তৈরি হতে পারে। দুটি উচ্চগতি সম্পন্ন কণিকার বিপরীতমূখী সংঘর্ষে প্রায়ই প্রতিপদার্থ বা এন্টিম্যাটার তৈরি হয়। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে উত্তপ্ত অবস্থায় প্রতিনিয়ত প্রতিপদার্থ কণিকা তৈরি হয় তবে পরক্ষণেই স্বাভাবিক পদার্থের সংস্পর্শে এসে তা নিশ্চিন্হ হয়ে যায়। তাছাড়া গ্যালাক্সিগুলোর কেন্দ্রে অতি উচ্চ তাপমাত্রায় শক্তি রূপান্তরিত হয়ে পদার্থ ও প্রতিপদার্থে পরিণত হয়।
বিজ্ঞানীদের ধারনা বিগব্যাঙের পরমূহূর্তে অতি উচ্চতাপমাত্রায় পদার্থ এবং প্রতিপদার্থ তৈরি হয়, সেগুলো উৎপন্ন হওয়ার পরমূহুর্তেই নিজদের মধ্যে বিলীন হয়ে যায় এবং আবারো তৈরি হয়। এভাবে অনবরত ভাঙ্গা-গড়া চলতে থাকে। কিন্তু কোন এক রহস্যময় কারনে প্রতিপদার্থের চেয়ে স্বাভাবিক পদার্থ কিছুটা বেশী তৈরি হয়। ফলে একে অপরকে নির্মূল করার পরও কিছু পরিমান পদার্থ রয়ে যায়। যা পরবর্তীতে এই মহাবিশ্ব তৈরি করে।
এখন প্রশ্ন হলো কেন প্রতিপদার্থের তুলনায় পদার্থ কিছুটা বেশী তৈরি হল। এটা আসলে পদার্থবিজ্ঞানের কিছু বড় বড় অজানা রহস্যের একটি। যদিও সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এই রহস্যেরও একটি মিমাংসার দারপ্রান্তে। সেটা এখনো গবেষণাধীন আছে বলে আপাতত উল্লেখ করছি না। রহস্য পুরোপুরি উন্মোচিত হয়ে গেলে আবার এসে জানিয়ে যাব। ততক্ষণ পর্যন্ত বিদায়।

ফিচার ইমেজ: India Today

ইংরেজিতে কন্টেন্ট রাইটার হয়ে গড়ে তুলতে পারেন নিজের ফ্রিল্যান্স-ক্যারিয়ার।

কীভাবে? দেখুন ফ্রি-মাস্টারক্লাস ভিডিও

ইমতিয়াজ আহমেদ
পোস্টডক্টরাল গবেষক: Green Nanomaterials Research Center Kyungpook National University Republic of Korea.